আমাদের বিজয়

সকল প্রশংসা সমস্ত সৃষ্টিজগতের রব একমাত্র রব মহান আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি আমাদেরকে এই বিজয় দান করেছেন ৷ আর অসংখ্য দরুদ ও সালাম মানবতার মহান মুক্তিদূত বিশ্বনবী মুহাম্মদ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) এর জন্য ৷

না ! আমরা ভূলিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাঁড়া জাগানো সেই জ্বলন্ত অগ্নিকণ্ঠ

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ৷”

(মাহফুজুর রহমান প্রযোজিত ১৯৭১ এর তথ্যচিত্র)

আমরা ভূলিনী মেজর জিয়াউর রহমানের কথা ৷ ভূলিনী শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে ৷ ভূলিনী মজলুম জননেতা ভাসানী সাহেবকেও ৷ ভূলিনী বাংলার বাঘ এ.কে. ফজলুল হককে ৷ আমরা ভূলিনি বেদনাগাঁথা সেই তেজদীপ্ত স্মৃতিকথা যখন স্বাধীনতার মশাল বুকে নিয়ে যুবক তার মাকে বলেছিল—

“মা, দোয়া কর ! তোমার ছেলে আজ তোমার সন্তানদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চলেছে ৷ বর্বর পাকিস্তানি জঙ্গিগষ্ঠী তোমার সন্তাৱদের ওপর নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালিয়েছে ৷ সেখানে তোমার সন্তানদের ইজ্জতের ওপর আঘাত করেছে, সেখানে তো আর তোমার সন্তানরা চুপ করে বসে থাকতে পারে না ৷ তাই আজ তোমার হাজার হাজার বীর সন্তান বাঁচার দাবী নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে ৷ তোমার নগণ্য সন্তান তাদের মধ্যে একজন ৷ পরম করুনাময় আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে করি তোমার সন্তানরা যেন বর্বর পাকিস্তানি জঙ্গিগষ্ঠীকে কতল করে এদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে পারে ৷ এদেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’ সোনার বাংলাদেশ ৷ এদেশের তোমার কত বীর সন্তান শহীদ হয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই ৷ ইনশাল্লাহ ! শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না ৷ দেশকে স্বাধীন করে ছাড়বই ৷ জয় আমাদের সুনিশ্চিত ৷ দোয়া করো যেন বিজয়ের গৌরব নিয়ে ফিরে আসতে পারি , নচেৎ বিদায় ৷”

(মুক্তিযোদ্ধা: মো:খোরশেদ আলম , সেক্টর ২, ২৩/৪/৭১, তথ্যসূত্র: একাত্তরের চিঠি, পৃষ্ঠা ৮)

তবে এই বিজয় কোন সেক্যুলার বা নাস্তিক্য বেমোতে আক্রান্ত লোকদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে নিরবতা পালনের নাম নয়, তরুণ- তরুণীদের নোংরা পদস্খলন নয়, টাকা নষ্ট করে নারী ও পরুষের অবাধে হাতে হাত রেখে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে World record করার নাম নয়, রূপ লাবণ্য প্রদর্শণকারি বেহায়া ও চরিত্রহীনাদের প্রদর্শনের কোন বিশেষ দিন নয়, রাস্তায় টিভিতে ও রেডিওতে গান বাজিয়ে, সিনেমা দেখিয়ে ফাল্তু অপসংস্কৃতি চর্চার দিনও নয়, নারী স্বাধীনতার নামে তাকে পণ্য বানিয়ে ব্যাবসা বানিজ্য করার নামও নয় আবার এটি কোন দল- মতের দিকে কাঁদা ছুড়াছুঁড়ির দিনও নয়, আর এটি ক্যালেন্ডার দেখে কোন বিশেষ দিবস পালনের নামও নয় বরং তা হলো মহান আল্লাহর দেওয়া এক বিশেষ নিয়ামত

ﻭﺍﺧﺮﻱ ﺗﺤﺒﻮﻧﻬﺎ – ﻧﺼﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻓﺘﺢ ﻗﺮﻳﺐ – ﻭﺑﺸﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ٥

