স্বলাতে মুবাশ্‌শির (পর্ব ১)

রচনায় : শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী

ভূমিকা

إِنَّ الْحَمْدَ للهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا وَسَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْيُّضْلِلْ فَلاَ هَادِىَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُه. {يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا} {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ} {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا}

নামায ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত। দ্বীনের দ্বিতীয় স্তভ। এ ইবাদত কিভাবে শুদ্ধ হবে -সে চিন্তা প্রত্যেক নামাযীর। মুসলিম মাত্রই জানা দরকার যে, যে কোনও ইবাদত ও আমল কবুল হয় একটি ভিত্তিতে। আর সে ভিত্তি হল ‘তাওহীদ’। সুতরাং যার তাওহীদ নেই, তার নামায নেই। সে নামাযী হলেও তার নামায মকবুল নয় আল্লাহর দরবারে। পক্ষান্তরে প্রত্যেক ইবাদত ও আমল কবুল হয় দুটি মৌলিক শর্ত পালনের মাধ্যমে :
(১) ইখলাস (সে কাজ কেবল মাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। আরকারো উদ্দেশ্যে, অন্য কোন স্বার্থে সে কাজ করলে, তা আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়)।
(২) রসূল (সা.) এর অনুসরণ। তাঁর নির্দেশ ব্যতীত অন্য কোন তরীকায় বা পদ্ধতিতে সে আমল  করলে, তা আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় নয়।

মহান আল্লাহ বলেন,
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَّلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً

অর্থাৎ, সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে ব্যক্তি যেন নেকআমল করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে।[1]

নবী মুবাশ্‌শির (সা.) বলেন, (صلوا كما رأيتموني أصلي) অর্থাৎ, তোমরা সেইরুপ নামায পড়, যেরুপ আমাকে পড়তে দেখেছ।[2]

অনেক পাঠকের মনে শুরুতেই এ প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, এ পুস্তক কোন্মযহাবকে ভিত্তি করে লিখিত? এর উত্তরে বলা যায় যে, ইমাম আবূ হানীফা (র:) এর উক্তি “হাদীস সহীহ হলেই সেটিই আমার মযহাব।”[3] সহীহ হাদীস পাওয়া গেলে যয়ীফ হাদীস বা রায় ও কিয়াসকেবর্জন করে সেই অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। আর সেই কথার প্রতি বিশেষ খেয়াল রেখে এই পুস্তক লিখিত। নামায শিক্ষার ব্যাপারে পাঠকহয়তো বিভিন্ন বই-পুস্তকে ‘নানা মুনির নানা মত’ লক্ষ্য করবেন। আর এমনমতবিরোধ যে অস্বাভাবিক তা নয়। এর কারণ অনেকটা এই যে, অনেকের নিকট সহীহ হাদীসঅজানা। অনেকের নিকট হাদীস সহীহ বলে জানা থাকলেও আসলে তা যয়ীফ। আবারকোন হাদীস এক রিজাল-সুত্রে যয়ীফ হলেও তা যে অন্য রিজাল-সূত্রে সহীহ, তা অনেকের অজানা।

সুতরাং যদি কোন মুজতাহিদ নিজ ইজতিহাদে কোন মাসআলা বলে থাকেন এবং দলীল সে কথার সমর্থন করে, অথবা কোন অমুজতাহিদ আলেম যদি কোন মুজতাহিদের কথা নিজ পুস্তকে বা ফতোয়ায় নকল করেন, তাহলে এমন আলেমের বিরুদ্ধে কুপমন্ডুকতার পরিচয় দিয়ে ‘ভুঁই-ফোঁড়, কাঠমোল্লা’ প্রভৃতি বলেবিরুপ মন্তব্য করা কোন বিজ্ঞ ও যশস্বী আলেমের জন্য শোভনীয় ও সমীচীন নয়।

যেমন পাঠকের উচিত, দলীলের স্বরুপতা দেখে যথাসাধ্য সঠিক কোনটি তা নিরুপণ করতে চেষ্টা করা এবং সেই মতে আমল করা। এ ক্ষেত্রে তাঁর জন্যও উচিত নয়, কোন অভিজ্ঞ আলেমের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের কটুক্তি করা। এমন ছোটখাট বিষয়ে ইজতিহাদী মতপার্থক্যকে বিভ্রান্তিকর মনে না করা। কারণ, এ সকল (সুন্নতী) বিষয়ে সঠিক ফায়সালা ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ যাই হোক, নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। অতএব উদার মনে পরষ্পর-বিরোধী মতের মধ্যে যে কোন একটির উপর সঠিক জ্ঞানে আমল করলে তিনি সওয়াব-প্রাপ্ত হবেন। যেমন মুজতাহিদের ফায়সালা সঠিক হলে তিনি ২টি এবং বেঠিক হলে ১টি নেকী লাভ করবেন। আর তাঁর অনিচ্ছাকৃত ভুল ধর্তব্য হবে না। পাঠকের হাতে অত্র পুস্তকটি আসলে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত ‘সালাতে মুবাশ্‌শির’-এর বিস্তারিত ও বর্ধিত রুপ। হাওয়ালায় যে সংকেত ব্যবহার হয়েছে তার ব্যাখ্যা রয়েছে পুস্তকের শেষ অংশে কলেবর বৃদ্ধি দরুন বইটিকে দুই খন্ডে বিভক্ত করা জরুরী ছিল। প্রত্যেক খন্ডে জুড়ে দেওয়া হবে সেই সংকেত-পরিচিতি ও প্রমাণপঞ্জী। (আমরা সেগুলো নিচে ফুটনোট আকারে যুক্ত করেছি যাতে পাঠকদের তেমন অসুবিধা না হয়- সম্পাদক) আশা করি পাঠকের বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না। পেশায় নয়, নেশায় ও প্রয়োজনের তাকীদে যা কিছু লিখি, যা কিছু বলি, আল্লাহ সবই তোমার  সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্যে। অতএব তা আমার এবং প্রকাশকের কাছ থেকে কবুল করে নিও। আমীন।

