সাত ডাকাত আর হাতেম তায়ী
রচনায়: ফররুখ আহমদ
পুঁথির কিস্সা
গাঁয়ের পুঁথি পাঠ ডান দিক থেকে পাতা উল্টাতে হয়, ভুলেও কেউ বাঁ দিক থেকে পাতা উল্টায় না। বড় বড় পৃষ্ঠার, বড় বড় হরফে ছাপা এসব বইয়ের নাম কেউ দিয়েছেন বটতলার পুঁথি। কেউ বলেন পুঁথি-কেতাব; আবার শুধু কেতাবও বলেন অনেকে। আগাগোড়া পদ্যে লেখা এইসব পুঁথি-কেতাব যখন গাঁয়ের দহলিজে সুর করে পড়া হয় ভিড় জমে পড়ুয়ার চারপাশে। আর যতক্ষণ না কিসসা শেষ হয় ততক্ষণ সকল শ্রোতা কান খাড়া করে পুঁথি পড়া শোনেন।
এই ভাবে পুঁথি পড়া চলেছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। বারো বছরে এক যুগ, আর একশো বছরে এক শতাব্দী। এই রকম কত যুগ, কত শতাব্দী ধরে পুঁথি পড়া শুনেছেন আমাদের ময়-মুরুব্বী-পূর্ব পুরুষেরা। ঠিক কবে থেকে পুঁথি পড়ার চল হলো সে কথা আজ বলা কঠিন। তবে এইটুকু বলা চলে যে, কয়েকশো বছর আগে মুসলিম শাসন আমলে যখন বাংলা ভাষা আর সাহিত্য শাহী দরবারে পয়লা কদর পেল তখন থেকে পুঁথি সকলের কাছেই আদর পাচ্ছিল। তার আগে ধরতে গেলে বাংলা সাহিত্য বলতে কিছু ছিল না। বাংলা ভাষাকে তখন ভাল নজরে দেখত না অনেকেই। বাংলা ভাষায় ধর্মগ্রন্থ লিখলে “নরকে” যেতে হবে একথাও কেউ কেউ বলত বুক ফুলিয়ে। মুসলমানেরাই শেখালেন যে, কোন ভাষাই খারাপ নয়। সব ভাষাতেই ভাল কথা বলা যায়, ভাল কথা লেখা যায়। তখন থেকেই বাংলা ভাষায় এসব পুঁথি লেখা শুরু হয়েছে। আর চল হয়েছে পুঁথি পড়ার। পুঁথি সাহিত্যের ইতিহাস যেমন পুরনো, পুঁথি সাহিত্যের সংখ্যাও তেমনি অগুণতি-বেশুমার। বিষয়বস্তুও নানা কিসিমের। কিসসা কাহিনী নিয়ে যেমন অনেক পুঁথি লেখা হয়েছে, তেমনি অনেক পুঁথি লেখা হয়েছে আমাদের জাতীয় ইতিহাস, জঙ্গ-জেহাদ, দ্বীন-ধর্ম, বিতর্ক-বাহাস নিয়ে। নানা বিষয়ে পুঁথি লেখা হলেও পুঁথিসাহিত্যকে মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যায়। একটা হ’ল শক্ত সংস্কৃত মিশ্রিত সাধু ভাষার পুঁথি, আর একটা হ’ল আরবী-ফারসী মিশেল সহজ চলতি ভাষায় পুঁথি। পুঁথি প্রসঙ্গে তোমাদের এটাও জেনে রাখা দরকার যে পুঁথি সাহিত্যের সকল পুঁথিই মৌলিক রচনা নয়। তরজমাও আছে প্রচুর। কোন কোন তরজমার মূল গ্রন্থ বিশ্ব সাহিত্যে একক স্থান অধিকার করেছে। তোমরা যখন বড় হবে তখন এই পুঁথি সাহিত্যের বিচিত্র ইতিহাসের অনেক কিছুই জানতে পারবে। আর তখন তোমরা ভালভাবে পরিচিত হবে পুঁথি সাহিত্যের মুকুটমণি বা কাসাসুল আম্বিয়া, তাজকেরাতুল আউলিয়া, শাহনামা, আলিফ-লায়লা, জঙ্গনামা, আমির হামজা, হাতেম তাই প্রভৃতি পুঁথির সঙ্গে।
এখানে আমরা সৈয়দ হামজার হাতেম তাই পুঁথি থেকে একটা কিস্সা শোনাচ্ছি।
– ফররুখ আহমদ
সাত ডাকাত আর হাতেম তায়ী
সে অনেক মুদ্দদ আগেকার কথা…।
চীন মুলুক থেকে ইরানে আসার যে পথ, সেই পথে ছিল এক বিরান, বেবাহা ময়দান। সারাদিন সারারাত হা-হা করত; খা-খা করত সেই ময়দানে। সেখানে না ছিল সব্জী ফসল, ছিল পশুপক্ষী আর না ছিল জনমনিষ্যি।
শুধু এক থুথুরে বুড়ী থাকতো সেখানে শুকনো গাছের বাকলের মত বুড়ীর চামড়া শুকনো খসখসে। এবড়ো থেবড়ো মাঠের মত তার তোবড়ানো মুখ। আর তার চুল আর শণের দড়ির মত ধবধবে সাদা। বুড়ী তাকাতে কুতকুত করে। আর সেই চাউনি যে দেখতো তার বুকের রক্ত যেত ঠাণ্ডা হিম হয়ে। সকলে তাকে ডাকতে ডাইনী বুড়ী বলে।
ডাইনী বুড়ীর সাত ছেলে। সাত ছেলেই জোয়ান মর্দ। ইয়া বড় বুকের ছাতি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল, টকটকে লাল চোখ; আর যেন পাথরে খোদাই। প্ৰকাণ্ড শরীর। শরীরের রঙ। আবলুস কাঠের মত মিশমিশে কাল। অন্ধকারে হঠাৎ দেখলে দেওদৈত্য বলে মনে হয়।
বুড়ীর সাত ছেলে গায়ের জোরে হাতীকেও ঘায়েল করতে পারে। কিন্তু গায়ে জোর থাকলে কি হয়, কুড়ের কুড়ে, হদ্দ কুড়ে সাত ভাই। কাজ কারবার দূরে থাক খড়কুটোও নাড়বে। খেটে খাবে না কেউ, ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ রেখে বসে বসে খাবে। দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে যে মেহনত করে রুজী-রোজগার করতে হয় সেই মেহনতের কথা কেউ ভাবতে চায় না।
কিন্তু ছেলেরা না ভাবলে কি হবে! বুড়ীকে হর হামেশাই সে কথা ভাবতে হয়। আটা, ময়দা থেকে শুরু করে তেল, নুন, লাকড়ি সব কিছুই জোগাড় করতে হয়। রান্না বান্নাও করতে হয়। যত ভাবনা, যত কাজ, সব যেন বুড়ীর একলার।
এদিকে সাত ছেলের মুখে আবার যা তা রোচে না। এক এক জনের খোরাকিও প্রচুর। রুটি খাবে তো রুটির একটা ঢিবি চাই, ভাত খাবে তো ভাতের একটা পাহাড়। কিন্তু মেহনত না করলে রুটির ঢিবি আর ভাতের পাহাড় আসে কোথেকে! সাত ছেলে নিয়ে বুড়ী পড়ল বিষম ভাবনায়। অনেক ভেবে শেষতক বুড়ী বলল : বাবারা, তোরা যখন কেউ খেটে খাবিনে, তখন এক কাজ কর। এই ময়দানের ভিতর দিয়ে কত মানুষ যায়, আসে। তাদের কারো কাছে থাকে টাকা কড়ি, কারো কাছে থাকে ঘি-আটা; আবার কারো কাছে থাকে দামী দামী কাপড়চোপড়, হীরে জহরত। ময়দানের ধারে বসে আমি ভিক্ষা চাইব। যখন বুঝব যে কারো কাছে দামী জিনিস-পত্তর আছে, তখন তোদেরকে আমি তা ইশারায় জানিয়ে দেব। আর তোরা ময়দানের ভিতরে গিয়ে তাদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিবি। কেমন, পারবি না?
বুড়ীর কথা শুনে সাত ছেলে মহা খুশী। সকলেই প্রায় একসঙ্গে শশারগোল করে বলে ওঠে : এতে আর না পারার কি আছে? বড় বড় কাফেলার মহড়া নিতে পারি আমরা সাত ভাই, আর তুমি বলছ রাহী মুসাফির দু’একজনের কথা!
রাত্তিরে শলা-পরামর্শ করে পরদিনই সাত ভাই কাজ শুরু করে দেয়। বুড়ী পথের ধারে বসে থাকে আর লোক দেখলেই চেঁচিয়ে বলে : গরীব মিসকিনকে একটা পয়সা দিয়ে যাও
বাবা! …গরীব মিসকিনকে একটা পয়সা দিয়ে যাও। বুড়ীর সাত ছেলে আশেপাশে ঝোপজঙ্গলে ওঁত পেতে বসে থাকে ঠিক যেন শিকারী বাঘ। বুড়ীর ইশারা পেলে শিকারী বাঘের মতই তারা ধাওয়া করে শিকারের পেছনে। সন্ধ্যার সময় যখন তারা ঘরে ফেরে তারা কোনদিন আনে টাকাকড়ি, কোনদিন আনে ঘি-আটা আর ক্বচিৎ কখনো নিয়ে আসে রেশমী কাপড়, শাল দোশালা আর চোখ ঝলসানো হীরে-জহরত। বুড়ী বলে : শাহী দৌলত।
লুটতরাজ করে বুড়ীর সাত ছেলে যখন ঘরে ফেরে তখন তাদের চেহারা দেখে মনে হয়, সাত ভাই না সাতটা রাক্ষস। কারো কাপড় গেছে ছিড়ে; কারো গায়ে রক্তের ছোপ, কারো পিটে কালসিটে দাগ। ঝোড়ো কাকের পালকের মত আগোছালো তাদের মাথার চুল। সব মিলিয়ে তখন বিকট তাদের চেহারা।
বুড়ীর সাত ছেলে হুমহাম করে ডেরায় ফেরে। ডেরায় ফিরেই লুটতরাজের জিনিস-পত্তর তারা দুমদাম করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর হাতের কাছে রুটি মিঠাই যে যা পায় তাই গপাগপ করে গিলে এক এক জন এক এক সুরাই পানি পান করে। আর একটু পরেই হাত-পা ছড়িয়ে গাছতলায় শুয়ে ভোঁস ভেঁস করে নাক ডাকিয়ে ঘুমায়।
শুকনো ঘাস পাতা আর লাকড়ি জ্বেলে বুড়ী তখন রান্না করতে বসে। রান্না শেষ হলে অনেক রাত্তিরে বুড়ী তখন ছেলেদের খেতে দেয়। দেয়ালের গায়ে কালো কালো ছায়া ফেলে তারা গোগ্রাসে খায়। আর খাওয়া দাওয়া শেষ হলে মস্ত বড় বড় হাই তুলে আবার। তারা ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমায় বেলা দুপুর পর্যন্ত! ঘুম থেকে উঠে আর এক দফা খেয়ে নিয়ে কেউ গল্প গুজব করে, কেউ মনের আনন্দে গান ধরে, কেউ ঘুরে বেড়ায় ফাঁকা ময়দানে। ডাকাতি, রাহাজানি করে আর লুটতরাজের মাল খেয়ে এইভাবে মহাশূর্তিতে তাদের দিন কাটে।
কিন্তু চিরকাল কখনো সমান যায় না। কেমন করে জানি সাত ভাই ডাকাতের কথা দুনিয়ায় ফাঁস হয়ে যায়। কেউ আর ভয়ে সেই ময়দানের তিন সীমানা মাড়াতে চায় না।
একদিন যায়, দুদিন যায়, হপ্তা যায়, মাস যায়, কেউ আর ময়দানের সীমা সরহদ মাড়ায় না। জমানো ঘি-আটা ফুরিয়ে যায়, টাকা কড়ি শেষ হয়। কিন্তু কোন মুসাফিরের পাত্তা মেলে না সেখানে। বুড়ীর সাত ছেলে সাতটা খ্যাপা মহিষের মত ঘুরে বেড়ায়। বুড়ীও খুব অস্থির হয়ে ওঠে। খসখস করে বুড়ী গা চুলকায় আর ঘ্যানর ঘ্যানর করে সেই একই কথা বলতে থাকে : কি হ’ল, কেউ আসছে না কেন? কেউ আসছে না কেন?
