ইসলামী ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পৃষ্ঠা লিখেছেন যিনি!

ইসলামী ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লিখেছেন যিনি তাঁর ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে আল্লামা হাজবী রহিমাহুল্লাহ (১২৯১-১৩৭৬ হি) বলছেন,
«وقد خلف في مصنفاته ما يقرب من ثلاثمائة ألف ورقة وخمسين ألف ورقة، وهذه أغنى التركات العلمية فيما بلغنا، فتبارك الله أحسن الخالقين»
“আর তিনি তাঁর রচনাবলীর মাধ্যমে সকলকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন, যা সাড়ে তিন লক্ষ পৃষ্ঠার কাছাকাছি পৌঁছেছে। এটিই সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ইল্‌মী সম্পত্তি যা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। অতএব ভাবুন বরকতময় আল্লাহ কতোই না চমৎকার স্রষ্টা!” [১]

ইসলামী ইতিহাসে এই বিজয়মাল্য যিনি অর্জন করেছেন তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করতে ইমাম আল-হুসাইন আল-জুয়ানী (৪২৭-৪৯৮ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
«هو أكثر أهل الإسلام تصنيفًا»
“লেখালেখির জগতে মুসলিমদের মাঝে তিনিই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন।” [২]
.
কিরাআতশাস্ত্রের পণ্ডিত আবূ আলী আল-আহওয়াযী (৩৬২-৪৪৬ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
له في جميع ذلك تصانيف فاق بها على سائر المصنفين
“তিনি তাঁর সমগ্র রচনাবলীর বদৌলতে সকল লেখকের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছেন।” [৩]
.
এই মহান ইমামের ছাত্র ইমাম আবূ মুহাম্মাদ আল-ফারগানী (৩৬২ হি) রহিমাহুল্লাহ তাঁর উস্তাদ প্রসঙ্গে বলেন,
أن قوما من تلاميذه لخصوا أيام حياته من لدن بلغ الحلم إلى أن توفي وهو ابن ‌ست ‌وثمانين سنة، ثم قسموا عليها أوراق مصنفاته، فصار لكل يوم ‌أربع ‌عشرة ‌ورقة، وهذا لا يتهيأ لمخلوق إلا بكرم وعناية الباري سبحانه وتأييده
“তাঁর শিষ্যদের একটি দল তাঁর বুদ্ধিমত্তা হওয়ার বয়স হতে শুরু করে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর জীবনের দিনগুলিকে আলাদা করে গণনা করে দেখেছে। (মৃত্যুর সময়) তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৬ বছর। ছাত্ররা আলাদা করে গণনা করা দিনগুলিকে তাঁর মোট রচনার পৃষ্ঠাসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলো; তাতে দিন প্রতি তাঁর পৃষ্ঠাসংখ্যা চৌদ্দতে পৌঁছায়। পবিত্র সেই কারিগরের বদান্যতা, তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোনো মাখলূকের জন্য এ কাজ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।” [৪]
.
এই বিস্ময়কর ঘটনা উল্লেখ করার পর শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (১৩৩৬-১৪১৭ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
تبارك الله ماذا تبلغ الهمم!
“আল্লাহ কতোই না বরকতময়, তাঁর হিম্মত কোথায় পৌঁছেছে!” [৫]
.
এই বিজ্ঞ ইমাম একদিন তাঁর সঙ্গী-সাথীদের উদ্দেশ্য করে বললেন,
«أتنشطون لتفسير القرآن؟ قالوا: كم يكون قدره؟ قال: ثلاثون ألف ورقة، فقالوا: هذا مما تفنى الأعمار قبل تمامه، فاختصره في نحو ثلاثة آلاف ورقة. ثم قال: تنشطون لتاريخ العالم من آدم إلى وقتنا هذا؟ قالوا: كم قدره؟ فذكر نحوا مما ذكره في التفسير، فأجابوه بمثل ذلك، فقال:
إنا لله ماتت الهمم، فاختصره في نحو مما اختصر التفسير»
“তোমাদের কি পূর্ণ একটি কুরআনের তাফসীর পড়ার মতো ধৈর্য্য হবে?” তারা বললো, “কতো পৃষ্ঠার?” তিনি বললেন, “৩০ হাজার পৃষ্ঠা।” তারা বললো, “এ কাজ পূর্ণ করার পূর্বেই আপনার হায়াত ফুরিয়ে যাবে!” এ মন্তব্যের ভিত্তিতে তিনি একে সংক্ষেপ করে প্রায় ৩ হাজার পৃষ্ঠায় এনে দাঁড় করালেন। তিনি আবারও বললেন, “তোমাদের কি এমন একটি ইতিহাসগ্রন্থ পাঠ করার মতো ধৈর্য্য হবে যাতে আদম (আলাইহিস সালাম) হতে আমাদের আজকের যুগ পর্যন্ত পুরো পৃথিবীর ইতিহাস থাকবে?” তারা বললো, “কতো পৃষ্ঠা হবে?” উত্তরে তাফসীর গ্রন্থের ব্যাপারে যা বলেছিলেন হুবহু তাই বললেন (অর্থাৎ ৩০ হাজার পৃষ্ঠা)। তারাও আগের মতোই উত্তর দিলো। জবাবে তিনি বললেন, “ইন্না লিল্লাহ (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য), হিম্মত আজ মরে গেছে!” অতএব তিনি একে তাফসীরগ্রন্থের মতো করেই সংক্ষেপ করলেন (প্রায় ৩ হাজার পৃষ্ঠায়)।” [৬]
.
পাঠক এবার নিশ্চয়ই আপনারা ধরে ফেলেছেন যে, ইসলামী ইতিহাসে ইতিহাস গড়া এই মহান ব্যক্তিটি কে? তিনি হলেন ইমাম আবূ জা’ফর মুহাম্মাদ ইবনু জারীর ইবনু ইয়াযিদ ইবনু কাসীর ইবনু গালীব আত-তাবারী (২২৪-৩১০ হি) রহিমাহুল্লাহ (নামের মতোই তাঁর কাজ)! সাড়ে ৩ লক্ষ পৃষ্ঠার হিসেব দেয়া হলেও তাঁর লিখিত গ্রন্থের মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা কতো এ বিষয়ে শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ রহিমাহুল্লাহ অভিনব এক হিসাব কষেছেন, তিনি বলেন,
«وقد ولد ابن جرير سنة 224، وتوفي سنة 310، فعاش 86 سنة، وإذا طرحنا منها سنه قبل البلوغ وقدرناها بأربع عشرة سنة، يكون قد بقي ابن جرير ثنتين وسبعين سنة يكتب كل يوم 14 ورقة، فإذا حسبنا أيام الاثنين والسبعين سنة، وجعلنا لكل يوم منها 14 ورقة تصنيفا، كان مجموع ما صنفه الإمام ابن جرير نحو 358 ألف ورقة.
وقد اعتبروا كلاً من ((تاريخه)) و ((تفسيره)) نحو ثلاثة آلاف ورقة، فيكون الكتابان مجموعهما نحو سبعة آلاف ورقة أو ثمانية آلاف ورقة. وقد جاء التاريخ مطبوعا في أحد عشر جزءا كبيراً، وجاء التفسير مطبوعاً في ثلاثين جزءا كبيراً، من الأجزاء الكبار التي يكون كل جزء منها مجلداً.
