বিখ্যাত খৃষ্টান ধর্ম প্রচারক সুই ওয়াটসন পোপ ইসলাম গ্রহন করে হলেন খাদিজা ওয়াটসন
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণকারী অধ্যাপক খাদিজা ওয়াটসনের পূর্ব নাম ছিল সুই ওয়াটসন। তার মতে তিনি ছিলেন গোড়া খ্রিস্টান মৌলবাদী।
তিনি ছিলেন ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক। ধর্মতত্ত্বে তিনি বিএ এবং এমএ পাস করেছেন। ফিলিপাইনের খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারে তিনি সাত বছর কাটিয়েছেন। তবে সেসব বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। এখন তিনি মুসলিম এবং জেদ্দার আল-হামরা ইসলামিক এডুকেশন ফাউন্ডেশনের শিক্ষক।
তিনি ইসলামের বাণীতে ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়ায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
অধ্যাপক খাদিজার ইসলাম গ্রহণের ঘটনা তার নিজের ভাষায় এখানে তুলে ধরা হল।
খাদিজা বলেন, ‘যখন আমি ইসলামে দাখিল হই তখন স্বাভাবিকভাবেই আমার সহকর্মী, সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব এবং সহ-ধর্মপ্রচারকারীরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমার কি হয়েছে। আমি তাদেরকে দোষ দেই না কারণ আমি একেবারেই ধর্ম পরিবর্তন করার মত কেউ ছিলাম না।
আমি একজন অধ্যাপক, ধর্মপ্রচারকারী মিশনারি পণ্ডিত ছিলাম। যদি কাউকে গোড়া মৌলবাদি বলা হয় তাহলে আমি তাই ছিলাম।
আমার মাস্টার ডিগ্রি শেষ হওয়ার ৫ মাস আগে এক মহিলার সাথে আমার সাক্ষাত হয় যে সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়েছিল এবং সেখানে ইসলাম গ্রহণ করেন। আমি তাকে ইসলামে মহিলাদের সাথে কিরকম আচরণ করা হয় সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তার জবাব শুনে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। এবং এ ধরণের উত্তর আমি প্রত্যাশাও করিনি কখনো।
তারপর প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে স্রষ্টা এবং নবী মুহাম্মদ সা. সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। সে আমাকে বললো, আমি তোমাকে একটি ইসলামিক সেন্টারে নিয়ে যাব সেখানে তুমি আরো ভালো করে তোমার উত্তরগুলো জানতে পারবে।
তার কথামত আমি সেই ইসলামিক সেন্টারে গেলাম। সেখানে তাদের ব্যবহার আমাকে খানিকটা অবাক করলো। একেবারেই সরাসরি, সামনাসামনি উত্তর। এতে কোনো রকম হুমকি, হয়রানি, মানসিক চাপ তৈরি অথবা আভ্যন্তরীন প্রভাব বিস্তারের বিষয় ছিল না। এটা ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার। তারা আমাকে কিছু বই দিল এবং বললো আমার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তবে তাদের অফিসেও তাদেরকে পাওয়া যাবে।
ওইদিন রাতে আমি সেসব বইগুলো পড়ে ফেলি যেগুলো তারা আমাকে দিয়েছিল। প্রথমবারের মত আমি কোনো মুসলিমের লেখা বই পড়লাম। এর আগে আমরা ইসলাম সম্পর্কে যেসব বই পড়েছি তা ছিল খ্রিস্টান লেখকদের লেখা। পরেরদিন আমি আবার তাদের অফিসে যাই এবং ৩ ঘণ্টা যাবত তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করি। এইভাবে প্রায় এক সপ্তাহ পার করি। এর মধ্যে আমি ১২টি বই পড়ি এবং বুঝতে পারি কেন মুসলিমদের জন্য খ্রিস্টানধর্মে দীক্ষিত হওয়া সবচেয়ে কঠিন বিষয়। কারণ তাদের জন্য এখানে কিছুই নেই! ইসলামে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক, পাপের জন্য ক্ষমা এবং পরকালীন জীবনের ওয়াদা এবং মুক্তির বিষয় রয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো প্রথম ৩০০ বছর চার্চের পুরোহিতরা শিক্ষা দিত যে যিশু হচ্ছেন (ঈসা নবী) স্রষ্টার প্রেরিত রাসুল এবং শিক্ষক। তারপর সম্রাট কন্সটান্টেইন এসে বললেন যিশু হচ্ছেন স্রস্টার তিন রূপের একজন।
কন্সটান্টেইন ব্যবিলনের সময়কার পৌত্তলিকদের পদ্ধতির সাথে সবাইকে পরিচিত করালেন। তিনি বলেন, মহাশূন্যের ভিতরকার মূল বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়নি তবে স্রস্টার ইচ্ছায় আমরা আরেকটি সময় পাব।
আমি একটি বিষয় ইঙ্গিত করছি তাহলো ‘ট্রিনিটি’ বা ত্রিত্ববাদ কথাটি বাইবেলের কোনো অনুবাদেই পাওয়া যায়নি, না রয়েছে এর আদি ভাষা হিব্রু অথবা গ্রিকেও।’
আমার অন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি ছিল নবী মুহাম্মদ সা.কে নিয়ে। আমি দেখলাম মুসলিমরা তার ইবাদত করে না যেমনটা খ্রিস্টানরা ঈসার ইবাদত করে থাকে। সে কোনো মাধ্যম নয় এবং তার ইবাদত করাও নিষিদ্ধ। আমরা তার জন্য রহমত কামনা করি যেমনটা ইব্রাহিমের জন্য করি। সে একজন সর্বশেষ নবী এবং বার্তাবাহক। আরো বিষয় হলো ১৪০০ বছর পরেও তার পরে আর কোনো নবী আসেনি। তার বাণী সবার জন্যই, এটা ঈসার বাণীর বিপরীত নয় যাকে ইহুদের প্রতি পাঠানো হয়েছিল। ‘শোনো ইহুদিরা, এ বাণী স্রষ্টার বাণী। স্রষ্টা একজনই এবং তোমাদের আর কোনো স্রষ্টা নেই আমি ছাড়া।(মার্ক-১২:২৯) ’
খ্রিস্টান জীবনে প্রার্থনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আমার জন্য এবং মুসলিমরা কি প্রার্থনা করে এটা জানার আগ্রহও ছিল অনেক। একজন খ্রিস্টান হিসেবে মুসলিমদের বিশ্বাসকে আমরা উপেক্ষা করি। আমরা ভাবতাম এবং বলাবলি করতাম যে মুসলিমরা মক্কার কাবার পূজা করে। আমি আবারো বিস্মিত হলাম একথা জেনে যে তারা স্রষ্টার নির্দেশিত পদ্ধতিতে এটা করে। মুনাজাত বা প্রার্থনার কথাগুলোতে একজনের জন্য উচু প্রশংসা করা হয়। প্রার্থনা করার পুর্বে পরিচ্ছন্নতাও আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় হয়ে থাকে।
তিনি একজন পবিত্র স্রষ্টা এবং তার কাছে আমরা যেকোন পদ্ধতিতে চাইতে পারি না, তবে শর্ত হল তার দেখানো নির্ধারিত পদ্ধতিতেই চাইতে হবে।’
ঐ সপ্তাহ শেষে আমি একটা ধারণা পেলাম তা হল ইসলামই সঠিক পথ। তবে আমি তখনই তা গ্রহণ করিনি কারণ আমি এটাকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারছিলাম না। আমি প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করতে থাকলাম এবং বাইবেল পড়তে থাকলাম সাথে সাথে ইসলামিক সেন্টারেও যাতায়াত অব্যাহত রাখলাম। আমি খুব আন্তরিকভাবে চাইছিলাম যেন স্রষ্টা আমাকে সঠিক পথ দেখান। ধর্ম পরিবর্তন করা কোনো সহজ কাজ নয়। কোনোভাবেই আমি আমার মুক্তির রাস্তা বন্ধ করতে চাচ্ছিলাম না যদি তা প্রকৃত মুক্তির রাস্তা হয়।
আমি প্রতিনিয়ত বিস্মিত হচ্ছিলাম এটা জেনে যে আমি কি শিখেছিলাম। কারণ আমি তাই শিখেছিলাম যা ইসলাম বিশ্বাস করে না। মাস্টার্সে পড়ার সময় আমি একজন অধ্যাপককে সম্মান করতাম যার ইসলাম সম্পর্কে বেশ কিছু লেখা ছিল, কিন্তু খ্রিষ্টবাদ বিষয়েও তার শিক্ষা পদ্ধতিতে ব্যাপক ভুল বুঝাবুঝির বিষয় ছিল। সে এবং তার মত অন্যান্য খ্রিষ্টানরা সচেতন তবে সচেতনভাবেই তারা ভুলের মধ্যে আছেন।
দুই মাস পর আমি আবার প্রার্থনা করলাম স্রষ্টার নির্দেশের জন্য। আমি অনুভব করলাম আমার মধ্যে কিছু একটা পড়লো। আমি বসে পড়লাম এবং প্রথমবারের মত আমি স্রষ্টার নাম উল্লেখ করলাম। এবং বললাম, হে প্রভু, আমি বিশ্বাস করি তুমি এক এবং একমাত্র আসল স্রষ্টা। তখন আমার দেহের মাঝে এক শান্তির পরশ বয়ে গেল। তারপর থেকে গত ৪ বছর ধরে আমি ইসলামের দীক্ষা নিতে পিছপা হইনি। আমার এই সিদ্ধান্ত যাচাই ছাড়া আসেনি।
আমি যে দুটো কলেজে বাইবেল পড়াতাম সেখান থেকে একই সময়ে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। আমার সাবেক সহপাঠী, অধ্যাপক এবং সহকর্মীরা আমাকে একঘরে করে ফেলল, শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা আমাকে অসম্মান করলো, আমার সন্তান আমাকে ভুল বুঝলো এবং সরকার আমাকে সন্দেহ করলো। ঐশ্বরিক এই বিশ্বাস ছাড়া এসব শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। মুসলিম হতে পারায় আমি স্রষ্টার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো এবং মুসলিম হয়েই যেন বাচতে পারি এবং মৃত্যুবরণ করতে পারি।
‘নিশ্চই আমার ইবাদত, আমার ত্যাগ, আমার জীবন এবং মরণ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তার জন্যই। তার কোনো অংশীদার নেই। বলুন, আমি আদেশ প্রাপ্ত এবং আমিই প্রথম আনুগত্যশীল।’ (সূরা আন-আ’মঃ ১৬২-১৬৩)’
সূত্র: আরব নিউজ
ভাষান্তর: জুবায়ের হুসাইন