দি ওল্ডম্যান অন দ্য মাউন্টেন

রচনায়: সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার প্রবাল ও সানিয়াত তাহসিন মজুমদার প্রমি

‘দি ওল্ডম্যান অন দ্য মাউন্টেন’ বা ‘দি ঈগল অভ আলামুত’ খ্যাত হাসান ইবনে সাবাহ (১০৫০-১১২৪) বিশ্বের ইতিহাসে এক ভয়ঙ্করতম ব্যক্তির নাম। তার পুরো নাম- হাসান বিন আলী বিন মুহাম্মদ বিন জাফর বিন আল হুসেন বিন মুহাম্মাদ বিন আল সাব্বাহ আল হিমায়ারি। তিনি নিজারি ইসমাইলি শিয়া ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ১১ শতকে উত্তর পারস্যের আলামুত নামে একটি পর্বতদুর্গ দখল করে ভয়ঙ্কর এক গুপ্তঘাতক গোষ্ঠী তৈরি করেন।

এর সদস্যদের হাশাশিন বা অ্যাসাসিন বলে অভিহিত করা হত। ভাং বা হাশিশ নামক মাদক থেকে এই নামকরণ হয়েছে। আলামুত ছিল দুর্গম পাহাড়গুলোর মধ্যখানে অত্যন্ত উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সুদৃঢ় এক দুর্গ। ফলে যেকোন সেনাদলের পক্ষে এটি দখল করা ছিল দুঃসাধ্য প্রায়। বিখ্যাত পর্যটক মার্কো পোলো ১২৭১-৭২ সালে এটি পরিদর্শন করেন।

হাসান ওই নিরাপদ দুর্গে আস্তানা গেড়ে তার অনুসারীদের পুরোপুরিভাবে নিজ মুঠোর ভেতরে রাখতে বিস্ময়কর এক পরিকল্পনা করে। সে পাহাড়ের ঢালুর শ্যামল বনে উঁচু দেয়াল দিয়ে নয়নাভিরাম একটি বাগান তৈরি করে। বাগানের ভেতরে প্রবেশ করলেই সবুজের গালিচা মোড়া বিস্তীর্ণ মাঠ আর ফল-ফুলের সমারোহের পাশাপাশি সুপেয় মিঠাপানির ঝরনাধারাকে কলকল রবে বহমান দেখা যেত। বাগানের ভেতর থাকা দৃষ্টিনন্দন মহলগুলো যেকোন দর্শককেই তার কাছে টেনে নিত। এ ছাড়া অসংখ্য পাখপাখালির কিচিরমিচির শব্দ সর্বদা পরিবেশকে মোহময় করে রাখত। মহলগুলোতে চলত সুন্দরী নারীদের নাচের আসর। এরা গান গাইত আর মাদকদ্রব্য পান করিয়ে মানুষকে করে রাখত মাতাল। হাসান ওই জায়গার নাম দেন জান্নাত বা স্বর্গ। যাদের থেকে সে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আদায় করতে চাইত, তাদেরকে হাশিশ (ভাং) পান করিয়ে ওই কৃত্রিম জান্নাতে কিছুদিন খুব আনন্দ-ফুর্তির মধ্যে রাখত। এরপর আবারও তাদের মদে মাতাল করে নিজের কাছে উপস্থিত করত। হাসান তখন তাদের উদ্দেশ্য করে বলত, ‘যদি দ্বিতীয়বার ওই জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও, তাহলে আমার নির্দেশে প্রাণ উৎসর্গ করতে তৈরি হয়ে যাও’। মাদকের নেশার ঘোরে লোকগুলো ওই কৃত্রিম জান্নাতকে আসল জান্নাত মনে করে তার নির্দেশে নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়ে যেত। এরাই ছিল ইতিহাস-কুখ্যাত অ্যাসাসিন বা গুপ্তঘাতক বাহিনীর সদস্য। হাসান তার এই ঘাতকদের মাধ্যমে মুসলিমবিশ্বের মেধাবী এবং তার বিরোধিতাকারী প্রচুর মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে। তার এই সন্ত্রাসী তৎপরতার ফলে মুসলিমবিশ্বের অসংখ্য শাসক, আমির আলিম এবং নামকরা ব্যক্তির জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

এবার শোনা যাক হাসান ইবনে সাবাহর উত্থানের চমকপ্রদ গল্প।

সহস্র বছর আগের কাহিনী। ইরানে বিখ্যাত আলিম ইমাম মুয়াফফাক উদ্দিনের বিদ্যালয়ে তিন বন্ধু তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপনীবর্ষ অতিক্রম করছিল। তিনজনই ছিল অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। দেখতে দেখে তাদের শিক্ষাজীবনের পাট চুকে যায় এবং তার নিজেদের বুকে লালন করা স্বপ্ন আর অন্তরে পুষে রাখা উচ্চাকাঙ্ক্ষাসহ নতুন জীবনে পা রাখে।

