ইসলামে খাতনার বিধান

 ইসলামে খাতনা করার বিধান

ইসলামের অবশ্য পালনীয় এক জরুরী আদর্শ হচ্ছে খাতনা করা। নবীগণ খাতনা করতেন।
আবূ হুরাইরা ((রাঃ)) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘ অবশ্য পালনীয় ৫ টি বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব রয়েছে।

১। খাতনা করা

২। নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করা

৩। গোঁফ ছোট করা

৪। নখ কাটা ও

৫। বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা।'(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২০)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘ ইব্রাহীম (আঃ) ৮০ বছর বয়সে কুঠার দ্বারা খাতনা করেছিলেন।’ (বুখারী, মুসলিম, ইরওয়া হা/৭৮)
তাই ইসলামে মুসলিম শিশুর খাতনা বা মুসলমানি করা বিধেয়। এতে বহু যৌন রোগের হাত হতে মুক্তির উপায় আছে। তাছাড়া এতে রয়েছে দাম্পত্য সম্ভোগ সুখের পূর্ণ তৃপ্তি ও রহস্য। এটা মানুষের এক সুরুচিপূর্ণ প্রকৃতি। তারই উপর রয়েছে ইসলামের সুন্দর স্বাস্থ্যবিধান।

ইবনু জুরাইজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। নবী (সাঃ) বললেন, ‘তোমার কুফর অবস্থার চুল কামিয়ে ফেল এবং খাতনা কর’ (ইরওয়া হা/৭৯ ) এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন অমুসলিম মুসলিম হলে তাঁকে খাতনা করতে হবে।
যদি কোন শিশু খুব দুর্বল হয় অথবা কেউ বৃদ্ধ অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করে এবং খাতনা করায় কোন ক্ষতির আশংকা থাকে, তাহলে তাদের জন্য তা জরুরী নয়।
খাতনা করার কোন বাঁধা-ধরা সময় নেই। তবে কৈশোরের পূর্বে করাটাই উত্তম। যাতে বড় হয়ে শরমগাহ দেখাতে না হয়। আর এ জন্যই খাতনার সময় নারী-পুরুষ জমায়েত হয়ে বিয়ের মত অনুষ্ঠান করে সকলের সামনে লিঙ্গত্বক কাটা বৈধ নয়।

বৈধ নয় খাতনার জন্য শিশুকে ক্ষীর খাওয়ানো, উপহার নেওয়া এবং সেই সাথে গীত-পার্টি মেয়েদের বাজনা সহ গীত গাওয়া, নাচা ও কাপ (নাটক) করা। শিশুকে সুসজ্জিত করে রিক্সা পালকি বা ঘোড়ায় বসিয়ে পাড়া, গ্রাম বা শহর ঘোরানো এবং সেই সাথে আলো ও গান-বাজনার সুব্যবস্থা করা, রঙ মাখামাখি করা, দিবারাত্রি মাইকে রেকর্ড বাজিয়ে, সিডি অথবা ভিডিওর মাধ্যমে ফিল্ম দেখিয়ে মহল্লা বা গ্রামকে উৎসবমুখর করে তোলা, কত লোকের ডিস্টার্ব ও কত লোকের ইবাদাতের ক্ষতি করা, কত যুবক যুবতীকে অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া, ফিল্ম প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের চরিত্র নোংরা করা অন্ততপক্ষে একজন পূর্ণ ঈমানদার মুসলিমের কাজ হতে পারে না। লজ্জাস্থানের এক টুকরা চামড়া কেটে ফেলার সময় গোপনীয়তা ও লজ্জাশীলতাই থাকা প্রয়োজন সকলের মনে। এর জন্য আনন্দ উৎসব করা সুরুচিপূর্ণ সভ্য পরিবেশের আলামত নয়।
বাকী থাকল ঐ উপলক্ষে আত্মীয় স্বজন ও মিসকিনদেরকে কেবল দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর কথা। যারা দাওয়াত দেওয়া ও খাওয়া জায়েয মনে করেন, তাঁরা আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) এর কর্মকে দলীল মনে করেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি তাঁর ছেলেদের খাতনা করার সময় ভেড়া জবাই করে খাইয়েছিলেন। (মুসান্নাফ আবী শাইবাহ ১৭১৬০,১৭১৬৪)

পক্ষান্তরে খাতনা বা মুসলমানি উপলক্ষ্যে দাওয়াত দেওয়া ও খাওয়া আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর যুগে ছিলনা বলে বর্ণনা দিয়েছেন সাহাবী উসমান বিন আবীল আস (রাঃ)। একদা তাঁকে খাতনা- ভোজের দাওয়াত দেওয়া হলে তিনি তা কবুল করতে অস্বীকার করলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর যুগে খাতনা ভোজে হাজির হতাম না এবং আমাদেরকে সে উপলক্ষ্যে দাওয়াতও দেওয়া হত না। (আহমাদ ৪/২১৭, ত্বাবারানীর কাবীর ৯/৫৭)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তাঁকে এক দাওয়াতে আহ্বান করা হলে বলা হল, আপনি কি জানেন, এটা কিসের দাওয়াত? এটা হল এক বালিকার খাতনা উপলক্ষ্যে দাওয়াত। তিনি বললেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর যুগে এটাকে বৈধ মনে করতাম না। অতঃপর তিনি সে দাওয়াত খেতে অস্বীকার করলেন। (ত্বাবারানীর কাবীর ৯/৫৭)

আর এই জন্য বহু উলামা বলেন, খাতনার দাওয়াত বিদআত। উলামা আহলে হাদীসের ফতোয়ায় বলা হয়েছে, খাতনা করার সময় যিয়াফত বিদআত। (ফাতাওয়া আহলে হাদীস ২/ ৫৪৯)  বলাই বাহুল্য যে, হুজুরদেরকে দাওয়াত দিয়ে ঐ দিনে বা তাঁর আগের দিনে নসীহত করা অথবা মীলাদ পড়া অতঃপর উদরপূর্তির অনুষ্ঠান করাও বিদআত।
নারীদেরও খাতনা করা যায়। আবূ হুরাইরা ((রাঃ)) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন,’ যখন কোন পুরুষের খাতনার স্থান নারীর খাতনার স্থানে প্রবেশ করে, তখন গোসল ফরজ হয়ে যায়'(ইরওয়া হা/৭৯)
অত্র হাদীসে নারী পুরুষের বিশেষ স্থানকে খাতনার স্থান বলা হয়েছে । এতে প্রমাণিত হয় যে, পুরুষের যেমন খাতনা করা হয় নারীরও তেমন খাতনা করা যায়। উল্লেখ্য, পুরুষের যেমন খাতনা করা জরুরী নারীর তেমন খাতনা করা জরুরী নয়।
ইমাম আহমাদ ইবনুল হাম্বল (রহঃ) বলেন, খাতনার ব্যাপারে পুরুষগণ কঠোরভাবে নির্দেশিত। কেননা তাঁরা যদি খাতনা না করে তাহলে লিঙ্গের অগ্রভাগে চামড়ার মধ্যে পেশাবে ভিজা থেকে যায়, যা ভালভাবে ধোঁয়া যায় না। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে এরকম হয় না। মূলতঃ পুরুষদের খাতনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়ার ভিতরে পেশাব আটকে থেকে যে অপবিত্রতা সৃষ্টি হয় , তা হতে বেঁচে থাকা। আর মেয়েদের খাতনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, তাঁর উত্তেজনা বা কামভাবকে পুরুষের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা। যাতে তাঁরা প্রবল কামভাব সম্পন্ন না হয়।
আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুক। সঠিক বুঝ দান করুক। সকল প্রকার বিদআত হতে বেঁচে থাকার এবং সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুক। আমীন।
সূত্রঃ

1. ১২ মাসে ১৩ পরব, লেখক- আবদুল হামীদ ফাইযী।

2. আদর্শ পরিবার, লেখক শাইখ আবদুর রাযযাক বিন ইউসুফ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button