রিযিক!

মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে খেতে হলে ওয়েবসাইটে অগ্রীম খাবার বুকিং দিতে হয়। ওয়েবসাইটতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমি জানুয়ারি মাসের খাবার বুকিং দিতে পারিনি।
এখন বুকিং দিলে ভর্তুকি ছাড়া বুকিং হবে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২২ হাজার টাকা।
আগে বুকিং দিতে পারলে একমাসের খাবার মাত্র ৪৩’শ টাকায় বুক করতে পারতাম। বাকিটা ইউনিভার্সিটি ভর্তুকি দিতো।

আমি রান্না-বান্না পারিনা তাই সবসময় ক্যান্টিনেই খেতাম। আর ক্যান্টিনেই খেতাম বলে রান্না-বান্নার কোন ব্যবস্থাও নেই আমার কাছে।
২২ হাজার টাকা দিয়ে একমাস খাবার চেয়ে একটা মিনি ফ্রীজ, একটা রাইস কুকার, একটা প্যান আর কিছু বাজার করার প্ল্যান দুই দিন যাবত। কিন্তু ক্যাটস এন্ড ডগ টাইপ বৃষ্টিপাতের কারণে বাইরেই বের হওয়া যাচ্ছেনা। তার উপর মারাত্মক ঠান্ডা।
বাইরে গিয়ে খাবার খাওয়াও যাচ্ছেনা। অনেকে গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হয়ে আর ডুকতে পারেনি।
যাই হোক। দুইদিন যাবত কি খাবো পরের বেলায় সেটার কোনই ব্যবস্থা নেই। জানাও নেই। জাস্ট আল্লাহ্ ভরসা ছাড়া।
আম্মু কাল বললেন, তোমার জন্য টেনশন হচ্ছে। আমি হেসে দিয়ে বললাম, আমার জন্যই তো আমার কোন টেনশন হচ্ছেনা।
আমি তিনদিন রান্নাও করিনি।
বাইরে গিয়েও খাইনি।
কারো কাছে চাইওনি খাবার।
তাহলে কি খেয়েছি-
★আজ সকালে ঘুমিয়েছি। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বাইরে পা দিয়েই একজনের সাথে দেখা। হাতে খাবার। ওনি কাউকে খুঁজছিলেন খাবারটা দেয়ার জন্য। মানে আমি আর দশ সেকেন্ড এদিক সেদিক করে রুম থেকে বেরুলে ওনার সাথে আমার দেখাই হতোনা।
★গতকাল সন্ধ্যায়। মাগরিব বাদ একজনের সাথে মসজিদ থেকে বের হচ্ছি । সেই মুহুর্তে ওনার ফোনে একটা কল আসলো। মাহ্দী সাথে আছে শুনে ভাই বললেন,
রান্না করবো, মাহ্দীকে নিয়ে আসেন। গিয়ে নুডলস, আপেল। তারপর রান্নাবান্না করে খিচুড়ী আরো নানানতা খেলাম।
এখানে মাগরিব বাদ মসজিদে যদি ঐ ভাইয়ের সাথে মসজিদের দরজায় দেখা নয় হয়, আর সেই মুহুর্তে কলটা না দেয় তাহলে আমার এই দাওয়াতটা হয়না।
আমি আশ্চর্য হলাম রব্বে কারীমের প্ল্যানিংয়ের উপর।
★গতকাল দুপুরে।
জীবনেও কল না দেয়া এক ভাই হুট করে কল দিয়ে বললেন,
আমি রোজা রেখেছি। সেহরীর জন্য রান্না করা খাবার রয়ে গেছে।গরম করে রেখেছি।
গিয়ে দেখি উটের গোশত আর প্রিয় আলুভর্তা।
আলহামদুলিল্লাহ্।
একটা স্টাডি গ্রুপে ছিলাম। শুক্রবার সেটার স্টুডেন্টদের একটা দাওয়াত ছিল। আমি হোয়াটসেপ গ্রুপ মেসেজ না দেখার কারণে জানতে পারিনি এবং না জানার কারণে সেদিন সেখানে উপস্থিত হতে পারিনি। কিন্তু উস্তাদ আমার জন্য একজনের কাছে খাবার দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তিনবক্স।
কিন্তু আমি শুক্রবারে ততক্ষণে খাবার খেয়ে বসে আছি। যে খাবারটা পাঠালেন সেটার দাম বাংলাদেশী টাকায় ২০০০ টাকার উপরে। তাই আমি নষ্ট না করে পাশের রুমের একজনের ফ্রীজে রেখে দিই।
গতপরশু দিন ওটা একটু প্রসেসিং করে সারাদিন খেয়েছি।
প্রসেসিং করে নিয়ে আসার সময় একজনের সাথে দেখা, শুনলাম সে দুপুরে খায়নি। দেখাটা ৪ সেকেন্ড এদিক সেদিক হলে,আমি রুমে ঢুকে যেতাম। তার সাথে দেখা হতোনা। সে খায়নি আমি সেটা জানতাম না। আর তার সেটা খাওয়া হতোনা।
শুক্রবার ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ ছিলো।
আমি জানতাম ৩১ তারিখে জানুয়ারির খাবার বুকিং দিয়ে দিব।
তবে জানতাম না জানুয়ারিতে ক্যান্টিনে আমার খাবার থাকবেনা। তারপর টানা বৃষ্টি থাকবে। আমি বেরুতে পারবোনা। তারপর রবিবার সারাদিন আমাকে এই খাবার খেতে হবে।
মনে হলো,
আমার আল্লাহ্ নিশ্চিত জানতেন। তাই সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মেসেজ না দেখিয়ে, শুক্রবারে দাওয়াতে শরীক না করে, একটা ডিজাইন করে সেই খাবার আমার জন্য রবিবার খাওয়ার জন্য রুমে পাঠালেন।
আল্ল-হু আকবার।
আল্ল-হু আকবার কাবীরা।
সূরা হুদের ৬নং আয়াত মনে হয়।
যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন, “যমীনে বিচরণকারী প্রত্যেকটা প্রাণের রিজিকের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন”
মনে হয় চিরসত্যের বাহক মুহাম্মাদ সাঃ এর মুখ নিঃসৃত মোটিভেশন-
“তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ তা’আলার ওপর তাওয়াক্কুল কর তাহলে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেন সেভাবে তোমাদেরও রিযিক দেবেন। পাখিরা সকাল বেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।” [ইবনে মাজাহ্:৪১৬৪]
আগে আমার ক্যান্টিন বুকিং থাকতো। খাবার নিশ্চিত থাকতো। তাই মনে হতোনা আল্লাহ্ পাক খাওয়ান। এখন আমার খাবার নেই। কি খাবো জানিনা। তাই প্রতিবার খাবার সামনে আসার পর ইয়াকীন হয়, আমাকে আল্লাহই খাওয়াচ্ছেন।
আমার কান্না আসে।
ঈমান দৃঢ়তর হয়।
– মাহ্দী ফয়সাল

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88