বিদায়কালে এই তিন ঘনিষ্ঠ সহপাঠী, যারা একে অপরের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, তিনজনের মধ্যে সবার আগে যে প্রতিষ্ঠিত হবে, অপর জনকে সে সাহায্য করবে প্রতিষ্ঠিত হতে।

উল্লিখিত তিনজনের একজন ছিলেন অঙ্ক দর্শন ও সাহিত্য তথা কাব্যকলায় খুব পটু। তিনি তাঁর ওই পছন্দনীয় শাস্ত্রসমূহে কাজ করে বিশ্বের শীর্ষসারির হাতেগোনা অঙ্কবিদ, দার্শনিক ও কবির কাতারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিশ্ববাসী আজও সেই তুখোড় মেধাবী ছাত্রকে উমর খৈয়াম নামে স্মরণ করে। খৈয়াম এশিয়ায় একজন রোমান্টিক কবি ও অঙ্কবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও ইউরোপে তাঁর বিশেষ পরিচিতি ধীমান দার্শনিক হিসেবে। তাই আজও ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ‘উমর খৈয়ামের দৰ্শন’ নামে আলাদা একটি অনুষদ রয়েছে সেখানে তার দর্শনের আলাদা কদর রয়েছে।

দ্বিতীয় ছাত্রটি এর চেয়েও অধিকতর সৌভাগ্যের অধিকারী হন। তিনি তখনকার সবচেয়ে বড় ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজদরবারে চাকরি লাভ করেন। সেই বিশাল সালতানাতকে বলা হত সেলজুক সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যটি মধ্য- এশিয়াসহ খোরাসান, ইরান, ইরাক ও বর্তমান তুরস্কের সুবিশাল অঞ্চলজুড়ে ব্যাপ্ত ছিল। ছাত্রটি তার লেখার দোয়া ও কর্মদক্ষতার বলে একসময় সেলজুক সালতানাতের মহান বাদশাহ মি শাহ সেলজুকির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি হলেন খাজা নিজামুদ্দিন তুসি, যিনি ইতিহাসে নিজামুল মুলক নামে বিখ্যাত। নিজামুল মুলক তাঁর অতুলনীয় প্রশাসনিক দক্ষতায় সেলজুক সাম্রাজ্যকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেন। সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন পরিচালনা করে পুরো সাম্রাজ্যকে শান্তি ও নিরাপত্তার রাজ্য বানিয়ে তোলেন। চারদিকে জ্ঞান ও সাহিত্যের চর্চা পুরোদমে শুরু হয়। তাঁর সময়ে পুরো সাম্রাজ্যে যেন চলছিল প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের বসন্তকাল। মানুষ দু’হাত তুলে তাঁর জন্য দোয়া করছিল। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঐতিহ্যবাহী বাগদাদ নগরীতে বিশ্বের বৃহত্তম দারুল উলুম বা বিশ্ববিদ্যালয়, যা ইতিহাসে নিজামিয়া মাদরাসা নামে খ্যাতি লাভ করে।

তৃতীয় ছাত্রটি ছিল সবার চেয়ে অধিকতর চতুর; কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সাংঘাতিক নেতিবাচক। তার নাম হাসান ইবনে সাবাহ। সে স্বভাবতই ছিল খারাপ কাজের প্রতি আগ্রহী ও ভীষণ বদমেজাজি। অন্যের অনুসরণকে সে নিজের জন্য অপমান ও লজ্জাজনক মনে করত। তার এই মেজাজের জন্য কোথাও কাজ খুঁজে পাচ্ছিল না। উদ্‌ভ্রান্তের মত দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হতাশাচ্ছন্ন ওই সময়ে সে জানতে পারে, তার বন্ধু নিজামুল মুলক সেলজুক সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। খবর পেয়ে তখনই রাজধানী নিশাপুরে ছুটে এসে শাহীমহলে নিজামুল মুলকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি চাকরির আবেদন জানায়। বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে গিয়ে নিজামুল মুলক তাকে বড় একটি পদে চাকরি জুটিয়ে দেন।

একদিন সুলতান মালিক শাহ তাঁর প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলককে জিজ্ঞেস করেন, ‘নিজামুল মুলক, আপনাকে এমন একটি বিবরণী তৈরি করতে হবে, যাতে থাকবে আমার সাম্রাজ্যের প্রতিটি প্রদেশের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব। থাকবে আমদানি-রপ্তানির যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত।

