আরবদের তীক্ষ্ণ উপলব্ধি ও সুক্ষ্ম বুদ্ধি

আরবদের তীক্ষ্ণ উপলব্ধি ও সুক্ষ্ম বুদ্ধি
তিন আব্দুল্লাহর গল্প:
এক লোকের তিনটি সন্তানের প্রত্যেকের নাম রাখা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ লোকটির মৃত্যুকালে নিম্ন রূপ ওসীয়ত করে যান:
আমার সম্পত্তিতে অংশ পাবে আব্দুল্লাহ এবং আবদুল্লাহ , তবে কোন অংশ পাবে না
আব্দুল্লাহ ।
পিতার মৃত্যুর পর তিন আব্দুল্লাহ ওসীয়ত অনুযায়ী মিরাসি সম্পত্তি বন্টনের উদ্যোগ নিলেন, কিন্তু কোন আব্দুল্লাহ অংশ পাবে না এটা জানার জন্য বিচারকের দ্বারস্থ হবার মনস্থ করলেন ,পথিমধ্যে এক আরব বেদুইনের সাথে দেখা, তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমার একটা উট হারিয়েছে, আপনারা কি আমার উটটা এপথে যেতে দেখেছেন ?
প্রথম আব্দুল্লাহ বললেন আপনার উট টা কি একচোখ অন্ধ? লোকটি বললেন হ্যাঁ, উট টির এক চোখ অন্ধ।
দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ বললেন আপনার উটটি কি এক পা লেঙড়া ? বেদুইন বললেন হ্যাঁ ওর এক পা লেঙড়া, তৃতীয় আব্দুল্লাহ বললেন আপনার উটটিক লেজ কাটা ? বেদুইন বললেন আমার উটটা তো আপনারা দেখেছেন তাহলে!বলেন তো কোন পথে গেছে?
তখন তিন আব্দুল্লাহ ই সমস্বরে বলে উঠলেন আমরা আসলে কোন উট ই দেখি নাই,আমরা শুধু একটা অন্ধ,,লেঙড়া ও লেজ কাটা উটের কিছু লক্ষণ দেখেছি।
বেদুইন তাদের কথা বিশ্বাস করলেন না, বরং মনে মনে ভাবলেন এরা নিঃসন্দেহে আমার হারানো উট টি যবেহ করে খেয়ে ফেলেছে। বেদুইন যখন শুনলেন যে তারা অন্য কোনো কারণে বিচারকের নিকট যাচ্ছেন, তিনি ও তাদের সঙ্গী হয়ে বিচারকের সামনে উপস্থিত হতে আগ্রহী হলেন।
যখন তাঁরা সবাই মিলে বিচারকের সামনে উপস্থিত হলেন, কোর্টের অফিস সময় শেষ হওয়ার দরুন তাদের পরবর্তী কার্য দিবসে আসতে বলা হল এবং তাদের জন্য গেষ্ট হাউসে থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হলো, তবে তারা অনুভব করলেন কে যেন একজন তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন।
রাতে তাদের জন্য গোস্ত রুটির আয়োজন করা হয়।
খেতে বসে এক আব্দুল্লাহ বললেন রুটি তৈরির কাজ করেছেন নবম মাসের এক গর্ভবতী নারী, আরেক আব্দুল্লাহ বললেন : বিচারক হয়তো জারজ সন্তান,অপর আব্দুল্লাহ বললেন আমাদের কে যে গোস্ত সরবরাহ করা হয়েছে তা কুকুরের, সুতরাং এটি বর্জন করা উচিত।
পরদিন বিচারক তাদের ডেকে বললেন তোমরা কে বলেছিলে যে সরবরাহকৃত রুটি তৈরি করেছেন নবম মাসের গর্ভবতী নারী!
প্রথম আব্দুল্লাহ বললেন আমি বলেছি, বিচারক তদন্ত করে দেখলেন ঘটনা শতভাগ সত্য। বিচারক তাকে বললেন তুমি তোমার পিতার সম্পত্তির যোগ্য উত্তরসূরী।
বিচারক আবার বললেন তোমাদের মধ্যে কে বলছিলে কুকুরের গোস্ত সরবরাহ করা হয়েছে?
দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ বললেন আমি বলেছি,কেন কিভাবে বুঝলে? আব্দুল্লাহ বললেন উট গরু ও খাসির মাংসের উপর চর্বি থাকে কিন্তু কুকুরের গোস্তে চর্বির উপরে গোস্ত থাকে, এই সরবরাহ কৃত গোস্তে চর্বির উপর গোস্ত ছিল,, বিচারক বললেন তুমি ও পিতার যোগ্য সন্তান তাঁর সম্পত্তিতে তোমার অংশ আছে।
অতঃপর বিচারক বললেন আমাকে জারজ সন্তান বলেছ কে? তৃতীয় আব্দুল্লাহ বললেন আমি। বিচারক নিজের মায়ের কাছে থেকে সত্য ঘটনা জানতে পেরে চুপ থাকেন,আর বলেনঃ
ইনি জারজ সন্তান ইনি তোমাদের পিতার সন্তান নন।ইনি অংশ পাবেন না । জারজরাই জারজের সন্ধান পেয়ে থাকেন।
প্রথম ও দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ তাদের মায়ের কাছে জানতে চাইলে মা বললেন তোমাদের পিতা ওকে মসজিদের সামনে থেকে কুড়িয়ে এনেছিলেন,সে তোমার পিতার সন্তান নয় ।
[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
উট ওয়ালা বেদুইনের আবেদন এর প্রেক্ষিতে বিচারক ঐ তিন আবদুল্লাহকে জেরা করেন, তাদের এক কথা এবং সাফ জবাব ছিল,
তারা উট দেখে নি, তবে পথিমধ্যে মেঠো পথের এক পাশের ঘাস খাওয়ার দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে ধারনা করেছে উটটির একচোখ অন্ধ ছিল।
অনুরূপ এক পায়ের ছাপ গভীর আবার অপর পা’র ছাপ অগভীর তাই তাদের ধারনা উটটির এক পা খোঁড়া ছিল।
আবার স্থানে স্থানে গোররের বড় বড় লাদ দেখে তাদের মনে হয়েছে উটটির লেজ থাকলে লেজের আঘাত লেগে গোবর গুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে ছিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ে থাকত,তাই তাদের ধারনা উটটির লেজ কাটা ছিল।
তাদের বর্ননায় সত্য ফুটে উঠায় বিচারক বেদুইনের আরজি নাকচ করে দেন।]

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan