ভয়ঙ্কর, জাহিলী, বর্বর শরীয়াহ আইন !!
আজকের বেশির ভাগ মুসলিমদেরই শরীয়াহ আইন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। অমুসলিমদের তো নাইই। পশ্চিমী মিডিয়ার কল্যানে ‘শরীয়াহ আইন’ শব্দটার সাথে সবাই পরিচিত। শরীয়াহ আইন শুনলেই যেন অন্তর কেঁপে ওঠার মতো অবস্থা। কি ভয়ঙ্কর, জাহিলী, বর্বর আইন।
তালিবানী আইন। শরীয়াহ সম্পর্কে মুসলিম – অমুসলিমদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন আলেম এবং ইসলাম প্রচারকগণ। কয়েকটা শরীয়াহ আইন সম্পর্কে অনেকেই জানেন যেমন ধর্ষনের জন্য পাথর ছুড়ে মারা, চুরির জন্য হাতকাটা …। ফলে অনেকেই ধরে নিয়েছেন খুব নৃশংস আইন হল শরীয়াহ। যাইহোক আজ অন্য কিছু জানার চেষ্টা করব। দেখব ইসলামী আইন এবং মুহাম্মাদ সা. সম্পর্কে কিছু তথ্য।
❖ আমেরিকা হল পুরনো গণতান্ত্রীক দেশ গুলোর একটা। আমেরিকার সংবিধান খুব ফেমাস। পৃথিবীর অনেক দেশ সংবিধান রচনার সময় আমেরিকার সংবিধানকে ফলো করেছে। অথচ আমেরিকা সরকারীভাবে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সা. কে দুনিয়ার আইন প্রণেতা হিসেবে প্রথম স্থান দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের অভ্যন্তরীণ প্রাচীরে বিশ্বে আইন প্রণেতাদের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজনের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। যেখানে প্রথম লাইনে শোভা পাচ্ছে মুহাম্মাদ সা. এর নাম। নিচে জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, টমাস জেফারসান প্রমুখ….
❖ আইনের অন্যতম বিখ্যাত বিদ্যাপিঠ লন্ডনের ‘লিংকনস ইন’ আইন কলেজের প্রবেশপথের উপরে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান ও আইন রচয়িতাগণের তালিকায় শোভা পাচ্ছে মুহাম্মাদ সা. এর নাম।
❖ জার্মানির বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ডা. গুস্তাড ওয়েল বলেন – ‘মুহাম্মাদ রক্ত পিপাসু নীতি এবং স্বেচ্ছাচারী শক্তির আইনের পরিবর্তে পবিত্র ও মহান আইন পদ্ধতির জন্ম দিয়েছেন। তিনি সেই ব্যক্তি যিনি সর্বকালীন আইন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন…’
❖ আইনের অধ্যাপক ডা. সুধীশ রায় বলেন – ‘বিশ্বের আইন প্রণেতা হিসেবে মুহাম্মাদ হলেন একক ও মহৎ আদর্শের উদগাতা। একমাত্র তারঁই আইন মানবতার জন্য পরম উপকারী’।
❖ যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের প্রবেশমুখে ন্যায়বিচার বিষয়ক একটি কোরআনের আয়াত টানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুরআনের সূরা আল নিসা’র ১৩৫ নং আয়াতে সর্বোৎকৃষ্ট ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারে। আয়াতটি হল –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ ۚ إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَىٰ بِهِمَا ۖ فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَىٰ أَن تَعْدِلُوا ۚ وَإِن تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ন্যায়বিচারের উপর অটল থাক। যদিও এটা তোমাদের, তোমাদের বাবা-মায়ের এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে যায। হোক ধনী অথবা গরীব সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। যদি ন্যায়বিচার অস্বীকার কর অথবা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার কর, তবে জেনে রাখ আল্লাহ তোমাদের সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত। [সূরা আল নিসা ৪: ১৩৫]
ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানী ভাইদের অনুরোধ করব শরীয়াহ আইন সম্পর্কে বেশি বেশি লেখার। বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কি সেসব নিয়ে লেখার। কারণ এই ব্যাপার নিয়ে বেশি বিতর্ক ও ভুল ধারণা আছে মানুষদের মনে। শরীয়াহ আইনের গুরুত্ব বুঝলে মানুষের তৈরি আইন নিয়ে মাথা ঘামাবেনা মানুষ।
আল্লাহ বলেন –
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ
‘তবে কি ওরা অজ্ঞ যুগের বিচার-ব্যবস্থা কামনা করে? নিশ্চয় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা কে অধিকতর মীমাংসাদাতা আছে? [সুরা মাইদাহ/৫০]
قُل لَّا يَسْتَوِي الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ ۚ فَاتَّقُوا اللَّهَ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘তুমি বল, মন্দ ও ভালো এক বস্তু নয়, যদিও মন্দের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। সুতরাং হে জ্ঞানবান সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার’। [সুরা মাইদাহ/১০০]
[লিখেছেন – শেখ ফরিদ আলম]