ইন্টারফেয়ার: পর্ব-৪
কুফফারদের দ্বারা ইসলামের যে বিধানটি সবচেয়ে বেশি বিকৃত করা হয়েছে সেটি হল “জিহাদ”। জিহাদ হল জালিমের জুলুম, শোষকের শোষণ এবং ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মাধ্যম। কাজেই ইসলামকে নিষ্ক্রিয় বানিয়ে ফেলতে হলে সবার আগে এই জিহাদকে থামিয়ে দিতে হবে। তারা তাদের পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে গেল।
জিহাদের নামে বিভ্রান্তিঃ
প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে, জিহাদের বিধানটি কেন দেওয়া হয়েছে। আগেই বলেছি ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। কাজেই মানবজীবনের সর্ববিষয়ে এর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আর ইসলাম মানুষের সহজাত ফিতরাতের বাইরে কোন ধর্ম নয়। যেমন সন্ন্যাস। সন্ন্যাস নেওয়া, বিয়ে না করে একা একা বনেজঙ্গলে কাটানো ইত্যাদি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি নয়। তাই ইসলামে এসবের জায়গা নেই। বরং একটি সুস্থ স্বাভাবিক সামাজিক জীবনের মাধ্যমেই কল্যাণ নিহিত রেখেছে। আর তাই আল্লাহর রাসূল বিয়ে করেছেন, স্ত্রী সহবাস করেছেন, রসিকতা করেছেন, মানবীয় সব স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য তাঁর মধ্যে ছিল। আর ইসলাম এসবকেও আল্লাহর উপাসনার অন্তর্ভুক্ত করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তেমনি যুদ্ধ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির একটি। মানবজীবন থেকে যুদ্ধ বিগ্রহ কখনোই পৃথক নয়। মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে যুদ্ধ বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে ধর্ম ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গেছে সেখানে যুদ্ধের মত বিষয়ের কোন স্থান থাকবে না, তাই কি হয়?? তাই ইসলামে যুদ্ধ আছে। আর ইসলামে যুদ্ধের এ বিশেষ রূপের নামই জিহাদ।
হিন্দুশাস্ত্রে আছে, মানুষের শত্রু ছয়টি- কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ আর মাৎসর্য (হিংসা)। ইসলাম যেহেতু জীবনঘনিষ্ঠ ধর্ম, তাই ইসলাম কোনকিছুকে এভাবে ঢালাওভাবে শত্রু বলতে নারাজ। কারণ এ ছয়টি বৈশিষ্ট্যই মানুষের স্বভাবজাত আর এগুলোকে পুরোপুরি ত্যাগ করা প্রায় অসম্ভব। তাই ইসলাম বলল, এসব শত্রু নয় বরং সংশোধন করা হলে এগুলোই মানুষের উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হতে পারে। যেমন কামকে পরিশুদ্ধ করা হলে তা প্রেমে রূপ নেয়। ক্রোধ পরিশুদ্ধ হলে বীরত্বে রূপ নেয়। লোভ নিন্দনীয়, কিন্তু লোভ যদি হয় জান্নাতের জন্য তবে সেটাই মানুষের কামিয়াবির কারণ হতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে যুদ্ধ, রক্তপাত-ইত্যাদি আপাত অনাচারের পরিশুদ্ধ রূপ আছে। আর সেটার নামই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ (আল্লাহ রাস্তায় জিহাদ)।
উম্মাতে মুহাম্মদীর অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হল এই জিহাদ। অন্যান্য নবীদের জন্য জিহাদের হুকুম ছিল, কিন্তু তাঁদের সব উম্মাতের জন্য তা ফরয ছিল না। কিন্তু রাসূল (সা) এর সাথে সাথে তাঁর উম্মাতের জন্য সাধারণভাবে জিহাদকে ফরয করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ অন্য উম্মাত থেকে আমাদের পৃথক করেছেন, তাদের চেয়ে আমাদের অপর দায়িত্ব বেশি দিয়েছেন। যার দায়িত্ব বেশি তার মর্যাদাও বেশি। কাজেই বলা যায়, জিহাদের হুকুমের মাধ্যমে আল্লাহ্ উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সম্মানিত করেছেন।
জিহাদের হুকুম আসার আগে যুদ্ধ-রক্তপাতের মত বিষয়গুলোকে ধর্মের বাইরে হিসেবেই গণ্য করা হত। সেসময় ধর্ম বলতে প্রেম, ভাতৃত্ব, মমতা ইত্যাদিকেই কেবল বোঝানো হত। কঠোরতা, লড়াই ইত্যাদিকে অধর্ম আর নিন্দনীয় মনে করা হত।
রাসূল (সা) মক্কায় যে ১৩ বছর কাটিয়েছেন সেসময় ইসলামের ওপর অবর্ণনীয় আঘাত এসেছে। আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূলের ওপর সীমাহীন অত্যাচার করা হয়েছে, রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে তাঁর পবিত্র দেহ। অত্যাচারের প্রখরতা এত বেশি ছিল যে তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন বারবার। সাহাবাদের ভয়ঙ্কর অত্যাচার করে শহীদ করা হয়েছে। খাব্বাব (রা) কে জ্বলন্ত আগুনে শুইয়ে তাঁর চামড়া পোড়ানো হয়েছে। সেসব তাঁরা সহ্য করেছেন। তখনও জিহাদের হুকুম আসে নি। রাসূল (সা) সাহাবাদের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরপর রাসূল (সা) এর মদীনায় হিজরতের পর আবু জাহেল যখন আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিল তখন আল্লাহ্ রাসূল (সা) কে হুকুম করলেন সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে। এবার আর আঘাত কেবল সহ্য করে যাওয়া নয়, বরং জবাব দিতে শেখা।
এসময় রাসূল (সা) এর মনে কিছুটা সংশয় দেখা দিল। যুদ্ধ মানে তো রক্তপাত, প্রাণহানি। আল্লাহর রাসূলের মন তো মানুষের কল্যাণের জন্য কাঁদে, তাঁর পক্ষে কী করে মানুষের ওপর তরবারি চালানো সম্ভব?
তাঁর এ সংশয় নিরসনে আল্লাহ তখন সূরা বাক্বারার কয়েকটি আয়াত নাযিল করলেনঃ
“আর লড়াই কর আল্লাহর রাস্তায় তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। তবে সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” [বাক্বারাঃ১৯০]
“আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফিতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।” [বাক্বারাঃ ১৯১]
“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, যদিও তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় হয়। হয়তো বা তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দ নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তা তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত তোমরা জান না, আল্লাহ্ জানেন।” [বাক্বারাঃ ২১৬]
তখন আল্লাহর রাসূল (সা) আবিষ্কার করলেন ইসলামের নতুন রূপ, নতুন সৌন্দর্য। কেবল মুখ বুজে মার খেয়ে যাওয়ার নাম ইসলাম নয়, জালিমের জুলুম সহ্য করে যাবার নাম ইসলাম নয়। ইসলাম অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানে, প্রতিরোধ করতে জানে। অত্যাচারীকে জবাব দিতে জানে। ইসলামের শত্রুদের গর্দান উড়িয়ে দিতে জানে। আল্লাহ্র জমিনে আল্লাহ্র কালিমার পতাকা প্রতিষ্ঠিত করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে জানে।
আর সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? যে ধর্ম এসেছে দুনিয়ায় আল্লাহ্র একত্মবাদ প্রতিষ্ঠা করতে, এসেছে বিজয়ী হতে, সে ধর্মে কি সশস্ত্র সংগ্রাম থাকবে না? এ পৃথিবীতে যখনই সত্য এসেছে, তাকে নির্মূল করতে মিথ্যা উঠেপড়ে লেগেছে। আর মিথ্যার মোকাবেলায় সত্যকে কঠোর হতে হয়, এটাই নিয়ম। বাতিলকে ধ্বংস করে দুনিয়ার বুকে ইসলামের বিজয়নিশান ওড়াতে হলে তাই অস্ত্র হাতে নেবার দরকার আছে, শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করে দেবার দরকার আছে। আর এ পদ্ধতিই হল জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।
