উমাইয়্যা খলীফা উমর বিন আব্দুল আযীযের দরবারে জনৈকা ইরাকি মহিলা
ইরাকের গ্রামাঞ্চল থেকে জনৈকা ইরাকি মহিলা নিজের অভাব অভিযোগ জানাতে খলিফার দরবারে আসেন, দরজায় কোন দারোয়ান না থাকায় তিনি জোরে জোরে বললেন, কোন দারোয়ান আছেন কি? তাঁকে জানান হল দারোয়ান নেই খলীফা ও এ মূহুর্তে বাসায় নেই, আপনি ইচ্ছা করলে অন্দর মহলে খলীফার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে পারেন ।
আগন্তুক মহিলা ভেতরে প্রবেশ করে দেখলেন, জনৈকা মহিলা নিজ হাতে ছেঁড়া কাপড় রিপু করছেন, তিনি অনুমান করছেন হয়তো ইনি ই খলীফার স্ত্রী, কিন্তু তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না ,তাই তিনি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি খলীফার স্ত্রী? সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞাসিত মহিলা বললেন আমি ফাতিমা, খলীফার স্ত্রী।
ইরাকি মহিলা লক্ষ্য করলেন বাসায় কোন দামী আসবাব পত্র নেই।
তাই তিনি নিজে নিজেই বলে উঠলেন এই বাড়ি থেকে আমার অভাব দূর করার মতো কিইবা আশা করতে পারি!
মহিলার স্বগোতুক্তি ক্ষীন সূরে হলে ও খলীফার স্ত্রীর কান পর্যন্ত পোঁছে।
ইতোমধ্যে এক ব্যক্তি এসে বাহির দরজা সংলগ্ন পানির কুপ থেকে পানি উঠানোর জন্য বালতি নামালেন,কেউ একজন এসে তাঁকে পানি তুলতে সহযোগিতা করলেন, তিনি পানি পান করলেন এবং ওযু করলেন এ সময় তিনি বারবার খলিফার স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছিলেন, আগন্তুক মহিলা খলীফার স্ত্রীকে বললেন, আপনি পর্দা করুন, লোকটি আপনার দিকে বারবার তাকাচ্ছেন। তিনি জানান উনিই খলীফা, আমার স্বামী।
খলীফা সালাম দিয়ে বাসায় প্রবেশ করলেন এবং সরাসরি মুসাল্লায় গিয়ে দুরাকাত সালাত আদায় করে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, আগন্তুক মহিলা কে? তিনি জানান উনি ইরাকের গ্রামাঞ্চল থেকে আগত,খলীফার দরবারে কিছু অভাব অভিযোগ জানাতে এসেছেন।
খলীফা আগন্তুক মহিলাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনার অভিযোগ বলুন!
মহিলা বললেনঃ
امرأة من أهل العراق لى خمس بنات كسل كسد ..
মহিলার কথা শুনে খলীফা বার বার রিপিট করতে থাকলেন ‘কুসলুন কুসদুন’ অতঃপর খলীফা হেঁচকি তুলে কাঁদলেন এবং বললেন আমি আপনার মেয়েদের জন্য কিছু ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করছি, কাগজ কলম হাতে নিয়ে তিনি বললেন, বলুন আপনার বড় মেয়ের নাম কি? একে একে চারজন মেয়ের নামে ভাতা চালুর নির্দেশ- নামা লিখে তিনি বললেন আপনার চার মেয়ের ভাতা বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,আশা করি আপনার ও আপনার ছোট মেয়ের খোরপোষ ঐ অর্থেই হয়ে যাবে। আপনার মেয়েরা যেন বিষয়টি খেয়াল রাখে।
ইরাকের গভর্নর বরাবর লেখা চিঠি নিয়ে ইরাক থেকে আগত মহিলা ফিরে যান, সঙ্গত কারনেই তাঁর বাড়ি ফিরে গভর্নর পর্যন্ত পৌঁছতে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়।
ইরাকের গভর্নর চিঠি হাতে পেয়ে বলে উঠলেনঃ
رحم الله لعبد العزيز خليفة المسلمين
মহিলা বললেনঃ খলীফা কি ইন্তেকাল করেছেন?
গভর্নর বললেন, হাঁ।
গভর্নর মহিলাকে বললেন,আপনার সমস্যা হবে না আমরা তাঁর নির্দেশ মতো কাজ করে দিব ইনশাআল্লাহ।
কঠিন শব্দের অর্থঃ
বিবাহ যোগ্য পাত্রী অথচ সেদিকে মানুষের ভ্রুক্ষেপ নেই , কেউ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে না, তাদেরকে বলা হয় ‘ বানাতুন কুসলুন কুসদুন’
তথ্য সূত্র:/ সীরাত উমর বিন আব্দুল আযীয,লেখক: ইবনু আবদিল হাকাম