মহানবী (সাঃ) ও দুই বালক খাদেম

হযরত যায়েদ (রাঃ) এবং পুত্র উসামা (রাঃ)

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর প্রিয় পত্মী উম্মুল মুমেনীন বিবি খাদীজার (রাঃ)-এর ক্রীতদাস ছিলেন হযরত জায়েদ বিন হারিসা (রাঃ)। বিবি খাদীজা (রাঃ) রাসূলের সাথে তাঁর শাদী মুবারকের পর যায়েদকে (রাঃ) রাসুলুল্লাহর সেবায় নিয়োগ করেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাকে আজাদ করে দেন।

বালক যায়েদ-বিন হারিছা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে এতবেশী আদর স্নেহ পেয়েছিলেন যে, তিনি তার বাবা-মার কাছে পর্যন্ত ফিরে যেতে চাননি। তাঁর পিতা-পিতৃবা তাকে ফিরিয়ে নিতে এসে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে নিজেরাই ফিরে যান।

মুক্তিপ্রাপ্ত দাস যায়েদ বিন হারিছার (রাঃ) পুত্র ছিল উসামা (রাঃ)। শিশু উসামাকে রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত ভালবাসতেন। অনেকে বলতো রাসূল (সাঃ) উসামাকে হুসাইনের (রাঃ) ন্যায়। ভালবাসেন। তিনি নিজ হাতে তার নাক পরিস্কার করে দিতেন। রাসূল (সাঃ) ঠাট্টা করে বলতেন উসামা যদি মেয়ে হতো আমি তাকে অলংকার পরাতাম।

মক্কা বিজয়ের পর নগরীতে প্রবেশের সময় রাসূলের সঙ্গে উঠের পিঠে ছিলেন দু’জন। একজন তার জৈষ্ঠ্যা কন্যা জয়নবের (রাঃ) শিশুপুত্র আলী এবং দ্বিতীয় জন ছিল কিশোর উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)।

নবীদের কাছে ফিরিস্তা আসেন শান্তি ও ভালোবাসার বাণী নিয়ে। বয়স্করা এ বাণী বিশ্বাস নাও করতে পারেন।

শিশু কোনো বাণী নয়, বাস্তব। ক্ষুদে শিশু মুর্তিমান ভালোবাসা। শিশু ফিরিস্তাতুল্য। প্রয়োজনের জন্যে ফিরিস্তারূপী শিশু মানুষের উপর নির্ভরশীল।

বড় নক্ষত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রহগুলো মাধ্যাকর্ষন উপেক্ষা করে বেশী দূরে যেতে পারেনা। গ্রহ যত ক্ষুদ্র হবে, নক্ষত্রের তত কাছে থাকবে। শিশু যত ছোট থাকে, স্রষ্টার ততো কাছে হতে পারে হাশরে তার অবস্থান।

বালক হযরত আনাসের খিদমত

হযরত আনাসের মা উম্মু সুলাইম বিন মালহান অতি আগ্রহে তাকে শিশু বয়সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে নিয়োগের জন্যে পেশ করেন। মহানবী (সাঃ) তাকে কবুল করে নেন। তিনি ছিলেন একজন কুরাইশ মহিলা, আমীর ইবনে গানাস কুরাইশী ছিলেন উম্মু সুলাইম এবং রাসূলের দাদা আবদুল মুত্তালিবের মায়ের দিক থেকে পূর্ব পুরুষ।

হযরত আনাস দশ বছর পর্যন্ত রাসূলুল্লাহর খেদমতে ছিলেন। বালক আনাসের সাথে বৃদ্ধ নবীর মধুর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। হযরত আনাসের পিতার নাম ছিল মালিক বিন নজর বিন দামাম ইবন যায়েদ নাজ্জারী খাযরাজী।

কোন এক সফরে হযরত আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) গোসলের জন্য পানি আনলেন। পানি একটু উঁচু জায়গার পাদদেশে রেখে রাসুলুল্লাহকে গোসলের জন্য ডাকলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) গোসল করতে গিয়ে হযরত আনাসের হাতে একটি চাদর দিলেন এবং বললেন চাদরটি দু’হাতে মেলে আমার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়াও। আমার গোসলের জন্য পর্দা কর।

