আশুরার দিন গোসল করার ফযীলত

“আশুরার দিন গোসল করলে সার বছর রোগ-ব্যাধি থেকে সুরক্ষিত থাকবে” এবং “যে ব্যক্তি আশুরার দিন চোখে সুরমা লাগাবে করবে সে সারা বছর চোখের পীড়াতে আক্রান্ত হবে না।” বানোয়াট হাদিস এবং আরও কিছু বিদআতি কার্যক্রম:
বর্তমানে নিম্নোক্ত হাদিসটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক মানুষ প্রচার করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। বরং তা হাদিসের নামের মিথ্যাচার:

“যে ব্যক্তি আশুরার দিন গোসল করবে, সে সারাবছর রোগ-ব্যাধি থেকে সুরক্ষিত থাকবে। কেননা সেদিন যমযমের পানি সমগ্র পৃথিবীর পানির সাথে মিশে যায়! [তাফসিরে রুহুল বয়ান, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা ১৪২]
বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ, এই মর্মে প্রচলিত হাদিসটিকে হাদিসের নামে মিথ্যাচার, বানোয়াট বা জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদের সংকলিত ‘প্রচলিত বানোয়াট ও জাল হাদিস শীর্ষক গ্রন্থগুলোতে এটিকে জাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন:
◈ আল্লামা সুয়ুতী তার আল লায়ালি আল মাসনুয়াহ গ্রন্থে (২/৯৩),
◈ আল্লামা কিনানী তার তানযীহুশ শরীয়াহ গ্রন্থে (২/১৫২),
◈ ইবনুল জাওযী তার আল মাউযুয়াত গ্রন্থে (২/১১৩),
◈ আব্দুল হাই লাখনভি দার আল আখবারুল মাউযুযাহ গ্রন্থে (১/৯৭)
◈ মারয়ী বিন ইউসুফ আল কারমী তার আল ফাওয়ায়েদুল মাউযুযাহ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা নাম্বার ৭৫) ইত্যাদি।
◈ আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ, নিম্নোক্ত হাদিসটিকে মউযু বা বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন:
منِ اغتسلَ يومَ عاشوراءَ لم يَمرضْ ذلك العامَ، ومن اكتحلِ يومَ عاشوراءَ لم يَرمدْ ذلك العامَ
“যে ব্যক্তি আশুরার দিন গোসল করবে সে সে বছর রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না, আর যে ব্যক্তি আশুরার দিন চোখে সুরমা লাগাবে করবে সে সারা বছর চোখের পীড়াতে আক্রান্ত হবে না।” [আত তুহফাতুল কারীমা, পৃষ্ঠা নম্বর: ৯০]
❂ আল্লামা উবনুল ইয আল হানাফী বলেন,
يصح عن النبي – صلى الله عليه وسلم – في يوم عاشوراء غير صومه، وإنما الروافض لما ابتدعوا المأتم وإظهار الحزن يوم عاشوراء لكون الحسين رضي الله عنه قتل فيه ابتدع جهلة أهل السنة إظهار السرور واتخاذ الحبوب والأطعمة والاكتحال، ورووا أحاديث موضوعة في الاكتحال والتوسعة على العيال
ص271 – كتاب الإبداع في مضار الابتداع – ما يقع من الناس في يوم عاشوراء
“আশুরার দিন রোজা রাখা ব্যতিরেকে অন্য কোনও কিছু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়নি। যখন শিয়া রাফেজীরা হুসাইন রা. এর নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে এ দিন মাতম-বিলাপ ও শোক পালনের বিদআত চালু করল তখন আহলুস সুন্নাহর জাহেলরা এ দিনকে আনন্দ উদযাপন, পরিবার-পরিজনকে ভালো খাবার-দাবার খাওয়ানো, চোখে সুরমা লাগানোর বিদআত চালু করল এবং এ দিন চোখে সুরমা ব্যবহার ও পরিবারকে ভালো খাবার খাওয়ানোর পক্ষে বানোয়াট হাদিস বর্ণনা করল।” [আল ইবদা ফী মাযারিল ইবতিদা, পৃষ্ঠা নাম্বার: ২৭১]
❂ শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রাহ. আশুরার দিন চোখে সুরমা ব্যবহার করা, গোসল করা, শরীরে মেহেদী ব্যবহার লাগানো, কলপ ব্যবহার করা, পরস্পরে দেখা-সাক্ষাত করা, মাজার জিয়ারতে যাওয়া, ভালো খাবার রান্না করা, আনন্দ প্রকাশ করা ইত্যাদিকে অপর পক্ষে এ দিন শোক প্রকাশ, মাতম করা, পিপাসায় থাকা, বিলাপ করা, মাটিতে গড়াগড়ি করা, গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি কার্যক্রমকে বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন,
لَمْ يَرِدْ فِي شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلا عَنْ أَصْحَابِهِ، وَلا اسْتَحَبَّ ذَلِكَ أَحَدٌ مِنْ أَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ لا الأَئِمَّةِ الْأَرْبَعَةِ، وَلا غَيْرِهِمْ. وَلا رَوَى أَهْلُ الْكُتُبِ الْمُعْتَمَدَةِ فِي ذَلِكَ شَيْئًا، لَا عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَلا الصَّحَابَةِ، وَلا التَّابِعِينَ، لا صَحِيحًا وَلا ضَعِيفًا، لا فِي كُتُبِ الصَّحِيحِ، وَلا فِي السُّنَنِ، وَلا الْمَسَانِيدِ، وَلا يُعْرَفُ شَيْءٌ مِنْ هَذِهِ الأَحَادِيثِ عَلَى عَهْدِ الْقُرُونِ الْفَاضِلَةِ
“এগুলো কোনও কিছুই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের থেকে কোনও সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। মুসলিমদের ইমামদের মধ্যে চার ইমাম বা অন্য কোনও ইমামও এ কাজগুলোকে মোস্তাহাব বলেননি। কোনও নির্ভরযোগ্য কিতাবের লেখকগণও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবি ও তাবীঈদের থেকে এগুলো বর্ণনা করেননি। না কোনও সহিহ হাদিস, না জয়ীফ হাদিস। না কোনও সহিহ হাদিসের কিতাবে., না সুনান বা মুসনাদ কিতাবে। এসব হাদিসের বিষয়ে শ্রেষ্ঠ যুগ সমূহে কোনও কিছুই জানা যায় না।
তারপর তিনি, “আশুরার দিন গোসল করলে সারা বছর রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকবে, “কেউ এ দিন তার পরিবারকে ভালো খাবারের ব্যবস্থা কররে সারা বছর ভালো খাবার খাবে” মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলোর ব্যাপারে বলেন,
هَذَا كُلِّهِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كَذِبٌ
“এসব কিছুই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যাচার।” [আল ফাতাওয়াল কুবরা-ইবনে তায়মিয়া]
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button