হঠাৎ একদিন পথের বাঁকে দেখা যায় শাহজাদার মত সুন্দর এক নওজোয়ানকে। বুড়ী চোখ কচলে দেখে। ঠিকই তো। যেমন চেহারা, তেমন লেবাস পোশাক! শাহজাদা না। হ’য়েই যায় না। কিন্তু শাহজাদা হ’লে একা কেন? সঙ্গে লোকলশকর নাই কেন? বুড়ী আপন মনে বিড়বিড় করে।
আসল কথাটা এই—
সাত সওয়ালের জওয়াব খুঁজতে যেয়ে শাহজাদা হাতেম তায়ী পথ হারিয়ে সেই ময়দানে। হাজির হল। হাতেমের পণ ছিল। কি পণ? -না তিনি আল্লাহর পিয়ারা সৃষ্টি মানুষের কাজে জান কোরবান করবেন। এ জন্যেই মানুষের কাজে তিনি দেশ দেশান্তর সফর করেন। এই রকম একটা সফরের পথেই দিশা হারিয়ে হাতেম সাত ডাকাতের ময়দানে হাজির হন।
ময়দানের পথ-ঘাট ঠিকমত চিনে নেওয়ার জন্যে হাতেম মানুষের খোঁজ করেন। কিন্তু মানুষ কোথায় ? শেষতক হাতেম দেখেন কি,–না থুথুরে এক বুড়ী, একটা বুড়ো পাখীর মত একলা সেই ময়দানে বসে আছে। মানুষ দেখে হাতেম তাড়াতাড়ি এগিয়ে যান আর বুড়ীর কাছে পৌঁছানোর সাথে সাথেই হাত বাড়িয়ে বুড়ী হাতেমের কাছে ভিক্ষা চায়। এই ফাঁকা মাঠে, বিরান, বেবাহা ময়দানে হাতেম যে মানুষের দেখা পাবেন একথা তিনি আগে ভাবতেই পারেননি। কাজেই বুড়ীকে দেখে তিনি খুব খুশী হন। আর বুড়ী যখন তাঁর কাছে সাহায্য চায় তখন হাতেম মনের খুশীতে দামী হীরার আংটিটি তাকে দিয়ে দেন।
হীরার আংটি ছিল হাতেমের সাথে।
নেকালিয়া লিয়া মর্দ দিল তার হাতে।।
আঙ্গুটি পাইয়া বুড়ী খোশাল হাজার।
দেলে ভাবে মোসাফের হবে মালদার।।
বুড়ীকে হীরার আংটি দিয়ে পথের খোঁজ নিয়ে হাতেম এগিয়ে যান। আর বুড়ি ভাবতে শুরু করে একটি মাত্র মুখের কথায় যে লোক হিরার আংটি দিয়ে দিতে পারে, না জানি তার কাছে কত ধন-দৌলত আছে।
এই রকম অনেক ভাবা-গোণা করে বুড়ি সাত ছেলেকে হাততালি দিয়ে ডাক দেয়। সাত ছেলে দুড়দুড় হুড়মুড় করে সেখানে এসে হাজির। দামী আংটি দেখে সাত ভাইয়ের চোখ বন বেড়ালের চোখের মত জ্বল, জ্বল ক’রে ওঠে। তারা আংটি নিতে এগিয়ে আসে। কিন্তু বুড়ী কাউকে আংটি না দিয়ে শুধু আঙ্গুল তুলে হাতেমকে দেখিয়ে দেয়। বুড়ীর কাছে। পথের ঠিকানা জেনে হাতেম তখন বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছেন।
হাতেমকে এগিয়ে যেতে দেখে সাত ডাকাত একাট্টা হয়ে ফিসফিস করে কথা বলে। হিস হিস করে শলা পরামর্শ করে। তারপর তারা হাতেমের পিছু নেয় আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কাছে যেয়ে পৌঁছায়।
নিতান্ত নিরীহ গো-বেচারা মানুষের মত সাত ডাকাত হাতেমকে বলে যে, শুধু পেটের ধান্দায় রুজী রোজগারের জন্যেই তারা বিদেশে যাচ্ছে। হাতেমের সঙ্গে তারা যেতে চায়। সফরের পথে সঙ্গী পাওয়া গেল ভেবে হাতেমও খুব খুশী হন। নানারকম কথাবার্তায় হাতেম এগিয়ে চলেন। সঙ্গে চলে সাত ডাকাত। তাদের কি মতলব আছে, সে কথা তারা কিছুতেই ফাঁস করে না। হাতেমও কিছু বুঝতে পারেন না। নিশ্চিন্ত মনে ডাকাতদের সঙ্গে এগিয়ে যান।
চলছেন তো চ’লছেন…..
একটা ময়দান যদি শেষ হয়, সঙ্গে সঙ্গেই আর একটা ময়দান নজরে পড়ে। সেটা পার হলে আর একটা, ময়দানের যেন আর শেষ নেই। পথেরও যেন আর শেষ নেই! এইভাবে এক ময়দান ছেড়ে অন্য এক ময়দানের সীমানার একটা পুরোন কুয়োর ধারে হাতেম যেই এসে দাঁড়িয়েছেন ঠিক সেই সময়ে ভাল মানুষের ভোল ছেড়ে সাত ডাকাত হঠাৎ রে-রে করে আওয়াজ তুলে এক সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাতেমের উপর। চোখের পলকে যেন এক হলমায় ঘটে যায় অনেক কিছু। এক ডাকাত পিছু থেকে হঠাৎ হাতেমের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেয়। আর ছ’ ডাকাত হাতেম তায়ীকে ধারালো তলোয়ার দিয়ে জখম করে তাঁর লেবাস পোশাক ছিনিয়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে কুয়োয় ফেলে পালিয়ে যায়।
হাতেম গাফেল ছিল কথায় কথায়।
পিছে হৈতে ফাঁসি তার ঢালিল গলায় ॥
ঘায়েল করিল তারে মারিয়া তলোয়ার।
যত কিছু ছিল সাথে সব নিল তার ॥
হাতেম তাইরে তবে কুয়াতে ঢালিয়া।
পলাইল চোট্টা লোক সেখানে থাকিয়া ॥
দাদা আদমের জামানার আদ্যিকালের সেই কুয়ো। কুয়ো তো নয় যেন পাতালে যাওয়ার সুড়ঙ্গ। কো’কাফ মুলুকের ঘুটঘুট্টি অন্ধকার জমে আছে সেই সুড়ঙ্গে। সেখানে না আছে এক ফোটা পানি আর না আছে এক রত্তি আলো। কবে যে সেখানে পানি সিল সে কথাও বলতে পারেনা কেউ। শুধু বলে যে, সাপ, বিচ্ছ আর অন্ধকারের আস্তানা জ্বিনের কুয়ো সেটা।
বেহুশ হালতে অনেক্ষণ হাতেম সেই অন্ধকারের আস্তানা জ্বিনের কুয়ো সেটা।
বেহুশ হালতে অনেকক্ষণ হাতেম সেই অন্ধকার কুয়োর তলায় পড়ে থাকেন। তলোয়ারের চোট খুব বেশি লেগেছে। লহু ঝড়ছে পানির মত। হুঁশ ফিরে পেতে হাতেমের অনেক সময় লাগে। খোদা রহমে হুঁশ ফিরে পেয়েই অন্ধকারে হাতড়িয়ে হাতেম উপরে ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু উপরে ওঠার যে কোন পথ-ই নাই! কুয়োর পাড় এমন খাড়া আর এমন পিছল যে একটা গিরগিটিও বুঝি সেই পাড় বেয়ে উপরে উঠতে পারে না। বারবার উপরে ওঠার চেষ্টা করে হাতেম হয়রান হ’য়ে পড়েন।
একটুখানি জিরিয়ে নেওয়ার জন্য হাতেম কুয়োর পাঁচিলে ঠেস দিয়ে বসেন। অন্ধকার এতক্ষণে অনেকটা চোখ-সওয়া হয়ে এসেছে। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার। …হাতেমের মনে হয়… মনে হয় অনেক মাল-পত্তর যেন কুয়োর তলায় সাজানো আছে। হাতেম আবার উপরে ওঠার জন্য কোশেশ করেন। একবার, দু’বার, তিনবার না, কিছুতেই পারা যাচ্ছে। হাতেম আবার চেষ্টা করেন।
এইভাবে দিন কেটে যায়। বিজন মাঠের বুকে সন্ধ্যা নামে। হাতেমের চারপাশে জমা হয়। আলকাতরার মত কাল অন্ধকার রাত্রি। নানা রকম বিপদ আপদ, বালামসিবতের কথা ভেবে হাতেম পেরেশান হয়ে পড়েন।
আল্লাহর রহমত। পেরেশানিতে হাতেম যখন প্রায় ভেঙে পড়েছেন, তখন তাঁর দুই চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। সেই ঘুমের মধ্যে হাতেম স্বপ্ন দেখেছেন। খাবের মধ্যে কে যেন হাতেমকে বলছেন : হাতেম তুমি কেন পেরেশান হয়ে পড়েছ? আল্লাহই তোমাকে এখানে। এনেছেন। তুমি দেখতে পাচ্ছ না, এই কুয়োর মধ্যে কত মানিক-মুক্তা লাল জওয়াহের সাজানো আছে ? এসব তোমার, তুমি সব নিয়ে যাও।
তোমার খাতিরে এই কুয়ার ভিতর।
লাল জওয়াহের মাল আছে বহুতর ॥
রাখিয়াছে আল্লাতালা তোমার খাতিরে।
উঠাইয়া লিয়া যাও কহিনু তোমারে ॥
তোমা হৈতে আল্লার বহুত কাম হবে।
আল্লার রাহের কামে হাশেমা রহিবে।।
খাবের মধ্যেই হাতেম সওয়াল করেন : কিন্তু এত মাল-পত্তর আমি উপরে ওঠাবো কি করে ? আর নিজেই বা উপরে উঠব কি করে?
