বাঙালী মুসলিম মানসের রূপরেখা ও রাষ্ট্র-চেতনা

রাজনীতি শাস্ত্রে রাষ্ট্র ও জাতীয়তাবোধ সম্পর্কে অনেক বিতর্ক আছে। কারণ জাতীয়তার ধারণাটা বেশী জঠিল। একাধিক উপাদান কাজ করতে পারে একটি জনসমষ্টির মনে। সবার ক্ষেত্রে সব উপাদান সব সময় একই প্রাধান্য পায় না। জাতীয়তার পটভূমি প্রস্তুত হতে পারে বিভিন্নভাবে। রাষ্ট্র চেতনা (State idea) বলতে আমরা বুঝি একটা পৃথক রাষ্ট্র গড়বার যুক্তিকে। একটা পৃথক রাষ্ট্র গড়বার ইচ্ছা একটা জনসমষ্টির মধ্যে নানা কারণেই দেখা দিতে পারে। এইসব কারণের মধ্যে ধর্ম বিশ্বাস বা মতাদর্শ (Ideology) হল একটি।

ধর্মকে কেন্দ্র করে ক্ষেত্র বিশেষে গড়ে উঠতে পারে এমন দু’টি সমাজ জীবন, যাদের ঘিরে উদ্ভব হতে পারে দু’টি বিপরীত-মুখী স্বার্থের সংঘাত, যার ফলে এক সময় দেখা দিতে পারে দু’টি পৃথক রাষ্ট্র গড়বার প্রয়োজন। ইতিহাসে এমন ঘটনা নজীরবিহীন নয়। অন্যদিক থেকে বলা যায়, ধর্ম কেবল ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয় নয়—-ধর্ম হল জনমতের উৎস। ধর্ম একটা সামাজিক ঘটনা, কেবল ব্যক্তি মনের খামখেয়ালীপনার সৃষ্টি বলে তাকে চিহ্নিত করা যায় না। সমাজ জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার গভীর প্রয়োজন থেকেই উদ্ভব হয়েছে ধর্মের। ধর্মের সমাজ তত্ত্ব এখন একটা অতি শ্রদ্ধেয় আলোচ্য বিষয়। ধর্ম ও রাজনীতির সম্বন্ধটা তাই দুরের নয়, কাছের। ইতিহাসে দেখা যায়, মানুষের ধর্ম-বিশ্বাস তার রাষ্ট্র চেতনাকে নানা-ভাবেই নিয়ন্ত্রিত করছে। আধুনিক জাতীয়তাবাদের জন্মভূমি ইউরোপের ইতিহাসও এ থেকে মুক্ত নয়। ১৮৩০ সালে রাষ্ট্র হিসাবে বেলজিয়ামের অবির্ভাব হয় প্রধান ধর্মীয় করণেই।[1]

বাংলায় হিন্দু ও মুসলমান সমাজ ইংরেজ আসবার আগেই পাশাপাশি গড়ে উঠেছিল স্বতন্ত্রভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর ধরে।[2]

ইংরাজ আমলে এই দুই সমাজের ব্যবধান তীব্র হতে থাকে। এই তীব্রতার জন্য শেষে ১৯৪৭-এ সৃষ্টি হয় সাবেক পাকিস্তান, যা ভেঙে হয়েছে আজকের বাংলাদেশের জন্ম। তাই আজকের বাংলাদেশের অস্তিত্বের যুক্তিকে বুঝতে হলে অনিবার্যভাবে জানতে হয় বাঙালী মুসলমানের মানস বিবর্তনের রূপ-রেখা। আলোচনা আরম্ভ করতে হয় প্রধানত ঊনবিংশ শতক থেকে। কারণ এ সময় থেকেই বাঙালী মুসলমানের চিন্তাধারা প্রবাহিত হতে থাকে একটা সুস্পষ্ট ভিন্ন খাতে, যার জের ‌আজো চলছে।

রাজনীতির ভিন্ন ধারা

ইংরাজ অমল থেকেই বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলমানের রাজনীতি দু’টি পৃথক পথে যাত্রা শুরু করে। মুসলমানরা যখন বিধর্মী খৃষ্টান ইংরাজ শাসনের বিরোধিতা করেছেন তখন হিন্দুদের কাছে ইংরাজ রাজত্বকে মনে হয়েছে ‘ধর্মরাজ্য’।[3] ইংরাজ শাসন সম্পর্কে হিন্দু ও মুসলমানের এই মনোভঙ্গির পার্থক্য দু’টি সমাজের পার্থক্যকে করেছে প্রবল। মুসলমানরা ইংরাজ রাজত্বে তাদের আগের আমলের সুযোগ-সুবিধা হারাতে থাকেন। এক সময় তাঁরা সেনাবাহিনী, রাজস্ব, প্রশাসন ও আইন বিভাগে যে সব চাকরী পেতেন তা থেকে তাঁরা হতে থাকেন বঞ্চিত। বাঙালী মুসলমানেরা আগে ফারসী চর্চা করতেন খুব বেশী। কিন্তু ফারসী ভাষার বদলে সরকারী ভাষা হিসাবে গ্রহণ করা হল (১৮৩৮) ইংরাজী। এদিক থেকেও বাংলার মুসলমানের সঙ্গে ইংরাজের জেগে উঠে সংঘাত।[4] এই সংঘাতও সকল শ্রেণীর মুসলমানদের মধ্যেই হয় পরিব্যাপ্ত। কারণ, ইংরাজ আমলে দ্রুত ভাঙতে আরম্ভ করে সনাতন বাংলার অর্থনৈতিক বুনিয়াদ। বাংলার অর্থনীতি ছিল কুটির শিল্প সমৃদ্ধ। বাংলায় প্রস্তুত হস্তচালিত তাঁতের কাপড় বিদেশ এবং এই উপ মহাদেশের সর্বত্র প্রচুর চালান যেত। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীর (১৭৬০ খৃঃ) মাঝামাঝি থেকে বিলাতে আরম্ভ হয় শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution)। বিলাতের এই কলকারখানার বিপ্লব প্রথম আরম্ভ হয় বস্ত্র শিল্পকে কেন্দ্র করে। বিলাতের কলে তৈরি কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না এদেশের হাতে চলা তাঁতে তৈরী কাপড়। এছাড়া দেশে ইংরাজ শাসন থাকার জন্যে সম্ভব হয় না শুল্ক বসিয়ে বিলাত থেকে কাপড় আসা বন্ধ করা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও বিরাটভাবে। সে কেবল ইউরোপের বাজার নয়, হারায় তার এই উপমহাদেশেরও বস্ত্রের বাজার। এর ফলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন মুসলিম‍ তন্তুবার (জোলা শ্রেণী)। এই ক্ষতির পরিমাণ কি রকম হয়েছিল তার ঐতিহাসিক নজীর হিসাবে অর্থনীতিবিদ কার্ল মার্কস-এর একটা চিঠি থেকে কিছুটা উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে : “অবিস্মরণীয়কাল থেকে ইউরোপ ভারতীয় শ্রমের অপূর্ব বস্ত্র পেয়ে এসেছে… বৃটিশ হাসলাদার এসেই ভারতীয় তাঁত শিল্প ভেঙে ফেলে এবং ধ্বংস করে চরকা। ইংল্যান্ড আরম্ভ করে ইউরোপের বাজার থেকে ভারতীয় বস্ত্র বিতাড়ন, তারপর সে হিন্দুস্তানে সূতা পাঠাতে থাকে এবং শেষে সে তুলার মাতৃভূমিকেই কার্পাস বস্ত্র চালান দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। ১৮১৮ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত গ্রেট বৃটেন থেকে ভারতে সূতা চালানের অনুপাত বেড়ে ওঠে ১ থেকে ৫,২০০ গুণ। ১৮২৪ সালে ভারতে বৃটিশ মসলিনের চালান ১০,০০,০০০ গজও প্রায় নয়, কিন্তু ১৮৩৭ সালে তা ৬,৪০,০০,০০০ গজও ছাড়িয়ে যায়। এই একই সময় ঢাকার জনসংখ্যা ১,৫০,০০০ থেকে ২০,০০০ এ নেমে আসে। ..সারা ভারত জুড়ে কৃষি ও হস্তচালিত শিল্পের যে বন্ধন ছিল বৃটিশ বাষ্প ও বিজ্ঞান তাকে উন্মুলিত করে দিয়েছে।[5]