‘ভারী সুন্দর পরিকল্পনা’, নিজামুল মুলক অত্যন্ত আদবের সঙ্গে জবাব দেন।

‘কাজটি কত দিনে শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন?’ মালিক শাহ কিছুটা অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন খাজাকে।

‘মাননীয় সুলতান, আমাদের সাম্রাজ্য তো বিশাল; তাই আমি মনে করি কাজটি শেষ করতে দু’বছরের মত সময় লেগে যাবে।’

সুলতান নিজামুল মুলকের কাছ থেকে কাজের জটিলতা সম্পর্কে ধারণা নেয়ার আগেই দরবারে উপস্থিত হাসান ইবনে সাবাহ বলে ওঠে, ‘মাননীয় সুলতান, আপনি যদি আমার ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে কাজটি আমি মাত্র চল্লিশ দিনেই করে দিতে পারব!’

কথাটি বলে, তার বন্ধু ও চাকরিদাতা নিজামুল মুলকের দিকে তির্যক দৃষ্টিতে তাকায় সে মূলত রাজদরবারে নিজামুল মুলকের মর্যাদা ও সম্মান দেখে হিংসার আগুনে জ্বলছিল।

মালিক শাহ বিস্মিত দৃষ্টিতে হাসানের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এরপর কিছুটা ভেবেচিন্তে কাজটি তাকেই বুঝিয়ে দেন। এভাবে রাজদরবারে নিজামুল মুলকের গায়ে অযোগ্যতার একটা ছাপ লেগে যায়; কিন্তু তিনি কিছু না বলে নীরব থাকেন। চল্লিশ দিন পেরনোর পর হাসান সুলতানের হাতে লম্বা একটি প্রতিবেদন ধরিয়ে দেয়। এদিকে তখন যেন নিজামুল মুলকের রাজদরবারের ভাগ্য ভয় ও দ্বিধার সুতোয় ঝুলছিল। তিনি ভাবছিলেন, হাসানের দেয়া বিবরণী সুলতানের পছন্দ হলে অবশ্যই তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেবেন; কিন্তু মালিক শাহ তো সাধারণ কোন সুলতান ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী, আলিম, দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান সুলতান। তিনি প্রতিবেদনের কয়েকটি পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখার পর হাসানের কাছে কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা তলব করেন। মূলতানের প্রশ্নের ধরন দেখে হাসানের চেহারা দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। সে উল্টোপাল্টা বলে সুলতানকে বোঝানোর চেষ্টা করে; কিন্তু বুদ্ধিমান সুলতানের কাছে বিবরণটি একটি ফালতু কাজ এবং সময়ের অপচয় হিসেবেই প্রমাণিত হয়

এ অবস্থা দেখে নিজামুল মূলক স্থির কণ্ঠে বলেন, ‘এই জটিলতার কারণেই আমি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন দিতে দু’বছরের সময় চেয়েছিলাম, যাতে আনুষঙ্গিক সব বিষয় ভাল করে খতিয়ে দেখা যায়। ক্ষুব্ধ সুলতান তখনই হাসানকে রাজদরবার, থেকে তাড়িয়ে দেন; আর এর ফলে নিজামুল মুলকের মর্যাদা আরও বেড়ে যায়।

হাসান রাজদরবার থেকে অপমানিত হয়ে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকেই তার কুটিল অন্তরে সুলতান ও নিজামুল মুলকের প্রতি শত্রুতা লালন করতে থাকে।

এবার সে নিজেই একটি বিরাট শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এ সময় ঘটনাচক্রে হাসান ভ্রান্ত ‘ইসমাইলি নিজারি’ মতবাদের সংস্পর্শে আসে। কালক্রমে সে ওই মতবাদের ধর্মগুরুতে পরিণত হয়। এরপর সে উত্তর ইরানের দুর্গম অঞ্চল কাজবিনের আকাশচুম্বী এক পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত আলামুত দুর্গকে তার কেন্দ্র বানায়। আলামুতে অবস্থানকালে হাসান ইসমাইলি মতবাদে কিছুটা পরিবর্তন এনে ‘বাতিনি’ নামে নতুন আরেক মতবাদের জন্ম দেয়।