স্বপ্নে দেখা সেই লোক জওয়াব দেন : সে কথা তুমি ভেবো না। রাত যখন ভোর হয়ে যাবে দু’জন মুসাফির সে মালমাত্তা সমেত তোমাকে কুয়োর উপরে তুলে দেবে।
কথা শেষ হতেই হাতেমের ঘুম ভেঙে যায়। হাতেম চোখ তুলে তাকান কিন্তু কিছুই নজরে পড়ে না। চারপাশে কাল সিয়া অন্ধকার থমথম করে। কতক্ষণে ফজর হবে হাতেম সেই কথাই ভাবেন। অন্ধকারে একটা একটা তারার রোশনি এসে পড়ে। হাতেম ভাবেন, ওটা হয়তো কুতুব তারা হবে।
বিরান রেবাহ ময়দানে
জ্বিনের কুয়োয় একরাত॥
হাতেমের কাছে মনে হয় হাজার রাত। কিন্তু দুঃখের রাতও শেষ হয় আল্লাহর রহমতে। ভোরের রোশনি ছড়িয়ে পড়ে তামাম দুনিয়ায়। কুয়োর ভিতরকার অন্ধকারও যেন একটু ফিকে হয়ে আসে। আর কি তাজ্জব ব্যাপার! ঠিক সেই সময়ে দু’জন মুসাফির এসে দাঁড়ান। কুয়োর পাশে। দু’জনের লেবাস পোশাকই দুধের মত সাদা ধবধবে। তাদের একজন হাতেমকে ডাক দিয়ে বলেন:
জেন্দা আছ কুয়াতে কিরূপে মোছাফের।
তখন হাতেম জওয়াব দিল তাহার খাতের ॥
বাঁচাইয়া রাখিয়াছে পরওয়ার দিগার।
তোমাকে ভেজিল বুঝি তল্লাসে আমার।।
একজন মুসাফির তখন বললেন : আল্লাহ তোমার ভাল করুন, তুমি মানুষের জন্য অনেক ভাল কাজ করবে। আর একজন বললেন : আল্লাহর সৃষ্টির খিদমত করাটাই হ’ল বড় এবাদত। দু’জন মুসাফির উপর থেকে হাতেমের জন্য নতুন জামাকাপড় ফেলে দেন। আর তার পরেই তাঁরা সাঁ সাঁ করে কুয়োয় নেমে এসে মালমাত্তা সমেত হাতেম তায়ীকে উপরে তুলে নিয়ে চোখের পলকে কোথায় যেন গায়েব হ’য়ে যান।
বিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে হাতেম প্রথমেই আল্লাহ-তায়ালার দরবারে শোকরিয়া জানান। তারপর সেই দু’জন মানুষের খোঁজ করেন। কিন্তু কি তাজ্জব ব্যাপার, তাঁদের আর পাত্তা পাওয়া যায় না। হাতেম অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন।
কুয়োর ধারে জমানো মালমাত্তার দিকে তারপর হাতেমের নজর পড়ে। হাতেম তাজ্জব বনে যান। অবাক হয়ে তিনি দেখেন যে কুয়োর পাশ ঝকমক করছে টাকার একটা স্তুপ। আর একপাশে ঝলমল করছে মোহরের আর একটু স্তুপ। আর ওটা কি? অবাক কাণ্ড। ভোরের আলোয় রোশনি ঠিকরে পড়ছে হীরা জহরতের স্তুপ থেকে।
এত টাকা!…..
এত মোহর!…..
এত হীরা জহরত!
কিভাবে এই শাহী দৌলৎ কুয়োটার মধ্যে চাপা পড়েছিল! হাতেম অবাক হয়ে সে চিন্তা করেন।
বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই আর এক চিন্তা হাতেমের মাথায় খেলে যায়, এই দৌলৎ কি কাজে লাগবে ? নিজে-তিনি টাকার লোভী নন। মাল-দৌলতে তাঁর দরকারও নেই। তবে… তবে…
হ্যা, ঠিক হয়েছে। হাতেমের চোখ-মুখ খুশীতে ঝলমল করে ওঠে। টাকার জন্যে যে সাত ভাই ডাকাত মরুভূমিতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় এই টাকাটা তাদের ভিতর বিলিয়ে দিতে হবে।
আহা গরীব বেচারিরা! মরুভূমির মধ্যে থাকে, কোন কাজকর্ম জানে না, করেও না। পেটের জ্বালাতেই তাদেরকে ডাকাতি, রাহাজানি করতে হয়।
হাতেম আরো চিন্তা করেন, যদি এই সব মালমাত্তা, ধন-দৌলত আমি তাদের মধ্যে বিলি করে দেই, আর সেই সঙ্গে কিভাবে হালাল রুজি-রোজগার করতে হয় সে সব কথা শিখিয়ে দেই তাহলে খোদার রহমতে ডাকাতগুলো হয়তো আবার সত্যিকারের মানুষ হয়ে যাবে। আর লুটতরাজ করবে না।
এইসব কথা ভেবে, মালমাত্তা কুয়োর ধারে রেখে হাতেম একাই এগিয়ে যান। অনেক পথ পেরিয়ে ময়দানের ধারে এসে দেখেন, সেই যে থুত্থুরি ডাইনী বুড়ী, সেই বুড়ী পথের মাঝখানে বসে নিজের মাথার উকুন মারার চেষ্টা করছে। কিন্তু উকুনগুলো এত বজ্জাত যে, বুড়ী মাথায় হাত দিতে না দিতেই মাথার এদিককার উকুন ওদিকে, আর ওদিককার উকুন এদিকে লুকোচুরি খেলার মত পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বুড়ী কিছুতেই উকুন ধরতে পারছে না। তাই রাগ করে দু’হাতে মাথা চুলকাচ্ছে। আর দু’এক গাছি সাদা চুল হাতের টানে উপড়ে গেলে উকুনগুলোর সাত খান্দান, চৌদ্দ গোষ্ঠীকে গালি গালাজ করছে।
হাতেমকে দেখেই উকুন মারা বন্ধ রেখে শুকনো ডালের মত হাত বাড়িয়ে বুড়ী মুখস্ত বুলি আওড়ানো শুরু করে : গরীব মিসকিনকে একটা পয়সা দিয়ে যাও।
হাতেম বুড়ীর কথা শুনে একটুখানি হেসে বলেন : দেব বুড়ী মা, খোদার রহমত হলে অনেক টাকা দিয়ে যাব তোমাকে। কিন্তু টাকা বয়ে আনবে কে? তোমার ছেলেরা গেল কোথায় ?