রাসূল (সাঃ) গোসল সমাধা করলেন। এরপর রাসূল (সাঃ) পানি আনলেন এবং একই স্থানে রাখলেন। তারপর হযরত আনাসকে ডাকলেন। হযরত আনাস আসার পর তিনি তার দু’হাত প্রসারিত করে তাঁর চাদরটি দিয়ে বালক আনাসের জন্য পর্দা করলেন এবং তাকে গোসল করতে বললেন। বালক আনাস (রাঃ) তাই করলেন।

কোন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে ভালো কাজ করানো যায়, কিন্তু বাধ্য করে ভালো কাজ করানো হলে তা একবারই সম্ভব বা যতদিন পর্যন্ত বাধ্য করে করান যায় ততদিনই তিনি করবেন। আর যখন করতে বাধ্য হবেননা তখন ছেড়ে দেবেন।

যদি ভালো কাজ বাধ্য হয়ে করতে হয় এবং খারাপ কাজ স্বাধীনভাবে নিজের ইচ্ছায় করা যায়, তবে মানুষ খারাপ কাজই পছন্দ করবে। স্বাধীনতা অতি প্রিয় এবং আনন্দদায়ক জিনিস।

যে কাজ করে মানুষ আনন্দ পায়, সন্তুষ্ট হয় সে কাজই করে। অন্যভাবে নয়। সন্তুষ্ট চিত্তে যে কাজই করা হয় না কেন, সে কাজই স্থায়ী হয়।

শিশুদেরকে কোন ভালো অভ্যাস করাতে হলে ভীতির মাধ্যমে নয়, আনন্দের মাধ্যমে, প্রস্তাবের মাধ্যমে, উৎসাহ দিয়ে আনন্দ দিয়ে এবং উদ্বুদ্ধ করিয়ে করাতে হবে। তবেই তা স্থায়ী হবে।

হযরত আনাস (রাঃ) একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে কোন একটি কাজে যেতে বললেন। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন “আমি যাবনা। আমি কখনও যেতে পারবনা।” রাসূল (সাঃ) জানতেন যে, হযরত আনাস অবশ্যই যাবেন। হযরত আনাস (রাঃ)ও বলেছেন “আমার মনে ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে যে কাজে আদেশ করেছিলেন তা আমি অবশ্যই করব’।

হযরত আনাস (রাঃ) ঘর থেকে বের হয়ে পথে একটু এসেই দেখলেন, ছেলেরা খেলছে। তিনিও তাদের সাথে খেলতে শুরু করে দিলেন। খেলার মাঝে পড়ে তিনি কি জন্য এসেছিলেন তা ভুলে গেলেন।

কিছু সময় পর তিনি অনুভব করলেন পিছন থেকে কে যেন এসে তার ঘাড় ধরেছেন। পিছন ফিরে দেখলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দাঁড়িয়ে হাসেছেন। স্নেহ সিক্ত কণ্ঠে মনে করিয়ে দিলেন “তোমাকে যে কাজটি করতে বলেছি তা করে এসো।” ভাবটা এই তুমি কেন এখানে খেলতে লেগে গেছ তা আমি ধরে ফেলেছি। তুমি তো আমার নির্দেশ ভুলেই গেছো।

হযরত আনাস জানালেন “ইয়া রাসূল্লাহ, আমি এক্ষুণি যাচ্ছি”। যদিও কাজটি ছিল জরুরী, রাসূল (সাঃ) বিন্দু মাত্র বিরক্ত হলেননা। বালক আনাস যে সমবয়সীদের খেলা করতে দেখে নিজের কাজের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন তা রাসূল (সাঃ) ঠিকই বুঝেছিলেন।

বালক আনাস মাঝে মাঝে যা করতেন জবাব দিতেন তার উল্টোটা। রাসূল (সাঃ)ও তাকে মাঝে মাঝে বকতেন। একটি বকুনি ছিল নাম না ধরে অন্য নামে ডাকা। তিনি তাকে ডাকতেন। “ওহে দু’কানওয়ালা” বলে। দু’কানওয়ালা শব্দটি কোন গালি ছিলনা। এটা ছিল আদরের বকুনি। সব মানুষেরই তো দুই কান থাকে। এক কানওয়ালা বললে না হয় বিরক্তি বা বকুনি বুঝা যেতো।

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, দশ বছরের মধ্যে রাসূলুল্লাহ কখনও তাকে কোন ব্যাপারে একটুও ধমক দেননি। কখনও ‘তুমি কেন এটা করেছ’ অথবা ‘কেন এটা করলেনা’ বলে। কৈফিয়ত তলব করেননি। (বুখারী)

একটি বালকের কিয়তকাল আনন্দে যে আনন্দিত হয়না, সে প্রিয় নবীর প্রিয়ভাজন হতে পারেনা। কোলের উপর ঘুমন্ত শিশুকে চুমু দিয়ে বিছানায় শোয়াতে কোন মায়ের মন আনন্দে ভরে উঠেনা ?

