ইটের ভাটা সম্পর্কিত মাসআলা

প্রশ্ন: যদি ইটের ভাটা শুরু হওয়ার এক/দু মাস আগে ভাটার মালিককে টাকা দিয়ে ইট প্রস্তুত হওয়ার পরে তা নেয়া হয় তাহলে এটা কি বৈধ হবে?
উত্তর:
‘অগ্রিম টাকা দিয়ে পরে পণ্য নেয়া’ ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করা ইসলামে জায়েজ আছে। এটাকে ফিকহের পরিভাষায় ‘বাইয়ে সালাম’ বলা হয়।
‘বাইয়ে সালাম’ মানে ক্রেতা মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করবে, আর পণ্য পরবর্তী সময়ে গ্রহণ করবে। এর আরেকটি নাম হল বাইয়ে সলফ।

সুতরাং আপনি যদি ইট ভাটা শুরু হওয়ার কয়েকমাস পূর্বে মালিককে টাকা দেন এবং ইট বানানোর পরে যদি ইট সংগ্রহ করেন তাহলে তাতে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোন বাধা নেই ইনশাআল্লাহ।
তবে শর্ত হল, টাকা (ইটের দাম) দেয়ার সময় ইটের গুণগত মান, মূল্য ও পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা এবং কখন ইট প্রদান করা হবে তার তারিখ নির্ধারণ করা। অত:পর নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য হস্তান্তর করা।
◈◈ নিম্নে অগ্রিম মূল্য দান করে পরে পণ্য নেয়ার বৈধতার পক্ষে কুরআনের আয়াত, হাদিস ও সাহাবী ও আলেমদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
◉ আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ ۚ
“হে মোমিনগণ, তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের আদান-প্রদান করো, তখন তা লিপিবদ্ধ করে রাখ।” (সূরা বাকারা : ২৮২)।
◉ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
عن ابن عباس ، قال : أشهد أن السلف المضمون إلى أجل مسمى أن الله أحله وأذن فيه ، ثم قرأ : ( يا أيها الذين آمنوا إذا تداينتم بدين إلى أجل مسمى ) رواه البخاري
“আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, বাইয়ে সালাম সম্পর্কে কোরআনে এক নাতিদীর্ঘ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করেন।” (তাফসিরে ইবনে কাসির শাইখ আলবানি রহ. বলেন, এর সনদ সহিহ মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহিহ ৫/২১৩)
◉ এ ছাড়াও হাদিসে এসেছে:
عن ابن عباس ، قال : قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة وهم يسلفون في الثمار السنتين والثلاث، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” من أسلف فليسلف في كيل معلوم ، ووزن معلوم ، إلى أجل معلوم ” .
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-যখন মদিনায় পদার্পণ করেন, তখন মদিনা বাসী এক, দুই ও তিন বছর মেয়াদে বিভিন্ন ধরণের ফল অগ্রিম ক্রয়-বিক্রিয় করত। তা দেখে তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করবে, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপ, নির্ধারিত ওজন এবং নির্ধারিত মেয়াদের জন্য করে।” (বুখারি ও মুসলিম)।
ফকিহদের ইজমা তথা সর্বসম্মত অভিমত আলোকেও বাইয়ে সালাম বৈধ। ইবনে হাজার রহ. বলেন:
واتفق العلماء على مشروعيته إلا ما حكي عن ابن المسيب
“ইবনুল মুসাইয়েব থেকে যা বলা হয় সেটা ছাড়া আলেমগণ এর বৈধতার পক্ষে একমত।” (ফতহুল বারী ৭/৭৬)
ইসলামি শরিয়তে বেচাকেনাতে সামান্য ধরণের অস্পষ্টতার কারণেও যেখানে বেচাকেনাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে বাইয়ে সালামকে পণ্য সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও শুধু গুণাগুণ জানা থাকার শর্তে হালাল সাব্যস্ত করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❖❖❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB ID: AbdullaahilHad
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88