তাজিকিস্তানের (সা’দ) সৌভাগ্য!

তাজিকিস্তান। মধ্য এশিয়ার একটি দেশ। তাজিক ভাষা এ দেশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা। এ ছাড়াও এ দেশের মানুষ রুশ, উজবেক, ফার্সি ও পশতু ভাষায় কথা বলে থাকে। [১] এই তাজিকিস্তানেরই ছোট্ট ছেলে সা’দ। পুরো নাম সা’দ ইবনু আহমাদ। সা’দ মানে সৌভাগ্য। সে যেন সত্যি সত্যিই তাঁর পুরো পরিবারের জন্য সৌভাগ্য হয়ে জন্মেছিলো। মেধাবী এই বালক ছোটবেলায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে আরবে চলে আসে।

৫ বছর পূর্ণ হওয়ার কিছু আগে ঘরে বসেই সে আরবী শিখতে শুরু করে। [২] এক পর্যায়ে আরবী তাঁর কাছে হয়ে ওঠে স্বীয় মাতৃভাষার মতোন।
বিস্ময়কর এই বালক মাত্র ১০ বছরের মধ্যে মুখস্ত করে নেয় তিন তিনটি গ্রস্থঃ
(১) মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারীম।
(২) সহীহুল বুখারী (সংক্ষিপ্ত)।
(৩) সহীহ মুসলিম (সংক্ষিপ্ত)। [৩]
.
এর মধ্যে সে কুরআনুল কারীম মুখস্ত করে ফেলে মাত্র ৭ বছর বয়সে। তাঁর কুরআন হিফ্‌য করা শুরু হয়েছিলো মাত্র ৪ বছর বয়সে। আরবের ঐতিহ্য অনুযায়ী অন্যান্য পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে হৃদয়ে কুরআন ধারণের এই মহাপ্রচেষ্টা। কুরআনের সঙ্গে সঙ্গে সা’দ কালামুল্লাহর ভাষা আরবীও শিখে নেয়। বর্তমানে সে আরাবী না অনারবী বোঝারই যেন উপায় নেই! [৪]
.
বিস্ময়বালকের বিস্ময় এখানেই শেষ নয়। বয়স ১২ হতে না হতেই এই দু’ই বছরের মধ্যে সে মুখস্ত করে নেয় আরো কয়েকটি গ্রন্থ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,
(৪) সুনানুত তিরমিযী
(৫) সুনানু আবী দাঊদ
(৬) সুনানুন নাসাঈ
(৭) সুনানু ইবনু মাজাহ
(৮) মুসনাদু আহমাদ (তবে সে কষ্ট করে আলাদা আলাদাভাবে উপরের (১-৮) নং গ্রন্থগুলো মুখস্ত করেনি। সে বুখারী ও মুসলিমের হাদীসগুলোর একটি সংকলন (পুনঃউল্লিখিত হাদীসগুলো বাদ দিয়ে) মুখস্ত করেছে। তারপর শেষের ৫টি গ্রন্থে আসা অতিরিক্ত হাদীস, যেগুলো বুখারী ও মুসলিমে নেই, সেগুলো সে আলাদা করে মুখস্ত করেছে একটি সংকলন গ্রন্থ থেকে। এই উভয়টির রচয়িতা শাইখ আল-ইয়াহইয়া ইয়াহইয়া। তারপরও তাকে হাজার হাজার হাদীস মুখস্ত করতে হয়েছে।)
(৯) জাযরিয়্যাহ (ক্বিরাআতশাস্ত্র বিষয়ক)
(১০) আজরুমিয়াহ (নাহূ বিষয়ক)
(১১) আলফিয়াতু ইবনু মালিক (নাহূ ও আরবী ভাষা বিষয়ক)
(১২) আল-মানযূমাতুল বাইক্বূনিয়্যাহ (উলূমুল হাদীস বিষয়ক)
(১৩) তাসহীলু মা’রিফাতিল আসানীদ (উলূমুল হাদীস বিষয়ক)
(১৪) আল-মু’ঈন ‘আলা ফাহমি তাত্ববীক্বাতিল মুহাদ্দিসীন (উলূমুল হাদীস বিষয়ক) [৫]
.
সে আরো বড় হওয়ার পর আরেকটি সাক্ষাৎকারে আরো কিছু গ্রন্থের নাম উল্লেখ করে, যাঁর মধ্যে রয়েছেঃ
(১৫) মুলহাতুল ই’রাব (নাহূ-সরফ বিষয়ক)
(১৬) উনওয়ানুল হিকাম (আরবী ভাষা বিষয়ক) [৬]
.
ভবিষ্যতে তুমি কী হতে চাও- এমন প্রশ্নের জবাবে সা’দ বলে-
اريد ان شاء الله ان اكون في المستقبل عالما من كبار العلماء
“ইন শা আল্লাহ ভবিষ্যতে আমি বড় আলিম হতে চাই।”
.
তখনই সঞ্চালক ড. উমার আব্দুল কাফী বলে বসেন,
انت الان كبار العلماء
“তুমি তো এখনই বড় আলিম!”
.
উমার আব্দুল কাফী আরো বলেন,
“এই তো, আমি হলাম বয়সে বড় আর তুমি হচ্ছো হিফযুল কুরআনে, মুতুন (মৌলিক পাঠ্য) মুখস্তে বড়।”
.
সা’দ তাঁর স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে আরো বলে,
“আমি বুখারী ও মুসলিমের মতো বড় আলিম হতে চাই এবং দুনিয়ার বুকে একজন সংস্কারক হতে চাই।” [৭]
.
.
[১] তাজিকিস্তান, বাংলা উইকিপিডিয়া
.
আরবে অনেকেই তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আমরা উপরে তার মধ্যকার উল্লেখযোগ্য কিছু ভিডিও এর সূত্র দিয়েছি, যেগুলো থেকে জানা যাবে তাঁর জীবন, পড়াশোনার পদ্ধতি, এছাড়াও দেখা যাবে তাঁর পড়ার ঘর, সঙ্গে জানা যাবে তাঁর সামগ্রিক বৃত্তান্ত। এছাড়াও ভিডিওগুলোতে দেখা যাবে যে, বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে তাঁকে কিছু অংশ বলে তার বাকী অংশ বলতে বলা হচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গে সে বলে দিচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো তাঁকে কোনো আয়াত জিজ্ঞেস করা হলে সেটা কোন সূরায়, কোন পাড়ায় এবং কোন পৃষ্ঠায় সে এ বিষয়ে সব তথ্যই অবলীলায় দিয়ে দিচ্ছে। এগুলোর বাইরেও তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভা দেখার জন্য নিচে আরো কিছু লিংক দিচ্ছিঃ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button