কাউকে দোষ দেখিয়ে তাকে লজ্জিত করে সঠিক পথে আনা কষ্টকর।

ভীতি ও শাস্তির ভয় দেখিয়ে শিশুকে কোন কাজ করতে বাধ্য করার চেয়ে স্নেহ ও ভালোবাসা, উৎসাহ ও প্রশংসা দিয়ে কোন কাজ করানো অনেক ভালো এবং তা সহজতর।

শিশুরা অলস নয়। যতক্ষণ শরীরে শক্তি থাকে এবং অসুস্থ না হয়, তারা জেগে থেকে বিছানায় শুয়ে থাকতে পারবেনা। তাদের এনার্জি সীমাহীন। তাদের অপরিমেয় কর্মশক্তি তাদের। কল্যাণের দিকে চালিয়ে নিতে হবে।

মানুষের প্রতি, বিশেষ করে শিশুর প্রতি প্রথম দায়িত্ব হলো তাদের সুখী করা। অনেকে শিশুদের উপকার করতে চায়। মনে করে উপকার করলেই তারা সুখী হবে। তা নয়। সচেতনতাদের সুখী করার চেষ্টা করতে হবে।

মুখে কড়া কথা বললাম, কিন্তু তাদেরকে সম্পদ অর্জনে সাহায্য করলাম। এতে সম্পদ পেয়েও মানুষ সুখী হয়না। ধন ও ঐশ্বৰ্য্য হতে ব্যবহার মানুষের কাছে অনেক বেশী দামী।

কারো ভালো করার জন্যে রুঢ় ব্যবহার কাজে আসেনা।

উপদেশ কেউ না চাইলে দিতে নেই। অযাচিত উপদেশে কোন কল্যাণ হয়না। নিজের সন্তানকেও অযাচিত উপদেশ দিলে তেমন কল্যাণ হয়না।

শিশু হৃদয় নরম মোমের মতো। মোমের উপর সিল মোহর দিলে দাগ যত স্থায়ী হয়, শিশু মনে উপদেশ এবং শিক্ষার প্রভাব ততো সুন্দর এবং স্থায়ী হতে পারে।

উপদেশ উপকারী, পরিবেশনা ঠিক না হলে তা হতে পারে সবচেয়ে অপকারী। অনেক সন্তান অন্য যে কোন মানুষের কথা শুনবে, কিন্তু স্বীয় পিতার কথা শুনবেনা। কারণ শিশুকালে পরিবেশনা ঠিক না হওয়ায় বদ হজম হয়ে গেছে।

জ্ঞানী এবং গুণীদের সন্তান তাদের মতো হয়না। কারণ তারা বেশী দিতে চান, যা গ্রহণ করার শক্তি শিশুর থাকেনা। উপদেশের বোঝায় তাদের নৈতিকতার মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়। জ্ঞানী লোকের সন্তান বখাটে হওয়ার কারণও তাই।

আয়নার সামনে যে ছবি রাখা হয় তার প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে। শিশুর কচি হৃদয়-মন আয়নার মতো। সে আয়নার যে ছবি স্থাপন করা হয় বয়স্ক হলে তাই তার সফলতা, কর্মে এবং চরিত্রে প্রতিফলিত হয়।

রাসূলুল্লাহ-এর সঙ্গে হযরত আনাস (রাঃ) এবং যায়েদ (রাঃ) এর সম্পর্ক চাকর মনিবের সম্পর্ক ছিলনা। এ সম্পর্ক ছিল শিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থী ছাত্রের সম্পর্ক। বাসার কাজের ছেলে এবং গৃহকর্তার সম্পর্ক তাদের মধ্যে ছিলনা।

