আসুন মাহে রমযানকে স্বাগত জানাই

আসুন মাহে রমযানকে স্বাগত জানাই

লেখক :- সানাউল্লাহ নজির আহমদ

বাড়িতে বিশেষ কোন মেহমান আসার তারিখ থাকলে আমরা পূর্ব থেকেই নানা প্রস্ত্ততি নেই। ঘরদোর পরিষ্কার করি। বিছানাপত্র সাফ-সুতরো করি। পরিপাটি করি বাড়ির পরিবেশ। নিশ্চিৎ করি মেহমানের যথাযথ সম্মান ও সন্তুষ্টি রক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা। তারপর অপেক্ষা করতে থাকি মেহমানকে সসম্মানে বরণ করে নেয়ার জন্য। আমাদের দুয়ারেও আজ কড়া নাড়ছে এক বিশেষ অতিথি। এমন অতিথি যার আগমনে সাড়া পড়ে যায় যমীনে ও আসমানে! আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় সমগ্র সৃষ্টি জগতে! আল্লাহর হাবীবের মুখেই শুনুন সে কথা-

إذا كَانَ أَوَّلُ ليْلَةٍ من شَهرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّياطِينُ ومَرَدَةُ الجِنِّ، وغُلِّقَتْ أبوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ منْهَا بَابٌ، وفُتِحَتْ أَبوَابُ الجَنَّةِ فلمْ يُغْلَقْ منْها بَابٌ، ويُنَادِي مُنَادٍ: يا بَاغِيَ الخَيرِ: أَقْبِلْ، ويا بَاغِيَ الشَّر: أَقْصِرْ، ولله عُتَقَاءُ مِنَ النَّار وذَلكَ كُلَّ لَيْلَةٍ». هذه الرواية للترمذي (682) وابن ماجه (1642) وصححها ابن خزيمة (1883) وابن حبان (3435) والحاكم وقَالَ: على شرط الشيخين (1/582) وصححه الألباني في صحيح الترمذي.

‘যখন রমযানের প্রথম রাত্রি আগমন করে শয়তান এবং অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের সকল দরোজা বন্ধ করে দেয়া হয়; খোলা রাখা হয় না কোন দ্বার, জান্নাতের দুয়ারগুলো অর্গলমুক্ত করে দেয়া হয়; বদ্ধ রাখা হয় না কোন তোরণ। এদিকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন- ‘হে পুণ্যের অনুগামী, অগ্রসর হও। হে মন্দ-পথযাত্রী থেমে যাও’। আবার অনেক ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আর এমনটি করা হয় রমযানের প্রতি রাতেই’।[1]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই রমযান আসার পূর্ব থেকেই রমযানের জন্য প্রস্ত্ততি নিতেন। শাবান মাসে অধিকহারে নফল রোজা পালনের মাধ্যমে তিনি রমযানে সিয়াম সাধনার পূর্বানুশীলন করতেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে রমযানের শুভাগমনের সুসংবাদ দিতেন। তাঁদেরকে শোনাতেন রমযানের ফযীলতের কথা। যেন তারা রমযানে ইবাদত-বন্দেগীতে বেশি করে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। নেকী অর্জনে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে প্রত্যয়ী হন। ইমাম আহমদ র. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يبشرأصحابه:”قد جاءكم شهرمبارك, شهررمضان, افترض عليكم صيامه, يفتح فيه أبواب الجنة, ويغلق فيه أبواب الجحيم, وتغل فيه الشياطين, فيه ليلة خير من ألف شهر, من حرم خيرها فقد حرم. هذه الرواية للنسائي (4/129) وأحمد (2/230) وعبد بن حميد (1429).

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গী-সাথীদের এ মর্মে সুসংবাদ শোনাতেন-‘ তোমাদের সমীপে রমযান মাস এসেছে। এটি এক মোবারক মাস। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর এ মাসের রোযা ফরজ করেছেন। এতে জান্নাতের দ্বার খোলা হয়। বন্ধ রাখা হয় জাহান্নামের দরোজা। শয়তানকে বাঁধা হয় শেকলে। এ মাসে একটি রজনী রয়েছে যা সহস্র মাস হতে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে যেন যাবতীয় কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল।’[2]

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, এ মাস আসার আগেই এর যথার্থ মূল্যায়নের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা। নিরবে এসে নিরবে চলে যাওয়ার পূর্বেই এ মহান অতিথির সমাদর করা। এ মাস যেন আমাদের বিপক্ষে দলীল না হয়ে দাঁড়ায় তার প্রস্ত্ততি সম্মন্ন করা। কারণ মাসটি পেয়েও যে এর উপযুক্ত মূল্য দিল না, বেশি বেশি পুণ্য আহরণ করতে পারল না এবং জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পরোয়ানা পেল না, সে বড় হতভাগ্য। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল এমন ব্যক্তি আল­াহর ফেরেশতা ও খোদ রাসূল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম- এর বদ দোয়ার অধিকারী। কারণ এমন ব্যক্তির ওপর জিব্রাইল আ. লানত করেছেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গে ‘আমীন’ বলেছেন!

রমযানকে স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে সুন্নত হল, রমযানের চাঁদ দেখে নিম্নের দু’আটি পাঠ করা।

“اللهم أهله علينا بالأمن والإيمان والسلامة والإسلام.”رواه الترمذي، وقال الترمذي هذا حديث حسن .

অতপর একে স্বাগত জানানোর সর্বোত্তম উপায়, রমযানকে সকল গুনাহ থেকে বিশেষ তাওবার সাথে গ্রহণ করা। কারণ এটাতো তাওবারই মৌসুম। এ মাসে তাওবা না করলে তাওবা করবে কবে? অনুরূপভাবে রমযানকে স্বাগত জানানো ইবাদাতে দ্বিগুণ চেষ্টা, দান-সাদাকা, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-ইস্তেগফার এবং অন্যান্য নেক আমল অধিক পরিমাণে করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে। এবং এ দু’আর মাধ্যমে- হে আল্লাহ, আমাদেরকে তোমার সন্তুষ্টি মত রোজা রাখার এবং তারাবীহ আদায় করার তাওফিক দাও।

তাই আসুন আমরা এ মহান অতিথিকে বরণ করে নেয়ার এবং এ মাসের দিন-রাত্রিগুলো এমন আমালের মধ্য দিয়ে কাটানোর প্রস্ত্ততি নেই যা আমাদেকে আল্লাহ তা’আলার প্রিয় করে তুলবে। আমরা যেন সেসব লোকের দলে অন্তুর্ভূক্ত না হই যারা রসনা তৃপ্তির রকমারী আয়োজন ও সালাত বরবাদ করার মাধ্যমে রমযানকে স্বাগত জানায়। আল্লাহ তা’আলা আমাদের কবুল করুন। আমীন ।

বিশেষ দ্রস্টব্য : আমাদের সমাজে রাজনৈতিক মিছিলের মতো করে রমযানেক স্বাগতম জানিয়ে শোভাযাত্রা করার বিধান কুরআন সুন্নাহতে পাওয়া যায় না। এটা নব আবিষ্কৃত ও বিভ্রান্তপন্থীদের অনুসরণ। -সম্পাদক।

তথ্যসূত্র :

[1] তিরমীযী

[2] আহমদ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
kiw kow kan