শাইখ মুহাম্মাদ উযাইর শামস রাহিমাহুল্লাহ’র জীবনী – ০২
অনুবাদ: নাঈম সিদ্দীকী
শাইখ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর জীবনকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা এবং কাজকর্ম করেছেন। আজকের এই পর্বে আমরা শাইখের শিক্ষকবৃন্দ এবং তাঁর কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করবো।
ভারতে তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন: তার পিতা শাইখ শামসুল হক সালাফী, তার চাচা শাইখ আইনুল হক সালাফী, শাইখ নূর আজিম নাদভী, শাইখ মুহাম্মাদ রাঈস নাদভী, শাইখ মুহাম্মাদ ইদ্রিস আজাদ রাহমানী, শাইখ আবিদ হাসান রাহমানী, শাইখ আবদুল মুঈদ বানারাসী, শাইখ আবদুল ওয়াহেদ বানারাসী, শাইখ আবদুস সালাম রাহমানী, শাইখ আবদুল আযিয আহমাদ নাদভী, শাইখ কুরাতুল আইন আযামী।
শাইখ আবদুস সালাম তিবী, শাইখ আবদুস সালাম মাদানী, শাইখ আব্দুর রাহমান টনকি, শাইখ সাফিউর রাহমান মুবারাকপুরী, শাইখ রাঈস রাহমান আযামী, শাইখ আবদুল হান্নান বাস্তাবী, শাইখ হাদী তালিবী, মাস্টার মানযুর আহমাদ, মাস্টার আফতাব, মাস্টার শামসদ্দিন।
মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অধিকাংশ শিক্ষক ছিলেন আজহারী আলেমগণ: ড. আবদুল আজিম আলী শানাভী, শাইখ ইজুদিন আলী আস-সাঈদ, শাইখ আহমাদ আস-সাঈদ গালী, শাইখ মুহাম্মাদ কানাদাহ আবদুল্লাহ, শাইখ মাহফুজ ইবরাহীম ফারাজ, শাইখ আবদুল আযিয মুহাম্মাদ ফখীর, শাইখ ইবরাহীম মুহাম্মাদ আবদুল হামিদ আবু সাকিন, শাইখ মুহাম্মাদ আহমাদ আল-গারব।
শাইখ আহমাদ জামাল আল-উমরী, শাইখ সালিহ আহমাদ বেলো, শাইখ ত্বহা আবু রায়তিয়াহ, শাইখ মুহাম্মাদ বেলো আহমাদ আবু বকর, শাইখ আব্বাস মাহজুব, শাইখ আবদুল বাসিত বদর, শাইখ আলী নাসির ফকীহী, শাইখ জিবরান।
উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে: ড. হাসান মুহাম্মাদ বাজওয়াহ, শাইখ মাহমুদ হাসান জায়নী, শাইখ আবদুল হাকিম হাসান, ড. আহমাদ মাক্কী আল আনসারী, শাইখ আলী মুহাম্মাদ আল-ইমারি, শাইখ আবদুল আযিয আল-কাফরাদি, শাইখ লুৎফী আবদুল বাদী, শাইখ আবদুস সালাম ফাহমী, শাইখ নু’মান আমীন ত্বহা, শাইখ আবদুল আযিয কিশক
শাইখ উযাইর শামস তাঁর জীবনে লেখাপড়া ছাড়া আর কিছুই করেননি। ছোট থেকেই তিনি প্রচুর পড়তেন কারণ তিনি আলেম এর পরিবার থেকে এসেছেন। তিনি আরবি, ফারসি ও ইংরেজিতে বিভিন্ন উসুলের অনেক বই পড়েন এবং সেগুলো থেকে অনেক ইলম অর্জন করেন।
আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদীর বই নিয়ে তাঁর কর্ম:
০১) জামিয়াহ সালাফিয়াহ বানারাসে অধ্যয়নকালে, শাইখ মাসউদ আলম নাদভীর বই পড়ে, শাইখ উযাইর শামস আরবী ও উর্দুতে জীবনী সংকলনে আগ্রহী হন। যেহেতু তিনি আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদীর দ্বারা হাদীসে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন, তাই তিনি তাঁর জীবনের উপর একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন যা ১৯৭৫ সালে ‘মাআরিফ’ (আযামগড়) পত্রিকায় দুটি পর্বে প্রকাশিত হয়েছিল।
০২) শাইখ উযাইর শামসও শাইখ আল আলবানীর বই এবং তার তাহকীকের পদ্ধতিতে খুব মুগ্ধ ছিলেন; তাই তাহকীকের সেই একই পদ্ধতিতে শাইখ উযাইর শামস তার প্রথম বই প্রকাশ করেন। তার প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদীর “রাফউল ইলতিবাস মিন বাদিন নাস” (আরবি) এর তাহকীক এবং এটি ইদারাতুল বুহুস আল ইসলামিয়া বিল জামিয়াহ সালাফিয়াহ বি বানারাস থেকে ২১৩ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল।
০৩) শাইখ উযাইর শামস আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদীর একটি জীবনী লিখেছেন যার শিরোনাম “হায়াতুল মুহাদ্দিস শামসুল হক ওয়া আমালূহু” এবং এটি ইদারাতুল বুহুস আল ইসলামিয়া বিল জামিয়াহ সালাফিয়াহ বি বানারাস থেকে ৩৬৫ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল।
০৪) শাইখ উযাইর শামস ১৪২ পৃষ্ঠায় “মওলানা শামসুল হক আযীমাবাদী, হায়াত ওয়া খিদমাত” শিরোনামে উর্দুতে এটির একটি সারসংক্ষেপ লিখেছিলেন এবং এটি শাইখ আতাউল্লাহ হানিফ ভুজিয়ানীর ভূমিকায় ইলমি একাডেমি করাচি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
