সেজদায়ে শোকর কখন কিভাবে দিতে হয়?
সেজদায়ে শোকর কখন কিভাবে দিতে হয়?
নিম্নে সেজদায়ে শোকরের পদ্ধতি ও বিধিবিধান সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
❑ সেজদায়ে শোকর কাকে বলে?
যে কোন সুসংবাদ বা দু:সংবাদ থেকে মুক্তির খবর পাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের উদ্দেশ্যে একটি সেজদা দেয়াকেই সেজদায়ে শোকর বা শুকরিয়া আদায়ের সেজদা বলা হয়।
এর পদ্ধতি হল, যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই সাথে সাথে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়বে এবং এতে সেজদার তাসবীহ পাঠ করবে। (যেমন: সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা)।
❑ সেজদা শোকর এর দলিল:
◈ ১ম হাদিস:
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ كَانَ إِذَا جَاءَهُ أَمْرُ سُرُورٍ أَوْ بُشِّرَ بِهِ خَرَّ سَاجِدًا شَاكِرًا لِلَّهِ .
আবু বাকরা রা. সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। বস্তুত যখন তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট কোন খুশীর খবর আসতো অথবা তাঁকে কোন সুসংবাদ দেওয়া হতো, তখনই তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন।” [সুনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৯/ জিহাদ (كتاب الجهاد), পরিচ্ছেদঃ ৬৮. সেজদায়ে শোকর (কৃতজ্ঞতার সেজদা)]
◈ ২য় হাদিস: হামদান ইয়েমেনের একটি গোত্রের নাম। যাদের প্রতিনিধি দল তাবুক অভিযানের পর অর্থাৎ ৯ম হিজরির শেষ দিকে মদিনায় আসে। ইতিপূর্বে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেবার জন্য খালেদ বিন ওয়ালিদ রা.কে পাঠানো হয়। তিনি দীর্ঘ ছয় মাস সেখানে অবস্থান করা সত্ত্বেও কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পত্রসহ আলী রা. কে প্রেরণ করেন এবং খালেদকে প্রত্যাহার করে নেন।
আলী রা. তাদের নিকটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পত্রটি পড়ে শুনান এবং তাদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেন। ফলে তাঁর দাওয়াতে এক দিনেই গোত্রের সমস্ত লোক ইসলাম কবুল করে। এই সুসংবাদ জানিয়ে আলী রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পত্র প্রেরণ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পত্র পাঠ করা মাত্রই সেজদায় লুটিয়ে পড়েন। সিজদা থেকে মাথা উত্তোলন করে তিনি বললেন, السَّلاَمُ عَلَى هَمْدَانَ السَّلاَمُ عَلَى هَمْدَانَ “হামদানবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক, হামদানবাসীর উপর শান্তি বর্ষিত হোক।” [উৎস: যাদুল মা‘আদ ৩/৫৪৪; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ২/২২৯, সনদ সহীহ; বুখারি হা/৪৩৪৯]
◈ ৩য় হাদিস:
কাব বিন মালেক রা. এর তওবা কবুলের ঘটনায় যখন তিনি শুনলেন যে, আল্লাহ তার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত নাজিল করে তাঁর তওবা কবুলের ঘোষণা দিয়েছেন তখন তিনি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতায় সেজদায় লুটিয় পড়েন। হাদিসটি নিম্নরূপ: (সংক্ষেপিত)
কাব রা. বলেন,
– ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عَلَى الْحَالِ الَّتِي ذَكَرَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَّا قَدْ ضَاقَتْ عَلَىَّ نَفْسِي وَضَاقَتْ عَلَىَّ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أَوْفَى عَلَى سَلْعٍ يَقُولُ بِأَعْلَى صَوْتِهِ يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أَبْشِرْ – قَالَ – فَخَرَرْتُ سَاجِدًا وَعَرَفْتُ أَنْ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ . – قَالَ – فَآذَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم النَّاسَ بِتَوْبَةِ اللَّهِ عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاَةَ الْفَجْرِ فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا
“…পঞ্চাশতম রাতের ফজরের সালাত আমি আমারর গৃহের ছাদের উপর আদায় করলাম। এরপর যখন আমি ঐ অবস্থায় বসা ছিলাম, যা আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ আমার জীবন আমার জন্য সংকটাপন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার কাছে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তখন আমি একজন ঘোষণাকারীর আওয়াজ শুনলাম, যিনি সালা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে উচ্চস্বরে বলছেন, হে কাব ইবনে মালিক! সুসংবাদ গ্রহণ কর। কা’ব বলেন, তখন আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম এবং আমি বুঝতে পারলাম যে, সংকট মুক্তি এসে গেছে। কা’ব বলেন, এদিকে ফজরের সালাতের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তওবা কবুল করেছেন।
তখনই লোকেরা আমাদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য ছুটে চলল…।”
[সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) অধ্যায়: ৫১/ তওবা অনুচ্ছেদ: কা’ব ইবনে মালিক (রাঃ) ও তার দুই সঙ্গীর তওবার বিবরণ]
❑ সেজদায়ে শোকর সংক্রান্ত কতিপয় বিধিবিধান:
ক. সেজদায়ে শোকরের জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় সেজদা দেয়া জায়েজ। শরীর পাক থাকুক অথবা নাপাক থাকুক।
খ. এমনকি অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে সালাতের অন্যান্য শর্তাবলীও এখানে প্রযোজ্য নয়। কারণ হাদিসে সালাতের যে সকল শর্তাবলী, (যেমন: পবিত্রতা অর্জন, কিবলামূখী হওয়া, সতর ঢাকা, মহিলাদের পূর্ণ পর্দা করা ইত্যাদি) সেজদায়ে শোকরের ব্যাপারে সেগুলো বর্ণিত হয় নি।
গ. এতে তাশাহুদ ও সালাম নেই।
ঘ. এতে একটি মাত্র সেজদা দিতে হবে; দুটি নয়।
ঙ. এতে তাকবীর দেওয়ারও প্রয়োজন নাই। কেননা এ ব্যাপারে দলিল নেই। আর দলিল ব্যতিরেকে কোন আমল করা শরিয়ত সম্মত নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে একমাত্র তাঁর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণে সেজদার মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায়কারী নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা হিসেবে কবুল করে নিন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
SOURCE