ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রে নারীর অধিকার

নারী পুরুষ উভয়েই আল্লাহ’র সৃষ্টি, মানব সমাজের অস্তিত্বের জন্য উভয়েরই প্রয়োজন অপরিহার্য। তাই মানুষ হিসাবে নারী এবং পুরুষ দু’জনই আল্লাহ’র নিকট সমান গুরুত্বপূর্ণ। দু’জনকেই আল্লাহ দিয়েছেন একই ধরনের মানবিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্য। দু’জনেরই রয়েছে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, দুঃখ-কষ্ট এবং আনন্দের অনুভূতি। রয়েছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সমান অধিকার। আল্লাহ কুরআনে বলছেন,

 هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا

“তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ হতে সৃষ্টি করছেন এবং সেই মানুষ হতেই সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া যেন সে তার নিকট হতে প্রশান্তি লাভ করতে পারে……….(সূরা আরাফ : ১৮৯)।

আধুনিক সভ্যতা যেখানে মাত্র গত দেড়শ বছর যাবত নারীর অধিকার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে, সেখানে এখন থেকে প্রায় চৌদ্দ’শ বছর আগে পুরুষের মতোই ইসলাম নারীকে দিয়েছে সুনির্দিষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার।

ইসলামে নারীর সামাজিক অধিকার :
ইসলাম সমাজে নারীর প্রতি পক্ষপাতহীন এবং ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গীর অবতারনা করেছে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যার একটি কন্যা সন্তান আছে এবং সে তাকে জীবন্ত কবর দেয়নি, তাকে নিগৃহীত করেনি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর প্রাধান্য দেয়নি, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৫৭)। এছাড়াও একটি পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে সামাজিক ভাবে ইসলাম নারীকে দিয়েছে বিভিন্ন অধিকার।

১. বিবাহ ও তত্সংক্রান্ত অধিকার :
বিবাহ মানব জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মূলতঃ বিবাহ এমন এক চুক্তি যার মাধ্যমে মানবজাতির বংশরক্ষা, মানুষের স্বাভাবিক জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং সর্বোপরি নারী-পুরুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরী হয়। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, এই শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ সহাবস্থান তখনই সম্ভব যখন নারী পুরুষের সম্পর্ক হবে পারস্পারিক সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার। এজন্যই ইসলামে নারীকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করা বা দেয়া সম্পূর্ন নিষেধ। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, “একজন বিধবা নারীর সাথে পরামর্শ করা ব্যতীত তাকে বিবাহ দেয়া উচিত নয় এবং একজন কুমারী নারীর অনুমতি ছাড়াও তার বিবাহ দেয়া উচিত নয়। (সহীহ বুখারী, ৭ম খন্ড)। এছাড়াও খানসা বিনতে খিদাম আল আনসারীয়া কর্তৃক বর্ণিত যে, বিধবা অবস্থায় তার বাবা বিয়ে দিয়েছিলেন যা ছিল তার খুবই অপছন্দ। অত:পর তিনি রাসূল (সা)-এর নিকট গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) তার বিবাহ বাতিল ঘোষণা করলেন। (সহীহ বুখারী, ৭ম খন্ড)।
এছাড়াও স্বামী নির্বাচনে নারীর রয়েছে পূর্ণ স্বাধীনতা। নিজের স্বামী সে নিজেই নির্বাচন করতে পারে এবং এমনকি পছন্দ মতো পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাবও পাঠাতে পারে।

২. স্বামী-স্ত্রীর অধিকার :
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের উপর অধিকার খুবই সুস্পষ্ট এবং মানব প্রকৃতির সাথে সম্পূর্ণ ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও শারীরবৃত্তিক এবং মানবিক দিক থেকে উভয়েরই রয়েছে সমান অধিকার। কিন্তু দায়িত্ব এবং নেতৃত্বের দিক থেকে আল্লাহ তাআলা পুরুষকে নারীর উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এটি মানুষের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং একটি সুশৃংখল সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ
“নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন তাদের উপর আছে পুরুষদের। কিছু পুরুষদের রয়েছে নারীর উপর মর্যাদা। (সূরা বাকারাহ : ২২৮)।
কিন্তু এই প্রাধান্য শুধুমাত্র দায়িত্বপালন, নিরাপত্তাদান এবং পরিচালনার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। কারন, প্রকৃতিগত ভাবে আল্লাহ নারীকে দূর্বল করে সৃষ্টি করায় পুরুষের জন্য নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা পুরুষকে আইনগত দিক থেকে কোন সুবিধাজনক অবস্থান দেয়। এছাড়াও পরিবারের প্রধান হিসাবে পুরুষকে স্বেচ্ছাচারী হবার কোন সুযোগও ইসলাম দেয়নি। বরং যে কোন পারিবারিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইসলাম সবসময়ই একে অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার তাগিদ দিয়েছে। এছাড়াও স্ত্রীর মৌলিক অধিকার পূরণের পাশাপাশি কোরআন এবং হাদীসে স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সদয়, সহনশীল এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরনের জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا [٤:١٩]
“………..তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে অবস্থান কর। যদি তাদের কোনও কিছু তোমাদের অপছন্দ হয়, তবে এমনও হতে পারে তোমরা যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তারই মাঝে নিহিত রেখেছেন কল্যাণ”। (সূরা আন-নিসা : ১৯)
স্ত্রী হিসাবে ইসলাম নারীকে দিয়েছে যথোপযোগী মর্যাদা এবং অধিকার। মুয়াবিয়া আল কুসায়রি (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, “আমি একদিন আল্লাহর রাসূল (সা)-এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমাদের স্ত্রীদের আমাদের উপর কি অধিকার রয়েছে ? তিনি উত্তর দিলেন, “তোমরা যা খাবে তাদেরকে তাই খেতে দিবে। তোমরা যা পরবে তাদেরকে তাই পরিধান করাবে। আর তাদেরকে প্রহার করোনা এবং তিরষ্কার করোনা। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নম্বর-২১৩৯)।
অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, “শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয অসম্মানজনক”। (তিরমিযী)।

