গৃহিণী হওয়ার প্রতি নারীদের কেন এতো ‘অস্বস্তি’?

আমি বিয়ে নিয়ে একদল অবিবাহিত নারীর সাথে কথা বলছিলাম। তাদের বয়স হবে বিশ থেকে ত্রিশের কোঠায়।
এক বোন বললো, সে একইসাথে বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে এবং চাকরির চেষ্টা করছে৷ সে চাকরি খুঁজছে কারণ নিজে টাকা আয় করে সে ‘স্বাধীন’ থাকতে চায়। সে আরো বললো, বিয়ের পর সে তার নিজের মতো থাকতে চায় এবং সে মনে করে নিজে টাকা আয় করেই তা হাসিল করা সম্ভব। স্বামীর যদি অনেক টাকাও থাকে, তবুও পুরোপুরি স্বামীর উপর নির্ভর করা হবে, তার ভাষায় তার জন্য ‘অস্বস্তি’র বিষয়।

এর আগেও একই ধ্যান ধারণার আরো মডার্ণ মুসলিম নারীদের থেকে কাটায় কাটায় একই কথা শুনেছি। তাদের সবারই সেই একই ‘অস্বস্তি’।
সংসারের প্রথাগত দায়িত্ব পালন করতে নারীদের কেন এই অনীহা? নারীরা নিজেদের পরিবার, ঘর-সংসার আর সন্তানদের দেখভাল করবে আর পুরুষ করবে আয় উপার্জন ভরণ পোষণ – এটা মেনে নেয়া কেন এতো অস্বস্তিকর?
আমাদের এই অস্বস্তি কোথা থেকে আসলো? মনের মধ্যে এই অবিশ্বাস, এই সন্দেহ, এই উদ্বেগ কবে থেকে?
আমি বুঝতে পারছি এর ব্যাখা অনেক ভাবেই দেয়া যায় এবং হজম করা কঠিন হলেও আমি এগুলো নিয়েই কথা বলতে চাই।
সন্দেহ নেই, বাস্তবে এমন কিছু উদাহরণ দেখতে পাবো যেখানে পুরুষ ভরণ-পোষণকারী হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালনে গুরুতরভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলে নারীদের বাধ্য হয়ে সেই দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে। কিছু স্বামী এবং/ অথবা বাবাদের ভুল থেকে তাদের স্ত্রী, কন্যা অথবা বোনদের মধ্যে পুরুষদের প্রতি অনাস্থা জন্ম নিচ্ছে। তাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে পুরুষ মাত্রই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এবং বিশ্বাস ভংগকারী। ইসলামী মানদণ্ডে এমন পুরুষেরা অভিভাবক, স্বামী এবং বাবা হিসেবে ব্যর্থ। এমন দুর্বল, অনুশাসনহীন, অযোগ্য পুরুষেরা তাদের নারীদের হতাশ করেছে।
এটাই কি তবে মূল কারণ?
এমন ঘটনা কতই বা ঘটে থাকে? মুসলিম পুরুষদের শতকরা কত অংশ এমন ব্যর্থ? অধিকাংশ পুরুষই কি এমন? শতকরা অর্ধেক? এক-চতুর্থাংশ? ৫%?
অথচ আমরা নারীরা এমনভাবে এই বিষয়টা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে জল্পনা কল্পনা রটাই, যেন মনে হবে ৯৯.৩% পুরুষই এভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
স্বীকার করছি, দায়িত্বজ্ঞানহীন পুরুষ সমাজে অবশ্যই আছে, তবে তার চেয়েও বেশি আছে নারীদের কল্পনার বাড়াবাড়িতে।
কারণ এই ঘটনাগুলো এমনভাবে বার বার বলা হয় তা এক পর্যায়ে সত্যের সাথে রঙমাখা গল্পে রুপ নেয়৷ নারীরা অন্যের সংসারের ঘটনাগুলো থেকে নিজেদের মতো করে শিক্ষা নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে চলে আসে, যদিও তাদের জন্য এগুলো ছিল শুধুই শোনা গল্প এবং তারা বাস্তবে এমন ঘটনা নিজেদের চোখে কখনোই দেখেনি।
এখানে আরেকটি প্রভাবক হলো উদারপন্থী বা লিবারেল মতবাদের দীক্ষা এবং নারীবাদের মগজ ধোলাই। চলুন না, যা সত্যি আমরা তাই বলি!
