ইসলামের দৃষ্টিতে বডি ফিটনেস রাখা এবং কম খাওয়ার গুরুত্ব

প্রশ্ন: অনেকেই বডি ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খায় না। না খেলে তো শরীর সুগঠিত হবে না। এখন শরীর ঠিক রাখার জন্য পর্যন্ত পরিমাণে কি খাওয়া যাবে?
শুনেছি, হাদিসে আছে, “দুর্বলের চেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি উত্তম।” এ হাদিসের ব্যাখ্যা কি?
উত্তর:
মানব জীবনে শারীরিক সুস্থতা ও ফিটনেস খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুস্থ শরীরে যেভাবে মানসিক উৎফুল্লতা সহকারে দুনিয়াবি কাজ-কারবার করার পাশাপাশি আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা সম্ভব হয় তা অসুস্থ শরীরে কখনোই সম্ভব নয়। তাই হাদিসে সুস্বাস্থ্যের প্রতি অনেক বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে-আল হামদুলিল্লাহ।

◑◑ শারীরিক সুস্থতা ও ফিটনেস সংক্রান্ত কতিপয় হাদিস:
এ ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো থেকে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
◈ ক. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« ﻧِﻌْﻤَﺘَﺎﻥِ ﻣَﻐْﺒُﻮﻥٌ ﻓِﻴﻬِﻤَﺎ ﻛَﺜِﻴﺮٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺍﻟﺼِّﺤَّﺔُ ﻭَﺍﻟْﻔَﺮَﺍﻍ ».
‘দুটি নেয়ামত এমন যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ উদাসীন। আর তা হল, সুস্থতা (সুস্বাস্থ্য) ও অবসর সময়।'[বুখারী : ৬৪১২]
◈ খ. উবাইদুল্লাহ বিন মিহসান খাত্বমী রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ مُعَافًى فِي جَسَدِهِ عَندَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بحذافيرها
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে (অথবা গোত্রের লোকদের মাঝে) নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে সে দিনের খাবার আছে, তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।” (তিরমিযী ২৩৪৬, ইবনে মাজাহ ৪১৪১নং, সহিহ)
◈ গ. তিনি আরও বলেছেন,
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ : شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ ” .
”তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ মনে করো:
● ১) জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।
● ২) সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে।
● ৩) অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে।
● ৪) যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং
● ৫) সচ্ছলতাকে দরিদ্রতা আসার আগে।”
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম খণ্ড, ৮ম অধ্যায় ১২৭ পৃষ্ঠা। আল্লামা আলবানী রহঃ, হাদিসটি সহীহ বলেছেন।)
তাছাড়া বহু হাদিসে কম খাওয়ার ব্যাপারেও যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে এবং বেশি খাওয়াকে নিন্দা করা হয়েছে। যেমন:
عن المِقْدَام بن مَعْدِي كَرِبَ -رضي الله عنه- قال: سمعت رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يقول: «ما مَلَأ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا من بطن، بِحَسْبِ ابن آدم أُكُلَاتٍ يُقِمْنَ صُلْبَه،ُ فإن كان لا مَحَالةَ، فَثُلُثٌ لطعامه، وثلث لشرابه، وثلث لِنَفَسِهِ».
[صحيح.] – [رواه الترمذي وابن ماجه وأحمد.]
মিকদাম ইবন মাদীকারিব রা. থেকে মরফু হিসেবে বর্ণিত, “মানুষ পেট থেকে অধিক নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজহা, মুসনাদে আহমদ-সনদ সহিহ)
➧ ব্যাখ্যা:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি মূলনীতি জানাচ্ছেন, আর তা হলো, একটি সংরক্ষণ পদ্ধতি, যার দ্বারা মানুষ তার স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করে, তা হচ্ছে অল্প খাওয়া; বরং এ পরিমাণ ভক্ষণ করবে যা তার ক্ষুধা দূরীভূত করে এবং তাকে যাবতীয় কাজ করতে সহায়তা করে। যেসব পাত্র পূর্ণ করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো পেট; যেহেতু পূর্ণ পেট থেকে মৃত্যু ঘটানোর মত অনেক রোগ নগদে-বিলম্বে-প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৃষ্টি হয় যা গণনা করে শেষ করা যাবে না।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি মানুষকে তৃপ্তির সাথে খেতেই হয় তাহলে সে যেন পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখে যাতে. তার কোনো অসুবিধা না হয় বা দ্বীন ও দুনিয়ার কোনো ওয়াজিব পালনে অলসতা না আসে। (উৎস: hadeethenc.com)
যাহোক, একজন মানুষ কম খেয়েও যদি সুস্থ ও সবল থাকে তাহলে তাই যথেষ্ট। কিন্তু বেশি খেয়ে শরীর মোটা করলেই তাকে সুস্থ বলা যায় না। বরং মোটা হওয়াটাই একটা সমস্যা। যা শরীরে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধী সৃষ্টির কারণ বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ সতর্ক করেছেন।
◑◑ “শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম” এ হাদিসের ব্যাখ্যা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
الْمُؤْمِنُ الْقَوِيُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ
“শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিনের চেয়ে অধিক উত্তম এবং আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)।
এ হাদিসে অর্থ হল, যে ব্যক্তি ঈমানি দৃঢ়তা, মানসিক শক্তি, চিন্তার পরিপক্বতা, জ্ঞানের গভীরতা, আল্লাহর আনুগত্যে অবিচলতা ইত্যাদি দিক দিয়ে বেশি শক্তিশালী সে অবশ্যই অধিক উত্তম ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। এগুলোর পাশাপাশি যদি বডি ফিটনেস বা শারীরিক শক্তিমত্তা যুক্ত হয় তাহলে তা আরও ভালো। কিন্তু শুধু বডি ফিটনেস বা শারীরিক শক্তিমত্তা প্রশংসনীয় নয় যদি তা অন্যায়-অপকর্মে ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং পুষ্টিকর ও পরিমিত খাবার গ্রহন করতে হবে (প্রয়োজনের বেশি খাবার খাওয়া যাবে না) এবং শারীরিক সুস্থতার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি ঈমানের দৃঢ়তা ও সৎকর্মে অবিচলতার ক্ষেত্রে হতে হবে আরও বেশি শক্তিশালী এবং অগ্রসর। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member