বয়স্কদের প্রতি দুর্ব্যবহার অমানবিক। কিন্তু শিশুর প্রতি দুর্ব্যবহার পশুসম।

প্রত্যেক মানুষই শিশু কামনা করে। কিন্তু শিশুকে মানুষ করার সাধনায় প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রয়োজন অনেকেই অনুভব করেনা।

মায়ের শিক্ষারই আসল প্রভাব পড়ে শিশুর কচি ও কোমল হৃদয়ে। দরদহীন শিক্ষকের প্রভাব মস্তিকে। ভালোবাসা সিক্ত না হলে শিক্ষার প্রভাব হৃদয়ে পড়েনা।

যেভাবে মা-বাবা শিশুকে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন এবং সফল পরিকল্পনা করতে পারেন, শিশু সেভাবে গড়ে উঠে। একবার খাজ ঠিক হয়ে গেলে অন্যভাবে গড়ে উঠতে পারেনা।

আমাদের বাসায় যে কাজের ছেলেরা চাকুরী করে তাদেরকে আমরা অফিসে পিয়ন, চাপরাসী, এম,এল,এস,এস এবং কারখানার দারোয়ান শ্রমিকের কাজ দিয়ে দিতে চেষ্টা করি। এতে চাকর ছেলে এবং তার পিতামাতা সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকেন। তারা কখনো জীবন সংগ্রামে আমাদের নিজস্ব সন্তানের মত পেশাগত সাফল্য অর্জন করতে পারেনা।

রাসূলুল্লাহ (দঃ)-এর কাজের ছেলে ছিলেন দু’জন। একজন হযরত যায়েদ (রাঃ) অপরজন হযরত আনাস (রাঃ)। তারা সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক, আধ্যাত্মিক, মানবিক মর্যাদায় কত উপরে উঠেছিলেন ?

মুতার যুদ্ধে হযরত জায়েদ (রাঃ) ছিলেন সেনাপতি এবং প্রথম কাতারের সম্ভান্ত কুরাইশ সাহাবীগণ ছিলেন সৈনিক। হযরত আনাস (রাঃ) ছিলেন হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীদের শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম।

শুধু তখনকার দিনে মহানবীর জীবিত থাকাকালে রাসুলের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণেই নয়, আজও তাঁদের মর্যাদা মুসলিম বিশ্বেও বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি। দেশের রাষ্ট্র প্রধান সরকার প্রধানদের মর্যাদা স্বাভাবিক কারণেই অন্যদের থেকে বেশী হয়।

সম্মুখে পড়লে ভদ্রতা এবং সামাজিক কারণে রাজা বাদশা প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইজ্জত দেখাতে হয়। কিন্তু হৃদয়ের গভীর থেকে আমাদের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা কি অলি-আউলিয়া, গাউস কুতুব, সূফী দরবেশদের জন্যে বেশী নয়? সাহাবীদের অবস্থান তো আরো অনেক উপরে।

উদাহরণের খাতিরে ধরা যাক হযরত যায়েদ (রাঃ) হযরত আনাস (রাঃ) এর পাগড়ী কোথাও আবিস্কৃত হলো এবং তা সত্য বলে প্রমাণিত হলো। এগুলোর দ্বীনী বা আধ্যাত্মিক মূল্য কানাকড়িও নেই। তবুও সাহাবীদের স্মৃতিধন্য তাঁদের ব্যবহার্য দ্রব্যের ইজ্জত কতটুকু হবে ?

মুসলিম মন-মানসে কি জীবন্ত রাজা বাদশা, সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের অপেক্ষা সাহাবীদের ব্যবহার্য্য ১৪০০ বছরের পুরানো পাগড়ীর মর্যাদা বা ইজ্জত বেশী হবেনা ? শুধু পাগড়ী নয়; এমনকি হযরত আনাস বা হযরত যায়েদের একখানা জুতার ইজ্জত যে কোনো জীবিত মুসলিমের ইজ্জত অপেক্ষা অনেক বেশী হবে, যত বড়ই তাদের বর্তমান জাগতিক অবস্থান হোকনা কেন। সোহবত, নৈকট্য রাসুলুল্লাহ এর সাহাবীদেরকে এমন অনন্য মর্যাদার অধিকারী করেছিলেন যা অতুলনীয়, অকল্পনীয় এবং অমুসলিমদের নিকট অবিশ্বাস্য।

সূত্র: মহানবী ও শিশু বই থেকে। লেখক: এ. জেড. এম. শামসুল আলম

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88