নারীদের মাথায় ঢুকানো হচ্ছে এই গাঁ-জাখুরি বুলি : “নারী, তুমি স্বাধীন। পুরুষদের বিশ্বাস করা যাবেনা! হয়তো দেখা যাবে তোমার স্বামী একটা কিপ্টের জাসু! অথবা একজন অলস উদ্যমহীন বেকার! অথবা সে ঠকিয়ে বাচ্চাসহ তোমাকে ফেলে চলে যাবে! অন্য মেয়ের হাত ধরে ভেগে যাবে! সে হয়তোবা তোমাকে পশুর মতো নির্যাতন করবে! অপমান করবে! অথবা কি হবে যদি সে মারা যায়?! কি হবে যদি কোনো কারণ ছাড়া তোমাকে তালাক দিয়ে দেয়?! কতশত ভয়ানক পরিনতি! এভাবে একজন বিশ্বাসের অযোগ্য কারোর উপর নির্ভর না করে নারী তুমি নিজে আয় করো যাতে তুমি স্বাধীন থাকতে পারো! নারী, তুমি যেকোনো কিছুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখো! বলা তো যায়না, কখন কি হয়!”
কি ভয় জাগানিয়া কথাবার্তা!
সন্দেহ, অবিশ্বাস ও অনিরাপত্তার বীজ বপনকারী!
এক্ষেত্রে মরিয়া হয়ে শুধু নিজেই প্রচেষ্টা করে যাওয়া যাতে তাওয়াক্কুল তথা আল্লহর উপর আস্থা স্থাপনের কোনো নাম-গন্ধ নেই! আমরা যেন তাওয়াক্কুল এবং রিযিকের সেই হাদীস ভুলে গিয়েছি:
حديث عمر ، قال: سمعت رسول الله ﷺ يقول: “لو أنكم تتوكلون على الله حق توكله لرزقكم كما يرزق الطير، تغدو خماصاً وتروح بطاناً.”
“তোমরা যদি আল্লহর উপর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল করো তবে আল্লহ তোমাদের জন্য এমনভাবে রিযিকের ব্যবস্থা করবেন যেমনভাবে তিনি পাখিদের জন্য করেন৷ তারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাদের নীড় থেকে বের হয় এবং ভরা পেটে ফিরে আসে।”
কিন্ত আধুনিক যুগের মগজ ধোলাই নারীদের শুরু থেকেই খারাপ কিছুর প্রত্যাশা করা শেখাচ্ছে, কিছু ঘটার আগেই সবচেয়ে মন্দ পরিণতিটা ধরে নিতে বলছে।
যার ফলে স্বামীদের কিছু করার আগেই পর্যুদস্ত করে দেয়া হচ্ছে।
যু-দ্ধের ভাষায় একে বলে অগ্রিম আ-ক্রমণ (Preemptive strike)।
এমন পরিস্থিতিতে সংসার কিভাবে টিকে থাকবে?
