![](https://www.waytojannah.net/wp-content/uploads/2017/11/waytojannah-post-bg-islam-quran-hadith-bangla.jpg)
সম্রাটের মুকুট ও অমুসলিম বুড়ীর গল্প
সম্রাটের মুকুট ও অমুসলিম বুড়ীর গল্প
আপনারা হয়ত সম্রাট নুরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির নাম শুনেছেন। নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির ছিলেন দিল্লির সম্রাট। তার জীবনের প্রথম দিকটা ছিল একরকম। পরবতীর্তে মুজাদ্দেদে আল ফিহসানি (রহঃ) সংস্পর্শে এসে সম্রাট নুরউদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির এর জীবন ইসলামের নুরে পরিবর্তীত হয়ে গেল। তিনি ছিলেন দিল্লির সম্রাট। একবার এক অমুসলিম বুড়ি নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির দরবারে বলল জাহাপানা আমি আাপনার নিকট এসেছি নালিশ করতে। আমার বাড়ি আপনার বাড়ির খুবই নিকটে। আমার ছেলে বতমানে যুদ্ধে নিয়োজিত আছে আপনার সেনাবাহিনীর সাথে। আমার এক সুন্দরী পুত্রবধু আছে। প্রতিদিন রাতে কোন এক বেয়াদব আমার বাড়িতে হামলা করে। আর আজ রাতে হয়ত সে আমার পুত্র বধুর ইজ্জত নষ্ট করার চেষ্টা করবে। হয় আপনি ঐ শয়তানের হাত থেকে আমাদের কে রক্ষা করুন নতুবা আজ রাতটা আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমরা আগামী কাল আপনার রাজ্য ছেড়ে চনে যাব। নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির চুপ করে আছেন। বৃদ্ধা তাকে চুপ থাকতে দেখে রেগ গেলেন এবং বললেন। জাহাঙ্গির আমি তোমাকে জন্মাতে দেখেছি। তুমি যদি দায়িত্ব না নেও, আর যদি আজ রাতে আমার পুত্র বধুর ইজ্জত নষ্ট হয়। তবে জেনে রাখ জাহাঙ্গির, তুমি যে আল্লাহকে বিশ্বাস কর, কাল কেয়ামতের দিন তোমার ঐ আল্লাহর নিকট আমি তোমাকে আসামির কাঠ গড়ায় দাড় করাব। নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির তখনও কিছু বললেন না । বুড়ি চলে গেলেন।
নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির নিজে ঐ রাতে বুড়ির বাড়ির নিকটে চলে গেলেন। তিনি দেখলেন বাড়ির বাইরে একজন প্রহরী ও ঘোড়া। তিনি প্রহরীকে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করে ঘোড়ার পিঠে পা দিয়ে দেওয়াল টপকে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলেন। ভিতর হতে মহিলার চিৎকার । বাইরে বুড়ি বেচারা একা দাড়িয়ে। বাইরে টিম টিম করে আলো জ্বলছে। জাহাঙ্গির বুড়িকে তাড়াতাড়ি আলো নেভাতে বললেন। এরপর তিনি সেই শয়তানটাকে চুলের মুঠি ধরে তরবারি দিয়ে তার দেহ হতে মাস্তক আলাদা করে ফেললেন। বুড়িকে আলো জালাতে বললেন। তিনি আলোতে মাথাটা ধরে আল-হামদু লিল্লাহ বলে মাথাটা ছেড়ে দিলেন। বুড়িকে বললেন আমাকে পানি দাও। তিনি পানি পান করলেন। বুড়িকে পরের দিন রাজ দরবারে তার পুত্রবধু সহ আসেতে বলে তিনি চলে গেলেন।
পরের দিন জমজমাট রাজদরবারে বুড়ি তার পুত্রবধু নিয়ে হাজির। জাহাঙ্গির বলছেন বুড়ি তোমাকে কেন আলো নেভাতে বলেছিলাম জান? বুড়ি বললেন না। জাহাঙ্গির বললেন যখন তুমি আমার কাছে নালিশ করছে তখন আমার চিন্তা হলো এ কাজ হয়ত আমার যুবক ছেলের। যেহুত তুমি আমার বাড়ির এত কাছে বসবাস কর সুতরাং এত বড় সাহস আমার যুবক ছেলের ছাড়া আর কারো হতে পারে না বলে আমার ধারনা হয়েছিল। আমি চিন্তা করলাম যদি আলোর সামনে আমার ছেলেকে দেখি তবে হয়ত আমার মনে দূবলতা এসে যেতে পারে। তাতে করে আমি ন্যায় বিচার নাও করতে পারি। এজন্য তোমাকে আলো নেভাতে বলেছিলাম। এর পর তাকে হত্যা করে আলোতে নিয়ে দেখি সে আমার ছেলে নয়। এজন্য আল- হামদুলিল্লাহ বলেছিলাম। আর পানি পান করলাম এইজন্য যখন তুমি আমাকে বলেছ কিয়ামতের দিন তুমি আমার বিরুদ্ধে নালিশ করবে, তখন থেকে ন্যায় বিচার করতে পারব কিনা এই চিন্তাই আমি কিচ্ছু খাইনি এমনকি এক ফোটা পানিও না।
এরপর সম্রাট নুরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গির তিনি তার মাথার রাজ-মুকুট খুলে সেই অমুসলিম বুড়ির পায়ের নিকট রাখলেন এবং বললেন বুড়ি জেনে রাখ দিল্লির সম্রাটের এই মুকুটের চাইতে তোমার পুত্রবধুর ইজ্জত মুসলমানের কাছে হাজার গুন বেশি মুল্যবান।
মুসলিমদের কাছে সর্বদা অমুসলিমদের অধিকার সংরক্ষিত ছিল। মুসলিমরা হলো সবচাইতে বেশি পরধম সহিষ্ণু জাতি। যার প্রমান আমরা যুগে যুগে পেয়েছি। ইন্দোনেশীয়া হতে মরোক্কো পযর্ন্ত মুসলিমরা শাশন করেছে আটশত পঞ্চাশ (850) বছর। ভারতবর্ষকে শাসন করেছে প্রায় 900 বছর। মুসলিমরা যদি পরধম সহিষ্ণু জাতি না হতো তাহলে এখানে অমুসলিমদের কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যেত না।