فاحسب حساب الباقي من أوراق مصنفاته، وهو 351 ألف ورقة، لتعرف كم تبلغ مؤلفات هذا الإمام، الذي كان في علومه بمثابة مجمع علمي واسع الفنون، وفي كثرة تآليفه بمثابة دار للنشر، وهو فرد واحد بنفسه، يكتب بقلمه لنفسه، ويؤلف على ورقة بنفسه، ويخرج للناس فكره وعلمه: عسلا مصفى وزبدا شهيا، وما كان يكون له كل ذلك، لولا أنه كان يكسب وقته، ويدري كيف يملؤه بالاستفادة والتأليف»
“ইবনু জারীরের জন্ম ২২৪ (হিজরী) সনে। ইন্তেকাল করেন ৩১০ (হিজরী) সনে। মোট বেঁচেছিলেন ৮৬ বছর। তাঁর বয়স্প্রাপ্তির পূর্বের বছরগুলো আমরা যখন বাদ দিয়ে দিবো এবং তা ১৪ বছর বলে গণনা করবো, তখন ইবনু জারীরের বাকী থাকবে আর ৭২ বছর। প্রতিদিন তিনি ১৪ পৃষ্ঠা করে লিখেছেন। আমরা যখন ৭২ বছরের দিনগুলো এবং প্রতিদিনের জন্য ১৪ পৃষ্ঠা করে বরাদ্দ করে পূর্ণ হিসাব সামনে রাখবো, তখন ইমাম ইবনু জারীরের সমগ্র রচনাসম্ভার ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার পৃষ্ঠায় গিয়ে পৌঁছাবে।
তাঁর তারীখ (ইতিহাস) ও তাফসীর গ্রন্থ হিসেবে প্রায় ৩ হাজার করে পৃষ্ঠা। দু’টি কিতাব মিলিয়ে যা ৭ হাজার বা ৮ হাজার পৃষ্ঠা হয়। বর্তমানে তাঁর ইতিহাস গ্রন্থ বৃহৎ কলেবরের ১১ খন্ডে ছেপে এসেছে। একইভাবে তাফসীরগ্রন্থও বিশালাকারে ৩০ খন্ডে ছেপে এসেছে। প্রতিটি খন্ডই বিশাল ঢাউস সাইজের।
এই ইমামের রচনাবলী কোন অবধি পৌঁছেছে তা বোঝার জন্য তাঁর বই-পুস্তকের বাকী পৃষ্ঠাগুলোও আমরা হিসাব করে ফেলি, হিসেব করলে এটি দাঁড়ায় ৩ লক্ষ ৫১ হাজার পৃষ্ঠায়।
তাঁর ইল্‌মের ব্যাপ্তী ও গভীরতা বিবেচনা করলে অনুভূত হবে- এ যেন বহু শাস্ত্র ও বিষয়সংবলিত এক বিশ্বকোষ। আর তাঁর রচনাসম্ভার দেখলে মনে হয় তা যেন বিশাল কোনো প্রকাশনালয়ের কীর্তি। অথচ তা একক মস্তিষ্কপ্রসূত, একক কলম নিঃসৃত, একক প্রচেষ্টায় পৃষ্ঠার মাঝে সন্নিবেশিত। মানুষের কল্যাণে তিনি তাঁর চিন্তা ও জ্ঞানকে উপস্থাপন করেছেন; তা যেন পরিশোধিত মধু ও দুধ হতে তোলা রুচিশীল মাখন। এর কোনোটিই সম্ভব হতো না, যদি না তিনি তাঁর সময়কে হেফাযত করতেন এবং উপকার হাসিল ও লেখালেখি করে সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা না জানতেন।” [৭]
.
ভাষাবিদ সিমসামানী (৪১৫ হি) রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন,
«أن محمد بن جرير مكث أربعين سنة يكتب في كل يوم منها أربعين ورقة»
“মুহাম্মাদ ইবনু জারীর ৪০ বছর ধরে প্রতিদিন ৪০ পৃষ্ঠা করে লিখতেন।” [৮]
.
চন্দ্রবর্ষে দিনের সংখ্যা ৩৫৪। ভাষাবিদ সিমসামানীর এ হিসেব সামনে রাখলে পৃষ্ঠাসংখ্যা দাঁড়ায়- ৪০*৩৫৪*৪০ = ৫৬৬৪০০ (৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪ শ) পৃষ্ঠা। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম!
.
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক উজির জামালুদ্দীন ক্বিফতী (৫৬৮-৬৪৬ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
«العالم الكامل الفقيه المقرىء النحوىّ اللغوىّ الحافظ الأخبارىّ. جامع العلوم، لم ير فى فنونه مثله»
“কামেল আলিম, ফকীহ, ক্বারী, নাহূবিদ, ভাষাবিদ, (হাদীসের) হাফিয, ঐতিহাসিক, ইল্‌মের সকল শাখাকে একীভূতকারী। নানাবিধ শাস্ত্রে তাঁর সমকক্ষ কাউকে দেখা যায়নি। ” [৯]
.
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক উজির জামালুদ্দীন ক্বিফতী (৫৬৮-৬৪৬ হি) রহিমাহুল্লাহ আরো বলেন,
«وله مقالة فى الفقه عملت بها العلماء»
“আর ফিক্‌হশাস্ত্রে তাঁর এমন লেখনী ছিলো যাঁর উপরে আলিমদের আমল ছিলো।” [১০]
.
ঐতিহাসিক ইবনুস সা’ঈ রহিমাহুল্লাহ তাঁর সম্পর্কে (৫৯৩-৬৭৪ হি) বলেছেন,
«وله مذهب في الفقه اختاره لنفسه، وصار أحد رؤساء الأئمة حشمة ونعمة، تخرّج بكلامه جماعة من أهل العلم، وانتشر علمه في الآفاق، واستمرّ على حشمته ونعمته العظيمة إلى آخر عمره»
“আর ফিক্‌হে তাঁর নিজের উদ্ভাবিত মাযহাব ছিলো। সেটিই তিনি নিজের জন্য এখতিয়ার করেছিলেন। শালীনতা ও ঐশ্বর্যের বদৌলতে একজন সদর ইমামে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর মতামত-সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে এক দল আলিম প্রশিক্ষণলাভ করে। তাঁর জ্ঞানের ব্যাপ্তি দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছিলো। তাঁর শালীনতা ও বিশাল ঐশ্বর্যের ওপর নির্ভর করে তাঁর ইল্‌ম তাঁর শেষ আয়ুষ্কাল পর্যন্ত টিকেছিলো।” [১১]
.
আল্লামা খতীব আল-বাগদাদী (৩৯২-৪৬৩ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
«وَقَالَ الخَطِيْبُ :مُحَمَّدُ بنُ جَرِيْرٍ بنِ يَزِيْدَ بنِ كَثِيْرِ بنِ غَالِب: كَانَ أَحَدُ أَئِمَّةِ العُلَمَاء، يُحكم بِقَوله، وَيُرجع إِلَى رأَيهِ لِمَعْرِفَتِهِ وَفَضْله، وَكَانَ قَدْ جَمَعَ مِنَ الْعُلُوم مَا لَمْ يُشَارِكْهُ فِيْهِ أَحَد مِنْ أَهْلِ عَصْره»
“মুহাম্মাদ ইবনু জারীর ইবনু ইয়াযীদ ইবনু কাসীর ইবনু গালীব হলেন আলিমদের মধ্যকার একজন ইমাম। তাঁর বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বিচার-ফয়সালাও করা হতো। তাঁর সুখ্যাতি ও মর্যাদার দিকে তাকিয়ে তাঁর রায়ের দিকে প্রত্যাবর্তন করা হতো। ইল্‌মের নানাবিধ শাখাকে তিনি এমনভাবে একত্রিত করেছিলেন যাতে তাঁর সঙ্গে তাঁর কালের কোনো মানুষ শরীক ছিলো না।” [১২]
.
একের পর এক ইমামদের প্রশংসায় ভেসেছেন তিনি। তাঁর প্রশংসায় প্রখ্যাত ঐতিহাসিক উজির জামালুদ্দীন ক্বিফতী (৫৬৮-৬৪৬ হি) রহিমাহুল্লাহ কতোই না চমৎকার বলেছেন,
«الإمام العالم العلامة، أوحد الدهر، وفريد كل عصر»
“ইমাম, আলিম, আল্লামা। সমকালীন সময়ে তিনি একাই এক জাতিতে পরিণত হয়েছিলেন। (তাঁর রেখে যাওয়া অবদানের ফলে) প্রতি যুগেই তিনি অনন্য ছিলেন।” [১৩]
.
ঐতিহাসিক ইবনুস সা’ঈ রহিমাহুল্লাহ তাঁর প্রশংসায় (৫৯৩-৬৭৪ হি) বলেন,
«كان علاّمة وقته، وإمام عصره، وفقيه زمانه»
“তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের আল্লামা, যুগের ইমাম এবং যামানার ফকীহ।” [১৪]
.
এবার তাঁর বইগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। ইমাম আবূ বাক্‌র ইবনুল ওয়াইহ (২৮০-৩৭৪ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
«فاستعاره مني أبو بكر فرده بعد سنين، ثم قَالَ: قد نظرت فيه من أوله إلى آخره، وما أعلم على أديم الأرض أعلم من محمد بن جرير»
“(ইমাম) আবূ বাক্‌র (ইবনু খুযাইমাহ / ২২৩-৩১১ হি) আমার কাছ থেকে তাবারীর তাফসীরের কিতাবটি ধার করেন। এরপর কয়েক বছর পর তা ফিরিয়ে দেন। তারপর বলেন, “আমি এ তাফসীরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ বুলিয়েছি, যমীনের বুকে মুহাম্মাদ ইবনু জারীরের চেয়ে বড় কোনো আলিম আছে বলে আমি জানি না।” [১৫]
.