সবচেয়ে কার্যকরী ও সুষ্ঠু দায়িত্বের বন্টন সম্ভব উভয় লিঙগের মধ্যে কাজের ভারসাম্যে।
নারী পুরুষ উভয়েরই এমন কিছু আছে যা আরেকজনের নেই। নিজের ভালোটা অপরের জন্য কাজে লাগানোর মাধ্যমে নারী পুরুষ নিজেদের, তাদের পরিবার ও সমাজের উপকার করে থাকে।
অতীতের সমাজ থেকেও আমরা এমনি চিত্র দেখতে পাই।
পুরুষ তাদের দৈহিক গঠন আর শক্তিবলের ফলে কঠিন কাজও অনেক সময় ধরে করার ক্ষমতা রাখে। একে আমরা বলতে পারি উদ্বৃত্ত শ্রম।
নারীরাই একমাত্র সন্তান ধারণে সক্ষম। একে আমরা বলি প্রজনন ক্ষমতা।
সংসারে পুরুষ তার এই উদ্বৃত্ত শ্রম ও নারী তার প্রজনন ক্ষমতার বিনিময়ে এমন একটি প্রক্রিয়া গড়ে তোলে যা একে অপরের মংগল সাধন করে এবং গড়ে তোলে পরিবার। এই প্রক্রিয়ায় উভয় লিঙগের স্বভাব, আল্লহ প্রদত্ত ক্ষমতা ও মনস্তত্ত্ব দারুণভাবে খাপ খেয়ে যায়৷
এভাবে নারী পুরুষ উভয়েই তাদের নিজেদের সহজাত গুনাগুণ ও কাজের প্রতি পূর্ণভাবে মনোযোগী হতে পারে এবং সুন্দরমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে৷
এটি সংসারকে করে মসৃণ, নির্বিঘ্ন ও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কিন্তু বর্তমানে নারীদের মাঝে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং তাদের একইসাথে পুরুষদের কাজ করতে প্ররোচিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ একই সময়ে তাদের উদ্বৃত্ত শ্রম ও প্রজননের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় যেকোনো মানুষের জন্য তা সাধ্যের বাইরে।
অথচ নারী, এই সাধ্যাতীত কাজ করার জন্য তোমাকে বাধ্য করা হচ্ছে।
‘অস্বস্তি’র যেই অনুভূতি তোমার মাঝে ঢুকানো হয়েছে তা তোমার জন্য বিষ! তোমার জন্য এটি এক বহিরাগত অচেনা অনুভূতি যা নারীবাদ তোমার মাঝে জোর করে ঢুকিয়ে দিচ্ছে! সুযোগ থাকতেই এ ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসো!
একজন নারী হিসেবে আমাদের উত্তম স্বামী নির্বাচন করতে হবে (অভিভাবকের বিচার-বিবেচনা, ইস্তিখারা এবং পরামর্শ দ্বারা)। এরপর আমাদের প্রয়োজন স্বামীর উপর আস্থা করতে শেখা৷
আর অবশ্যই সমীকরণের অপর পাশে অবস্থিত আমাদের পুরুষদের হতে হবে তাদের উপর নির্ভরশীলদের জন্য ইসলামী মানদণ্ড অনুযায়ী উত্তম অভিভাবক, স্বামী এবং বাবা৷ তাদের আল্লহর আদেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। মাশাআল্লাহ! অধিকাংশ মুসলিম পুরুষ এ ব্যাপারে সচেতন।
যখন পুরুষ তাদের পৌরুষ ভূমিকা শক্তভাবে পালন করবে এবং নারীও ‘অস্বস্তি’তে না ভুগে তাদের নারীত্বকে কাজে লাগাবে, তখনই আমাদের সংসার জীবন সুন্দর ও শান্তির হবে ইনশাআল্লহ।
– উম্মে খালিদ
▬▬▬▬▬▬▬▬▬
মূলত নারীদের ডাবল শ্রম দিতে বাধ্য করা হচ্ছে নারীদেরই অজান্তে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের লিঙ্গভেদে দায়িত্ব দিয়েছেন। Gender Role নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নারীরা ঘর সামলাবে আর পুরুষেরা রিযিক অন্বেষণ করবে। এজন্যই পুরুষের আবেগ নারীদের তুলনায় কম। আর নারীরাই শুধু সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নারী ও পুরুষ একে অপরের প্রতিযোগী নয়। একে অপরের পরিপূরক। নারী-পুরুষের শারীরিক, মানসিক গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। যার কারণে একজম যে কাজ সাচ্ছন্দ্যে করত্ব পারে, আরেকজন সেটা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট ও চাপ অনুভব করে। নারী ও পুরুষের তুলনা সম্ভব না। দুজন দুজনের জায়গায় স্বতন্ত্র।
পুঁ-জিবাদীরা মুনাফা বেশি করার জন্য কৌশলে নারীদেরকে চাকরিক্ষেত্রে এনেছে। ভাবুন, কেন নারী হয়ে আপনি নিজের দায়িত্বের সাথে পুরুষের দায়িত্ব (রিযিক অন্বষণের দায়িত্ব) পালন করবেন? নিজের সন্তানকে ছেড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাহিরে কষ্ট করবেন?