৩. বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার:
ইসলাম নারীকে দিয়েছে প্রয়োজনে তালাক প্রদানের অধিকার। বিভিন্ন কারনে একজন নারী তার স্বামী কাছ থেকে বিচ্ছেদ কামনা করতে পারে। যেমন :

• স্বামী যদি যৌন অক্ষমতা
• বৈবাহিক চুক্তিতে যদি নারীর তালাক প্রদানের অধিকার উলেখিত থাকে।
• স্বামী যদি এমন কোনও মারাত্মক ব্যাধি থাকে যার দ্বারা স্ত্রী নিজের ক্ষতি হবার আশংকা করে।
• সঙ্গতি থাকা অবস্থায়ও স্বামী যদি স্ত্রীর ভরনপোষণের ব্যবস্থা না করে।
• স্বামী যদি মানসিক রোগী হয়।
• যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, স্বামী নিখোঁজ কিংবা অবর্তমান আবার সে স্ত্রী ভরণপোষণের কোন ব্যবস্থা করে যায় নি। অথবা স্বামী অধিকৃত সম্পত্তি থেকেও ভরনপোষন পাবার কোন সম্ভাবনা নেই।
• যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয় তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর নিকট থেকে বিচ্ছেদ কামনা করতে পারে। প্রাথমিক ভাবে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের পক্ষ থেকে দু’জন বিচারক নিয়োগ করা হয়। যদি কোন শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদ কার্যকরী করা হয়।

৪. জ্ঞানার্জনের অধিকার:
নারীর রয়েছে শিক্ষাদীক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের পূর্ণ অধিকার। নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী সে অনুমোদিত যে কোন শিক্ষা গ্রহন করতে পারে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নারী পুরুষের জন্য ফরয।”
নারীর অর্থনৈতিক অধিকার:

একটি পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থোপার্জনের ভার ইসলাম মূলতঃ দিয়েছে পুরুষকে। আর নারীকে দেয়া হয়েছে পরিবারের আভ্যন্তরীন শৃংখলা এবং সন্তান লালন-পালনের গুরু দায়িত্ব। কিন্তু তার অর্থ এটাও নয় যে, নারী ঘরের বাইরে কাজ করতে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবে না। পুরুষের মতোই একজন নারীর রয়েছে ইসলামের সীমার মধ্যে স্বাধীন ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের পূর্ণ অধিকার। নারী তার মূল দায়িত্ব অবহেলা না করে, ব্যবসা-বানিজ্য সহ সমাজের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করতে পারে। এছাড়াও ইসলাম নারীকে দিয়েছে বিভিন্ন প্রকারের অর্থনৈতিক অধিকার।

১. ভরনপোষণের অধিকার: নারীর রয়েছে স্বামীর নিকট থেকে ভরনপোষণ পাবার পূর্ণ অধিকার। ইসলামী রাস্ট্রের আইনানুযায়ী স্ত্রী যদি সম্পদশালীই হোক না কেন তার এবং তার সন্তানের ভরণপোষণের ভার শুধুমাত্র স্বামীর । কারণ কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ

“পুরুষ নারীর পরিচালক, কারণ আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং পুরুষ তার ধনসম্পদ হতে ব্যয় করে। (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৩৪)।

২. উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে অধিকার: ইসলাম নারীর উত্তরাধিকার প্রাপ্তির পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়েছে। পুরুষদের মতো তারও রয়েছে নিকটাত্মীয়দের সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট অধিকার। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ ۚ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا [٤:٧]

“পুরুষদের যেমন পিতামাতা এবং নিকটাত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অংশ রয়েছে তেমনি নারীদেরও রয়েছে তার পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে প্রাপ্ত অংশ। চাই তা কম হোক কিংবা বেশী হোক, তা এক নির্দিষ্ট অংশ।” (সুরা নিসা ঃ ৭)

যে কোন ক্ষেত্রেই নারীর উত্তরাধিকারে প্রাপ্ত সম্পদ হবে পুরুষের অর্ধেক। সম্পদের এই বন্টন আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক পুরুষ ও নারীর উপর আরোপিত দায়িত্বের সাথে সম্পূর্ণ ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে তার স্ত্রী-সন্তান এবং ক্ষেত্র বিশেষে তার দরিদ্র আত্মীয়স্বজনের (বিশেষতঃ যারা নারী) ভরনপোষনের দায়িত্ব। স্ত্রী যতই সম্পদশালী কিংবা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হোক না কেন এই দায়িত্ব থেকে পুরুষের নিষ্কৃতি নেই।

৩. বিবাহকালীন মোহরানার অধিকার : বিবাহকালীন সময়ে ইসলাম নারীর জন্য সম্মানসূচক মোহরানা নির্ধারিত করেছে। এই মোহরানা আদায় করতে একজন পুরুষ দায়বদ্ধ। এই মোহরানা হচ্ছে স্বামীর পক্ষ হতে স্ত্রীর প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসার নির্দেশক। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]

“আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের প্রাপ্য মোহরানা সন্তুষ্ট চিত্তে আদায় কর। অবশ্য তারা যদি নিজেরা নিজেদের খুশীতে এর কিছু অংশ মাফ করে দেয় তবে তোমরা তা সানন্দে ভোগ করতে পার।” (সুরা নিসা ঃ ৪)

৪. মালিকানার অধিকার : উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ কিংবা নিজের উপার্জিত সম্পদে নারীর রয়েছে পূর্ণ মালিকানা। নিজের উপার্জিত সম্পদ বা প্রাপ্ত সম্পদ সে যেভাবে ইচ্ছা ব্যয় করতে পারে। এ ব্যাপারে তার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে ।

নারীর রাজনৈতিক অধিকার :
নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আজকের অধিকার। দিনে যাকে ‘রাজনৈতিক অধিকার’ বলা হয় তৎকালীন ইসলামী সমাজে পুরুষের মতোই নারীরও এই অধিকার ছিল পূর্ণ মাত্রায় স্বীকৃত। সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও রয়েছে সমাজে আল্লাহ প্রদত্ত শাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে তাই ইসলাম নারীকেও তার সামর্থ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক অঙ্গনে অংশ গ্রহনের অধিকার দিয়েছে। কুরআন এবং হাদীসে এরকম অসংখ্য উদাহরন রয়েছে যেখানে আমরা নারীকে রাজনীতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে দেখতে পাই। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে নারীরা রাসুলুল্লাহর (সাঃ) সাথে বির্তকেও অংশ নিয়েছে।
পুরুষের পাশাপাশি নারীরও ইসলামী রাষ্ট্রে রয়েছে সমাজের মানুষকে সৎ কাজে আদেশ করা এবং অসৎ কাজে নিষেধ করার পূর্ণ অধিকার। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ

“ মুমিন নারী এবং মুমিন পুরুষ একে অপরের বন্ধু। তারা একে অপরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে……….।” ( সুরা তওবা ঃ ৭১ )

ইসলামী রাষ্ট্রে নারীর রয়েছে শাসকের ভুল সংশোধনের বা শাসককে জবাবদিহি করার অধিকার। ওমর ইবনে খাত্তাবের (রা.) সময় একজন সাধারন নারী মোহরানা সংক্রান্ত বিষয়ে জনসম্মুখে ওমরের (রা.) সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল। ওমর (রা.) বলেছিলেন, “এই মহিলা ঠিক আর ওমর ভুল।”
নারীর রয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করার অধিকার। নারীদের রয়েছে মজলিশে শুরার সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হবার অধিকার। আয়েশা (রা.) ওমর (রা.) এর খিলাফতের সময় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন।
নারীর আইনগত অধিকার :
ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে নারী পুরুষ উভয়েই সমান। তাই ইসলাম শুধু নারীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি, বরং ইসলামী সমাজে নারী আল্লাহ প্রদত্ত যে কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে তার রয়েছে আইনের সাহায্যে তা আদায় করার অধিকার। নারী যদি দাম্পত্য সহিংসতা, পারিবারিক নির্যাতন বা কোন পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে তার রয়েছে আইনগত সাহায্য পাবার পূর্ণ অধিকার।
নারীর সম্মান রক্ষার্থে ইসলাম সচ্চরিত্রা নারীর উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়াকে ভয়ানক অপরাধ হিসাবে গণ্য করে। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন,

إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ [٢٤:٢٣]

“যারা সতী, নিরীহ ও মুমিন নারীর উপর অপবাদ আরোপ করে তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সুরা নুর ঃ ২৩)
তাই কোনও মুমিন নারীর উপর মিথ্যারোপ করা হলে সে আইনের সাহায্যে দোষী ব্যক্তিকে সাজা দেয়ার অধিকার রাখে। ইসলাম যেহেতু নারীকে সম্মান হিসাবে গণ্য করে, তাই যে কোনও স্থানে যে কোনও ভাবে তাকে উত্ত্যক্ত করা হলে সে আইনের সাহায্য পাবার অধিকার রাখে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88