হাতেমের কথা শুনে বুড়ী বেজীর মত চোখ তুলে কুতকুত করে তাকায়! ও মা, এ আবার বলে কি! টাকা আনতে মানুষ লাগবে কেন! শেষ পর্যন্ত ছেলেদের ধরিয়ে দেবে নাকি কোতোয়ালের কাছে!
হাতেম বুড়ীর ভাব বুঝতে পারেন। হেসে বলেন : তোমার কোন ভয় নেই বুড়ীমা, খোদার রহমতে অনেক টাকা পেয়ে গেছি ময়দানের মাঝখানে। সে টাকা সাত জনেও ব’য়ে আনা কঠিন। আমি একা আনবো কি করে ? বিশ্বাস না হয় এস আমার সঙ্গে। নিজের চোখেই দেখতে পাবে।
বুড়ীর বিশ্বাস হয় এতক্ষণে। সাত ছেলেকে সে ডাক দেয় সাতবার হাততালি দিয়ে। আর কি তাজ্জব ব্যাপার; আশেপাশের ঝোপ জঙ্গল থেকে বুড়ীর সাত ছেলে যেন জমিন ছুঁড়ে হাজির হয় সেখানে। সাতটা দৈত্যের মত সাত ডাকাত হাতেমকে ঘিরে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
টাকার জন্যে বুড়ীর আর তর সয় না। সে হাতেমকে বলে : কই বাবা, টাকা দিলে না ? টাকা কোথায় ?
হাতেম হেসে বলেন : টাকা দেব বৈকি বুড়ী মা। তবে তার আগে আমার একটা কথার জবাব দাও। আমার দিকে ভালভাবে তাকিয়ে তোমরা বল দেখি, আমাকে কেউ চিনতে পেরেছ কী না?
বুড়ী চিনতে না পারলেও বুড়ীর সাত ছেলে ঠিক হাতেমকে চিনতে পারে। খানিকটা ভয়ও পেয়ে যায় তারা। ময়দানের মাঝখানে জ্বিনের যে কুয়ো থেকে বুকে হেঁটে একটা টিকটিকি উঠে আসতে পারে না, আর জলজ্যান্ত এই লোকটা কী না সেই কুয়ো থেকে উঠে এল। এল কি করে! একি মানুষ না আর কিছু কিছু বুঝে উঠতে পারে না তারা।
হাতেম যখন তাদেরকে আবার ঐ একই সওয়াল করেন, তখন বুড়ীর বড় ছেলে মাথা নীচু। করে কোনমতে শুধু একটা কথা বলে : হ্যা বাবা চিনতে পেরেছি। তবে আমাদের দোষ তুমি মাফ করে দাও। নিশ্চয় তুমি ওলি আউলিয়া না হয় জ্বিন, ফেরেশতা হবে। নইলে ঐ কুয়ো থেকে উঠে এলে কি করে?