শুরুর কথা

মহান আল্লাহর অনুগ্রহে ‘স্বালাতে মুবাশ্‌শির’-এর দ্বিতীয় খন্ড পাঠকের হাতে উপস্থিত হল। তার জন্য তাঁর দরবারে লাখো শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। দ্বীনের অন্যতম খুঁটির একটি কাঠামো পেশ করতে পেরে আমি নিজেকে যেমন ধন্য মনে করছি, তেমনি আশা করছি দুআ ও সওয়াব লাভের।

কেবল সহীহ হাদীসকে ভিত্তি করেই, অধিক ক্ষেত্রে কে কি বলেছেন তা উল্লেখ না করেই কেবল সহীহ দিকটা তুলে ধরেছি আমার এই পুস্তিকায়। মানুষের মনে সহীহ শিক্ষার চেতনা ও বাসনার কথা খেয়াল রেখেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আল্লাহ যেন তা কবুল করেন, তাই আমার কামনা। বিভিন্ন বিতর্কিত মাসায়েলে আমি বর্তমান বিশ্বের প্রধান ৩টি রত্ন বর্তমান বিশ্বের অদ্বিতীয় মুহাদ্দিস আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, আল্লামা শায়খ ইবনে বায এবং আল্লামা ও ফকীহ শায়খ ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুমুল্লাহু জামীআন) গণের হাদীসলব্ধ ও সহীহ দলীল ভিত্তিক মতকে প্রাধান্য দিয়েছি। আর এ কথা অবশ্যই প্রমাণ করে যে, আমি তাঁদের প্রত্যেকের; বরং প্রত্যেক হক-সন্ধানী রব্বানী আলেমের ভক্ত ও অনুরক্ত। তা বলে কারো অন্ধভক্ত নই। পক্ষান্তরে প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য অধিকারীর অধিকার সঠিকরুপে আদায় করা। উলামার যথার্থ কদর করা। প্রত্যেক হক-সন্ধানীর অনুরক্ত হওয়া; যদিও বা তাঁদের কোন কোন অভিমত আমার-আপনার বুঝের অনুকূল নয়। বলা বাহুল্য, খাঁটি সোনা স্বর্ণকারই চিনতে পারে; স্বর্ণ-ব্যবসায়ী নয়। ‘নামায’ ইসলামের প্রধান ইবাদত। ‘নামায’ শব্দটি ফারসী, উর্দু, হিন্দি ও আমাদের বাংলা ভাষায় আরবী ‘সালাত’ অর্থেই পরিপূর্ণরুপে ব্যবহৃত বলেই আমি ‘সালাত’-এর স্থানে ‘নামায’ই ব্যবহার করেছি। তাছাড়া বাছলাভাষীর অধিকাংশ মানুষ ‘সালাত’ শব্দটির সাথে পরিচিত নয়। তাই পরিচিত ও প্রসিদ্ধ শব্দই ব্যবহার করতে আমি প্রয়াস পেয়েছি। আর এতে শরয়ী কোন বাধাও নেই।

সুতরাং এ বিষয়ে সুহৃদ পাঠকের কাছে আমার ইজতিহাদী কৈফিয়ত পেশ করে সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

প্রয়োজনের তাকীদে যা কিছু লিখি, সবই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আল্লাহ যেন তা আমাকে দান করেন এবং কাল কিয়ামতে এরই অসীলায় আমাকে, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা ও উস্তাযগণকে, আর এ বই-এর উদ্যোক্তা, প্রকাশক ও সকল আমলকারী পাঠককে তাঁর মেহমান-খানা বেহেশতে স্থান দেন। আমীন।

তথ্যসূত্র :

[1] আল-কুরআন, সূরা আল-কাহফ, আয়াত নং-১১০

[2] বুখারী, মিশকাত হা/৬৮৩

[3] ইবনে আবেদীন, হাশিয়া ১/৬৩, সিফাতু সালাতিন নাবী, ৪৬পৃ.

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88