এদিকে সুলতান মালিক শাহও তার এই সন্ত্রাসী তৎপরতায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তাকে দমনের উদ্দেশ্যে নিজামুল মুলককে একটি সেনাদলের নেতৃত্ব দিয়ে আলামুত অভিমুখে পাঠিয়ে দেন। হাসান ইবনে সাবাহ এ সংবাদ জানতে পেরে তার এক গুপ্তঘাতককে নিজামুল মুলককে খুন করার দায়িত্ব দিয়ে পাঠায়। তখন রমজান মাস ছিল। সেনাদল একজায়গায় অবকাশ যাপন করছিল। নিজামুল মুলক ইফতার সেরে তাঁর তাঁবুতে ফিরছিলেন। পথে হাসানের পাঠানো ওই গুপ্তঘাতক এক ভিখারির রূপ ধরে নিজামুল মুলকের একেবারে কাছে চলে আসে। নিজামুল মুলক তাকে অসহায় ভেবে নিজের কাছে ডাকেন। গুপ্তঘাতক এমন মুহূর্তেরই অপেক্ষায় ছিল। সে তাঁর কাছে এসেই আচমকা ধারালো বর্শা দিয়ে তাঁর বুকে আঘাত করে বসে। আঘাত এতই তীব্র ছিল যে, তিনি ঘটনাস্থলেই শহীদ হয়ে যান। তখন ছিল ১০৯১ খ্রিস্টাব্দ। নিজামুল মুলক সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর সেলজুক সাম্রাজ্যকে সেবা দিয়েছেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তার পরে হাসান ইবনে সাবাহ মুসলিমবিশ্বের নামকরা আরও বেশ ক’জন ব্যক্তিকে এভাবে হত্যা করায়। গুপ্তঘাতকদের খুনের তালিকা দীর্ঘতর হতে থাকে দিনকে দিন। নিহত হন মন্ত্রী আবদুর রহমান আল-সুমায়রামী (১০৯৭), উন রুবুলকা (১১০০), জানাহ উদ্দৌলাহ (১০৯৭), নিশাপুরের কাজি আবুল আলা সায়ীদ (১১০৫- ৬), নিজামুল মুলকের ছেলে ফাখরুল মুলক (১১০৬), মাউদুদ (১১১৩-১৪), বাগদাদের আহমদ বিন ওয়াহ সুদান (১১১৬-১৭), কাজি সায়ীদ আল হালবী (১১২৫), আবদুল লতীফ আল খুজান্দী (১১২৯), ফাতেমীয় খলিফা আল আমির বি আমরিল্লাহ (১১৩৯), ফাতেমীয় মন্ত্ৰী আবু আলী বিন আফজাল (১১৩২), আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতারশিদ (১১৩৫) এবং তাঁর পুত্র আর রাশিদ (১১৩৭) প্রমুখ ব্যক্তিত্ব।

হাসান ইবনে সাবাহ ১১২৪ সালে মারা যাওয়ার পরও তার অনুসারীরা সংঘবদ্ধভাবেই তার মিশন চালিয়ে যেতে থাকে। যুগে যুগে বিভিন্ন শাসক আলামুত দুর্গে হানা দিয়ে ওদের এই ষড়যন্ত্রের আখড়া গুঁড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন; কিন্তু কেউই দুর্গটি জয় করতে পারেননি। সুলতান শিহাবুদ্দিন ঘুরির মত পরাক্রমশালী মহান সুলতানও অভিশপ্ত হাসানের গুপ্তঘাতকদের হাতে শহীদ হন। সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবির মত ইতিহাসের মহানায়কের ওপর এই অভিশপ্ত সম্প্রদায় বার বার প্রাণঘাতী আক্রমণ চালায়। ইমাম রাজির মত বিশ্বখ্যাত আলিমও ওই অভিশপ্তদের মৃত্যুপরোয়ানা মাথায় বহন করে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।

হাসানের বপন করা বিষবৃক্ষ প্রায় শতাব্দীব্যাপী মুসলিমদের জীবন দুর্বিষহ করে রেখেছিল।

অবশেষে ১২৫৭ খ্রিস্টাব্দে হালাকু খান আলামুতে হামলা করে স্বপ্নের দুর্গ চিরতরে ধ্বংস করে দেন। সিরিয়ায়ও গুপ্তঘাতকদের উপর চূড়ান্ত আঘাত করেছিলেন সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স। তাঁর আক্রমণে তাদের সিরিয়ার ঘাঁটি ধ্বংস হয়। বেশিরভাগ গুপ্তঘাতকই নিহত হয়। তারপরও এই সম্প্রদায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়নি। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, ইরান ও সিরিয়ায় তাদের অনুসারীরা বিদ্যমান। প্রিন্স করিম আগা খান বর্তমানে এই ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু।

সূত্র : রহস্য পত্রিকা ৩৯বর্ষ ১১ সংখ্যা সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে সংগৃহীত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88