ইংরাজের শাসনকে ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক উভয়বিধ কারণেই বাংলার মুসলমান মেনে নিতে পারেন নি। বাংলার সাধারণ মুসলমান কৃষক ও বেকার তন্তুবায়রাও তাই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইংরাজ শাসনের বিপক্ষে, যাকে একত্রে ইতিহাসে সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয় ‘ওয়াহাবী অভ্যুদয়’ হিসাবে।

ওয়াহাবী অভ্যূত্থান

অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আরবে ইবন আবদুল ওয়াহাব (১৭০৩-১৭৮৬ খ্রঃ) ইসলামী ভাবধারার ক্ষেত্রে এক নতুন চেতনার সঞ্চার করেন। তিনি বলেন ইসলামের অনাড়ম্বর জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে। তিনি অভিমত দেন-তুর্কীদের হাতে পড়ে ইসলামের ঘটছে বিশেষ বিকৃতি। ইসলাম আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। কিন্তু তুর্কীদের প্রস্তাবে মরমীবাদ ভুল উপস্থাপনের শিকার হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে আরম্ভ হয়েছে পীরের পূজা। ইসলামে পুরোহিত ব্যবস্থার কোন স্থান নেই। কিন্তু ধর্ম হয় উঠেছে অনেকের জীবিকার উপায়।

মুসলিম ভাবধারা ও সমাজ জীবন থেকে পীরবাদ, মরমীবাদের অপপ্রভাব বিদূরিত করতে হবে। কারণ তা হয়ে উঠেছে পুজারই (শিরক) নামান্তর। এক শ্রেণীর পীর ও তার শিষ্যরা সমাজে বেঁচে থাকতে চাচ্ছেন অন্যের শ্রমে আধ্যাত্মিকতার নামে পরজীবী হয়। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আবদুল ওয়াহাব-এর ভাবধারা মক্কা থেকে প্রথম বহন করে আনেন হাজী শরীয়তউল্লাহ। তিনি ছিলেন ফরিদপুর জেলার বাহাদুর গ্রামের লোক। খুব অল্প বয়সেই তিনি হজ্জ করতে যান। মক্কায় ২০ বছর বাস করে ফিরে আসেন দেশে (১৮২০)। মক্কায় তিনি ওয়াহাবী ভাবধারার সঙ্গে গভীরভাবে পরিচিত হন।[6] শরীয়তউল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০ খৃঃ) যে আন্দোলনের সূষ্টি করেন, তাকে বলা হয় ফরায়জী আন্দোরন। আরবী ভাষায় ‘ফরয’ মানে অবশ্য পালনীয়। ধর্মীয় অর্থে ধর্মের অবশ্য পালনীয় বিধান। ‘ফারায়েজ হল ‘ফরয’ শব্দের বহুবচন। আর ফারায়েজী হ’ল যাঁরা ফারায়েজ অনুসরণ করে চলেন। ফারায়েজীরা বলতেন তাঁরা ইসলামের আদি বিশুদ্ধ বিধান মেনে চলার পক্ষে।[7]

মুসলমান ইসলাম বিরোধী শাসমে থাকতে পারে না। ইসলামের ঐতিহ্য অনুসারে মুসলিম শাসিত অঞ্চলকে বলা হয় ‘দার আল-ইসলাম’ বা শান্তির এলাকা। আর অমুসলমানশাসিত এলাকা হল ‘দার আল হারব’ বা বনভূমি। দার আল হারব হল এমন ভুমি, যেখানে মুসলমানদের উচিত যুদ্ধ করে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ যুদ্ধ ন্যায় যুদ্ধ (জিহাদ। আরব মুসলমানরা খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে এই দার-আল ইসলাম ও দার-আল হারব-এর যুক্তিতেই আরম্ভ করেন তাদের বিজয় অভিযান। তাঁরা বলেন, অমুসলমান শাসন বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। একমাত্র ইসলামই প্রতিষ্ঠা করতে পারে প্রকৃত শান্তি ও সুশৃঙ্খলা।[8] ফারায়েজীরা বলেন ইংরাজ শাসন দার-আল-হারব। তাই এই শাসনকে মেনে নেয়া চলে না। ইংরাজরা খৃষ্টান। ইসলামের বিধান অনুসারে খৃস্টানরা ‘নাসারা’ বা বিপথগামী। তাদের শাসন মুসলমানদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। ফারায়েজীরা আরো বলেন, জমি আল্লাহর। তাই জমিদার অধিকার নেই খাজনা নেবার। ফারায়েজীরা অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধেও আরম্ভ করেন আন্দোলন। ফারায়েজী আন্দোলনে বিশেষভাবে যোগ দেন বাংলার মুসলমান কৃষক ও বাংলার কুটির শিল্প ধ্বংস হবার ফলে বেকার শ্রমিক দল।[9] শরীয়তউল্লাহর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র মুহাম্মদ মোহসিন ওরফে দুদু মিয়া এই আন্দোলনকে আরো ব্যাপক ও সুসংগঠিত রূপ দেন। তিনি কার্যত হয়ে ওঠেন একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শাসনকর্তা। তিনি মুসলমান কৃষক ও কারিগর শ্রেণীর মধ্যে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেন। ঢাকা, ফরিদপুর, নোয়াখালী, তখনকার যশোর, বাকেরগঞ্জ ও পাবনায় তাঁর আন্দোলন বিশেষভাবে ছড়িয়ে পড়ে। দুদু মিয়ার অনুসারীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮০ হাযার। ইংরাজরা তাঁর বিপক্ষে সাক্ষীর অভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না। ১৮৪৬ সালে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ফারায়েজীর পঞ্চচরে ডানলপ সাহেবের নীলকুঠি পুড়িয়ে দেয়। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে—এই অজুহাতে ইংরাজ সরকার দুদু মিয়াকে ধরে বন্দী করে রাখে। ১৮৬০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।

বাংলার এ সংস্কার ধারার আর একজন অগ্রসৈনিক ছিলেন হাজী মীর নিসার আলী। তিনি তিতুমীর নামে বিশেষ প্রসিদ্ধ। তিতুমীর ছিলেন কলকাতা শহর থেকে ২১ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বারাসত জেলা শহরের উপকণ্ঠের লোক। তাঁর আন্দোলন আরম্ভ হয় এই অঞ্চল থেকেই। পরে তাঁর প্রভাব পড়ে যশোর ও নদীয়ার বিভিন্ন স্থানে। তিতুমীরের অনুসারীরা নিজদের দাবি করতেন তরীকা-ই-মুহাম্মদী বা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর খাঁটি অনুসারী হিসাবে।[10] তিতুমীর তখনকার ২৪ পরগণার নারিকেলবেড়িয়া গ্রামে একটি সুদৃঢ় বাঁশের কেল্লা স্থাপন করেন এবং ইংরাজের বিপক্ষে তাঁর পাঁচ’শ অনুচরসহ জিহাদ ঘোষণা করেন। ইংরাজ সরকার তাঁকে পরাজিত করবার জন্য কলকাতা থেকে একদল সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তারা তিতুমীরের সেনাপতি গোলাম রসুলের হাতে পরাজয় বরণ করে। শেষে কলকাতা থেকে অশ্বারোহী ও গোলন্দাজ বাহিনী প্রেরণ করা হয় (১৮৩১)।

তিতুমীর এ যুদ্ধে বীরের মত মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অনুচরদের মধ্যে যাঁরা জীবিত ছিলেন, তাঁদের ৩৫০ জন বন্দী হন। এদের একজনের প্রাণদন্ড ও অন্যদের কারাদণ্ড হয়।

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর সংস্কার আন্দোলন আবার নতুন করে আত্মপ্রকাশ করে। এই আন্দোলনের মুল কেন্দ্র ছিল মালদহ ও রাজমহল। এ সময় সংস্কারক নেতাদের প্রভাবে মুসলমান কৃষকেরা দলে দলে নীল বিদ্রোহ ও জমিদার বিরোধী আন্দোলনে লিপ্ত হন। ১৮৬৮-৬৯ সালের মধ্য উত্তরবঙ্গে বহু নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। বিপ্লবী নেতা আমীর উদ্দীন ও ইব্রাহীম মণ্ডলকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরিত করা হয় এবং বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁদের যাবতীয় সম্পদ। ১৮৭১ সালে জেলা আদালতে বিচারের বিপক্ষে বিপ্লবীরা কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করে। ২০শে সেপ্টেম্বর আবদুল্লা নামক জনৈক ওয়াহাবী সমর্থক কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে খুন করে। এই ঘটনাটি ইংরাজ শাসকদের খুবই শঙ্কিত করে তোলে।

গোটা উনবিংশ শতক ধরেই চলেলি নবজাগরণের অভ্যুদয়। অনেকে এর ব্যাখ্যা করতে চান বিশেষ ধরনের রক্ষণশীলতা বলে। কিন্তু এই অভ্যুত্থানকে তুলনা করা চলে বিলাতের লেভেলার্স (Levellers) ও ডিগার্স (Diggers) দের সঙ্গে। ধর্ম এ আন্দোলনের আধ্যাত্মিক যুক্তি যোগালেও এর বাস্তব কর্মধারা নিহিত ছিল ইহজগতের বাঁচবার দাবি আদায়ের মধ্যে। একজন আধুনিক লেখক ওয়াহাবীদের তুলনা করেছেন বিলাতের ললার্ড (Lollard)-দের সঙ্গে।[11] ললার্ডেরা ইংল্যান্ডে ধর্মের নামে মানব-সমতার বাণীকেই প্রচার করতেন বিশেষভাবে, যা রচনা করে আধুনিক অ্যাঙলোস্যাকসন গণতন্ত্রের প্রসারিত পটভূমি।

সাহিত্যে বিরোধ

ইংরাজ আমলে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে আরম্ভ হয় বাংলা গদ্য সাহিত্য। এর আগেও বাংলা গদ্য ছিল। ফারসী গদ্যের হাত ধরে আরম্ভ হয় বাংলা গদ্যের যাত্রা। কিন্তু তা মূলত ছিল চিঠি-পত্র ও দলিল দস্তাবেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাহিত্যের বাহন ছিল প্রধানত পয়ার ছন্দে লেখা কবিতা। কিন্তু ইংরাজ আমলে ইংরাজি শিখে বাঙালী হিন্দু প্রথম পরিচিত হতে থাকেন ইংরাজী সাহিত্য এবং ইংরাজী অনুবাদ মারফত ইউরোপীয় বিভিন্ন ভাষার পদ্য ও গদ্য সাহিত্যের সঙ্গে। এই সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হবার সঙ্গে তাদের মধ্যে দেখা দেয় নতুন সাহিত্য রচনার অনুপ্রেরণা। খৃষ্টান মিশনারীরা কলকাতার কাছে শ্রীরামপুরে প্রথম বাংলা ছাপাখানা (১৭৯৮) স্থাপন করেন। বাংলায় প্রথম বই ছাপান আরম্ভ করেন তাঁরাই। ছাপাখানা পরে কলকাতা শহরেও খোলা হয়। ছাপাখানার প্রভাবে সাহিত্যের ঘটে দ্রুত শ্রীবৃদ্ধি।[12]