এই তাফসীর সম্পর্কে আমরা আগেই আলোচনা করে এসেছি যে, এটি এমন এক তাফসীর যাতে একটি হরফও ভুল খুঁজে পাওয়া যায়নি, না নাহূর দিক থেকে না ভাষার দিক থেকে।”
.
তাঁর ছাত্র ইমাম আবূ মুহাম্মাদ আল-ফারগানী (৩৬২ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন
«قَالَ أَبُو مُحَمَّدٍ الفَرْغَانِي: تَمَّ مِنْ كُتُبِ مُحَمَّدِ بنِ جَرِيْرٍ كِتَاب (التَّفْسِيْر) الَّذِي لَوِ ادَّعَى عَالِمٌ أَنْ يصَنِّف مِنْهُ عَشْرَة كُتُبْ، كُلُّ كِتَابٍ مِنْهَا يَحْتوِي عَلَى عِلْمٍ مفرَد مستقصَىً لفعل»
“মুহাম্মাদ ইবনু জারীর যে সমস্ত কিতাব পরিপূর্ণ করে যেতে পেরেছেন তার মধ্যে রয়েছে তাঁর তাফসীরের কিতাব, যার ব্যাপারে কোনো আলিম যদি দাবী করে এখান থেকে উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করে তিনি দশটি কিতাব রচনা করবেন, তাহলে তার প্রত্যেক কিতাব ইল্‌মের একেকটি স্বতন্ত্র ধারার অভিসন্দর্ভ (থিসিস) হিসেবে গড়ে উঠবে।” [১৬]
.
এই তাফসীরের কারণে তাফসীরকারকদের মধ্যে অদ্যাবধি তিনি সর্বোচ্চ সম্মানের আসনে আসীন। ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী (৮৪৯-৯১১ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
«رأس المفسرين على الإطلاق»
“শর্তহীনভাবে তিনি ছিলেন মুফাসসিরীনদের সর্দার।” [১৭]
.
বাগদাদের অধিবাসী শাইখুল ইসলাম আল্লামা আবূ হামীদ আল ইসফারাঈনী (৩৪৪-৪০৬ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
«لو سافر رجل إلى الصين حتى يحصل له كتاب تفسير محمد بن جرير لم يكن ذلك كثيرا»
“কোনো ব্যক্তি যদি চীনে গিয়েও মুহাম্মাদ ইবনু জারীরের তাফসীর সংগ্রহ করে তারপরও (এর মর্যাদার বিচারে) এটি কম হয়ে যাবে!” [১৮]
.
তাঁর ছাত্র কাযী ইবনু কামিল (২৬০-৩৫০ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
حمل هذا الكتاب مشرقًا ومغربًا، وقرأه كل من كان في وقته من العلماء، وكل فضله وقدمه
“এই কিতাবকে (মানুষ) পূর্ব থেকে পশ্চিমে বয়ে নিয়ে গেছে। তাঁর কালে যতো আলিম ছিলেন সকলেই এই কিতাব পাঠ করেছেন। এর সবই সম্ভব হয়েছে তাঁর সুনাম-সুখ্যাতি ও অগ্রণী ভূমিকার কারণে।” [১৯]
.
এই তাফসীর লেখার পূর্বে তিনি আল্লাহর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন। তিনি নিজেই বলছেন,
«أستخرت الله وسألته العون على ما نويته من تصنيف التفسير قبل أن أعمله بثلاث سنين فأعانني»
“আমি যে তাফসীর রচনা করার মনস্থ করেছিলাম তা নিয়ে টানা তিন বছর কাজ করার পূর্বে আমি আল্লাহর দরবারে ইসতিখারা (ইসতিখারার সলাতের মাধ্যমে কল্যাণ কামনা) করেছিলাম এবং তাঁর কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, ফলে (বাস্তবেও) তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন।” [২০]
.
জাবির রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الِاسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ كُلِّهَا، كَالسُّورَةِ مِنَ القُرْآنِ
“নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে কুরআনের সূরা যেভাবে শেখাতেন, সেভাবে সকল বিষয়ে ইসতিখারা করতে শেখাতেন।” [২১]
.
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (৬৬১-৭২৮ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
ما ندم من استخار الخالق وشاور المخلوقين
“ঐ ব্যক্তি অনুতাপে ভোগেনি- যে খালিকের (স্রষ্টার) কাছে ইসতিখারা করেছে (দিক-নির্দেশনা চেয়েছে) এবং মাখলুকদের (সৃষ্টিকূলের) সঙ্গেও পরামর্শ করেছে।” [২২]
.
ইমাম আবূ জা’ফর আত-তাবারী রহিমাহুল্লাহ তাঁর তাফসীরের জন্য বিখ্যাত হলেও ইসলামী ইতিহাসে পৃষ্ঠাসংখ্যা বিবেচনায় সবার শীর্ষে পৌঁছাতে তাঁকে আরো অনেক গ্রন্থ রচনা করতে হয়েছে। এবার আমরা তাঁর তাফসীর গ্রন্থের বাইরে তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ নিয়েও জানবো ইন শা আল্লাহ। ইমাম ইবনুল জাওযী (৫০৮-৫৯৭ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
وتصانيفه كثيرة منها: كتاب «التاريخ»، وكتاب «التفسير» و «تهذيب الآثار» إلا أنه لم يتمم تصنيفه وله في أصول الفقه وفروعه كتب كثيرة
“তাঁর অসংখ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছেঃ তারীখের (ইতিহাসের) গ্রন্থ, তাফসীরগ্রন্থ, তাহযীবুল আসার (নামক গ্রন্থ) যে গ্রন্থটি তিনি পরিপূর্ণ করে যেতে পারেননি। এছাড়াও উসূলুল ফিক্‌হ (ফিক্‌হের মূলনীতি) ও শাখাগত বিষয়ে তাঁর অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে।” [২৩]
.
কিরাআতশাস্ত্রের পণ্ডিত আবূ আলী আল-আহওয়াযী (৩৬২-৪৪৬ হি) রহিমাহুল্লাহ ইমাম তাবারীর কিরাআতশাস্ত্র বিষয়ক কিতাব সম্পর্কে বলছেন,
وله في القراءات كتاب جليل كبير رأيته في ثماني عشرة مجلدة الا [أنه] كان بخطوط كبار ذكر فيه جميع القراءات من المشهور والشواذ
“আর কিরাআতশাস্ত্রে তাঁর মস্ত বড় এক কিতাব রয়েছে। যা অতীব গৌরবময় এক কিতাব। আমি দেখেছি কিতাবটি ১৮ খন্ড বিশিষ্ট। তবে এর হস্তলিপি একটু বড় অক্ষরের। এতে মশহুর ও শায (বিচ্ছিন্ন) সকল কিরাআতই স্থান পেয়েছে।” [২৪]
.
ছোট করে ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী রহিমাহুল্লাহর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের একটি তালিকা দেখে নেয়া যাকঃ
(১) জামি’উল বায়ান আন তাবীলি আয়িল কুরআন (তাফসীরু তাবারী)
(২) তারীখুর রুসুলি ওয়াল মুলূক (তারীখুত তাবারী)
(৩) তারীখুর রিজাল (সাহাবী ও তাবিঈদের থেকে শুরু করে তাঁর সঙ্গে যেসব শাইখদের সাক্ষাৎ হয়েছে তাঁদের জীবনী)
(৪) লাতীফুল ক্বওল ফী আহকামি শারায়ি’ঈল ইসলাম (এটি তাঁর নিজের উদ্ভাবিত মাযহাবের পক্ষে দলীল)
(৫) আল-ক্বিরাআতু ওয়াত তানযীলু ওয়াল ‘আদাদ
(৬) ইখতিলাফু উলামায়িল আমসার
(৭) আল-খফীফু ফী আহকামি শারায়ি’ঈল ইসলাম
(৮) আত-তাবসীর
(৯) আল-মাহাদ্বিরু ওয়াস সিজিল্লাত
(১০) আল-মানাসিক
(১১) শারহুস সুন্নাহ (তাঁর মাযহাব ও আকীদার বিস্তারিত বর্ণনা) [২৫]
.
বড় বড় অনেক লেখকের জীবনে দেখা যায় তারা একইসঙ্গে একাধিক গ্রন্থের কাজ ধরেন, কৈশোর থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত লিখে যাওয়াই যেন তাদের কাজ। লিখতে লিখতে কীর্তিমান লেখকদের অনেক লেখনী অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়, লেখনীজগতে শীর্ষস্থান অধিকারী ইমাম তাবারীও এর ব্যতিক্রম নন। স্বভাব লেখক ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহ তাঁর একাধিক গ্রন্থকে পূর্ণতা দেয়ার পূর্বেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এবার আমরা ইমাম তাবারীর রেখে যাওয়া অপূর্ণাঙ্গ কিছু গ্রন্থ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহুল আযীয। আল্লামা খতীব আল-বাগদাদী (৩৯২-৪৬৩ হি) রহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘তাহযীবুল আসার’ সম্পর্কে বলেন,
وَكِتَاب سَمَّاهُ (تَهْذِيْب الآثَار) لَمْ أَرَ سِوَاهُ فِي مَعْنَاهُ، لَكِن لَمْ يُتِمَّه»
“তাঁর একটি গ্রন্থ, তিনি যার নামকরণ করেছেন ‘তাহযীবুল আসার’, এ বিষয়ে এর সমকক্ষ কোনো গ্রন্থ দেখা যায়নি, কিন্তু তিনি তা পরিপূর্ণ করে যেতে পারেননি।” [২৬]
.
তাঁর বিস্ময়কর গ্রন্থ ‘তাহযীবুল আসার’ প্রসঙ্গে তাঁর ছাত্র ইমাম আবূ মুহাম্মাদ আল-ফারগানী (৩৬২ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
«وَابتدأَ بِتَصْنِيف كِتَاب (تَهْذِيْب الآثَار) وَهُوَ مِنْ عجَائِب كتبه، ابْتِدَاء بِمَا أَسنده الصِّدِّيقُ مِمَّا صَحَّ عِنْدَهُ سَنَدُهُ، وَتكلَّم عَلَى كُلِّ حَدِيْثٍ مِنْهُ بِعِلَلِهِ وَطُرُقه، ثُمَّ فِقْهه، وَاخْتِلَاف العُلَمَاء وَحججهُم، وَمَا فِيْهِ مِنَ المَعَانِي وَالغَريب، وَالرَّدّ عَلَى المُلْحِدين، فَتَمَّ مِنْهُ مسندُ العشرَةِ وَأَهْل البَيْت وَالموَالِي، وَبَعْض (مُسْند ابْن عَبَّاسٍ) ، فَمَاتَ قَبْلَ تَمَامِه.
قُلْتُ: هَذَا لَوْ تمَّ لكَانَ يَجِيْءُ فِي مائَة مُجَلَّد»
“তাহযীবুল আসার’ গ্রন্থটি লেখার কাজ তিনি সূচনা করেছিলেন। এটি তাঁর বড়ই আজীব এক গ্রন্থ। তিনি তাঁর নিকটে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া (আবূ বকর) আস-সিদ্দীক (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর বর্ণনাগুলো দ্বারা গ্রন্থের সূচনা করেছেন। প্রত্যেক হাদীসের ইল্লত (সূক্ষ্ম ত্রুটি) ও তুরুক (এক হাদীসে থাকা একাধিক সনদ) নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। এরপর হাদীসের ফিক্‌হ, আলিমদের মতভিন্নতা ও তাঁদের দলীল-আদিল্লা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ করেছেন হাদীসের গভীর মর্ম ও গরীব বর্ণনাগুলোও। মুলহিদ বা দীনের বিরোধিতাকারীদেরকেও তিনি খন্ডন করেছেন। তবে তিনি শুধু মুসনাদুল আশারাহ (বিশিষ্ট দশ মুহাদ্দিসের সূত্রে বর্ণিত হাদীস), আহলুল বাইতদের (নবী পরিবারের বর্ণিত) হাদীস, মাওয়ালী (অনারবদের বর্ণিত) হাদীস, মুসনাদু ইবনু আব্বাস (ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীস) এর কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন। কাজটিকে পূর্ণতা দেয়ার পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেন।”
আমি [শামসুদ্দীন যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হি)] বলবো, “কাজটিকে যদি তিনি পূর্ণতা দিতে পারতেন তাহলে অবশ্যই এটি ১০০ খন্ডে ছেপে আসতো।” [২৭]
.
পাঠক, ১০০ খন্ডের এ কিতাব যদি তিনি সত্যিই পূর্ণ করে যেতে পারতেন তাহলে তাঁর রচনাসম্ভারের মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা কোথায় পৌঁছাতো একবার কল্পনা করুন! উস্তাদ রচিত কিতাবের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে ইমাম আবূ মুহাম্মাদ আল-ফারগানী রহিমাহুল্লাহ আরো বলছেন,
«وَابتدأَ بِكِتَابه (البَسيط) فَخَرَجَ مِنْهُ كِتَاب (الطهَارَة) فَجَاءَ فِي نَحْوٍ مِنْ أَلفٍ وَخَمْسِ مائَة وَرقَة، لأَنَّه ذكرَ فِي كُلِّ بَابٍ مِنْهُ اخْتِلَافَ الصَّحَابَة وَالتَّابِعِيْنَ، وَحجَّة كُلِّ قَوْل، وَخَرَجَ مِنْهُ أَيْضاً أَكْثَر كِتَاب الصَّلَاة، وَخَرَجَ مِنْهُ آدَاب الْحُكَّام»
“আর একইভাবে তিনি তাঁর কিতাব ‘আল-বাসীত্ব’ এর কাজ শুরু করেছিলেন। এ কিতাবে ‘কিতাবুত ত্বহারাত’ বা ‘পবিত্রতা বিষয়ক অধ্যায়’ নামে একটি অধ্যায় সন্নিবেশিত করেন। তা দিয়েই ভরে ফেলেছেন ১৫০০ পৃষ্ঠা। কেননা প্রত্যেক পরিচ্ছেদে তিনি সাহাবী ও তাবিঈদের মতভিন্নতা এবং প্রত্যেক মতামতের দলীল উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ‘কিতাবুস সলাত’ বা ‘সলাত বিষয়ক অধ্যায়’ এর কাজও অনেকাংশে শেষ করে ফেলেছিলেন। এ গ্রন্থে বিচারকের আদব নিয়েও তিনি আলোচনা করেন।” [২৮]
.
ইমাম আবূ মুহাম্মাদ আল-ফারগানী রহিমাহুল্লাহ আরো বলছেন
«وَكِتَاب (تَرْتِيْب العُلَمَاء) وَهُوَ مِنْ كتبه النفيسَة، ابتدأَه بآدَاب النُّفُوْسِ وَأَقوَال الصُّوْفِيَّة، وَلَمْ يُتِمَّه»
“তাঁর আরেকটি গ্রন্থ ‘তারতীবুল উলামা’। এটি তাঁর মূল্যবান গ্রন্থগুলোর একটি। এটির সূচনা তিনি করেছেন আত্মশুদ্ধি বিষয়ক শিষ্টাচার মূলক আলোচনা ও সূফীদের কথাবার্তা দ্বারা। তবে এটিকেও তিনি পূর্ণতা দিয়ে যেতে পারেননি।” [২৯]
.
আবূ মুহাম্মাদ আল-ফারগানী (৩৬২ হি) রহিমাহুল্লাহ তাঁর উস্তাদের অপরিপূর্ণ কিতাবের তালিকা দিতে গিয়ে আরো বলছেন,
«وَكِتَابه (المُسْنَد) المخرَّج، يَأْتِي فِيْهِ عَلَى جَمِيْعِ مَا رَوَاهُ الصَّحَابِيُّ مِنْ صَحِيْحٍ وَسقيمٍ، وَلَمْ يُتِمَّه، وَلَمَّا بلغه أَنَّ أَبَا بَكْرٍ بنَ أَبِي دَاوُدَ تَكَلَّمَ فِي حَدِيْث غَدِيْر خُمّ، عَمل كِتَاب (الفَضَائِل) فَبدأَ بِفضل أَبِي بَكْرٍ، ثُمَّ عُمَر، وَتكلَّم عَلَى تَصْحِيْحِ حَدِيْث غَدِير خُمّ، وَاحتجَّ لِتَصْحِيْحِهِ، وَلَمْ يتمَّ الكِتَاب»
“তাঁর আরেকটি প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে ‘আল-মুসনাদ’, যাতে তিনি সাহাবীদের কাছ থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ ও দুর্বল সকল বর্ণনা নিয়ে এসেছেন। তবে এটিও তিনি পরিপূর্ণ করে যেতে পারেননি। যখন তাঁর নিকট খবর পৌঁছালো যে, আবূ বাক্‌র ইবনু আবী দাঊদ (রহিমাহুল্লাহ / ২৩০-৩১৬ হি) গাদীরে খুমের (গাদীরে খুম নামক স্থানে দেয়া ভাষণ বিষয়ক) হাদীসের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন, তখন তিনি ‘’আল-ফাযায়িল’ কিতাবটি লেখার কাজ শুরু করেন। ধারাবাহিকভাবে তিনি আবূ বকর (রদিয়াল্লাহু আনহু) এরপর উমার (রদিয়াল্লাহু আনহু) এর মর্যাদা বর্ণনার মধ্য দিয়ে কিতাবটির সূচনা করেন। এ কিতাবে তিনি গাদীরে খুমের হাদীসকে সহীহ বলে মন্তব্য করেন এবং এর সহীহ হওয়ার পক্ষে দলীল উপস্থাপন করেন। তবে এটিও তিনি পরিপূর্ণ করে যেতে পারেননি।” [৩০]
.
ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
«وَلأَبِي جَعْفَرٍ ‌فِي ‌تآلِيفه ‌عبارَةٌ ‌وَبلاغَة»
“আবূ জা’ফরের রচনাবলী মর্মভেদী ও অলঙ্কারপূর্ণ।” [৩১]
.
ইমাম তাবারী সম্পর্কে শাইখ আবূত ত্বয়্যিব আল-মানসূরী বলেন,
«أوحد زمانه في التفسير والفقه والتاريخ والقراءات»
“তাঁর যুগে তাফসীর, ফিক্‌হ, ইতিহাস ও কিরাআতশাস্ত্রে তাঁর একক দখলদারিত্ব ছিলো।” [৩২]
.
লেখালেখিতে যারা এগিয়ে থাকতে চায় তাদের অনুধাবনশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং স্মৃতিশক্তি বেশ প্রখর হতে হয়। ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে তাঁর ছাত্র কাযী ইবনু কামিল (২৬০-৩৫০ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
«أربعة كنت أحب بقاءهم أبو جفر الطبري والبربري وأبو عبد الله بن أبي خيثمة والمعمري فما رأيت أفهم منهم ولا أحفظ»
“চারজন ব্যক্তি- যাদের বেঁচে থাকা আমার কাছে বড়ই ভালোবাসার: আবূ জা’ফর আত-তাবারী (রহিমাহুল্লাহ / ২২৪-৩১০ হি), আল-বারবারী (রহিমাহুল্লাহ / ২১৩-২৯৪ হি), আবূ আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ খাইসামাহ (রহিমাহুল্লাহ / ২৯৭ হি) এবং আল-মা’মারী (রহিমাহুল্লাহ / ২১০-২৯৫ হি)। (জ্ঞান) অনুধাবন ও মুখস্ত শক্তিতে তাঁদের চেয়ে এগিয়ে থাকা কাউকে আমি দেখিনি।” [৩৩]
.
ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহ নিজেই নিজের সম্পর্কে বলছেন,
«حفظت القرآن ولي سبع سنين، وصليت بالناس وأنا ابن ثماني سنين، وكتبت الحديث وأنا ابن تسع سنين، ورأى لي أبي في النوم أنني بين يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكان معي مخلاة مملوءة حجارة وأنا أرمي بين يديه، فقال له المعبر: إنه إن كبر نصح في دينه وذبّ عن شريعته، فحرص أبي على معونتي على طلب العلم وأنا حينئذ صبي صغير»
“সাত বছর বয়সে আমি কুরআন মুখস্ত করি। আট বছর বয়স থেকে মানুষের সাথে সলাত আদায় শুরু করি। হাদীস লিখতে শুরু করি নয় বছর বয়সে। নিদ্রাবস্থায় আমার পিতা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন যে, আমি আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে আছি। আমার সাথে আছে পাথরভর্তি থলি, সেগুলো আমি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বসেই ছুড়ে মারছিলাম। স্বপ্নের ব্যাখ্যাকার আমার পিতাকে বললেন, “সে বড় হলে দীনের কল্যাণকামী হবে এবং শরীয়তকে প্রতিরক্ষা করবে।” তখন আমার পিতা আমাকে ইল্‌ম তলবে সার্বিক সহায়তা দিতে উদ্ধুদ্ধ হলেন। আমি তখন ছোট্ট বালক।” [৩৪]
.
স্বপ্নের ব্যাখ্যা যে সত্যিই ফলেছিলো তা আমাদের সামনে দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার। তাঁর হিফ্‌যশক্তি ও কল্পনাশক্তি/মেধাশক্তি কেমন ছিলো সে সম্পর্কে আমরা আরো জানার চেষ্টা করছি। ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহ নিজেই বলছেন,
«حضرت باب داره مع أصحاب الحديث، فاطّلع من باب خوخة له، وأصحاب الحديث يلتمسون الدخول ويضجّون، فقال: أيكم يحفظ ما كتب عني؟ فالتفت بعضهم إلى بعض ثم نظروا إلي وقالوا: أنت تحفظ ما كتبت عنه، قال قلت: نعم، فقالوا: هذا فسله، فقلت: حدثتنا في كذا بكذا وفي يوم كذا بكذا. قال: وأخذ أبو كريب في مسألة إلى أن عظم في نفسه فقال له: ادخل إليّ، فدخل إليه وعرف قدره على حداثته، ومكّنه من حديثه. وكان الناس يسمعون به فيقال إنه سمع من أبي كريب أكثر من مائة ألف حديث»
“আসহাবুল হাদীসদের (হাদীসের ছাত্রদের) সাথে আমি (মুহাদ্দিসদের শাইখ) আবূ কুরাইব (রহিমাহুল্লাহ / ১৬১-২৪৮ হি) এর বাড়ির সামনে হাজির হলাম। তিনি খিড়কি দিয়ে উঁকি মেরে আমাদের দেখলেন। হাদীসের ছাত্ররা ভেতরে প্রবেশ করার পথ খুঁজলো এবং শোরগোল শুরু করে দিলো। তিনি বললেন, “আমার থেকে যা লিখে নিয়েছে তোমাদের মধ্যে তা কার মুখস্ত আছে?” তাঁরা সকলেই একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলো, এরপর সবাই মিলে আমার দিকে তাকালো, তাঁরা বললো, “তুমি তো তাঁর কাছ থেকে যা লিখেছো তা মুখস্ত পারো!” আমি বললাম, “হ্যাঁ।” তারপর তারা বললো, “তাহলে বর্ণনা করো।” আমি বললাম, “আপনি আমাদেরকে অমুক অমুক দিনে এই এই বর্ণনা করেছেন।” আরেকবার আবূ কুরাইবের নিকট একটি মাসয়ালা জটিল মনে হলো। তিনি তাঁকে বললেন, “আমার নিকট প্রবেশ করো।” তিনি তাঁর কাছে প্রবেশ করলেন, মাসয়ালার সমাধান করে দিলেন এবং মাসয়ালা সংশ্লিষ্ট হাদীসকেও শক্তিশালী প্রমাণ করলেন। এদিকে লোকেরাও তাঁর কাছ থেকে হাদীস শোনা শুরু করলো। বলা হয়, তিনি আবূ কুরাইবের কাছ থেকে ১ লক্ষেরও বেশি হাদীস শুনেছিলেন। [৩৫]
.
ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী রহিমাহুল্লাহ এমন ঈর্ষণীয় অবস্থানে কিভাবে পৌঁছালেন? নিঃসন্দেহে এজন্য তাঁকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়েছে। এবার আমরা তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা ও পরিশ্রমের গল্প শুনবো ইন শা আল্লাহ। আবূল আব্বাস আল-বকরী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
«جمعت الرحلة بين محمد بن جرير، ومحمد بن إسحاق بن خزيمة، ومحمد بن نصر المروزي، ومحمد بن هارون الروياني بمصر، فأرملوا ولم يبق عندهم ما يقوتهم، وأضر بهم الجوع، فاجتمعوا ليلة في منزل كانوا يأوون إليه، فاتفق رأيهم على أن يستهموا ويضربوا القرعة، فمن خرجت عليه القرعة سأل لأصحابه الطعام، فخرجت القرعة على محمد بن إسحاق بن خزيمة، فقال: لأصحابه أمهلوني حتى أتوضأ وأصلي صلاة الخيرة، قَالَ: فاندفع في الصلاة فإذا هم بالشموع وخصي من قبل والي مصر يدق الباب، ففتحوا الباب فنزل عن دابته، فقال: أيكم محمد بن نصر؟ فقيل: هو هذا.
فأخرج صرة فيها خمسون دينارا فدفعها إليه، ثم قَالَ: أيكم محمد بن جرير؟ فقالوا: هو ذا فأخرج صرة فيها خمسون دينارا فدفعها إليه، ثم قَالَ: أيكم محمد بن هارون؟ فقالوا: هو ذا فأخرج صرة فيها خمسون دينارا فدفعها إليه، ثم قَالَ: أيكم محمد بن إسحاق بن خزيمة؟ فقالوا: هو ذا يصلي، فلما فرغ دفع إليه الصرة، وفيها خمسون دينارا، ثم قَالَ: إن الأمير كان قائلا بالأمس فرأى في المنام خيالا قَالَ: إن المحامد طووا كشحهم جياعا، فأنفذ إليكم هذه الصرار، وأقسم عليكم إذا نفدت فابعثوا إلي أمدكم»
“একবার মিসরে মুহাম্মাদ ইবনু জারীর (রহিমাহুল্লাহ / ২২৪-৩১০), মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক ইবনু খুযাইমা (রহিমাহুল্লাহ /২২৩-৩১১ হি), মুহাম্মাদ ইবনু নাসর আল-মারওয়াযী (রহিমাহুল্লাহ / ২০২-২৯৪ হি) এবং মুহাম্মাদ ইবনু হারুন আর-রূওয়ানীর (রহিমাহুল্লাহ / ২১০-৩০৭ হি) সফরযাত্রা একইসঙ্গে মিলে গেলো। তাঁদের কাছে না কোনো অর্থকড়ি ছিলো, না ক্ষুধা মেটানোর মতো কোনো আহার্য ছিলো। ক্ষুধার জ্বালা তাদের বড়ই অস্থির করে রাখতো।
তাঁরা চারজন একরাতে একটি ঘরে একত্রিত হয়ে আশ্রয় নিলেন। একসময় তাঁদের সবার মনে এই চিন্তার উদয় হলো যে, তাঁরা একজনকে খাবারের দায়িত্ব দিতে লটারি ধরবেন, লটারিতে যাঁর নাম আসবে সে সাথীদের জন্য খাদ্য যাঞ্চা করে নিয়ে আসবে। লটারিতে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক ইবনু খুযাইমার নাম বের হলো।
মুহাম্মাদ ইবনু খুযাইমা সবাইকে বললেন, “আমাকে সামান্য সময় দিন যেন আমি ওযু করে ইসতিখারার সলাত পড়তে পারি। তারপর তিনি সলাতে নিমগ্ন হলেন, সাথে সাথেই দেখা গেলো মিসরের গভর্নরের পক্ষ হতে জনৈক ব্যক্তি প্রদীপ হাতে দরজায় কড়া নাড়ছে। তাঁরা দরজা খুলে দিলে তিনি জন্তুর বাহন তিনি অবতরণ করলেন। তারপর বললেন, “আপনাদের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবনু নাসর কে?” তাঁর দিকে ইশারা করে বলা হলো,” এই তো তিনি।” অতঃপর লোকটি একটি থলে বের করলেন, যাতে ৫০ দীনার ছিলো। তিনি তাঁকে তা প্রদান করলেন।
এরপর বললেন, “আপনাদের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবনু জারীর কে?” তাঁরা বললেন, “এই তো তিনি।” লোকটি তাঁকেও ৫০ দীনারের একটি থলে বের করে দিলেন। তিনি বললেন, “আপনাদের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক ইবনু খুযাইমা কে?” তাঁরা বললেন, “এই তো তিনি সলাত আদায় করছেন, যখন তিনি সলাত শেষ করলেন তখন তাঁকেও ৫০ দীনারের একটি থলে বের করে দিলেন।”
অতঃপর বললেন, “আপনাদের মধ্যে মুহাম্মাদ ইবনু হারুন কে?” বলা হলো “এই তো তিনি।” লোকটি তাঁকেও ৫০ দীনারের একটি থলে বের করে দিলেন।
তারপর বললেন, “গতকাল (মিসরের) আমীর দুপুর বেলা ঘুমিয়ে ছিলেন। তারপর ঘুমের মধ্যেই স্বপ্ন দেখেন যে, তাঁকে বলা হচ্ছে- “নিশ্চয়ই চার মুহাম্মাদ ক্ষুধার তাড়নায় কাতর।” এরপর তিনি এই দীনারের থলে আপনাদের জন্য প্রেরণ করেন এবং এগুলো যখন ফুরিয়ে যাবে তখন তিনি এর চেয়েও বাড়িয়ে (পুনরায়) প্রেরণ করবেন।” [৩৬]
.
ইমাম আবূ ইউসুফ (১১৩-১৮৫ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
الْعِلْمُ شَيْءٌ لَا يُعْطِيكَ بَعْضَهُ حَتَّى تُعْطِيَهُ كُلَّكَ
“ইল্‌ম এমন বস্তু, যা তোমাকে তাঁর কানাকড়িও দিবে না, যতক্ষণ না তাঁকে তুমি তোমার পুরোটা দিবে।” [৩৭]
.
ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহ সময়কে কিভাবে পাই পাই করে কাজে লাগাতেন সে বিষয়ক বর্ণনা দিতে গিয়ে তাঁর ছাত্র কাযী ইবনু কামিল (২৬০-৩৫০ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
«يصف انتظام أوقات ابن جرير وأعماله رحمه الله تعالى:
((كان إذا أكل نام في الخيش – ثياب في نسجها رقة، وخيوطها غلاظ، تتخذ من مشاقة الكتان، تلبس في الحر عند النوم لبرودتها على الجسم -، في قميص قصير الأكمام، مصبوغ بالصندل وماء الورد.
ثم يقوم فيصلي الظهر في بيته، ويكتب في تصنيفه إلى العصر، ثم يخرج فيصلي العصر، ويجلس للناس يقرئ ويقرأ عليه إلى المغرب، ثم يجلس للفقه والدرس بين يديه إلى العشاء الآخرة، ثم يدخل منزله. وقد قسم ليله ونهاره في مصلحة نفسه، ودينه، والخلق، كما وفقه الله عز وجل))»
“ইবনু জারীর রহিমাহুল্লাহু তা’আলা সময়কে সুশৃংখলভাবে বিন্যাস করেছিলেন এবং কাজে লাগিয়েছিলেন:
তিনি খাওয়া-দাওয়া করে মোটা চটের কাপড়ের উপর খানিক ঘুমিয়ে নিতেন। তাঁর পরনের কাপড় হতো অত্যন্ত নিম্নমানের। কাপড়ের সুতো ছিলো পুরু। পাট কাতানের উচ্ছিষ্ট হতে এ কাপড় তৈরি। দেহে শীতলতা অনুভবের জন্য গরমের দিনে তিনি এ কাপড় পরে ঘুমাতেন। তাঁর জামার আস্তিন হতো খাটো। কাপড়খানা চন্দনকাঠ ও গোলাপজলের রঙে রাঙানো থাকতো।
ঘুম থেকে উঠে তিনি ঘরের মধ্যে যুহরের সলাত পড়তেন। এরপর আসর পর্যন্ত কিতাব লিখতে বসে যেতেন। এরপর বাইরে বেরিয়ে আসরের সলাত পড়তেন। এরপর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে মাগরিব পর্যন্ত মজলিস বসাতেন, নিজে পড়তেন, তারা (ছাত্ররাও) তাঁর সামনে পড়তো। এরপর তিনি ফিক্‌হের মজলিস বসাতেন, ইশার শেষ অবধি দরস চলতো। এরপর তিনি নিজের বাড়িতে ফিরতেন। এভাবে তিনি নিজের, দীনের ও সৃষ্টির কল্যাণের জন্য দিন ও রাতের সময়গুলোকে ভাগ ভাগ করে নিতেন, যেমনটি মহাপরাক্রমশালী মহান আল্লাহ তাঁকে তাওফীক দিয়েছিলেন।” [৩৮]
তিনি ছিলেন ইল্‌মের ভালোবাসায় চিরকুমার উলামায়ে কেরামদের একজন। তিনি বিয়েও করেননি, কোনো বাদীও রাখেননি। [৩৯] শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (১৩৩৬-১৪১৭ হি) রহিমাহুল্লাহ চিরকুমার উলামাদের জীবনী নিয়ে রচিত তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ ‘উলামায়ুল উযযাব’-এ ইমাম ইবনু জারীরের জীবনী স্থান দিয়েছেন। [৪০] ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহ একবার তাঁর ছাত্র কাযী ইবনু কামিল রহিমাহুল্লাহকে ডেকে বলছেন,
أَيُّهَا الْقَاضِي وَاللَّهِ ‌مَا ‌حَلَلْتُ ‌سَرَاوِيلِي عَلَى حَرَامٍ قَطُّ
“ওহে কাযী, আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি আমার পাজামা হারাম কোথাও কখনো খুলিনি।” [৪১]
.