হাতেম বলেন : তোমরা ভুল করছ। আমি জ্বিনও নই, ফেরেশতাও নই, ওলি আউলিয়াও নই। আমি তোমাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ। আল্লাহর রহমতেই ঐ কুয়ো থেকে আমি উঠে এসেছি।
হাতেমের কথা শুনে বুড়ীর সাত ছেলে জোড় করে মাফ চায়। বলে : তা হয় না বাবা। নিশ্চয় তুমি একজন কামেল দরবেশ। খোদার নেকবান্দা তুমি। আর সে জন্যেই তো খোদা তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে উপরে ওঠার তওফিক দিয়েছেন।
হাতেম বলেন : তাহ’লে তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারছো হায়াত ও মওত যার হাতে সেই আল্লাহই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, আর অনেক ধন-দৌলৎ দিয়ে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তোমরা যদি রাহাজানি ছেড়ে আবার ভাল হও, তবে সব টাকা আমি তোমাদের দিয়ে যাব।
হাতেমের কথা শুনে বুড়ীর সাত ছেলে ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলে। শুধু একটা ছেলে বলে : হুজুর পেটের জ্বালাতেই আমরা এমন মন্দ কাজ করি। আমাদের খোরাক পোষাকের। ভাবনা যদি মিটে যায় তা হলে কেন আমরা এই বদ কাজ করব?
শেকম খাতিরে মোরা করি ডাকু, চুরি।
খোরাক পাইলে কাছে এয়ছা কাম করি।।
নেয়াজিয়া রাখ যদি সবাকায়।
করি কছুর তবে আল্লাহর দরগায়॥
হাতেম তাদের কথা মন দিয়ে শোনেন। তাঁর চোখের পানি টলমল করে। তাঁর মনে তখন এই মানুষগুলোর জন্যে খুব মায়া হয়। তিনি বলেন : হায়াত মওত যেমন আল্লাহ্র হাতে, রিজিক দৌলৎও তেমনি আল্লাহর হাতে। তবে তার জন্যে খুব মেহনত করতে হয়। তোমরা যদি আল্লাহর পথে রুজী রোজগারের চেষ্টা কর তাহলে আল্লাহর রহমতে তোমাদের কোন অভাব থাকবে না। আর কাজ কারবারের জন্য যদি তোমাদের টাকা পয়সার দরকার হয় ইনশা আল্লাহ্ সে টাকা আমি তোমাদের দিয়ে যাব। তবে কি না। একটা শর্ত তোমাদের মেনে চলতে হবে।
এক বাত কহি ভাই যদি হও রাজী।
আজ হৈতে কেহ না করিবে দাগাবাজী॥
পহেলা আমার সাথে কর এ কারার।
রাহী মোছাফির লোকে না দিবে আজার॥
এ কাম হতে তওবা কর নামদার।
তোমাদিগে এখনি করিব মালদার।
হাতেমের কথা শুনে পাথরের মত শক্ত সাত ডাকাতের মন গলে যেন সাত ইঁদারার পানির মত হয়ে যায়। হাতেমের হাতে হাত রেখে তারা তওবা করে, আর প্রতিজ্ঞা করে যে কক্ষণো তার চুরি করবে না, ডাকাতি, রাহাজানি করবে না। রাহী মোসাফির বা অন্য কারো উপরে জুলুম করবে না। মেহনত করে তারা হালাল খাবে, সত্য কথা বলবে আর আল্লাহ্র পথে থেকে ভাল কাজ করে দিন গোজরান করবে। সাত ভাই ডাকাত তওবা করে একেবারে ভাল মানুষ হয়ে যায়।
তোওবা করিল যত চোর জাত।
হাতেম সবার তরে লিয়া গেল সাথ॥
দেখাইয়া দিল মাল তাহা সবাকায়।
খোশাল হইয়া সবে দোয়া দিল তায়॥
আল্লাতালা তেরা ভালা করে হামেহাল।
যেথা যাও ফতে পাও না ঘটে জঞ্জাল॥
হাতেম তাদের কথা শুনে, তাদের পরিবর্তন দেখে খুব খুশী হন। আর কুয়োর ধারে যত ধন-দৌলৎ পড়ে ছিল সাত ভাইয়ের মধ্যে বিলি করে দেন। বুড়ীকেও অনেক টাকা দিয়ে দেন। বুড়ী তখন খুশীতে কী যে করবে আর কী যে বলবে নিজেই তা বুঝে উঠতে পারে না। টাকা ছেড়ে মোহর ধরে, মোহর ছেড়ে হীরে জহরত তুলে নেয়। একবার হাসে তো। আর একবার কাঁদে। বুড়ীর অবস্থা তখন এক্কেবারে পাগলের মত।
তারপর ?
তারপর হাতেম তায়ীর জন্য দোয়া করে বুড়ীর সাত ছেলে সমস্ত ধন-দৌলৎ নিয়ে ডেরার দিকে পা বাড়ায়। আর আল্লার নাম নিয়ে হাতেম মানুষের কাজে ময়দানের পথে এগিয়ে যান।
তারা সবে মাল লিয়া হইল রওয়ানা।
ময়দানের রাহা নিল হাতেম মর্দানা॥