০৫) এই উর্দু সংক্ষিপ্তসারটি তখন সুহাইল আহমাদ ফারুকী কতৃক ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল এবং ইলমি একাডেমি “Allamah Shams Al-Haq Azimabadi : Life and Works” নামে ১৭৫ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছিল।
০৬) শাইখ উযাইর শামস আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদীর পত্র এবং ফারসি ও উর্দু ফতোয়াও সংকলন করেছিলেন এবং এই সংগ্রহটি জামিয়াহ ইহইয়াউত তুরাস কুয়েতের অধীনে শাইখ আরিফ জাভেদ মুহাম্মাদির দার আবি তৈয়ব কর্তৃক হাফেয শাহীদ মাহমুদের তাখরিজের সাথে “মাজমুআ মাকালাত ওয়া ফাতাওয়া আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদী” নামে তার তাহকীকের সাথে ৭১০ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল।
০৭) শাইখ উযাইর শামস শাইখ শামসুল হক আজিমবাদির “গায়াতুল মাকসুদ শারহ সুনান আবি দাউদ” এর তাহক্কিক করেছিলেন।
০৮) শাইখ উযাইর শামস ঈদের সালাত আদায়ের পর করমর্দন ও আলিঙ্গন সম্পর্কে শাইখ শামসুল হক আযীমাবাদীর “হিদায়াতুন নাজদাইন” বইটি আরবি ভাষায় অনুবাদ করেছেন।
০৯) তিনি আকিকার উপর আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদীর একটি বই উর্দুতে অনুবাদ করেছেন এবং উর্দু অনুবাদটির নাম “আকীকা কা আহকাম ওয়া মাসায়েল”।
মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তার খেদমত। মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে, শাইখ উযাইর শামস ৩টি বিষয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন:
০১) আরবি পাণ্ডুলিপি: তিনি এই পাণ্ডুলিপিগুলির ফিহরিস্ট সংকলন করতে ৩ বছর অতিবাহিত করেছিলেন এবং তিনি দুর্লভ বইগুলি সম্পর্কে জানার এবং পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
০২) আরবি কবিতা ও সাহিত্য: এটি ছিল তাঁর বি. এ. এর বিষয় এবং তিনি তাঁর দিওয়ান সংকলনের জন্য জাহিলিয়াতের সময়ের অনেক কবিতা বিশেষ করে কবি তাবাতা শারা এর কবিতা পড়েছিলেন এবং এছাড়াও তিনি আরো অনেক কবিতার বই পড়েছিলেন।
০৩) হাদীসের উসুল: তিনি এই বিষয়ে অনেক পাণ্ডুলিপি পড়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন পাণ্ডুলিপির তুলনা করে আয-যারকাশীর “আল আলালী আল মানশুরাহ ফিল আহাদীস আল মাশহুরাহ” বইটি সম্পাদনা করেন। তিনি এর মাধ্যমে বর্ণনাকারীদের বই সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন করেন।
আল্লামাহ আবদুল আযিয মেমোনীর বই নিয়ে তাঁর কর্ম: উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আল্লামাহ আবদুল আযিয মেমোনীর সমস্ত বই এবং সম্পাদনাকৃত কিতাব অধ্যয়ন করেন এবং তিনি আল্লামাহ মেমোনীর আরবি ভাষার মহান জ্ঞান দ্বারা খুব প্রভাবিত হন। তাই তিনি আল্লামাহ মেমোনীর সমস্ত পত্র ও বইকে একসাথে সংকলন করার সিদ্ধান্ত নেন যা তিনি ২ খন্ডে “বুহুস ওয়া তাহকীকাত লিল আল্লামাহ আবদুল আযিয আল-মেমোনী” নামে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি শাইখ আবদুল আযিয মেমোনীর কিছু মাকালত উর্দুতেও অনুবাদ করেছেন।
শাহ ইসমাঈল দেহলভীর উপর তাঁর কর্ম: আল্লামাহ আবদুল আযিয আল-মেমোনী এবং আল্লামাহ শামসুল হক আযীমাবাদীর সাথে, শাইখ উযাইর শামস ভারতের আরেক মহান আলেম, আল্লামাহ শাহ ইসমাঈল শাহীদ (ইন শা আল্লাহ) এর উপরও কাজ করেছেন। তিনি তাঁর একটি সম্পূর্ণ জীবনী লিখতে চেয়েছিলেন, যা তিনি এখনও সম্পূর্ণ করেননি।
তিনি তার তাহকীকের সাথে শাহ ইসমাঈলের সকল বই প্রকাশ করার ইচ্ছা করেছিলেন কিন্তু এপর্যন্ত, তিনি শুধুমাত্র “রাদ্দুল ইশরাক” প্রকাশ করেছেন, যেটি তিনি ভারতে প্রচলিত শিরকের বিভিন্ন রূপের বিরুদ্ধে আরবি ভাষায় লিখেছিলেন। শাইখ উযাইর শামস এই বইটির তাহকীক করেছেন এবং হাদীসের তাখরিজ করেছেন। শাইখ আতাউল্লাহ হানিফ ভুজিয়ানী এই বইটির সম্পাদনা করেছেন এবং সম্প্রতি দারুল খাজানাহ থেকে বহুবার প্রকাশিত হয়েছে।
শাইখ উযাইর শামস শাহ ইসমাঈল দেহলভীর “ইযাহুল হাক্কুস সারীহ” এর আরবীতে অনুবাদ শুরু করেছিলেন কিন্তু তা এখনও শেষ হয়নি। [চলবে…]