আপনার স্বামী দুর্ভাগ্যক্রমে দায়িত্বহীন হলে আপনি তো আপনার পুত্র সন্তানকে শিক্ষা দিতে পারেন যাতে সে এমন না হয়, মেয়ে সন্তানের জন্য দু’আ করতে পারেন যাতে আল্লাহ তাকে দায়িত্ববান স্বামী যেন মিলিয়ে দেন। যেন আপনার মেয়ে আপনার মতো কষ্ট অনুভব না করে। অথচ আমরা সেটা না করে চাকরি করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পরি।
পুঁ-জিবাদীদের এজেন্ডাও এক্ষেত্রে নারীদের উস্কে দিয়েছে। যে নারী সমাজসংস্কারে ভূমিকা রাখে তাকে উত্তম প্রজন্ম গঠনের শিক্ষা না দিয়ে দিয়েছে চাকরি করার শিক্ষা, পুঁ-জিবাদের দা-সী হওয়ার শিক্ষা।
উপমহাদেশের কিছুসংখ্যক পুরুষের দায়িত্বহীনতার ফায়দা নিয়েছে তারা। ইসলামে চাকরি শর্তসাপেক্ষে জায়েয। এমন নারীদের জন্য জায়েয যাদের দায়িত্ব নেওয়ার কেউ নেই। অসহায় নারীদের জন্য জায়েয। আর নারীদের কল্যাণে কিছু ক্ষেত্রে যেমনঃ ডাক্তার, শিক্ষিকা, নার্স প্রভৃতি ক্ষেত্রে জায়েয। তাও এক্ষেত্রে এমন পরিবেশে চাকরি করতে হবে যেখানে পুরুষের আনাগোনা নেই।
ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারীরা থাকবে সম্ভ্রান্ত। কারো স্বামী দায়িত্বহীন হলে তার উচিত দু’আ করা। আল্লাহ আমাদের তার নিকট চাইতে বলেছেন। কেউ যদি দু’আ না করে হারাম পরিবেশে চাকরি করতে চলে যান এর জবাবও আপনাকে দিতে হবে। পুরুষের জবাব পুরুষ দিবে আর নারীর জবাব নারী!
নারীরা যদি এখন না বুঝে তবে, পরে এমন দায়িত্বহীন পুরুষের জন্ম হবে, যারা নারীর ভরণপোষণের দায়িত্বও নিতে চাবে না। যারা চাবে না তার স্ত্রী তার ওপর নির্ভরশীল হোক। চাবে স্ত্রী যেন নিজের খরচ নিজের টাকা দিয়ে চালায় যেহেতু সে চাকরি করছেই! একই সাথে নারীকে সংসার ও রিযিকে ঘানি টানতে বাধ্য করবে। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশেরই একজন ভাই এরূপ দাবি করেছেন। এটা পা-শ্চা-ত্য অমুসলিম আধুনিকতার দর্শন, সমতা ও স্বাধীনতার নীতি।
অথচ নির্ভরশীল হওয়াটাই প্রকৃতির নিয়ম। আল্লাহ আমাদের এভাবেই বানিয়েছেন। নারীরা এখনও আসল ষড়যন্ত্র না বুঝলে তাদের মারাত্মক খেসারত দিতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan