মীলাদের উৎপত্তি ও মীলাদপন্থীদের জবাব

মীলাদের উৎপত্তি ও মীলাদপন্থীদের জবাব

অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
————————
ঈদে মীলাদুন্নবী এর শুরুর কথা:

ইসলামের সোনালী অধ্যায়ের তিন শতাব্দী তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ, সাহাবীদের যুগ এবং তাবেঈদের যুগ পার হয়ে গেলেও ইতিহাসে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, কোন একজন সাহাবী, তাবেঈ বা তাবে তাবেঈ মীলাদ উদযাপন করেছেন।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তাদের ভালবাসা কি কম ছিল? কখনও নয়। বরং তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রচণ্ডভাবে ভালবাসতেন। তারা ছিলেন তার সুন্নত-আদর্শ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী এবং শরীয়তের বিধিবিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী।

◈◈ মীলাদের উৎপত্তিকারক বনী উবায়দিয়া বা ফাতেমীয় সম্প্রদায়:

ঐতিহাসিকগণ বলেন, যারা সর্বপ্রথম এই বিদআতকে রূপদান করে তারা হল, বনী উবাইদ আল কাদ্দাহ। এরা নিজেদেরকে ফাতেমী বলে অবিহিত করত এবং নিজেদেরকে আলী রা. এর বংশধর বলে দাবী করত। এরাই ফাতেমী দাওয়াতের প্রতিষ্ঠাতা। (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১১/২০২)

◈◈ এদের পরিচয় ও আসল রূপ:

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রাহ.কে এই ফাতেমীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর হলে তিনি উত্তরে বলেন: “তারা ছিল জঘন্য ধরণের পাপাচারী এবং নিকৃষ্ট কাফের। কেউ যদি তাদেরকে ঈমানদার এবং পরহেযগার বলে সাক্ষ্য দেয় অথবা তাদের বংশ পরম্পরাকে সঠিক বলে স্বীকৃতি দেয় তবে তারা এমন বিষয়ে কথা বলল যে ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ

“সে বিষয়ের পিছে ছুট না যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই।“[1]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

“তবে যারা জেনে-শুনে সত্য সাক্ষ্য দিল।”[2]

এ সকল লোকদের ব্যাপারে সমস্ত আলেম সমাজ, ইমামগণ এবং সর্বস্তরের মানুষ সাক্ষ্য দেয় যে, এরা ছিল নাস্তিক,ধর্মচ্যুত এবং মুনাফিক। এরা বাহ্যিকভাবে যদিও ইসলাম প্রকাশ করত কিন্তু তাদের অন্তরে লুকানো ছিল কুফুরী। সুতরাং কেউ যদি তাদের ঈমানের সাক্ষ্য দেয় তবে সে এমন বিষয়ে সাক্ষ্য দিল যে ব্যাপারে তার জ্ঞান নেই। কারণ,তাদের কার্যক্রম থেকে এমন কিছু পাওয়া যায় না যাতে তাদের ঈমানের প্রমাণ পাওয়া যায়।

অনুরূপভাবে তাদের বংশগত সম্পর্কের ব্যাপারেও অধিকাংশ আলেমগণ দোষারোপ করেছেন। তারা বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে এরা অগ্নিপূজক অথবা ইহুদীদের সন্তান এবং এটাই হানাফী, মালিকী, শাফেয়ী, হাম্বলীদের অনেক আলেমের প্রসিদ্ধ মতামত। এমনকি মুহাদ্দেসীনগণ, আহলে কালাম, বংশ বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষেরও মন্তব্য এটাই। যে সকল লেখক মানুষের জীবন পঞ্জিকা এবং ইতিহাস লিখেছেন তারাও এ বিষয়টি তাদের বইয়ে উল্লেখ করেছেন।

সর্বপ্রথম যারা মিলাদ তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম অনুষ্ঠান পালনের বিদআত সূচনা করে তারা হল বাতেনি সম্প্রদায়। যাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হল, দ্বীন ইসলামের মাঝে পরিবর্তন সাধন করে তার মধ্যে এমন কিছু ঢুকানো যার অস্তিত্ব দ্বীনের মধ্যে ছিল না। কারণ, ইসলামী শরীয়ত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত থেকে মানুষকে দূরে সরানোর সব চেয়ে সহজ পদ্ধতি হল, তাদেরকে বিদআতের মধ্যে ব্যস্ত রাখা।

মাকরীযী বলেন, ফাতেমী খলীফাগণ বিভিন্ন দিনকে আনন্দ-উৎসবের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছিল এবং এসব দিনে তারা জন-সাধারণের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করত।

উবায়দিয়ারা সারা বছর ধরে যে সব দিনকে আনন্দ-উৎসবের দিন হিসেবে পালন করত সেগুলো হল:

১) নব বর্ষ ২) আশুরা ৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস ৪) আলী রা. এর জন্ম দিবস ৫) হাসান রা. এর জন্ম দিবস ৬) হুসাইন রা. এর জন্ম দিবস ৭) ফাতেমাতুয যোহরা রা. এর জন্ম দিবস ৮) ক্ষমতাসীন শাসকের জন্ম দিবস ৯) রজব মাসের ১ম দিন ৯) রজব মাসের ১৫ তারিখের রাত ১০) শাবান মাসের ১ম দিন ১১) অর্ধশাবানের রাত (শবে বরাত) ১২) রমাযানের ১ম রাত ১৩) রমাযানের ১ম দিন ১৪) রমাযানের মধ্যভাগ ১৫) রমাযানের শেষ রাত ১৬) ঈদুল ফিতরের মৌসুম ১৭) কুরবানির মৌসুম ১৮) গাদীর উৎসব ১৯) নওরোজ (নববর্ষ) ২০) এবং ২১) যিশু খৃষ্টের জন্ম দিন (বড়দিন) ইত্যাদি।

মাকরীযীর পক্ষ থেকে এটা একটি স্পষ্ট সাক্ষ্য। যদিও তিনি এদেরকে আলী রা. এর বংশধর হিসেবে শুধু স্বীকৃতি দেন না বরং তাদের পক্ষাবলম্বন করে বিরোধীদের জবাব দেন। কিন্তু তিনি অকপটে এ কথার সাক্ষ্য দিলেনে যে,এ ফাতেমীয়রাই মুসলমানদের বিপদের কারণ। এরাই বিভিন্ন বিদআতি অনুষ্ঠানের পথ উন্মুক্ত করে। এমন কি এরা অগ্নিপূজক এবং খৃষ্টানদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদীও পালন করে। যেমন নওরোজ বা নববর্ষ এবং যিশু খৃষ্টের জন্ম দিন (বড় দিন) ইত্যাদি।

এতেই প্রমাণিত হয় যে, এদের অবস্থান ইসলাম থেকে শুধু দূরেই নয় বরং এরা ইসলাম ও মুসলমানদের ঘোরতর দুশমনও। যদিও এরা বাহ্যিক ভাবে তা স্বীকার করে না।

মোট কথা, বনী উবাইদ আল কাদ্দাহ তথা ফাতেমীয়রাই সর্ব প্রথম মিলাদ অনুষ্ঠান শুরু করে।

সউদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী শাইখ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আলুশ শাইখ রহ. বলেন, “হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দিতে এই বিদআত তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস পালনের প্রথা সর্ব প্রথম চালু করেন আবু সাঈদ কূকুবূরী। যদিও এ মর্মে অন্য আরও একাধিক মত রয়েছে।[3]

◈◈ মীলাদপন্থীদের কতিপয় সংশয় ও সেগুলোর জবাব:

উবাইদিয়াদের শাষণামলে মীলাদ চালু হওয়ার পর ধীরে ধীরে তা ব্যাপকতা লাভ করতে লাগল। মুসলমানগণ জিহাদ ছেড়ে দিল এবং তারা রুহানী ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ায় এই বিদআতটি সাধারণ মানুষের মনে শিকড় গেড়ে বসল। এমনকি অনেক মূর্খ মানুষের নিকট এটা আকীদা-বিশ্বাসের একটি অংশ হয়ে দাঁড়ালো।

কিছু আলেম যেমন ইমাম সুয়ূতী রাহ. এই বিদআতের পক্ষে প্রমাণাদী খুঁজতে বাধ্য হলেন যাতে মীলাদের বিদআতকে বৈধতা দেয়া যায়। আবার অনেক আলেম একদিকে সরকারের ভয়ে অন্য দিকে জন সাধারণের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় এ বিদআতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পেরে নীরবতা অবলম্বন করলেন।

◍ প্রথম সংশয়: আশুরার রোযার উপর ভিত্তি করে মীলাদ উদযাপন!

ইমাম সুয়ূতী বলেন, মীলাদের স্বপক্ষে ইমাম ইবনে হাজার হাদীস থেকে একটি প্রমাণ বের করেছেন। আমি তার সাথে আরও একটি প্রমাণ বের করেছি।

তিনি (ইমাম সুয়ূতী) বলেন: যুগের হাফেযে হাদীস শাইখুল ইসলাম আহমাদ ইবনে হাজারকে মীলাদ করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি যা বলেন তা হুবহু তুলে ধরা হল:

“মীলাদ করা বিদআত। এর স্বপক্ষে ইসলামের প্রথম তিন শ্রেষ্ঠ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মনিষী তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহবায়ে কেরাম এবং তাবেঈন থেকে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তদুপরি মীলাদে কিছু ভাল জিনিস রয়েছে। কিছু খারাপ জিনিস রয়েছে। কেউ যদি মীলাদে ভাল জিনিসগুলোর উদ্দেশ্য করে এবং মন্দ জিনিসগুলো পরিত্যাগ করে তবে তা বিদআতে হাসানা হিসেবে গণ্য হবে; অন্যথায় নয়। আমি এ ব্যাপারে একটি মজবুত প্রমাণ পেয়েছি। আর তা হল,সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করে মদীনা গমণ করার পর দেখলেন ইহুদীরা মুহাররম মাসের দশ তারিখে আশুরার রোযা পালন করছে। তিনি এ ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলল,এই দিনে আল্লাহ তাআলা ফেরআউনকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন এবং মূসা আ.কে ফেরআউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ আমরা এ দিনে রোযা পালন করি।

তাই উক্ত হাদীস থেকে এই প্রমাণ গ্রহণ করা যেতে পারে যে,কোন একটি বিশেষ দিনে সুসংবাদ বা কল্যাণের বার্তা এলে কিংবা কোন বিপদ মুক্ত হলে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে কিছু আমল করা যায় এবং প্রতি বছর ঐ বিশেষ দিনটি ফিরে আসলে সে আমলগুলো পূণরাবৃত্তিও করা যেতে পারে। আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা যায় বিভিন্নভাবে। যেমন,সেজদায়ে শোকর, রোযা,কুরআন তেলাওয়াত, দান-সাদাকাহ ইত্যাদি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়ার দিনটির চেয়ে এত বড় আনন্দের এবং এত বিশাল নিয়ামতের দিন আর কী হতে পারে?

