সলাতের ভেতর যে ৭টি স্থানে দু’আহ করা যায়

আমরা অনেকেই জানি, সলাতের সিজদাতে ও সালাম ফিরানোর আগে দুয়া করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সালাতে মোট কতগুলো জায়গায় দুয়া করা যায়? সে গুলো কি কি? : : : নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে মোট ৭টি স্থানে দুয়া করতেন।

সালাতে যেই ৭টি স্থানে দুয়া করা যায়ঃ

১. সানাঃ তাকবীর তাহরীমার আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধার পরে, সলাত শুরুর দিকে সানা হিসেবে দু’আহ পড়া যায়। এখানে নিজের পছন্দ মতো যে কোন দু’আহ করা যায় না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দু’আহ গুলো করেছেন শুধু সে দু’আহ গুলোই করা যাবে। আর এখানে দু’আহটা আরবীতেই করতে হবে।

প্রচলিত ভাষায় আমরা যাকে সানা বলি, সহীহ হাদীসে এখানে অন্য আরো সানা আছে, যে সানাতে দু’আহ আছে। সানা হিসেবে আমরা যেটা পড়ি এর পরিবর্তে ঐ দু’আহর সানা পড়া যাবে।

অনেক ‘আলিম সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত সানার ঐ দুয়াটাকে বেশি ভালো বলে মত দিয়েছেন। দুয়াটা হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْني مِنْ خَطَايَايَ، بِالثَّلْجِ وَالْماءِ وَالْبَرَدِ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বাইয়ি’দ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লা-হুম্মা নাক্কিনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ দানাস। আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্‌সালজি ওয়াল মা-’ই ওয়াল বারাদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার এবং আমার গুনাহসমূহের মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করুন যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপসমূহ বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড দ্বারা ধৌত করে দিন।” বুখারীঃ ৭৪৪, মুসলিমঃ ৫৯৮।

২. দু’আহ কুনুতঃ কিরাত শেষ করে রুকুতে যাবার আগে দু’আহ কুনুত পড়া সুন্নাহ। বিতর সলাতে ও সাময়িকভাবে ফজরের ফরয সালাতেও (মুসলিমদের বিপদ আপদ থেকে বাঁচার জন্য, অত্যাচারী কাফেরদের বদদু’আহ করার জন্য অথবা উম্মাহর বিশেষ প্রয়োজন এমন সময়ে) দু’আহ কুনুত পড়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। সবচাইতে সহীহ ও অর্থের দিক থেকে বেশি সুন্দর যে দু’আহ কুনুত সেটা হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ؛ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، [وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ]، تَبارَكْتَ رَبَّنا وَتَعَالَيْتَ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদাইতা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা ওয়াবা-রিক লী ফীমা আ‘ত্বাইতা ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা ফাইন্নাকা তাক্ব‌্দ্বী ওয়ালা ইউক্ব্‌দ্বা ‘আলাইকা। ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাও ওয়া-লাইতা, [ওয়ালা ইয়া‘ইয্যু মান ‘আ-দাইতা।] তাবা-রক্‌তা রব্বানা ওয়া তা‘আ-লাইতা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে হেদায়াত করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও হেদায়াত দিন, আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও নিরাপত্তা দিন, আপনি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ করুন, আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন। আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। কারণ আপনিই চূড়ান্ত ফয়সালা দেন, আপনার বিপরীতে ফয়সালা দেওয়া হয় না। আপনি যার সাথে বন্ধুত্ব করেছেন সে অবশ্যই অপমানিত হয় না [এবং আপনি যার সাথে শত্রুতা করেছেন সে সম্মানিত হয় না।] আপনি বরকতপূর্ণ হে আমাদের রব্ব! আর আপনি সুউচ্চ-সুমহান।”

সুনান গ্রন্থকারগণ, আহমাদ, দারামী ও বাইহাকী এ হাদীসটি সংকলন করেছেন। আবু দাউদঃ ১৪২৫, তিরমিযীঃ ৪৬৪, নাসাঈঃ ১৭৪৪, ইবন মাজাহঃ ১১৭৮, আহমাদঃ ১৭১৮, দারামীঃ ১৫৯২, হাকিমঃ ৩/১৭২, বাইহাকীঃ ২/২০৯।

( আর দু’ ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ বাইহাকীর। শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহঃ ইরওয়াউল গালীলঃ ২/১৭২।)

৩. রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েঃ রুকু থেকে দাঁড়িয়ে নিজের পছন্দমতো যেকোন দুয়া করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দু’আহগুলো করেছেন শুধু সেই দু’আহগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দু’আহ আরবীতেই করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন দুয়া করতেন।

৪. রুকুতে দুয়া করা যায়ঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুর মাঝেও দুয়া করতেন। তবে রুকুতে নিজে থেকে কোন দুয়া করা নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুতে যেই দুয়া করেছেন সেই দুয়া করা যাবে। রুকুতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়া করেছেন তাহলঃ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আ’নহা বলেন যেঃ সুরা নাসর নাযিল হওয়ার পর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনো এই দুয়া পড়া ছাড়া সালাত পড়তে দেখিনি।

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ সুবহা’নাকা আল্লা-হুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহা’মদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলী।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের রব্ব। তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করি, তোমার প্রশংসা সহকারে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

এই দুয়া রুকু এবং সিজদা দুই জায়গাতেই পড়া যায়, ১/৩ করে। এই দুয়া পড়ার আগে তাসবীহগুলো পড়ে নিতে হবে। দুয়াটার রেফারেন্স হলোঃ সহীহ মুসলিম ৯৬৯।

৫. সিজদাতে দু’আহ করাঃ

প্রশ্নঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সিজদাতে বেশি বেশি দু’আহ করতে বলেছেন। আমি আরবী জানিনা, আমি কি নামাযের মধ্যে সিজদায় নিজের মাতৃভাষায় (বাংলা/ইংরেজী) দুয়া করতে পারবো?

উত্তরঃ বিষয়টি নিয়ে আলেমদের মধ্যে মত পার্থক্য হয়েছে, তবে যেটা বেশি সঠিক তা হলোঃ হ্যা, কেউ যদি আরবী না জানে তাহলে সে দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোন কল্যানের জন্য সিজদাতে নিজের ভাষায় দু’আহ করতে পারবে।

এই ক্ষেত্রে দুটি শর্ত রয়েছে – ১. যে যিকির ও দু’আহগুলো করা ফরয সেগুলো আরবীতেই করতে হবে যেমন “সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’লা” –এই যিকির আরবীতেই করতে হবে।

২. যেই দুয়া করবেন সেটা আপনি আরবীতে জানেন না। যেমন কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন আর তিনি জানেন আস্তাগফিরুল্লাহ (হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করো), তাহলে সেই দু’আহ তাকে আরবীতেই করতে হবে। কিন্তু তিনি যদি ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতে চান কিন্তু তিনি জানেন না আরবীতে এই কথা কিভাবে বলতে হবে, তাহলে তিনি বাংলায় এইভাবে বলতে পারবেন, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে ঋণ থেকে মুক্ত করো’। এই ব্যাপারে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শায়খ আসিম আল-হাকিম।

বিঃদ্রঃ সিজদা হলো দুয়া কবুলের সবচেয়ে উত্তম সময়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “বান্দা যখন সিজদা করে সে তখন তার রব্বের সবচেয়ে নিকটে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশি বেশি দুয়া করো” অন্য হাদীসে এসেছে, “তোমরা সিজদাতে দুয়া করতে চেষ্টা করো, আশা করা যায় তোমাদের দুয়া কবুল করা হবে।” মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪। .

প্রশ্নঃ আমি কোন সিজাদাতে দুয়া করবো, নামাযের মধ্যে সিজদাতে নাকি আলাদা সিজদা করতে হবে দুয়া করার জন্য? উত্তরঃ যে কোনো নামাযের মধ্যে সিজদাতে দুয়া করা যাবে। দুয়া করার জন্য নামায ব্যতীত শুধু সিজদা করা জায়েজ নয়। শুধুমাত্র তেলাওয়াতের সিজদাহ ও শুকরিয়ার সিজদাহ ছাড়া, নামায ব্যতীত শুধু সিজদাহ করা বৈধ নয়। .

প্রশ্নঃ ফরয নামাযে দু’আহ করতে পারবো নাকি সুন্নত/নফল নামাযের সিজদাতে দু’আহ করতে হবে?

উত্তরঃ যে কোনো নামাযের সিজদাতে দু’আহ করা যাবে, চাই সেটা ফরয হোক আর নফল সুন্নত হোক, কারণ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমভাবে সিজদাতে দু’আহ করতে বলেছেন, তিনি শুধুমাত্র নফল সুন্নতে করার জন্য আর ফরয সলাতে না করার জন্য – এইরকম ভাগ করে দিয়ে যান নি। তাই, এই কথা বলার কারো অধিকার নাই, ফরয নামাযে করা যাবেনা। যে এইরকম করবে সে কোনো দলীল ছাড়াই শরীয়ত বানানোর দায়ে অভিযুক্ত হবে। (শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বাজ এই ফতোয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন)। .

প্রশ্নঃ কিভাবে দুয়া করতে হবে?