সেদিন থেকে মুসলিমদের ওপর লড়াই ফরয হয়ে গেল। আর কাফিররা মুসলিমদের দেখে কলিজায় কাঁপন ধরতে দেখল। কারণ সেদিন থেকে ইসলাম আর নিস্পৃহ প্রতিরোধের নাম নয়, বরং আঘাতের বদলে আঘাত করতে জানে। রক্তের বদলা রক্তে নিতে জানে। আর বদরের প্রান্তর থেকে মুসলিমদের বিজয়নিশান ওড়া শুরু হয়ে গেল। সেই থেকে জিহাদ আজও চলে যাচ্ছে, কাফিরদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে।
২।ইসলাম কোন কাগজেমকলমের থিওরির নাম নয়, একটা কমপ্লিট কোড অফ লাইফের নাম। তাই এখানে কেবল অহিংসার গৌতমীয় বাণী চলে না। মুসলিমদের শত্রু আছে, মিত্র আছে। কারা শত্রু আর কারা মিত্র-সেটা কুরআন পরিষ্কার করে দিয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে যুগে যুগে ষড়যন্ত্র হয়েছে। আর মুসলিমরা যদি জিহাদের মাধ্যমে সেইসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা না করতেন, তবে বহু আগেই দুনিয়া থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে যেত। রাসূল (স) বলেনঃ
“আমার উম্মাতের একটি দল হকের পথে যুদ্ধ করতে থাকবে এবং কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত তারা বিজয়ী থাকবে।”
[সাহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ ২০/৪৭১৮]
আজকে ইসলামের অস্তিত্বের মূলে আছে এই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, মুসলিমদের দ্বীনের প্রতি আপোসহীন মনোভাব। তাই কাফিরদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা এই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।
রাসূল (সা) কালিমা, সালাত, সাওম, যাকাত ও হাজ্জকে তুলনা করেছেন একটি বাড়ির পিলার বা স্তম্ভের সাথে। আর জিহাদকে তুলনা করেছেন সেই বাড়ির ছাদের সাথে।
একটু চিন্তা করলেই তুলনার যথার্থতা বোঝা যায়। সালাত, সাওম বা অন্যান্য ইবাদাতগুলো ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করে। কিন্তু ইসলামের ওপর আঘাত আসবে, তখন এই ভিত্তি নড়ে উঠবে। তাই একে ডিফেন্ড করতে দরকার ছাদ বা সিলিং। জিহাদ হল এই ছাদ। কেননা জিহাদ দ্বারাই ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ইসলামের বিরুদ্ধে আসা আঘাতকে প্রতিরোধ করা যায়। বাতিলের মোকাবিলা করে ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখতে হলে জিহাদ অপরিহার্য।
এখন ইসলামের শত্রুরা দেখল মুসলিমদের মধ্যে জিহাদের এই মানসিকতা দূর করতে না পারলে তাদের ওপর আধিপত্য করা সম্ভব না। অথচ জিহাদ বিষয়টি ইসলামের সাথে এমনভাবে জড়িত যে একে মুছে ফেলাও অসম্ভব। তাহলে কী করা যায়?
হ্যাঁ, উপায় আছে। জিহাদের অর্থ বদলে দিতে হবে। জিহাদ অর্থ সাহাবারা যা বুঝতেন, এ যুগের মুসলিমদের তা বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাদের মধ্যে জিহাদ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিতে পারলেই সফল হওয়া যাবে।
কাজেই জিহাদের অর্থ বিকৃতি করতে হবে। বোঝাতে হবে মনের জিহাদই বড় জিহাদ, কলমের জিহাদ হল জিহাদ, ভাষণের জিহাদ হল জিহাদ। পাঠ্যপুস্তকে ছড়িয়ে দিতে হবে হাদিসে আছে বড় জিহাদ হল নফসের জিহাদ, আর অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা নাকি ছোট জিহাদ !!
আল্লাহু আকবার। প্রথমত, হাদিসটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। দ্বিতীয়ত, স্বাভাবিক সেন্সেও বোঝা যায় কথাটির ভিত্তি নেই। যে আল্লাহর রাসূল ২৭ টি যুদ্ধ করলেন, তাঁর দাঁত মুবারক শহীদ হল, দেহ রক্ত রঞ্জিত হল, এত সাহাবা শহীদ হলেন, সে জিহাদ “ছোট” জিহাদ?? যে আল্লাহর রাসুল বললেন মুজাহিদের চেয়ে বেশি নেককার কেউ হতে পারে না, কেননা রশিবদ্ধ অবস্থায় মুজাহিদের ঘোড়া যে ঘোরাফেরা করে, এতেও তাঁর জন্য নেকি লেখা হয়; সে মুজাহিদ কি “নফসের মুজাহিদ”???
বুখারি-মুসলিমসহ প্রত্যেকটি সহীহ হাদীস গ্রন্থের “কিতাবুল জিহাদ” অধ্যায়ে জিহাদ বলতে সশস্ত্র জিহাদকেই বোঝানো হয়েছে। এমনকি সূরা বাক্বারার ২১৬ নং আয়াত, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে আল্লাহ্ “জিহাদ” শব্দটিও ব্যবহার না করে সরাসরি ক্বিতাল (লড়াই করা/ হত্যা করে) বলেছেন, যাতে জিহাদের অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ না থাকে।
হ্যাঁ, জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ চেষ্টা করা, সংগ্রাম করা, সেটা ঠিক। কিন্তু সালাত মানে তো দুআ করা, নিতম্ব হেলানো, কিংবা সিয়াম মানে তো ‘বিরত থাকা”। এখন কেউ কি নিতম্ব হেলিয়ে ব্যায়াম করে বলবেন “আমি সালাত আদায় করেছি” বা পরীক্ষায় নকল করা থেকে “বিরত” থেকে বলবেন ‘আমি সিয়াম পালন করেছি?” বলবেন না। কারণ সেখানে আভিধানিক আর পারিভাষিক অর্থের পার্থক্য সবার কাছে স্পষ্ট। যত গোলমাল বাধে জিহাদকে নিয়ে।
কারণ মুসলিমদের দুর্বল করার মোক্ষম উপায় হচ্ছে জিহাদের অর্থের বিকৃতি সাধন। যে সূরায় আল্লাহ্ বলেছেন “তোমাদের ওপর সিয়ামকে ফরয করা হল” একই সূরায় আল্লাহ্ বলেছেন “তোমাদের ওপর যুদ্ধকে ফরয করা হল”। অথচ সিয়ামকে নিয়ে কাফিররা দুশ্চিন্তা করে না, স্বয়ং বুশ-ওবামা হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টি ডাকে, কিন্তু জিহাদের নাম শুনলে সবার কপালে ঘাম ছুটে যায়, মুজাহিদীনদের “টেররিস্ট” আখ্যা দিতে উঠেপড়ে লেগে যায়। কারণ ইসলামের শত্রুরা ভালোভাবেই জানে, যতদিন দুনিয়ার বুকে মুজাহিদ থাকবে, জিহাদ থাকবে, ক্বিতাল থাকবে, ততদিন তাদের মিশন সফল হবে না। ততদিন ইসলামকে মুছে ফেলা যাবে না। আল্লাহ্ বলেনঃ “তারা (কাফিররা) তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করতে চায়। কিন্তু আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের পূর্ণতা বিধান করবেন, যদিও কাফেররা তা অপ্রীতিকর মনে করে।” [সূরা তাওবাহঃ ৩২] আর এই নূরের পূর্ণতা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমেই।
এবার আসুন আল্লাহর রাসূল (সা) এর মুখ থেকেই শোনা যায় জিহাদ কী জিনিস। সেটা কি মনের জিহাদ নাকি তরবারির জিহাদ।
তারা জিজ্ঞাসা করলেন, “ও রাসূলাল্লাহ, জিহাদ কী?” তিনি উত্তর করলেন, “যদি তোমাদের দেখা হয় (যুদ্ধক্ষেত্রে) তবে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।” তারা জিজ্ঞাসা করলেন, “সবচেয়ে উত্তম জিহাদ কোনটি?” তিনি উত্তর করলেন, “সেই ব্যাক্তির যার ঘোড়াকে হত্যা করা হয়েছে এবং তার রক্ত ঝরানো হয়েছে।” (মুসনাদ ইমাম আহমাদ)
কাজেই বোঝা গেল জিহাদ শব্দের অর্থ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। জিহাদ হল সেই অস্ত্র যা ইসলামের শত্রুদের শরীরে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়। জিহাদকে বিকৃত করে তারা মুসলিমদের যুবকদের মধ্যে দুনিয়ার মোহ আর তাদের গোলামির মানসিকতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। একের পর এক মুসলিম দেশগুলো আক্রমণ করে লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের মারছে, বন্দী করছে, আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করছে, শিশুদের জবাই করছে। আর এ সবের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র হাতে নির্যাতিতদের পক্ষ নিয়ে লড়ে যাচ্ছে তাদের “টেররিস্ট” আখ্যা দিচ্ছে। আর আমরা তাদের কথায় ভুলে ‘শান্তি-শান্তি’ জপছি আর জালিমদের বিপরীতে মজলুমদের দুষছি।
মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তারা কীভাবে মডারেট মুসলিমদের একটি প্রজন্ম তৈরি করছে সেটা নিয়ে পরবর্তী পর্বে লিখছি।
[To be continued…]
“আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।” [সূরা তাওবাহঃ ১১১]
লেখক : জুবায়ের হোসাইন
উৎসঃ ফেসবুক