
হুসায়েন (রাঃ)-এর শাহাদাতে আহলে সুন্নাতের অবস্থান
হুসায়েন (রাঃ)-এর শাহাদাতে আহলে সুন্নাতের অবস্থান
অনুলিখন : মোহাম্মাদ আলিমুদ্দীন
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত হুসায়েন (রাঃ)-এর মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করে। কিন্তু তাতে বাড়াবাড়ি করে শী‘আদের ন্যায় ঐদিনকে শোক দিবস মনে করে না। দুঃখ প্রকাশের ইসলামী রীতি হল ‘ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন’ পাঠ করা (বাক্বারাহ ১৫৫-১৫৬) ও তাঁদের জন্য দো‘আ করা ।
বনী ইস্রাঈলের অসংখ্য নবী নিজ কওমের লোকদের হাতে নিহত হয়েছেন। মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ) মসজিদে নববীতে ফজরের ছালাতরত অবস্থায় মর্মান্তিকভাবে আহত হয়ে নিজ গৃহে শাহাদাত বরণ করেছেন। ওছমান গণী (রাঃ) ৮৩ বছরের বৃদ্ধ বয়সে নিজ গৃহে কুরআন তেলাওয়াত রত অবস্থায় পরিবর্গের সামনে নিষ্ঠুরভাবে শহীদ হয়েছেন। হযরত আলী (রাঃ) ফজরের জামা‘আতে যাওয়ার পথে অতর্কিতে আক্রান্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁকে হত্যাকারী ও বিরোধিরা ‘কাফের’ ও আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।৪০ যদিও হোসায়েন (রাঃ)-কে তাঁর হত্যাকারীরা কখনো ‘কাফের’ বলেনি।
৩৯. বুখারী হা/৩৭৫৩ ; মিশকাত হা/৬১৩৬ ‘নবী পরিবারের মর্যাদা’অনুচ্ছেদ ।
৪০. আল-বিদায়াহ ৭/৩৩৯ ।
হাসান (৩-৩৯ হিঃ)-কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় ।৪১ আশারায়ে মুবাশশারাহ্র অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব হযরত ত্বালহা ও যুবায়ের (রাঃ) মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন। তাঁদের কারো মৃত্যু হুসায়েন (রাঃ)-এর মৃত্যুর চাইতে কম দুঃখজনক ও কম শোকাবহ ছিল না। কিন্তু কারো জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে মাতম করার ও সরকারী ছুটি ঘোষণা করে শোক দিবস পালন করার কোন রীতি কোন কালে ছিল না। ইসলামী শরী‘আতে এগুলি নিষিদ্ধ ।
শী‘আ চক্রান্তের ফাঁদে সুন্নীগণ
শী‘আ লেখকদের অতিরঞ্জিত লেখনীতে বিভ্রান্ত হয়ে যেমন বহু ইতিহাস লিখিত হয়েছে, তেমনি ‘বিষাদ সিন্ধু’-র ন্যায় সাহিত্য সমূহের মাধ্যমে বহু কল্পকথাও এদেশে চালু হয়েছে। বঙ্গদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতায় বহু বৎসর যাবৎ শী‘আদের অবস্থান থাকার কারণে হুসায়েন ও কারবালা নিয়ে অলৌকিক সব কল্পকাহিনী এদেশের মানুষের মন-মগযে বদ্ধমূল হয়ে আছে। এছাড়াও তারা অতি সুকৌশলে এদেশের শিক্ষিত সুন্নী মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্যে কিছু পরিভাষা চালু করে দিয়েছে। যেমন সম্মান প্রকাশের জন্য উপমহাদেশে ছাহাবীগণের নামের পূর্বে ‘হযরত’ বলা হয় ও শেষে দো‘আ হিসাবে ‘রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু’ বলা হয় ও সংক্ষেপে (রাঃ) লেখা হয়। কিন্তু হোসায়েন (রাঃ)-এর নামের পূর্বে ‘ইমাম’ এবং শেষে নবীগণের ন্যায় ‘আলাইহিস সালাম’ বলা হচ্ছে ও সংক্ষেপে (আঃ) লেখা হচ্ছে। এর কারণ এই যে, শী‘আদের আক্বীদা মতে ‘ইমাম’গণ নবীগণের ন্যায় মা‘ছূম বা নিষ্পাপ। হুসায়েন (রাঃ) তাদের অনুসরণীয় বারো ইমামের অন্যতম। তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা মতে নবীগণের ন্যায় ‘ইমাম’গণ আল্লাহ্র পক্ষ হ‘তে মনোনীত হন। সেকারণে নবীগণের ন্যায় ইমামগণেরর নামের শেষে তারা ‘আলাইহিস সালাম’ বলেন।
পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিশুদ্ধ আক্বীদা মতে ছাহাবীগণ ‘মা‘ছূম’ বা নিষ্পাপ নন এবং তাঁরা নবীগণের সমপর্যায়ভুক্ত নন। অতএব সুন্নী আলেম ও বিদ্বানগণের উচিত হবে শী‘আদের সূক্ষ্ম চতুরতা হ’তে সাবধান থাকা; যেন আমাদের ভাষার মাধ্যমে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার প্রচার না হয়।
ইয়াযীদ-কে আমরা কখনোই ‘মালঊন’ বা অভিশপ্ত বলব না। বরং সকল মুসলমানের ন্যায় আমরা তার মাগফেরাতের জন্য দো‘আ করব। ইমাম গাযযালী (৪৫০-৫০৫ হিঃ) বলেন, হোসায়েনকে তিনি হত্যা করেননি, হত্যা করার হুকুম দেননি, হত্যা করায় খুশী ও হননি। এমনকি ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ প্রেরিত সেনাদলের নেত ওমর বিন সা‘দ সহ বহু সৈন্য হোসায়েন (রাঃ)-কে হত্যার ঘোর বিরোধী ছিলেন। এক পর্যায়ে অন্যতম সৈন্যাধ্যক্ষ কুফার বীর সন্তান হোর বিন ইয়াযীদ পক্ষত্যাগ করে ইবনে যিয়াদের বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে নিহত হল। অতএব ইবনে যিয়াদের কঠোর নির্দেশ ও শিমার বিন যিল-জাওশান-এর নিষ্ঠুরতাই ছিল এই হত্যাকাণ্ডের জন্য মূলতঃ দায়ী ।
আমাদেরকে কারবালার ঘটনা সম্পর্কে সকল প্রকার আবেগ ও বাড়াবাড়ি হ‘তে দূরে থাকতে হবে এবং আশুরা উপলক্ষে প্রচলিত শিরক বিদ‘আতী আক্বীদা-বিশ্বাস ও রসম রেওয়াজ হ‘তে বিরত থাকতে হবে। সাথে সাথে নিজেদের ব্যক্তি জীবন ও বৈষয়িক জীবন এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিখুঁত ইসলামী ছাঁচে ঢেলে সাজাবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দিন-আমীন।
৪১.আল-বিদায়াহ ৮/৪৪ ।
সূত্র: আশুরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয় বই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : যদি আপনি নিজেও মোটামুটি টাইপ করতে পারেন। তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনিও ছোট ছোট এরুপ লেখা টাইপ করে দিয়ে দাওয়াতের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন। আমাদের সাথে ফেসবুকে বা [email protected] এ যোগাযোগ করতে পারেন।
ইমাম হুসায়েন আ. এর বিষয়ে মো: আলিমুদ্দীন সাহেবের এই মন্তবটা ঠিক না আলিমুদ্দীনের আশলে ইমাম হুসায়েন আ. এর বিষয়ে কনো জ্ঞান নেই তাই তালহা ও যুবায়ের কে ইমাম হুসায়েন আ. এর সাথে তুলোনা করছে।
এটা আলীমুদ্দিন সাহেবের লিখা নয়, তিনি টাইপ করেছেন শুধুমাত্র। আর এটা আসাদুল্লাহ আল গালিব স্যারের লেখা বই থেকে কিছু অংশ। আপনি ইমাম হুসাইন এর পর আ. লিখেছেন। এতেই বুঝা গেছে আপনি শিয়া।