বাংলা ভাষায় এর আগে অবশ্য অনেক গল্পকাহিনী প্রচলিত ছিল। মুসলমান আমলে আরব-পারস্য ও মধ্য এশিয়া থেকে এ-দেশে অনেক কাহিনী আসে। এসব কাহিনীতে নর-নারীর প্রেম ছিল বিশেষ উপজীব্য আর রূপকথার আকর্ষণ। কিন্তু প্রকৃত উপন্যাস বলে কিছু ছিল না। বাংলায় বঙ্কিমচন্দ্র (১৮৩৮-১৮৯৪) ও তাঁর অনুগামীরা প্রথম বৃটিশ সাহিত্যিক স্কট-এর অনুসরণে ছদ্ম ঐতিহাসিক (Pseudo-historical) উপন্যাস রচনায় হাত দেন। ইতিহাস নিয়ে উপন্যাস লিখতে গিয়ে সৃষ্টি হয় বিশেষ ধরনের হিন্দু-মুসলমান বিরোধ।[13] কারণ এসব উপন্যাসের মধ্যে মুসলমান রাজা-বাদশাদের দেখান হতে থাকে বিশেষভাবে নির্দয়, খামখেয়ালী ও নীতি-বর্জিত হিসাবে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দ মঠ’ যার মধ্যকার ‘বন্দে মাতরম’ বর্তমান ভারতের অন্যতম জাতীয় সঙ্গীত। তার প্রতিপাদ্য মুসলিম শাসন থেকে বেরিয়ে এসে হিন্দু রাজ্য স্থাপন। ‘আনন্দ মঠ’-এ বঙ্কিম ইংরাজ শাসনের বিশেষ প্রশস্তি করেছেন। তাঁর মতে ইংরাজ হল মিত্ররাজা। তিনি বলেছেন, ইংরাজের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয় এমন শক্তি কারও নেই।[14] এ সময় হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা যেন এই কথাটাই তাদের লেখা গল্প কাহিনীর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, মুসলমানরাই হল দেশের প্রধান শত্রু আর ইংরাজরা এসেছে এদেশে মুক্তিদূত রূপে। পরে বাঙালী মুসলমানরা যখন সাহিত্য চর্চা আরম্ভ করলেন তখন তাদের মধ্যেও দেখা গেল এক বিশেষ ধরনের হিন্দু-বিদ্বেষ। মুসলমানদের লেখা এই ‘জবাবী’ সাহিত্যের সাহিত্যিক মূল্য যাই হোক না কেন, বাংলার মুসলিম মানস গঠন এর প্রভাব পড়ে যথষ্ট। এর ফলে সৃষ্টি হয় স্বাদেশিকতার দুটি পৃথক আদর্শ।

বাংলার নব জাগরণ

বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস লেখকেরা ঊনবিংশ শতককে সাধারণত উল্লেখ করেন নব-জাগরণের (Renaissance) যুগ বলে। কিন্তু নব-জাগরণ কথাটা ইউরোপের ইতিহাসে যেভাবে ব্যবহৃত হয়, বাংলার ইতিহাসে ঠিক সেভাবে প্রযুক্ত নয়। ইউরোপের নব-জাগরণ (পঞ্চদশ থেকে ষষ্ঠদশ শতকের প্রারম্ভ কাল) কেবল শিল্প-সাহিত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এ সময় থেকে ইউরোপের চিন্তাধারায় আসতে থাকে নানা পরিবর্তন, যার ফলে উদ্ভব হয় আধুনিক পরীক্ষামূলক ও গাণিতিক বিশ্লেষণ-নির্ভর বিজ্ঞান। বাংলার নব জাগরণ কেবল একটা সাহিত্যের বিষয়-বিজ্ঞানের ও প্রযুক্ত বিদ্যার নয়। বাংলার নব-জাগরণের কার্যকলাপ বিশেষভাবে নিবদ্ধ থেকেছে সাহিত্য চর্চার মধ্যে। এই জাগরণ ছিল প্রধানত একটা সাহিত্যিক জাগরণ।[15] মূলত গল্প, উপন্যাস ও কবিতার মধ্যেই তো থাকে নিবদ্ধ। এর বড় সুফলের মধ্যে হল বাংলা ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা বৃদ্ধি। ইংরাজ আমলে কলকাতা শহর কেন্দ্রিক হিন্দু সমাজের মধ্যে দেখা যায় তিনটি প্রবণতা। এর একটি হল ইউরোপীয় ভাবধারা ও এ দেশের সনাতন হিন্দু ভাবধারার মধ্যে সমন্বয় ঘর্টিয়ে একটা নতুন সমাজ জীবন গড়া। যার নেতা ছিলেন রাজা রামমোহন (১৭৭২-১৮৩৩)। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্ৰহ্মসভা’। অন্যদিকে একদল হিন্দু চান তাদের সনাতন জীবনধারাকেই বিশেষভাবে টিকিয়ে রাখতে। এ দলের অন্যতম নেতা ছিলেন রাধাকান্ত দেব। এরা গড়েন ‘ধর্মসভা’। আর তৃতীয় দল যাদের সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয় ‘ইয়ং বেঙ্গল’, তারা চেয়েছিলেন অন্ধভাবে ইউরোপের অনুকরণ। এদের অনেকে কড়া বিলাতী মদ খেয়ে মাতলামো করাকেও ভাবতেন প্রগতির লক্ষণ, সমাজ বিপ্লবের হাতিয়ার।[16]

যাকে উল্লেখ করা হয় বাংলার রেঁনেসা হিসাবে তার আসল প্রেরণা ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি। এই শিক্ষা সংস্কৃতিই প্রেরণা যুগিয়েছিল সাহিত্যের। ব্রাহ্ম আর ইয়ং বেঙ্গলরা হয়েছিল এর সহায়ক। সংখ্যায় কলকাতা শহরে বাঙালী হিন্দুর পরেই ছিল মুসলমানের স্থান। লক্ষ্য করবার বিষয় কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে হিন্দু সমাজের মত মুসলমানদের উপর ইউরোপীয় শিক্ষা-দীক্ষার তেমন কোন প্রভাবই পড়তে পারেনি। এর একটা কারণ ঐতিহাসিক। মুসলমানের কাছে ইউরোপীয় সভ্যতা ছিল ফিরিঙ্গী সত্যতা। তারা চেয়েছেন এই সভ্যতা থেকে দূরে থাকতে। তাঁদের কাছে এই সভ্যতাকে মনে হয়নি একটা অনুকরণযোগ্য উন্নতমানের সভ্যতা বলে। ‘ফিরিঙ্গী’ শব্দটা এসেছে আরবী ‘ফারাঙ্গী’ শব্দ থেকে। শব্দটার উদ্ভব হয় জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ক্রুসেডের (Cursades) সময়। প্রথম দিককার ক্রুসেডে ফরাসীরা গ্রহণ করে বিশেষ নেতৃত্ব। ফরাসীদের বলা হত ফ্রঙ্ক (Fronk)। এই ফ্রঙ্ক থেকেই আরবীতে উদ্ভব হয় ‘ফারাঙ্গী’ শব্দটি। পরে ফারাঙ্গী বলতে বোঝাতে থাকে গোটা খৃস্টান ইউরোপের বিভিন্ন জাতির মানুষকে।[17]

ক্রুসেড চলেছিল প্রায় দু’শ’ বছর (১০৯৫-১২৭২ খৃঃ)। ফিরিঙ্গীদের প্রতি এর ফলে গোটা মুসলিম বিশ্বেরই সৃষ্টি হয় তীব্র ঘৃণা। বাঙালী মুসলমানের মনেও ছিল ফিরিঙ্গী বিদ্বেষ। ইউরোপীয় সংস্কৃতি তার কাছে ছিল ফিরিঙ্গী সংস্কৃতি। গোটা উনবিংশ শতকে এবং বিংশ শতকের প্রথম ভাগে এ দেশের মুসলমানের মানসিক জাগরণ ইউরোপ তাই প্রাধান্য পেতে পারেনি। এ দেশের মুসলমানরা ইউরোগের দিকে না ঝুঁকে তাদের চিন্তার অনুপ্রেরণার জন্যে আগের মত প্রধানত তাকিয়ে থেকেছেন মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশেরই প্রতি।

প্যান-ইসলামিজম

জামাল আল দীন-আল-আফগানী (১৮৩৯-১৮৯৭) ছিলেন আফগানিস্তানের লোক। কাবুলের কাছে আসাদাবাদে তাঁর জন্ম। তিনি বিশেষ ধরনের ইসলামী আন্তর্জাতিকতাবাদ প্রচার করেন, যাকে সাধারণত উল্লেখ করা হয় প্যান-ইসলামিজম (Pan-Islamism) বলে। ইসলাম ধর্মের অন্যতম গোড়ার বিধান হল, গোটা মুসলিম বিশ্বকে একজন রাষ্ট্রপ্রধান বা খলীফার নেতৃত্বে একত্র থাকতে হবে। আফগানী চান ‘তুরস্ক’ খিলাফতের (Ottoman caliphate) পতাকাতলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে বিশেষভাবে একতাবদ্ধ করতে। একটা কার্যকর ফেডারেশন (Federation) গড়ে তুলাতে। তিনি বলেন, কেবল এভাবেই সম্ভব খৃস্টান ইউরোপের আধিপত্য থেকে, তথা আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে মুসলিম বিশ্বকে রক্ষা করা। আফগানী একদিকে যেমন প্রচার করেন ইসলাম ধর্মের বিশুদ্ধতা সাধন করার কথা, অন্যদিকে তেমন আবার বিশ্বজনীন ইসলামের ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রদান করেন একটা বাস্তব রাজনৈতিক কর্মসূচী।

আফগানী ছিলেন বিরাট কর্মী-পুরুষ। তিনি সমস্তু মুসলিম বিশ্বের তরুণদের মধ্যে জাগিয়ে তোলেন এক বিশেষ সাড়া। তাঁর চিন্তার ব্যাপক প্রভাব পড়ে মিসরে এবং ইরানের তরুণদের মধ্যে। বৃটিশ সরকার আফগানীর কার্যকলাপে খুবই শঞ্চিত হয়ে ওঠে। আফগানীকে মিসর থেকে এনে কলকাতায় (১৮৮২) কিছু দিনের জন্য অন্তরীণ রাখা হয়। এ সময় তাঁর সম্পর্কে এ দেশের মানুষ বিশেষভাবে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তাঁকে নিয়ে বাংলায় একটি বই লেখেন বাজিউদ্দীন মাসহাদী নামক এক ব্যক্তি। বইটি প্রকাশের কিছু দিনের মধ্যেই এ দেশের ইংরাজ সরকার কর্তৃক বাজেয়াত হয়।[18]

সমস্ত উনবিংশ শতাব্দী ধরে ইউরোপে চেষ্টা চলে তুর্কী সাম্রাজ্য (রোম সাম্রাজ্য) ভেঙ্গে দেবার। বিষয়টিকে এ সময় দেখান হত খৃস্টান ইউরোপ বনাম মুসলমানদের সংঘাত হিসাবে। এ সময় ইউরোপে বলা হত, পূর্ব ইউরোপে খৃস্টান ও খৃষ্টধর্ম রক্ষার জন্যই প্রয়োজন তুরস্ক সাম্রাজ্যের পতন। প্যান-ইসলামিক ধারণার জন্যে বাংলার মুসলমানদের বিশেষ সহানুভূতি ছিল তুরস্কের প্রতি। বাংলার মুসলমান মনে করেছে, তুর্কী হল মুসলিম বিশ্বের গৌরব। সে-ই ইসলামী সভ্যতার ধারাকে ধরে রেখেছে। তার শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমেই সম্ভব ‘নাসারা’ ইউরোপের আধিপত্যের হাত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মুক্তি। তাদের এ সময়ের চিন্তার মধ্যে কাজ করেছে বিশ্বজনীন ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের (আল-উখওয়াৎ আল-ইসলামীয়া) ধারণা। আফগানীর ভাবধারা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট মুসলমান লেখক ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৮০-১৯৩১ খৃঃ)।[19]

তিনি বলকান যুদ্ধের সময় (১৯১২) তুরস্ক যান, তারতের মুসলমানরা যে মেডিক্যাল মিশন পাঠান তার সঙ্গে। তিনি দেশে এসে ‘তুরস্ক ভ্রমণ’ নামক বই লেখেন। তাঁর লেখার মাধ্যমে প্যান-ইসলামিক ভাবধারা বিশেষভাবে প্রসার লাভ করে তখনকার বাঙালী মুসলিম বুদ্ধিজীবী মহলে। সিরাজী[20] তাঁর কবিতার বই ‘অনল প্রবাহ’র জন্য কারারুদ্ধ হন। এই বই প্রকাশের পর তিনি কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকেন ফরাসী চন্দন নগরে। সিরাজীর ভাবধারা কবি নজরুলকে এক সময় বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। নজ রুলের কবিতার মধ্যেও এক পর্বে দেখা যায় প্যান-ইসলামী ভাবধারার বিশেষ প্রকাশ। নজরুল ছিলেন বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য। তার লেখা বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতা তিনি প্রথম প্রকাশের জন্য দেন সে সময়কার মুসলমানদের মুখপত্র ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায়।[21] সিরাজী ছাড়া প্যান-ইসলামী ভাবধারা আর একজন মুসলমান লেখকে লেখার মাধ্যমেও এ সময় বিশেষভাবে প্রচারিত হয় এবং তা বাংলার মুসলিম মানসকে বিশেষভাবে প্রস্তাবিত করে। তিনি হলেন মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৮-১৯৫০)।[22] ইসলামাবাদী কেবল একজন লেখক হিসাবেই খ্যাত ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিরাট কর্মতৎপর ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রথম (১৯১১) প্রতিষ্ঠা করেন ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’ যা পরে হয় দাঁড়ায় বাঙালী মুসলমান সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের একমাত্র ফোরাম। ইসলামাবাদী খিলাফত আন্দোলনের সময় কারাবরণ করেন। মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলনের কারণ ছিল এই রকম : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুরস্ককে বিশেষভাবে শক্তিহীন করার চক্রান্ত চলে। বাঙালী মুসলমানরা তধন (১৯২০) জান্নতের অন্যান্য অঞ্চলের মুসমানদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ‘আরম্ভ করেন খিলাফত আন্দোলন। এর লক্ষ্য ছিল ইংরাজের সঙ্গে অসহযোগিতা করে তুরস্ক সম্পর্কে তার নীতিতে পরিবর্তন আনা এবং মুসলিম বিশ্বের অন্তত একটা কে শক্তিতে স্বজায় রাখা। গান্ধী খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন জানান। তিনি এই সুযোগে চান সারা ভারত জুড়ে ব্যাটশ বিরোধী অন্দোলন গড়ে তুলতে। যিলত ও গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোন (Non-co-operation Movement) মন্ধে যে বৃর্টিশ বিরোধী আন্দোলন সৃষ্টি হয়, তা নেয় বিরাট এক গণ-আন্দোলনের রূপ।

কিন্তু মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলনে ভাটা পড়ে। কামাল পাশার আবির্ভাবের ফলে অবসান ঘটে তুর্কী খিলাফতের ধারণার। অন্যদিকে পরে গান্ধিজীর নেতৃত্বে দুর্বলতার জন্যে অসহযোগ আন্দোলন হয়ে পড়ে বিভ্রান্ত ও নিস্তেজ। ফলে এ আন্দোলন দমন করা সম্ভব হয় ইংরাজের পক্ষে। খিলাফত আন্দোলন শেষ হল। কিন্তু শেষ হলেও এই আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয় যে একটা বিশ্বজনীন ইসলামের ধারণা তার প্রাব কাজ করে যেতে থাকে এই উপমহাদেশের মুসলমানদের মনে, বিশেষ করে বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে। যতগুলো কারণে পাকিস্তানের দাবি বাঙালী মুসলমানের কাছে আবেদনবহ হয়েছিল, তার মধ্যে প্যান-ইসলামী ভাবধারায় প্রভাব ছিল সম্পৃক্ত হয়ে।

বাংলা ভাষা আন্দোলন

সাবেক পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হবার মূলে একাধিক কারণ ছিল। এসব কারণের মধ্যে ভাষার বিবাদ অন্যতম। এই ভাষার বিরোধ সৃষ্টি হয় সাবেক পাকিস্তানের রাষ্ট্রিক কাঠামোর মধ্যে। কারণ, সাবেক পাকিস্তানের রাষ্ট্রিক কাঠামোর মধ্যে বাংলা ভাষাভাষীরা হয়ে ওঠেন সংখ্যাগুরু এবং তাঁরা থাকেন ভৌগোলিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। যেহেতু সাবেক পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ছিল না কোন ভৗগোলিক যোগাস্বাগত ঐক্য, তাই ভাষাকে ঘিরে একটা পৃথক জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হবার অনুকূল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। ইংরাজ আমলে যখন কথা উঠত, ইংরাজ চলে যাবার পর ভাবী স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রভাষা কি হবে, তখন হিন্দুরা সাধারণভাবে সমর্থন করতেন হিন্দীর দাবি আর মুসলমানরা করতেন উর্দুর।[23] ইংরাজ আমলে কখনও কেউ ভাবতে পারেনি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদানের কথা। যদিও তখন এ ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা খুব কম ছিল না। আর প্রকাশ ক্ষমতা এবং সাহিত্য সম্পদের দিক থেকে বিচার করলে সম্ভবত বাংলাকেই দিতে হত ভারতীয় ভাষাগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে প্রথম স্থান। বাঙালী মুসলমান ভাষা সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিল বাঙালী হিন্দুর চাইতে অনগ্রসর। কিন্তু বাঙালী মুসলমানই নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভাষার দাবিতে করল রক্তদান। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় এর আগে ভাষার দাবিতে এ ধরনের কোন আন্দোলন আর কখনও আর ঘটেনি। বাঙালী মুসলমানের বাংলা ভাষা-প্রীতির ইতিহাস অবশ্য বেশ জটিল। এক সময় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মুসলমানরা যে ভাষায় কথা বলতেন, তাকে উল্লেখ করা হত ‘মুসলমানী বাংলা’ হিসাবে। এ ভাষায় কথা বলতেন তখনকার যশোর, খুলনা, কুমিল্লা (ত্রিপুরা) জেলা ও ঢাকা বিভাগের মুসলমানরা।[24] এই ভাষার কিছু লিখিত সাহিত্যও ছিল। খৃস্টান মিশনারীরা মুসলমানদের মধ্যে খৃস্ট ধর্ম প্রচারের মানসে এই বাংলা ভাষায় প্রকাশ করেন বাইবেল-এর একটি অনুবাদ। মুসলমানী বাংলার বৈশিষ্ট্য ছিল আরবী-ফারসী শব্দের অধিক ব্যবহার একজন খৃস্টান মিশনারী রেভারেন্ড গোল্ড স্যাক সংকলন করেন এই বিশেষ বাংলা ভাষার একটি বাংলা-ইংরাজী অভিধান। এতে তিনি স্থান দেন প্রায় ছয় হাযারের মত শব্দ, যা ছিল তখনকার বাংলার মুসলিম সমাজে খুবই প্রচলিত, অথচ সাধারণ বাংলা অভিধানে যাদের পাওয়া যেত না। অনেক বাঙালী মুসলমান লেখক বাংলায় আরবী-ফারসী শব্দ বর্জন করবার প্রচেষ্টার বিশেষ বিরোধিতা করতেন। তাঁরা ঠিক মুসলমানী বাংলায় না লিখলেও চাইতেন মুসলিম সমাজে প্রচলিত আরবী ফারসী শব্দ বেশী করে ব্যবহার করতে। নজরুলের অনেক লেখায় যে আরবী-ফারসী শব্দের আধিক্য দেখা যায় তা হল এই ঐতিহ্যেরই ফল।[25]

১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সময় যে বাংলা ভাষার দাবি উঠল বাংলাদেশের মানুষ সাধারণভাবে এই ভাষা অন্দোলনে সাড়া দিয়েছিল। ভাষাভিত্তিক চিন্তাভাবনা আর সব বাস্তবতাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল।

বর্তমান পর্যায়

বর্তমানে অবাঙালী মুসলিম আধিপতার উদ্বেগ তিরোহিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র। অন্যসব ঐতিহাসিক বাস্তব তারও তাই এখন ঘটতে পারছে পুনঃপ্রকাশ।

প্রায় সাড়ে সাতশ’ বছর ধরে ইসলাম ও তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সভ্যতা এদেশের মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে আসছে। এই ইতিহাপ স্বল্প দিনের নয়। অন্যদিকে ইসলাম এমন একটা ধর্ম যা বর্তমান বিক্ষুব্ধ বিশ্বেও তার অতীত রানৈতিক ঐক্য ও সক্রিয়তা কিছুটা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ তার আপন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্যই চাচ্ছে বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাথে সংহতি বাড়াতে। আজকের বাংলাদেশে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার সাথে তাই আবার যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে ইসলামী আদর্শ। রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বজায় রাখার ঐকান্তিক ভাগিদের মধ্যেই রয়েছে এর উৎস।

[1] David E. Sopher, Geography of Religions, (Prentice-Hall Inc., Engle-wood, Cliffs, N.J., 1967) PP. 74-75.

[2] চতুর্দশ শতকে মরক্কো থেকে আগত বিখ্যাত আরব মুসলিম পরিব্রাজক ও আইনজ্ঞ ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা তৃষ্ণার্ত মুসলমান পথিককে পানি খেতে দেয় না। কারণ, তাঁরা মনে করেন এর ফলে বাসন অপবিত্র হবে।

দ্রষ্টব্য : রমেশ চন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ (মধ্যযুগ)। পুত্র ৩২৪-৩২৫ (জেনারেল প্রিন্টার্স এ্যান্ড পাবলিশার্স) কলিকাতা ১৩৮০)।

[3] বিখ্যাত কবি ঈশ্বরগুপ্ত (১৮১১-১৮৫৯) লিখেছেন :

চিরকাল হয় যেন বৃটিশের জয়।

বৃটিশের রাজলক্ষ্ণী, স্থির যেন রয়।

এমন সুখের রাজ্য, আর নাকি হয়।

ব্রাহ্ম মতে এই রাজা, রাম রাজ্য কয়।

[4] উনবিংশ শতকের মসলমানদের সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল এবং নিভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় W.W. Hunter লিখিত The Indian Musalmans নামক বইতে। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭১ সালে। হাটার ছিলেন বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসের একজন নামকরা কর্মচারী এবং মানব বিদ্যার (Ethnology) গবেষক।

[5] মার্কস চিঠিটা ইংরাজীতে লেখেন আমেরিকার তখনকার উদারনৈতিক NewYork Daily Tribune পত্রিকার। চিঠিটা প্রকাশিত হয় ১৮৫৩ সালের ২৫ শে জুন সংখ্যায়। চিঠিটির উদ্ধৃতি দেয়া হল কেবল মাত্র কুটির শিল্পের ধ্বংসের পরিমাণ ও এদেশের অর্থনীতিতে তার প্রতিক্রিয়া বোঝবার জন্য। মার্কস-এর অন্যান্য ব্যাপারে মত মেনে নেবার জন্য নয়। যেমন মার্কস মনে করতেন, ব্রাহ্মণদের মধ্যে আছে গ্রীকদের রক্ত। তাই তারা শ্রেষ্ঠ। দ্রষ্টব্য এই একই পত্রিকায় মার্কস-এর ২২-৭-১৮৫৩ তারিখের চিঠি। মার্কস আরো বলেছেন, ভারতে জাতিদের মধ্যে আছে প্রাচীন জার্নালদের জাতিরুপ। ভারত এল ইউরোপের ভাষা ও ধর্মের উৎসভূমি।

[6] Census of India, 1901, Vol, vi, Part I. p. 173.

[7] ওয়াহাবী নামটা ইংরাজ লেখকদের দেয়া। বাংলায় যাঁরা ওয়াহাব-এর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে আন্দোলন করছে, তাঁরা কেউ নিজেদের কখনও ওয়াহাবী বলে দাবি করতেন না। শরীয়তউল্লাহর সঙ্গে অন্য ওয়াহাবী ভাবাপন্নদের একটি পার্থক্য ছিল। তাহলো ফারায়জীরা ইসলামী আইনের ব্যাখ্যায় হানাফী মাযহাবকে স্বীকার করতেন।

[8] পূর্বোক্ত Geography of Religions বই-র ১০৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

[9] রমেশ চন্দ্র মজুমদার, বাংলাদেশের ইতিহাস (আধুনিক যুগ) পৃঃ ৫৮-৬০ (জেনারেল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৩৮১)।

[10] Jagadish Narayan Surker, Islam in Bengal (Patna Prakashon, Calcutta, 1971) PP. 60-61. (আরবীতে তরীকত মানে হল পথ বা পথী। তরকা-ই-মুহাম্মদীয়ায় অর্থ হল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর বিধান বা পথ অনুসরণকারী।

[11] নরহরি কবিরাজ, স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙলা, ঢাকা সংস্করণ, পৃঃ ৭৯।

[12] ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীকে রাজকীয় সনদ দেবার সময় চুক্তিতে বলা ছিল যে, কোম্পানী এদেশে ধর্ম প্রচারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে না। এ সময় কলকাতার কাছে শ্রীরামপুর ছিল ডেনমার্ক-এর অধিকারে। ইংরোজ খৃস্টান পাদ্রীরা তাই সেখানে মেয়ে প্রথম ছাপাখানা খোলেন এবং শ্রীরামপুরকে কেন্দ্র করে বাংলায় খৃস্টধর্ম প্রচারে উদ্যোগ নেন। এর আগে পর্তুগীজরা ঢাকা ভাওয়াল জঙ্গলে গির্জা ও ক্যাথলিক খৃস্ট ধর্ম প্রচারে উদ্যোগ নেয়। খৃস্টান পাদ্রী ‘আসসুম্পসাও’ প্রথম বাংলা গদ্যে খৃস্ট ধর্ম সংক্রান্ত পুস্তক লিখে পর্তুগাল-এর -এর রাজধানী লিসবন থেকে ছাপিয়ে প্রকাশ করেন। এই ছাপার অক্ষর ছিলো রোমান। ‘আসসুম্পসাও’-এর গদ্য খুব ভাল। এ গদ্যে ঢাকার বাংলার প্রভাব নেই। তাই মনে করার হেতু আছে যে ইংরাজ আসবার আগে থেকেই এদেশে সাধু পদ্যের চল ছিল এবং তা একেবারে কাঁচা ছিল না। পাদ্রী ‘আসসুম্পসাও’-এর ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’। (Crepar Xaxtrer Orthbhed) রচিত হয় ১৭৪৩ সালে।

[13] শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা উপন্যাস  বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়, কলকাতা, ১৩৫০ পৃঃ ১০-১২)

[14] বঙ্কিম চন্দ্র অন্যত্র বলেছেন, “স্বাধীনতা দেশী কথা নহে, বিলাতী অমদানী। লিবার্টি শব্দের অনুবাদ, ইহার এমন তাৎপর্য নয় যে, রাজা স্বদেশীর হইতে হইবে। দ্রষ্টব্যঃ মোহিতলাল মজুমদার, বাংলার নবযুগ। পৃঃ ৭৯ (বিদ্যোদয় লাইব্রেরী, কলিকাতা, ১৯৬৫)।

[15] মোহিত লাল মজুমদায়, বাংলার নবযুগ। পৃঃ ৩৫।

[16] তখন হিন্দু কলেজের ছাত্ররা মনে করতেন যে, মদ্যপান করা সভ্যতার চিহ্ন, উহাতে দোষ নাই। ‘রাজ নারায়ণ বসুর আত্ম চরিত্র’। পৃঃ ৯১। Kuntaline Press, Calcutta, 1909.

[17] তখন হিন্দু কলেজের ছাত্ররা মনে করতেন যে, মদ্যপান করা সভ্যতার চিহ্ন, উহাতে দোষ নাই। ‘রাজ নারায়ণ বসুর আত্ম চরিত্র’। পৃঃ ৯১। Kuntaline Press, Calcutta, 1909.

[18] সাপ্তাহিক দেশ, সাহিত্য সংখ্যা, ১৯৬৭, পঃ ৯৯-১১১।

[আফগানী নজরবন্দী থাকা সত্ত্বেও, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি (১৮৪৮-১৯২১) আহুত একটি বিরাট সভায় বক্তৃতা করেন। বিপিন চন্দ্র পাল (১৮৫৮-১৯৩২) তাঁর আত্মজীবনীতে বাংলার মুসলমানদের উপর আফগানীরর প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছেন]

[19] Mahmud Shah Qureshi (1971), Etude sur L ‘Evolution Intellectuelle chez La Muslmans due Bangle, 1857-1947. Moveton, Paris. PP.128-131

[20] [এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ইসমাইল হোসেন সাহেব ছিলেন সিরাজগঞ্জের লোক। তাই তিনি নিজের নামের শেষে লিখছেন সিরাজী, তার কোন পূর্বপুরুষ পারস্যের সিরাজ শহরের অধিবাসী ছিলেন বলে নয়।]

[21] নজরুলের প্যান-ইসলামিক ভাবধায়া প্রসূত কবিতার নিদর্শন হিসাবে উল্লেখ করা চলে ‘খালিদ’, ‘ওমর ফারুক’ চিরঞ্জীব ‘জগলুল পাশা’ ইত্যাদি কবিতার নাম। এ সময়কার নলের একটি অতি জনপ্রিয় গানের দু’লাইন হল এই রকম :

দিকে কি পুনঃ জ্বলিয়া উঠিছে দীন-ই-ইসলামী লাল মশাল

ওরে বেখবর তুইও ওঠ জেগে তুইও তার প্রাণ প্রদীপ জ্বাল’।

[22] ইসলামাবাদী ছিলেন চট্টগ্রামের লোক। মুঘল আমলে চট্টগ্রামের নামকরণ করা হয় ইসলামাবাদ। তাই মনিরুজ্জামান সাহেব নিজেকে চট্টগ্রামের লোক বোঝাবার জন্যে নামের শেষে লিখতেন ‘ইসলামাবাদী’।

[23] সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যা, ভারতের ভাষা ও ভাষা সমস্যা। পৃঃ ১০৪। বিশ্ব-ভারতী গ্রন্থালয়, কলিকাতা, ১৩৫৬ সংস্করণ।

[24] Census of India, 1901 vol. part I. pp. 317-318.

[25] এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, এক সময় মার্জিত বাংলা বলতে বোঝাত আরবী ফারসী শব্দবহুল বাংলাকে। হলহেড (Halhed) মাছের ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত তাঁর বাংলা ব্যাকরণের ভূমিকায় বলেছেন, মার্জিত বাংলা হল বাংলা ক্রিয়াপদের সঙ্গে অজস্র ফারসী ও আরবী বিশেষ্য পদযুক্ত বাংলা। দ্রষ্টব্য, Denesh Chandra Sen. History of Bengali Language and Literature, Calcutta University. 1911. p. 831.

সূত্রঃ বাংলাদেশে ইসলাম, রচনায়: ডক্টর এবনে গোলাম সামাদ।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88