ফিদিয়া কি? কখন ও কি পরিমান দিতে হবে?
ফিদিয়া প্রদানে অক্ষম ব্যক্তির করণীয় কি?
১- চিরস্থায়ী রোগী যেমন-ক্যান্সারের রোগ,কিডনীর রোগ বা এ ধরণের স্থায়ী রোগ (যা অসহনীয়) যা থেকে রোগী সুস্থতা আশা করে না, সে রোগী রমযান মাসে সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে ফিদিয়া দিবে অর্থাৎ একজন মিসকীন খাওয়াবে।
২-বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী, যারা সিয়াম পালনে সক্ষম নয়, তারাও সাওম ভঙ্গ করবে এবং প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীন খাওয়া্বে।
কুরআন থেকে এর দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
“আর যারা তাতে (সিয়াম পালনে ) অক্ষম, তারা যেন ফিদয়াহ হিসেবে মিসকীন খাওয়ায়।” [আল-বাকারাহ: ১৮৪]
════════════════════
শাইখ ইবনু বাযকে একজন অতি বৃদ্ধা নারী বা পুরুষ বা চিরস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগী,সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল যিনি সাওম পালনে সক্ষম নন, তিনি কী করবেন?
তিনি উত্তরে বলেন: “তাকে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে আধা সা‘ খাবার খাওয়াতে হবে, তা সে দেশের খাদ্য দ্রব্য থেকে যেমন- খেজুর বা চাল বা এছাড়া অন্যান্য প্রধান খাবার থেকে।
আধা সা‘ ওজন হিসেবে এর পরিমাণ হল প্রায় দেড় (১.৫) কিলোগ্রাম।
════════════════════
যেমন- নবীর একদল সাহাবী ফাত্ওয়া দিয়েছেন, যাঁদের মাঝে ইবনু ‘আব্বাসও (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) আছেন। আর যদি তিনি (অতি বৃদ্ধা নারী) দরিদ্র হন অর্থাৎ খাওয়াতে সক্ষম না হন, তবে তার উপর কিছু বর্তায় না, আর এই কাফফারাহ একজন (মিসকীন)-কে বা অনেকজনকে (মিসকীনদের) দেওয়া যেতে পারে মাসের শুরুতে বা এর মাঝে বা এর শেষে। আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।”
════════════════════
[মাজমূ‘ ফাত্ওয়া ইবন বায (১৫/২০৩)]
________
*কোন ব্যক্তি যদি রামাযানের রোযা রাখতে অক্ষম হয় এবং তার ফিদিয়া (একজন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান) প্রদানেরও ক্ষমতা না রাখে তাহলে কী করণীয়?*
উত্তর:
কোন ব্যক্তি যদি বয়োবৃদ্ধ বা অসুস্থ হওয়ার কারণে রামাযানের রোযা রাখতে না পারে এবং ভবিষ্যতেও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে ফিদিয়া প্রদান করবে। অর্থাৎ প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻄِﻴﻘُﻮﻧَﻪُ ﻓِﺪْﻳَﺔٌ ﻃَﻌَﺎﻡُ ﻣِﺴْﻜِﻴﻦٍ
“আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে।” (সূরা বাকারা: ১৮৪)
এই আয়াতের তাফসীর হল, কোনো ব্যক্তি যদি অতিরিক্ত বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে অথবা শয্যাশায়ী রোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে রোজা রাখতে সক্ষম না হয় অর্থাৎ এমনভাবে অসুস্থ হয়েছে যে, এই রোগ থেকে আর মুক্তি পাওয়ার আর সম্ভাবনা দেখা যায় না বা প্রায় মৃত্যু পথযাত্রী। তাহলে এধরণের লোকের ক্ষেত্রে ফিদিয়া দিতে হবে। আর তা হল, একটা রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্যদ্রব্য প্রদান।
*কিন্তু খাদ্য প্রদান করার ক্ষমতাও না থাকলে* সর্ব সম্মতিক্রমে তার জন্য ফিদিয়া প্রদান রহিত হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন:
ﻟَﺎ ﻳُﻜَﻠِّﻒُ ﺍﻟﻠَّـﻪُ ﻧَﻔْﺴًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻭُﺳْﻌَﻬَﺎ
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারা: ২৮৬)
তিনি আরও বলেন:
ﻓَﺎﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺘُﻢْ
“অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)
তবে ভবিষ্যতে যদি ফিদিয়া প্রদানের সামর্থ হয় তাহলে তখন তা আদায় করবে। আল্লাহু আলাম।
*উত্তর প্রদানে:*
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার.ksa