উস্তাদ মুহাম্মাদ কুর্দ আলী (১২৯৩-১৩৭২ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وما أثر عنه أضاع دقيقة من حياته في غير الإفادة والاستفادة
“আর তিনি পরোপকার এবং অন্যের থেকে উপকার গ্রহণের বাইরে তাঁর জীবনের একটি সেকেন্ডও নষ্ট করেননি।” [৪২]
.
শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (১৩৩৬-১৪১৭ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
روى المعافى بن زكريا عن بعض الثقات أنه كان بحضرة أبي جعفر الطبري رحمه الله تعالى قبل موته، وتوفي بعد ساعة أو أقل منها، فذكر له هذا الدعاء عن جعفر بن محمد، فاستدعى محبرة وصحيفة فكتبه، فقيل له: أفي هذه الحال؟! فقال: ينبغي للإنسان أن لا يدع اقتباس العلم حتى الممات)). فرحمه الله وجزاه عن العلم والدين والإسلام وأهله خير الجزاء
“আল-মু’আফা ইবনু যাকারিয়া (রহিমাহুল্লাহ / ৩০৩-৩৯০ হি) জনৈক বিশ্বস্ত ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন, যিনি আবূ জা’ফর আত-তাবারী রহিমাহুল্লাহু তা’আলার মৃত্যুপূর্বসময়ে তাঁর সাথে ছিলেন, এর এক ঘন্টা পর বা তার চেয়েও কম সময়ের মাঝেই তিনি ইন্তেকাল করেন, সে ব্যক্তি বলেন, “(মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায়) তাঁর সামনে জা’ফর ইবনু মুহাম্মাদ (জা’ফর সাদিক রহিমাহুল্লাহ – ৮৩-১৪৮ হি) হতে বর্ণিত একটি দু’আ উল্লেখ করা হয়। দু’আটি শুনে তিনি নোট খাতা ও দোয়াত-কলম আনার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা লিখেও নেন। তাঁকে বলা হলো “এ অবস্থায়ও?!” তিনি বললেন, “মানুষের জন্য মৃত্যুর সময়ও ইল্‌ম অর্জন হতে বিরত থাকা উচিত নয়!” [৪৩]
আল্লামা আবূ বাক্‌র আদ-দাইনূরী (৩৩৩ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
«لَمَّا كَانَ وَقتُ صَلَاة الظُّهر مَنْ يَوْم الاثْنَيْنِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيْهِ – فِي آخِره – ابْنُ جَرِيْرٍ طلبَ مَاءً لِيُجَدِّدَ وُضوءهُ، فَقِيْلَ لَهُ: تُؤخِّر الظُّهر تجمع بينهَا وَبَيْنَ العَصْر.
فَأَبَى وَصَلَّى الظُّهر مفردَة، وَالعصرَ فِي وَقتهَا أَتمَّ صَلَاة وَأَحسَنَهَا.
وحضرَ وَقتَ مَوْتِه جَمَاعَةٌ مِنْهُم: أَبُو بَكْرٍ بنُ كَامِلٍ فَقِيْلَ لَهُ قَبْلَ خُرُوْج روحه: يَا أَبَا جَعْفَرٍ! أَنْتَ الحجَّة فِيْمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الله فِيْمَا نَدِينُ بِهِ، فَهَلْ مِنْ شَيْءٍ توصينَا بِهِ مِنْ أَمر دِيْنِنَا، وَبيِّنَةٍ لَنَا نَرْجُو بِهَا السَّلَامَة فِي مَعَادِنَا؟
فَقَالَ: الَّذِي أَدينُ اللهَ بِهِ وَأَوصِيْكُم هُوَ مَا ثَبَّتُّ فِي كُتُبِي، فَاعمَلُوا بِهِ وَعَلَيْهِ.
وَكَلَاماً هَذَا مَعْنَاهُ، وَأَكْثَرَ مِنَ التشهّد وَذَكَرَ الله – عَزَّ وَجَلَّ – وَمسحَ يَدَهُ عَلَى وَجْهِهِ، وَغَمَّضَ بصَرَهُ بِيَدِهِ، وَبَسَطَهَا وَقَدْ فَارقَتْ روحُهُ الدُّنْيَا»
“সোমবার তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে আসার একেবারে শেষ সময়, যুহরের সলাতের ওয়াক্ত হয়েছে, ইবনু জারীর তখন ওযু নবায়ন করার জন্য (ওযু থাকতেও ওযু করার জন্য) পানি খুঁজলেন। তাঁকে বলা হলো, “যুহরকে দেরী করিয়ে যুহর ও আসরকে জমা করুন (একসাথে পড়ুন)।”
তিনি অস্বীকৃতি জানালেন। যুহরকে তিনি আলাদাভাবেই পড়লেন এবং আসরকে তাঁর স্ব-ওয়াক্তে আদায় করলেন। সলাতকে পরিপূর্ণভাবে সুন্দরতম পদ্ধতিতে আদায় করলেন।
মৃত্যুর সময় আরো ঘনিয়ে এলে একদল মানুষ জমায়েত হয়, তাঁর মধ্যে (তাঁর ছাত্র) আবূ বাক্‌র ইবনু কামিলও ছিলেন। তাঁর রূহ বেরিয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে তাঁকে বলা হলো, “হে আবূ জা’ফর! আপনি আমাদের এবং আল্লাহর মাঝে যে সম্পর্ক ছিলো সেখানে একজন হুজ্জত (দলীল প্রমাণের আলোকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছানোর একটি মাধ্যম) ছিলেন, তাঁর আলোকে আপনি আমাদের আহ্বান করতেন। অতএব আপনার কাছে আমাদের জন্য আমাদের দীনের নির্দেশনাবলী হতে এমন কোনো কিছু সংগ্রহে আছে কিনা যার আলোকে আপনি আমাদের অসীয়ত করবেন? যা আমাদের পক্ষে এমন দলীল হবে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের হাশরের ময়দানে নিরাপত্তা লাভের আশা করতে পারি?”
জবাবে তিনি বললেন, “যার আলোকে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করছি এবং তোমাদেরকে অসীয়ত করছি তা তো তাই যা আমার বইগুলোতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, তাঁর আলোকে আমল করতে থাকো এবং তাঁর ওপরেই দৃঢ় থাকো।”
তাঁর দু’টি কথার অর্থ এমনই হবে। এরপর তিনি বেশি বেশি শাহাদাত (নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আল্লাহর রসূল) পাঠ করতে লাগলেন এবং মহাপরাক্রমশালী মহান আল্লাহর যিক্‌র করতে লাগলেন। তাঁর হাতদ্বয় তিনি তাঁর মুখের ওপর মুছতে লাগলেন এবং তাঁর চোখ নিজের হাত দ্বারাই বন্ধ করে হাত দু’টি ছড়িয়ে দিলেন, এর মধ্যেই তাঁর রূহ দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিলো।” [৪৪]
.
ইমাম ইবনু জারীর আল্লাহর ইবাদাতে জীবনভর যত্নশীল ছিলেন, এমনকি মৃত্যুর সময়েও। আল্লাহকে সময় দিয়েছেন বলেই আল্লাহ তাঁর সময়কে বারাকাহ দিয়ে ভরে দিয়েছেন এবং তাঁকে ব্যস্ততা থেকেও মুক্ত রেখেছেন; ফলে তিনি দীনের খেদমতে একমনে আত্মনিয়োগ করার সুযোগ দিয়েছেন। এক হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسُدَّ فَقْرَكَ وَإِلَّا تَفْعَلْ مَلَأْتُ يَدَيْكَ شُغْلًا وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ বলেন, “হে আদম সন্তান, আমার ইবাদাতের জন্য তুমি ফুরসতি নাও, তবে আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেবো এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেবো। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেবো এবং তোমার অভাবও দূর করবো না।” [৪৫]
আল্লামা খতীব আল-বাগদাদী (৩৯২-৪৬৩ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
«ولم يؤذن به أحد، فاجتمع على جنازته من لا يحصي عددهم إلا الله، وصلي على قبره عدة شهور ليلا ونهارا، ورثاه خلق كثير من أهل الدين والأدب»
“তাঁর মৃত্যুর সংবাদ কেউ ঘোষণা দেয়নি, তবুও তাঁর জানাযায় এতো বিপুল পরিমাণ মানুষের জমায়েত হয়েছিলো যে, এর সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে গণনা করা সম্ভব নয়। তাঁর কবরের উপরেও মাসের পর মাস রাত-দিন শুধু জানাযা পড়া হয়েছে। দীন ও সাহিত্যের অসংখ্য ধারক-বাহককে তিনি ওয়ারিস হিসেবে রেখে গেছেন।” [৪৬]
.
মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ায় আল্লামা ইয়াকুত আল-হামাবী (৫৭৪-৬২৬) রহিমাহুল্লাহ ইমাম তাবারীকে নিয়ে তাঁর ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘মু’জামুল উদাবা’-য় দীর্ঘ ৫৬ পৃষ্ঠা ব্যয় করেছেন (শাইখ আব্দুল ফাত্তাহর হিসাবমতে)। [৪৭] প্রাচীন ইতিহাস-বিশ্বকোষগুলোতে এতো দীর্ঘ জীবনী খুব কম ইমামের ক্ষেত্রেই লেখা হয়েছে। শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (১৩৩৬-১৪১৭ হি) রহিমাহুল্লাহও এ ব্যাপারে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। [৪৮]
.
ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহর গ্রন্থগুলো বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষত তাঁর তাফসীরের কিতাব পৃথিবীর জীবন্ত সব ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষায়ও এর অনুবাদ হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘তাফসীরে তাবারী’-র বাংলা অনুবাদে ‘তাফসীরে তাবারীর সম্পাদনা পরিষদ’ এর পক্ষ হতে উল্লিখিত ভূমিকায় সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম (১৯৩২-২০০৭ খ্রি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“পাশ্চাত্যের পণ্ডিতগণ আজো তাঁর গ্রন্থাদি ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ এবং তাত্ত্বিক সমালোচনামূলক গবেষণার জন্য ব্যবহার করে থাকেন।
১৯৮৮ খৃস্টাব্দে গ্রেট বৃটেনে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস তাফসীরে তাবারীর প্রথম খণ্ডের ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ করেন। প্রকাশনা উৎসবে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্ধোধনী বক্তৃতা প্রদান করেন।” [৪৯]
.
এই মহান ব্যক্তিত্বের ইতিবৃত্তের ইতি টানছি শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ (১৩৩৬-১৪১৭ হি) রহিমাহুল্লাহর উক্তি দ্বারা, তিনি বলছেন,
‌وقد ‌مضى ‌على ‌وفاته ‌ألف ‌ونحو ‌مئة ‌عام، ‌فهي ‌باقية ‌ما ‌تعاقب ‌الملوان ‌إلى ‌ما ‌شاء ‌الله ‌تعالى. وصدق الإمام ابن الجوزي إذ قال:
كتاب العالم ولده المخلد
“আর তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় ১১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু তাঁর আলোচনা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে চলমান থাকবে ইন শা আল্লাহু তা’আলা। ইমাম ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ / ৫০৮-৫৯৭ হি) সত্যই বলেছেন,
“কিতাবের আলিমের জন্য তাঁর কিতাবের খন্ডগুলোই তাঁর (প্রকৃত) সন্তান।” [৫০]
.
[১] আল-ফিকরুস সামী’, হাজবী, ২/৪৮
[২] মাওসূ’আতুত তাফসীর আল-মা’সূর, দারু ইবনি হাযম প্রকাশিত, ১/৪৩৬
[৩] মু’জামুল উদাবা, ইয়াকুত আল-হামাবী, ৬/২৪৪৪
[৪] আল-ফিকরুস সামী’, হাজবী, ২/৪৮
[৫] কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, পৃঃ ৪৩
[৬] মু’জামুল উদাবা, ইয়াকুত আল-হামাবী, ৬/২৪৪২
[৭] কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, পৃঃ ৪৩-৪৪
[৮] তারীখু বাগদাগ (বাশশার তাহকীককৃত), খতীব বাগদাদী, ২/৫৪৮
[৯] ইনবাহুর রুওয়াহ ‘আলা আনবাহিন নুহাহ, জামালুদ্দীন ক্বিফত্বী, ৩/৮৯
[১০] ইনবাহুর রুওয়াহ ‘আলা আনবাহিন নুহাহ, জামালুদ্দীন ক্বিফত্বী, ৩/৯০
[১১] আদ-দুররুস সামিন ফী আসমায়িল মুসান্নিফীন, ইবনুস সা’ঈ, পৃঃ ৯২
[১২] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), ১৪/২৬৯, যাহাবী
[১৩] আল-মুহাম্মাদূনা মিনাশ শু’আরা, জামালুদ্দীন ক্বিফত্বী, পৃঃ ১৮৭
[১৪] আদ-দুররুস সামিন ফী আসমায়িল মুসান্নিফীন, ইবনুস সা’ঈ, পৃঃ ৯১
[১৫] তারীখু বাগদাদ (বাশশার তাহকীককৃত), খতীব বাগদাদী, ২/৫৪৮
[১৬] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৩-২৭৪
[১৭] ত্ববাক্বাতুল মুফাসসিরীন, সুয়ূত্বী, পৃঃ ৯৫
[১৮] তারীখু বাগদাদ (বাশশার তাহকীককৃত), খতীব বাগদাদী, ২/৫৪৮
[১৯] মাওসূ’আতুত তাফসীর আল-মা’সূর, দারু ইবনি হাযম প্রকাশিত, ১/৪৩৭
[২০] তারীখু দিমাশ্‌ক, ইবনু আসাকির, ৫২/১৯৮
[২১] আস-সহীহ, বুখারী, ৬৩৮২
[২২] আল-কালিমুত ত্বয়্যিব, ইবনু তাইমিয়া, পৃঃ ১১৫
[২৩] আল-মুনতাযিমু ফী তারীখিল মুলুকি ওয়াল উমাম, ইবনুল জাওযী, ১৩/২১৫
[২৪] মু’জামুল উদাবা, ইয়াকুত আল-হামাবী, ৬/২৪৪৪
[২৫] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৩-২৭৪
[২৬] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭০
[২৭] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৩
[২৮] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৩-২৭৪
[২৯] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৪
[৩০] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৪
[৩১] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৭
[৩২] বুলূগুল আমানী, আবূত ত্বয়্যিব আল-মানসূরী, ২/৮৮৫
[৩৩] তারীখু দিমাশ্‌ক, ইবনু আসাকির, ৫২/১৯৯
[৩৪] মু’জামুল উদাবা, ইয়াকুত আল-হামাবী, ৬/২৪৪৬
[৩৫] মু’জামুল উদাবা, ইয়াকুত আল-হামাবী, ৬/২৪৪৭
[৩৬] তারীখু বাগদাদ (বাশশার তাহকীককৃত), খতীব বাগদাদী, ২/৫৪৮
[৩৭] আল-জামিউল আখলাক, খতীব আল-বাগদাদী, ১৫২৩
[৩৮] কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, পৃঃ ৪৪
[৩৯] মাওসূ’আতুত তাফসীর আল-মা’সূর, দারু ইবনি হাযম প্রকাশিত, ১/৪৩৫
[৪০] উলামায়ুল উযযাব, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, পৃঃ ৩৭-৫১
[৪১] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (তুর্কী তাহকীককৃত), ইবনু কাসীর, ১৪/৭০১
[৪২] কুনুযুল আজদাদ (আল-মাজমা’উল ‘আলামীল ‘আরাবী), কুর্দ আলী, পৃঃ ১২৩
[৪৩] কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, পৃঃ ৪৫
[৪৪] সিয়ারু আ’লামিন নুবালা (রিসালাহ), যাহাবী, ১৪/২৭৬
[৪৫] আস-সুনান, তিরমিযী, ২৪৬৬; তিরমিযীর মতে হাসান গরীব এবং আলবানীর মতে সহীহ
[৪৬] মু’জামুল উদাবা, ইয়াকুত আল-হামাবী, ৬/২৪৪১
[৪৭] মাকতাবাতুশ শামিলায় এ কিতাবটি মূল প্রকাশনীর পৃষ্ঠাক্রমের বাইরে তাঁরা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছেন, সেখানে বড় বড় পৃষ্ঠায় ইমাম তাবারীর জীবনী দীর্ঘ ২৮ পৃষ্ঠা ব্যাপী স্থান পেয়েছে; মু’জামুল উদাবা, ইয়াকুত আল-হামাবী, ৬/২৪৪১-২৪৬৮
[৪৮] কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, পৃঃ ৪২
[৪৯] তাফসীরে তাবারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত, ১/১৪
[৫০] কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, পৃঃ ৪৫

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88