আপনি স্বাভাবিকভাবে সলাত পড়বেন, সিজদাতে যাবেন, সিজদার তাসবীহগুলো যেমন “সুবহা’না রাব্বিইয়াল আ’লা” ৩/৫/৭ বার অবশ্যই আরবীতে পড়বেন। সিজদার তাসবীহ পড়া হলে আপনি দুয়া করবেন। আরবী জানলে আরবীতে, না জানলে নিজের ভাষাতে। .

প্রশ্নঃ নামাযে দুনিয়াবী কোনো কল্যান প্রার্থনা করা যাবে?

উত্তরঃ হ্যা, যাবে যদিনা সেটা হারাম কোনো কিছু হয়ে থাকে। আমাদের দেশের অনেক হুজুর বলে সলাতে দুনিয়ার কোন কিছু চাইলে সলাত ভেঙ্গে যাবে, এই কথার কোনো দলীল নেই। এটা একটা মনগড়া ফতোয়া। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সলাতের মধ্যে দুনিয়ার কল্যান চেয়েছেন, যেমন ২ সিজদার মাঝখানে তিনি বলতেন “হে আল্লাহ তুমি আমাকে রিযক দান করো”। আর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, দু’আগ করতে তিনি দুনিয়ার কোন কিছু চাইতে না করেন নি। সুতরাং এর পরে কারো ক্ষমতা নেই, না করার। .

প্রশ্নঃ ফরয নামাযে জামাতে দুয়া করা যাবে?

উত্তরঃ হ্যা যাবে, যদি সিজদার তাসবীহ পড়ার পরে ইমাম সাহবে যথেষ্ঠ সময় দেন তাহলে করা যাবে। আর যদি সময় কম থাকে তাহলে আগে সিজদার তাসবীহ পড়তে হবে।

৬. দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায়ঃ এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দু’আহ করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধু সেই দু’আহ করা যাবে। আর এইখানে দুয়াটা আরবীতেই করতে হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুআটি করতেনঃ

رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।

অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর। আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দুয়াটা সহীহ।

( রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তোওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াটা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে।) .

এছাড়া আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”।

হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানির মতে হাদীস সহীহ।

৭. দুয়া মাসুরাঃ তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) ও দুরুদের পরে, সালাম ফিরানোর আগে দুয়া মাসুরা (হাদীসে বর্ণিত দুয়াগুলো) ও নিজের পছন্দমতো দু’আহ করা যায়। ফরয সালাতের শেষ বৈঠকের দু’আহ আল্লাহ বেশি কবুল করেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন দো‘আ সর্বাধিক শোনা (কবুল করা) হয়?’ তিনি বললেন, “রাত্রির শেষভাগে এবং ফরয নামায সমূহের শেষাংশে”। তিরমিযী ৩৪৯৯, ইমাম তিরমিযী ও শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ।

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় দুয়া মাসুরা হচ্ছে ৪টি বিষয় থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়া। কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব, দুনিয়ার ফেতনা ও মৃত্যুর সময়ের ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকার জন্য দুয়া মাসুরাঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এইগুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরয, নফল বা সুন্নত, যেকোনো সালাতে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর আগে এই দুয়া পড়তে বলেছেন।

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ.

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন আ’যাবিল ক্বাবরি ওয়া মিন আ’যাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ’ইয়া ওয়াল্ মামাতি, ওয়ামিন সাররি ফিতনাতিল্ মাসীহি’দ্-দাজ্জাল।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কাবরের আযাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আযাব, এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো। বুখারী ২১০২, মুসলিম ১/৪১২, হিসনুল মুসলিম, পৃষ্ঠা – ৯০।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুয়া মাসুরা হিসেবে এই দুয়াটা পড়তে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। এছাড়া আরো অনেক দুয়া মাসুরা আছে অথবা আরবীতে অন্য দুয়াগুলো এইখানে পড়তে পারবেন ইন শা” আল্লাহ। এছাড়া কুরআন অথবা হাদীসে বর্ণিত অন্য দুয়াগুলো, রাব্বানা আতিনা…রাব্বির হামহুমা কামা…আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল জান্নাতে…এইরকম নিজের জন্য, মাতাপিতার জন্য, যেকোনো মুসলিমের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোন হালাল ও কল্যানকর কিছু চাওয়া যাবে। . . .

মূলঃ আল্লামাহ আল-হাফিজ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওজিয়া রাহিমাহুল্লাহ।

বইয়ের নামঃ “আল্লাহর রাসুল কিভাবে নামায পড়তেন”।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot gacor skybet88 slot online skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot shopeepay slot gacor skybet88 demo slot skybet88