অতঃএব এ ভিত্তিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিনটিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। যাতে মূসা আঃ এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুরার রোযা রাখার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এ দিকটি যারা খেয়াল করে না তারা মাসের যে কোন দিন মীলাদ করতে কোন দ্বিধা করে না। কিছু মানুষ এটাকে আরেকটু ঢিল দিয়ে বছরের যে কোন একদিন পালন করে থাকে। কিন্তু এতে কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে।[4]

➧ এই সংশয়ের জবাবঃ

উপরে উত্থাপিত সংশয়ের একাধিক জবাব রয়েছে। নিন্মে সেগুলো তুলে ধরা হল:

◯ প্রথমতঃ

ইবনে হাজার রাহ. প্রথমেই স্পষ্টভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন যে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম উপলক্ষ্যে মীলাদ উদযাপন করা বিদআত। যা ইসলামের প্রথম তিন শতাব্দীর মনিষীগণ তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈগণ থেকে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতঃএব মীলাদ বাতিল প্রমাণের জন্য এটাই যথেষ্ট। কারণ, মীলাদে যদি ভাল কিছু থাকত তবে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈগণ এবং তাদের পরবর্তিতে ইসলামের জ্ঞানী-গুনি এবং মহামনিষীগণ সবার আগে সেটা বাস্তবায় করার জন্য ছুটে যেতেন।

◯ দ্বিতীয়তঃ

আশুরার দিন রোযা রাখার হাদীসের উপর ভিত্তি করে মীলাদকে বৈধতা দেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, ইবনে হাজার রা. তো নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মীলাদ করা বিদআত। সালাফে-সালেহীন তথা ইসলামের প্রথম তিন যুগের মনিষীগণ থেকে প্রমাণিত নয়।
সালাফে-সালেহীন যেহেতু উপরোক্ত আশুরার হাদীসের উপর ভিত্তি করে মীলাদ করেন নি সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, এটাকে টেনে এনে মীলাদের পক্ষে দলীল বানানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এটাকে মীলাদের স্বপক্ষে দলীল বানাতে চান তাদের বুঝ এবং ইসলামের প্রথম যুগের মণিষীদের বুঝের মধ্যে কোন মিল নেই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,সাহাবী এবং তাবেঈণগণ হাদীসের বক্তব্যকে যে অর্থে বুঝেন নি এবং তা আমল করেন নি তার উল্টো অর্থে যদি পরবর্তি যুগের লোকেরা হাদীসকে ব্যাখ্যা দিতে যায় তাহলে তা হবে মারাত্মক অন্যায়। কারণ এটা তাঁদের ইজমা বা সর্ব সম্মত মতের বিপরীত। আর তাঁরা কখনই বতিলের উপর একমত হতে পারে না।

◯ তৃতীয়তঃ

আশুরার রোযার উপর ভিত্তি করে মীলাদকে বৈধ করা করা একটি অপচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। কারণ যে কোন এবাদত গ্রহণযোগ্য হতে হলে শরীয়তের সুস্পষ্ট দলীলের উপর তার ভিত্তি থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নিজস্ব খেয়াল-খুশী আর মনগড়া ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান যোগ্য।

◯ চতুর্থতঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো মুহাররম মাসে দশ তারিখে রোযা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু তিনি তো মীলাদ করতে বলেন নি। কিংবা ঈদে মীলাদুন্নবী তথা তাঁর জন্মোৎসব পালন করতে বলেন নি। কিংবা নিজেও কখনও করেন নি।
মীলাদে যদি কোন উপকার থাকত তবে অবশ্যই তিনি তাঁর উম্মতকে স্পষ্টভাবে তা পালন করার কথা বলে যেতেন। কারণ,দুনিয়া-আখিরাতের এমন কোন কল্যাণকর দিক নেই যা তিনি তার উম্মতকে বলে দেন নি কিংবা এমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই যে ব্যাপারে সাবধান করেন নি।

বরং তিনি দ্বীনের ভিতর নতুন নতুন বিদআত তৈরী করার ব্যাপারে কঠিনভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন:

وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ

“দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট বিষয়াদী থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিস্কৃত বিষয়ই গোমরাহী।[5]

তিনি বিভিন্ন সময় বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বলতেন:

أَمَّا بَعْدُ: فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ

“অতঃপর,সর্বত্তোম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা। সব চেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হল দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিস্কৃত বিষয়াদী। আর প্রতিটি নতুন বিষয়ই ভ্রষ্টতা।[6]

◍ দ্বিতীয় সংশয়ঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নিজের আকীকা নিজেই করার হাদীস থেকে মীলাদের পক্ষে দলীল আবিষ্কার!!

ইমাম সুয়ূতী আরও বলেন, মীলাদের স্বপক্ষে ইমাম ইবনে হাজার রা. এর উপরোপক্ত দলীল ছাড়াও আমি আরেকটি দলীল বের করেছি। আর তা হল,

সুনান বায়হাকীতে আনাস রা. হতে বর্ণিত,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়ত প্রাপ্তির পর নিজেই নিজের আকীকা দিয়েছেন। যদিও তাঁর দাদা আব্দুল মোত্তালেব জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর আকীকা দিয়েছিলেন। আর আকীকা তো একাধিকবার দেয়া যায় না। তাই বিষয়টার তাৎপর্য এভাবে গ্রহণ করতে হবে যে,আল্লাহ তাআলা যেহেতু তাকে জগতবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করেছেন তার কৃতজ্ঞতা আদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি আকীকা দিয়েছিলেন। তা ছাড়া তিনি নিজেই নিজের নামে দরুদ ও সালাম পেশ করতেন। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিবস উপলক্ষ্যে আমাদের কর্তব্য হল, সম্মিলিতভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়,ভোজ সভার আয়োজন সহ আরও বিভিন্ন নেক কাজ আঞ্জাম দেয়া এবং আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করা।[7]

➧ উক্ত সংশয়ের জবাব:

প্রথম কথা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নিজেই নিজের আকীকা দেয়ার হাদীসটি মুহাদ্দেসীনদের নিকট সনদগতভাবে প্রমাণিত নয়। নিম্নে মুহাদ্দেসীনগণের মতামত তুলে ধরা হল:

১) আব্দুর রাযযাক রহ. তার মুসান্নাফ কিতাবে বলেন, আমাদের নিকট আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাররার হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন কাতাদাহ থেকে। কাতাদা আনাস থেকে। তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়তের পরে নিজেই নিজের আকীকা দিয়েছেন।”

ইবনে কাইয়েম জাওযিয়া রা. এ হাদীসটি আব্দুর রাযযাক রাহ. এর বরাতে উল্লেখ করে বলেন,আব্দুর রাযযাক বলেন,মুহাদ্দেসীনগণ উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার কারণে ইবনে মুহাররারকে বর্জন করেছেন।[8]

২) হাফেজ ইবনে হাজার রহ. ফাত্হুল বারীতে উল্লেখ করেছেন, উক্ত হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং তিনি হাদীসটি বাযযারের দিকে সম্বন্ধ করে বলেন,ইমাম বাযযার বলেছেন: “এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ মুহাররারের একক বর্ণনা। কিন্তু তিনি দূর্বল।[9]

৩) ইমাম নওয়াবী আল মুহাযযাব কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আল মাজমু কিতাবে বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিজের আকীকা করার ব্যাপারে গ্রন্থকার যে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন তা আব্দুল্লাহ বিন মুহাররার কাতাদা থেকে বর্ণনা করেছেন। কাতাদা আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়তের পর নিজে নিজের আকীকা দিয়েছেন। কিন্তু এ হাদীসটি বাতিল। হাদীসের সনদে উল্লেখিত আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাররার সর্বসম্মত ভাবে দূর্বল রাবী। হাফেয ইবনে হাজার তাকে مَتْرُوْكٌ বা পরিত্যাক্ত বর্ণনাকারী বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ ভাল জানেন।[10]

৪) ইমাম যাহাবী মীযানুল ইতিদাল গ্রন্থে আব্দুল্লাহ বিন মুহাররার এর জীবনী লিখেছেন এবং তার ব্যাপারে হাফেয ইবনে হাজার রাহ. এর মন্তব্য উল্লেখ করার পর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে,তিনি একজন পরিত্যাক্ত এবং অনির্ভর যোগ্য বর্ণনাকারী। তিনি আরও বলেন,আনাস রা. থেকে কাতাদা কর্তৃক “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী হওয়ার পর নিজে নিজের আকীকা করেছেন” মর্মে বর্ণিত হাদীসটি তার অন্যতম একটি সমস্যাপূর্ণ বিষয়।[11]

◍ তৃতীয় সংশয়ঃ স্বপ্নকে দলীল বানিয়ে মীলাদের পক্ষে সাফাই!

ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন: ইমামুল কুররা হাফেয শামসুদ্দীন ইব্নুল জাযারী তার উরফুত তারীফ বিল মাউলিদীশ শারীফ কিতাবে বলেছেন,আবু লাহাব মারা যাওয়ার পর তাকে স্বপ্ন মারফত দেখানো হল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল,তুমি কী অবস্থায় আছ? বলল, আমাকে জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়া হচ্ছে তবে প্রতি সোমবারে শাস্তি কিছুটা হালকা করা হয় এবং আঙ্গুলের মাথা সমপরিমান জায়গা চুষে পানি পান করতে দেয়া হয়। এর কারণ হল,আমার দাসী সুওয়াইবিয়া যখন আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের সুসংবাদ দেয় তখন তাকে আমি মুক্ত করে দেই এবং তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুধ পান করার দায়িত্ব প্রদান করি।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আবু লাহাব যদিও কাফের এবং যাকে কুরআনে কঠিনভাবে তিরষ্কার করা হয়েছে তারপরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের সংবাদে খুশী হওয়ার কারণে তার জাহান্নামের শাস্তি হালকা করে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তাওহীদবাদী মুমিন-মুসলমানগণ যদি তাঁর জন্মে আনন্দিত হয় এবং তাদের সাধ্যানুযায়ী আনন্দ প্রকাশ করে তবে তারা কি সওয়াবের অধিকারী হবে না? হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে তাকে প্রতিদান হিসেবে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।“[12]

উপরোক্ত হাদীসটি ইমাম বুখারী মুরসাল সনদে وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ (তোমাদের সে মাতা,যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে)[13] অধ্যায়ে এবং রক্ত সম্পর্কের কারণে যা হারাম স্তন্যদান করার কারণে তাই হারাম অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। হাদীসটির সনদ নিম্নরূপ:

উরওয়া বিন যুবাইর বলেন,যাইনব বিনতে আবু সালামা তার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন উম্মে হাবীবা বিনতে আবু সুফিয়ান। তিনি বলেনঃ

আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমার বোন তথা আবু সুফিয়ানের কন্যাকে বিয়ে করুন।

তিনি বললেন: তুমি কি এটি পছন্দ কর?

আমি বললাম: জি, হ্যাঁ। আমি তো একাই আপনার স্ত্রী নই। কোন কল্যাণের মধ্যে আমার বোন আমার সাথে শরীক হবে- এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: সে আমার জন্য হালাল নয়।

আমি বললাম: আমরা শুনছি যে,আপনি আবু সালামার মেয়েকে বিয়ে করবেন।

তিনি বললেন: উম্মে সালামার মেয়ে?

আমি বললাম: হ্যাঁ।

তিনি বললেন: “সে যদি আমার সৎ মেয়ে নাও হতো, তবুও সে আমার জন্য হালাল হতো না। করণ, সে তো আমার দুগ্ধ সম্পর্কীয় ভাতিজী। সুয়াইবিয়া আমাকে এবং আবু সালামাকে দুধ পান করিয়েছে। সুতরাং তোমরা তোমাদের কন্যা ও বোনদেরকে আমার কাছে বিয়ের জন্য পেশ করো না।”[14]

উরওয়া বলেন: সুওয়াইবিয়া হল আবু লাহাবের দাসী। আবু লাহাব তাকে মুক্তি দিলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দুধ পান করান। আবু লাহাব মৃত্যু বরণ করার পর তার পরিবারের কোন লোক তাকে স্বপ্নে খুব করুণ অবস্থায় দেকে জিজ্ঞেস করল,মৃত্যু বরণ করার পর তোমার পরিণতি কী? সে বলল: তোমাদের নিকট থেকে বিদায় নেয়ার পর আর কখনো শান্তির সংস্পর্ষ পাইনি। তবে সুওয়াইবিয়াকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে আমাকে খুব সামান্য পানি পান করতে দেয়া হয়েছে।[15]

ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, কাফির কোন কোন সৎ কর্ম দ্বারা আখিরাতে উপকৃত হবে। কিন্তু তা কুরআনের সুষ্পষ্ট বক্তব্য বিরোধী কথা। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُوراً

“আর তারা যে সব আমল করেছিলো সেগুলোর প্রতি অগ্রসর হব অত:পর সেগুলোকে উৎক্ষিপ্ত ধুলিকনায় পরিণত করবো।“ (সূরা ফুরকান: ২৩)

কারণ ঈমান, ইখলাস এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ ছাড়া কোন আমলই আল্লাহর নিকট কাজে আসবে না।

➧ এই সংশয়ের জবাব:

১) উক্ত হাদীসটি উরওয়া মুরসাল বা বিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ কে উরওয়ার নিকট এ হাদীসটি বর্ণনা করেছে তা তিনি উল্লেখ করেন নি। যেমনটি ইতোপূর্বে বলা হয়েছে।

২) যদি তা মুসাল বা অবিছিন্ন সূত্রে বর্ণিত হিসেবে ধরেও নেয়া হয় তার পরেও কথা হল,এটা তো একটি স্বপ্নের কথা। স্বপ্ন কখনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হতে পারে না। এমনও হতে পারে, যে ব্যক্তি এ স্বপ্ন যে দেখেছে সে হয়ত তখন মুসলমান ছিল না। আর যদি সে তখন মুসলমান না থাকে তবে তো তার কথা গ্রহণযোগ্য হবে না|[16]

৩) উরাওয়া কর্তৃক বর্ণিত উক্ত ঘটনায় বলা হয়েছে,আবু লাহাব তার দাসী সুওয়াইবিয়াকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দুধ খাওয়ার আগেই মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু এ তথ্য অন্যান্য সীরাত লেখকদের কথার বিপরীত। তারা লিখেছেন,সুওয়াইবিয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুগ্ধপান করানোর বহুদিন পরে আবু লাহাব তাকে মুক্তি দিয়েছিল।

উদাহরণ স্বরূপ দেখুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিশিষ্ট জীবনী লেখক ঐতিহাসিক ইবনে সাদ বলেন: “মুহাম্মাদ বিন আমর আল ওয়াকেদী একাধিক আলেম থেকে আমাদেরকে যে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন তা নিম্নরূপ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় থাকা অবস্থায় তার সাথে ( দুধ মা সুওয়াইবিয়া) সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। খাদীজা রা.ও তাকে সন্মান করতেন। তখনও তিনি দাসী ছিলেন। খাদীজা রা. আবু লাহাবের নিকট সুওয়াইবিয়াকে মুক্ত করার জন্য ক্রয় করে নিতে চাইলে আবু লাহাব তা অস্বীকার করল। পরবর্তীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা হিজরত করার পর আবু লাহাব তাকে মুক্ত করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য কাপড় এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী পাঠাতেন। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তম হিজরীতে খাইবার থেকে ফিরে এসে তার মৃত্যুর খবর পেলেন।[17]

হাফেয ইবনে আব্দুল বার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনীতে সুওয়াইবিয়া কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দুগ্ধপানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় হিজরত করার পর আবু লাহাব তাকে মুক্ত করে।[18]

ইব্নুল জাযারী বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাদীজা রা. কে বিয়ে করার পর সুওয়াইবিয়া তার নিকট যাতায়াত করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খাদীজা রা. উভয়ে তাকে সম্মান করতেন। তখনও তিনি দাসী অবস্থায় ছিলেন। পরবর্তীতে আবু লাহাব তাকে মুক্তি দেয়।“[19]

৪) আবু লাহাব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম সংবাদে আনন্দিত হয়েছিল কিংবা সুওয়াইবিয়া তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের সুসংবাদ দিয়েছিল এটা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত নয়। অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মের সুসংবাদ পেয়ে আবু লাহাব তার দাসীকে মুক্তি দিয়েছিল এ বিষয়গুলো কোনটাই সহীহ সনদে প্রমাণিত হয় নি। কেউ এর দাবী করলে তার পক্ষে বিশুদ্ধ প্রমাণ উপস্থাপন করা অপরিহার্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এর কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ পেশ করা সম্ভব হবে না।[20]

◍ চতুর্থ সংশয়ঃ সোমবারে রোযা থাকা মীলাদের দলীল?!

মীলাদের সমর্থক ভায়েরা মীলাদের পক্ষে যে সমস্ত দলীল পেশ করে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল:

সহীহ মুসলিমে আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সোমবারে রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন:

ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ

“এ দিনেই আমি ভূমিষ্ট হয়েছি এবং এ দিনে আমি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছি অথবা এ দিনেই আমার উপর কুরআন অবর্তীণ হয়েছে।”[21]

এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে তারা বলে থাকে যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্ম দিবসকে সন্মান করতেন। আর তা প্রকাশ করতেন রোযা রাখার মাধ্যমে। সুতরাং এটাকে মীলাদ বা জন্ম দিবস পালন হিসেবে ধরা যায়।[22]

➧ এই সংশয়ের জবাব:

ক) এ হাদীসে ১২ রবীউল আওয়ালে রোযা রাখার কথা বলা হয়নি বরং যেটা বলা হয়েছে তা হল,তিনি প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন। আর সোমবার তো প্রতিমাসে চার বার এসে থাকে। সুতরাং প্রতি সোমবার রোযা রাখার পরিবর্তে রবীউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখকে নির্দিষ্ট করে অনুষ্ঠান পালন করা ইসলামী শরীয়তের মধ্যে নতুন সংযোজন নয় কি? এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমলকে সংশোধন করার অপচেষ্টা করা হল না? এভাবে নিত্য-নতুন বিধান রচনা করে দ্বীন-ইসলামকে বিকৃত করা নিঃসন্দেহে জঘণ্যতম অপরাধ।

খ) দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো শুধু সোমবারকে রোযা রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে নি। বরং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহঃস্পতিবার রোযা রাখার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি এর কারণ হিসেবে বলেছেন:

تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِى وَأَنَا صَائِمٌ

“প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হোক।[23]

সুতরাং সোমবারে রোযা রাখার বিষয়টিকে মীলাদ উদযাপন করার পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করা যুক্তি বহির্ভূত এবং অগ্রহণযোগ্য।

গ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে আগমণের কারণে যদি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হয় তবে হাদীসে তো রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে। রোযা ছাড়া তো অন্য কিছু করা যাবে না। কিন্তু মীলাদের সমর্থক ভায়েরা তো সে দিন রোযা রাখেন না। কারণ,রোযা রাখলে তো খাওয়া-দাওয়া এবং কামনা-মনবাসনাকে দমন করতে হবে। তাই তারা এ পথে না গিয়ে এমন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে যেখানে খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ-ফুর্তির জমজমাট আসর বসানো হয়। সুতরাং এটা থেকে সুষ্পষ্ট ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা আর কী হতে পারে?[24]

ঘ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা ছাড়া তো অন্য কোন অনুষ্ঠান এর সাথে যোগ করেন নি। কিন্তু মীলাদপন্থী ভায়েরা মীলাদ অনুষ্ঠানের জন্য লোক-জন একত্রিত করা,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে নানা ধরণের কবিতা, নাতে রাসূল পরিবেশন, প্রশংসা-বন্দনা,মিষ্টি-মিষ্টান্ন,বিভিন্ন প্রকার খাবার-দাবার আরো কত কি আয়োজন করে থাকেন!

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা করেছেন তা কি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? এর উত্তরে তো কোন বিবেকবান মুসলমান না বলতে পারবে না। তাহলে ইসলামী শরীয়তে কেন এই সংযোজন? কেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগ বাড়িয়ে এ সকল কার্যক্রম? আল্লাহ তাআলা কি বলেন নি:

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا

“আর রাসূল তোমাদের যা এনেছেন তা তোমরা গ্রহণ করা এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।”[25]

তিনি আরও বলেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

“হে ইমানদারগণ,তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের সামনে অগ্রসর হয়ে কথা বল না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তিনি সব কিছু শুনেন এবং সব কিছু জানেন।[26]

আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

وَإِيَّاكُمْ وَالْأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

“(দ্বীনের মধ্যে) নতুন সৃষ্ট বিষয়াদী থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিস্কৃত বিষয়ই গোমরাহী।”[27]

◍ ৫ম সংশয়ঃ আয়াতের অপব্যাখ্যা

মীলাদপন্থী ভায়েরা আরেকটি দলীল পেশ করে থাকেন যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকে কেন্দ্র করে আনন্দ প্রকাশ করার ব্যাপারে কুরআনে নির্দেশ রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا

“আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত পেয়ে তারা আনন্দিত হোক।”[28]

এই আয়াতে আল্লাহর রহমত লাভ হলে আনন্দিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো দুনিয়াবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় রহমত। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ

“আমি তো তোমাকে জগত সমূহের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া: ১০৭) সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুনিয়াতে আগমন উপলক্ষ্যে আনন্দ-উৎসব বা ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা আবশ্যক।[29]

➧ এই সংশয়ের জবাব:

১) উপরোক্ত আয়াতকে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করার পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করা কুরআনকে অপব্যাখ্যা করার শামিল। কারণ,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু কওে সাবাবায়ে কেরাম,তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, চার মাযহাবের ঈমাম সহ পূর্ববর্তী নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরগণ কেউই উক্ত আয়াতের এ ধরণের ব্যাখ্যা দেন নি।

এটা পরবর্তী যুগের কিছু মানুষের সম্পূর্ণ মনগড়া ব্যাখ্যা। যুগে যুগে বাতিলপন্থী এবং গোমরাহ লোকেরা এভাবেই কুরআনের অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদের নিজস্ব ভ্রান্ত মতবাদকে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালায়। এর ভূরিভুরি উদাহরণ রয়েছে।

যাহোক,নিন্মে উক্ত আয়াতের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনগণ এবং বিশ্ব নন্দিত তাফসীরকারকগণ কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করা হল:

পূর্ণাঙ্গ আয়াতটি হল:

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدىً وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ

“হে মানুষ, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশবাণী,অন্তরের রোগ-ব্যাধীর নিরাময়,আর মুমিনদের জন্য দিক নির্দেশনা ও রহমত। বলে দিন,আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত পেয়ে তারা আনন্দিত হোক। এটা তাদের জমাকৃত সব কিছু থেকে উত্তম।” [30]

উক্ত আয়াতের তাফসীরে সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মুফাসসির আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন: الله فضل (আল্লাহর অনুগ্রহ) দ্বারা কুরআন এবং رحمته (তাঁর দয়া) দ্বারা ইসলাম উদ্দেশ্য। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তারা বলেছেন: الله فضل (আল্লাহর অনুগ্রহ) দ্বারা কুরআন এবং رحمته (তাঁর দয়া) দ্বারা কুরআনের অনুসারী হওয়া উদ্দেশ্য।

বিশিষ্ট তাবেঈ হাসান, যাহ্হাক, মুজাহিদ এবং কাতাদা (রাহ:) বলেন: الله فضل তথা আল্লাহর অনুগ্রহ দ্বারা ঈমান এবং رحمته তথা আল্লাহর দয়া দ্বারা কুরআন উদ্দেশ্য।[31]

ইবনে কাসীর রা. উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি জগতের নিকট কুরআন প্রেরণ করে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তাই তিনি সে অনুগ্রহের কথা তাদেরকে স্বরণ করিয়ে দিয়ে তাদেরকে বলেন:

“হে মানুষেরা,তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট উপদেশ বার্তা এসেছে।” অর্থাৎ এমন উপদেশ বার্তা যা অশ্লীল-অপকর্মে বাধা দেয়।

“এবং অন্তরের রোগ-ব্যাধীর নিরাময়।” অর্থাৎ এর মাধ্যমে অন্তরের যাবতীয় সংশয়-সন্দেহের নিরাময় লাভ হয় এবং মনের সকল ময়লা ও পঙ্কিলতা পরিস্কার হয়ে যায়।

“এবং দিক নির্দেশনা ও রহমত” অর্থাৎ এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হেদায়াত এবং রহমত লাভ হয়। আর এসব কেবল ঐ সকল ব্যক্তিগণই পেয়ে থাকেন যারা আল্লাহ তাআলার প্রতি গভীরভাবে ঈমান রাখে এবং কুরআনের প্রতি পরম দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস পোষণ করে। যেমন আল্লাহ তআলা অন্যত্র বলেন:

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ وَلا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَاراً

“আমি কুরআন হতে (ক্রমশ:) অবতীর্ণ করি যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।”[32]

তিনি আরও বলেন:

قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدىً وَشِفَاءٌ

“(হে নবী) বলুন: ইহা তো ঈমানদারদের জন্য হেদায়াত এবং আরগ্য।[33]

قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُون

“বলে দিন,আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত পেয়ে তারা আনন্দিত হোক। এটা তাদের জমাকৃত সব কিছু থেকে উত্তম।”[34]

অর্থাৎ তাদের নিকট আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে হেদায়াত এবং সত্য দ্বীন আগমণ করেছে এটার জন্য তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। কারণ, এটাই সব চেয়ে বড় আনন্দের বিষয়।[35]

আল্লামা ইব্নুল কায়্যেম রহ: বলেন,উক্ত আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মনিষীদের যে সকল বক্তব্য পাওয়া যায় সেগুলোর মূল কথা হল, আল্লাহর ‘অনুগ্রহ’ এবং ‘রহমত’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল: ইসলাম এবং সুন্নত।[36]

বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ইবনে আব্দুল হাদী আস সারিম আল মুনকী কিতাবে বলেন: “কুরআনের কোন আয়াত কিংবা কোন হাদীসের এমন নতুন কোন ব্যাখ্যা পেশ করা জায়েয নাই যা পূর্ববর্তী মনিষীদের জামানায় ছিল না কিংবা যা তারা জানতো না অথবা তারা জাতির সামনে তা প্রকাশ করে নি। কারণ,যদি নিত্য-নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে আসা হয় তবে ধরে নিতে হবে আগের যুগের মণিষীগণ এ ক্ষেত্রে ‘হক বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন। তারা ছিলেন হকচ্যুত এবং পরবর্তীকালের এই ব্যক্তি হকের সন্ধান পেয়েছেন! কিন্তু এই পরবর্তীদের ব্যাখ্যা যদি পূর্ববর্তী মনিষীদের ব্যাখ্যার সাথে সাংঘর্ষিক হয় হয় তবে বিষয়টি কী দাঁড়ায়? সেটা কীভাবে গ্রহণীয় হতে পারে…?“[37]

মীলাদুন্নবী উদযাপন করাকে যারা জায়েয বলেন তারা উপরোক্ত সংশয়গুলো ছাড়াও আরও অনেক সংশয় পেশ করে থাকেন। সবগুলো এখানে আলোচনা করা সম্ভব নয়। শুধু কতিপয় নমুনা তুলে ধরা হল। কিন্তু এমন একটিও বিশুদ্ধ দলীল নাই যার দ্বারা মীলাদুন্নবী বৈধ প্রমাণিত হয়। আসলে তারা তাদের বিদআতকে শরীয়তের রং চড়িয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করেছে মাত্র এবং এ কাজ করতে গিয়ে ইসলামী শরীয়তের দলীলগুলোকে নিজেরদের খেয়ালখুশী অনুযায়ী অপব্যাখ্যা করে সেগুলোকে খেলাধুলার পাত্রে পরিণত করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللَّهِ أَفَلا تَذَكَّرُونَ

“তুমি কি লক্ষ্য করেছ তার প্রতি যে তার খেয়াল-খুশিকে উপাস্য বানিয়েছে? আল্লাহ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তাকে গুমরাহ করেছে এবং তার কানে এবং অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন আর তার চোখের উপর টেনে দিয়েছেন পর্দা। অতঃপর আল্লাহর পর আর কে আছে যে তাকে সঠিক পথের সন্ধান দিবে? এর পরও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?”[38]

আল্লাহই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।

(শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয আত তুয়াইজিরী রচিত ‘আল বিদা’হ আল হাওলিয়াহ’ গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপিত এবং অনুদিত)

টিকা:

[1] সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৬
[2] সূরা যুখরুফ: ৮৬
[3] ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ৩/৫৯
[4] হাবী ১/১৯৬ কিতাব নং ২৪
[5] মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম, আলবানী রা. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলা সাহীহা (সহীহ হাদীস সিরিজ) হাদীস নং ২৭৩৫।
[6] সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: নামায এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করা।
[7] হাবী,১ম খণ্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা
[8] তুহফাতুল মাউদূদ, পৃষ্ঠা নং ৮৮। ইব্ন হাজার রাহ. এ মন্তব্যটি সহীহ বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থ ফাত্হুল বারীতে উল্লেখ করেছেন, ৯ম খণ্ড ৫৯৫ পৃষ্ঠা।
[9] ফাতহুল বারী, ৯ম খণ্ড ৫৯৫ পৃষ্ঠা।
[10] আল মাজমু শারহুল মুহায্যাব। ৮ম খণ্ড, ৪৩১ ও ৪৩২ পৃষ্ঠা।
[11] মীযানুল ইতিদাল, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৫০০, জীবনী নং ৪৫৯১

কিন্তু আলবানী রাহ. উক্ত হাদীসটিকে সহীহ সাব্যস্ত করেছেন। তবে তা আব্দুল্লাহ বিন মুহাররারের সনদে নয় বরং অন্য আরেকটি সনদে- যেটি সহীহ। আর তা হল, হাইসাম বিন জামীল বলেন, আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুসান্না ইব্ন আনাস। তিনি বর্ণনা করেছেন সুমামা বিন আনাস থেকে যে, “নবী সা. নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নিজের আকীকা প্রদান করেছেন।” দেখুন, সিলসিলা সাহীহা (সহীহ হাদীস সিরিজ),হাদীস নং ২৭২৬
কিন্তু আকীকার হাদীস থেকে মীলাদুন্নবী পালন করার দলীল নেয়ার কোন সুযোগ নেই। বরং আমরা এ দলীল নিতে পারি যে, কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করলে নিজের আকীকা নিজেই করতে পারে।(অনুবাদক)
[12] আল হাবী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ১৯৬ ও ১৯৭
[13] সূরা নিসা ২৩ নং আয়াত
[14] বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ হা/৫১০১, মুসলিম, অধ্যায়: দুধ পান, হা/১৪৪৯
[15] বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ হা/৫১০১
[16] ফাত্হুল বারী ৯ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা
[17] ত্ববাকাত ইব্ন সাদ, ১ম খণ্ড, ১০৮ ও ১০৯ পৃষ্ঠা।
[18] আল ইস্তীআব, ১ম খণ্ড, ১২ পৃষ্ঠা।
[19] আল ওয়াফা বি আহ্ওয়ালিল মুস্তাফা, ১ম খণ্ড, ১৭৮ ও ১৭৯ পৃষ্ঠা।
[20] আর রাদ্দুল ক্বাবী, পৃষ্ঠাঃ ৫৭
[21] সহীহ মুসলিম,কিতাবুস সিয়াম। অনুচ্ছেদ: প্রতিমাসে তিনটি রোযা রাখা, আরাফার দিন,আশুরার দিন,সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা মুস্তাহাব। এবং মুসনাদ আহমাদ, ৫ম খণ্ড,২৯৭ পৃষ্ঠা
[22] আল মাদখাল লি ইব্নিল হাজ্জ। ৩য় খণ্ড,২ ও ৩ পৃষ্ঠা। হিওয়ার মাআল মালেকী ৪৭ পৃষ্ঠা ও আর রাদ্দুল ক্বাবী, ৬১ পৃষ্ঠা।
[23] তিরমিযী,অনুচ্ছেদঃ সোম ও বৃহঃস্পতিবার রোযা রাখার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, হাদীস নং ৪৪।
[24] আল ইনসাফ, পৃষ্ঠা নং ৪৪।
[25] সূরা হাশর: ৭
[26] সূরা হুজুরাত: ১
[27] মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম। আলবানী রা. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলা সাহীহা, হাদীস নং ২৭৩৫।
[28] সূরা ইউনুস: ৫৮
[29] সূরা আম্বিয়া: ১০৭
[30] সূরা ইউনুস: ৫৭ ও ৫৮
[31] তাফসীর কুরতুবী , ৮ম খণ্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা।
[32] বনী ইসরাঈল: ৮২
[33] ফুসসিলাত (হা মীম সাজদাহ): ৪৪
[34] সূরা ইউনুস: ৫৭
[35] তাফসীর ইবনে কাসীর ২য় খণ্ড ৪২০ ও ৪২১ পৃষ্ঠা
[36] ইজতিমাউল জুয়ূশুল ইসলামিয়া পৃষ্ঠা: ৬
[37] আস সারিম আল মুনকী, পৃষ্ঠা: ৪২৭।
[38] সূরা জাসিয়া: ২৩

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member