ইমাম ইবনে তাইমিয়ার সংগ্রামী জীবন
শাইখুল ইসলাম ইমাম তাকিউদ্দীন আহমদ ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন যুগস্রষ্টা। হিজরাতে নববীর অর্থ সহস্রাধিক বৎসর পর নবুয়তের স্বচ্ছ ঝর্ণা ধারায় যেসব ময়লা আবর্জনা মিশে গিয়েছিল দীর্ঘ প্রচেষ্টা সংগ্রাম সাধনার মাধ্যমে তিনি তাকে আবিলতা মুক্ত করেন। তাঁর ইলমের খ্যাতি সুদূর মাগরিবের কাইরোয়ান থেকে পূর্বে চীনের ক্যান্টন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। তাঁর সংস্কারমূলক কার্যাবলীর প্রভাবও এইসব এলাকাকে প্লাবিত করেছিল।
সপ্তম অষ্টম হিজরি শতকে ইবনে তাইমিয়া ছিল একটি নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের নাম। তিনি সংগ্রাম করেন শিরকও বিদআতের বিরুদ্ধে। তিনি সংগ্রাম করেন অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে, জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে। তাঁর নির্ভীক ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে অমিততেজা রাজশক্তির হ্রদয়ও কেঁপে ওঠে। দুর্জনদের পরামর্শে পরাক্রান্ত রাজশক্তি তাঁকে লৌহ কপাটের অন্তরালে নিক্ষেপ করে। কারাগারে বসেও তিন লেখনী চালাতে থাকেন অতি দ্রুত বেগে। তাঁর নির্জলা সত্যের প্রকাশে কারাপ্রাচীর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বিরোধী পক্ষ হিংসার আগুনে তাঁকে পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলতে চায়।
এবার রাজার হুকুমে তাঁর কাছে থেকে বইপত্র, খাতা কলম, কালি দোয়াত সব কিছুই ছিনিয়ে নেয়া হয়, তবুও তিনি দমেননি। ছেঁড়া টুকরো কাগজ জমা করে কয়লা দিয়ে তাতে লিখতে থাকেন। এভাবে সত্যের নির্ভীক সেনানী আমৃত্যু লড়ে যেতে থাকেন অসত্যের বিরুদ্ধে।
তাঁর সাতষট্টি বছরের জীবনকাল ছিল মিথ্যা ও বাতিল, অন্যায় ও অসত্যের ন্যক্কারজনক পরাজয়ের ইতিবৃত্ত। ইবনে তাইমিয়ার ক্ষুরধার লেখনী আজও মিথ্যা ও বাতিলের পরাজয়ের কাহিনী লিখে চলছে।
কুরআন ও সুন্নাহ হচ্ছে ইসলামের সত্য জ্ঞানের দুটি মূল উৎস। ইমাম ইবনে তাইমিয়া ইসলামী জ্ঞানের সমস্ত শাখা প্রশাখাকে আবার এই মূল উৎস দুটির সাতে সংযুক্ত করে দিয়ে যান। এ জন্য তাঁর সমস্ত ইলমী যোগ্যতা ও বুদ্ধিবৃত্তিকে ব্যবহার করেন। এ পথে তিনি কোন দোর্দণ্ড প্রতাপ শাসক ও অসীম ক্ষমতাধর প্রতিপক্ষের রক্তচক্ষুকে একটুও আমল দেননি। সত্যের জন্য তাঁর এই অকুতোভয় সংগ্রাম ও সাধনা কিয়ামত পর্যন্ত এই মিল্লাতকে জীবনীশক্তি যোগাতে থাকবে।