“এবং আরও একটি অনুগ্রহ তোমাদের দেবেন ৷ আল্লাহর পক্ষ্য থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয় ৷ মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দিন ৷”( সূরা ছফ ৬১:১৩)

এই বিজয় তো জুলুমের বিপক্ষে মাজলুমের গর্জে ওঠার বিজয় ৷ যে বিজয় মহান আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাইলকে দিয়েছিলেন ৷

সেখানে কিলকের মত করে জুলুমের সাম্রাজ্য গেড়ে বসেছিল ফেরাউন—

ﻭﻓﺮﻋﻮﻥ ﺫﻱ ﺍﻻﻭﺗﺎﺩ ٥ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻃﻐﻮ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻠﺪ ٥ ﻓﺎﻛﺜﺮﻭﺍ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻟﻔﺴﺎﺩ ٥

“(আপনি কি লক্ষ্য করেননি ! ) বহু কিলকের অধিপতি ফেরাউনের প্রতি, যে তাঁর দেশে সীমালঙ্ঘণ করেছিল ৷ তথায় সে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল ৷”( সূরা ফজর ৮৯:১০-১২)

মহান আল্লাহ আরও বলেন—

ﺍﻥ ﻓﺮﻋﻮﻥ ﻋﻼ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﺟﻌﻞ ﺍﻫﻠﻬﺎ ﺷﻴﻌﺎ ﻳﺴﺘﻀﻌﻒ ﻃﺂﺋﻔﺔ ﻣﻨﻬﻢ ﻳﺬﺑﺢ ﺍﺑﻨﺎﺀﻫﻢ ﻭﺑﺴﺘﺤﻲ ﻧﺴﺎﺀﻫﻢ – ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻔﺴﺪﻳﻦ ٥

“নিশ্চয়ই ফিরআউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল ৷ সে জাতিকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে একটি দলকে দুর্বল করেছিল ৷ সে তাদের পুত্র সন্তানদের জবাই করত এবং নারীদের জীবিত রাখত ৷ নিশ্চয়ই সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভূক্ত ৷ “(সূরা ক্বাসাস ২৮:৪)

অতঃপর মহান আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহ করলেন, যেভাবে তিঁনি বলেছেন

ﻭﻧﺮﻳﺪ ﺍﻥ ﻧﻤﻦ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺳﺘﻀﻌﻔﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﻧﺠﻌﻠﻬﻢ ﺍﺋﻤﺔ . ﻭﻧﺠﻌﻠﻬﻢ ﺍﻟﻮٰﺭﺛﻮﻥ ٥ ﻭﻧﻤﻜﻦ ﻟﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﻧﺮﻱ ﻓﺮﻋﻮﻥ ﻭﻫٰﻤٰﻦ ﻭﺟﻨﻮﺩﻫﺎ ﻣﻨﻬﻢ ﻣﺎ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺤﺬﺭﻭﻥ ٥

“দেশে যাদেরকে দুর্বল করা হয়েছিল আমার ইচ্ছে হলো তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার ও তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকার বানানোর ৷ (আরো চাইলাম) তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরআউন, হামান ও তাঁর সৈন্যবাহিনীকে দেখিয়ে দেওয়ার যা তারা সেই দুর্বল লোকদের থেকে আশঙ্কা করত ৷”( সূরা ক্বাসাস ২৮:৫-৬)

সুতরাং হে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান আনয়নকারীগণ ! যদি আপনি সত্যিই ইমানদার হয়ে থাকেন তবে বিজয়কে আল্লাহর নেয়ামত গণ্য করে তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করুন —

ﺍﺫﺍ ﺟﺎﺀ ﻧﺼﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻔﺘﺢ ٥ ﻭﺭﺍﻳﺖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺪﺧﻠﻮﻥ ﻓﻲ ﺩﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻓﻮﺍﺟﺎ ٥ ﻓﺴﺒﺢ ﺑﺤﻤﺪ ﺭﺑﻚ ﻭﺍﺳﺘﻐﻔﺮﻩ – ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﺗﻮﺍﺑﺎ ٥

“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং যখন তুমি দেখবে মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে ৷ তখন তুমি তোমার রবের প্রশংসা কর এবং তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর ৷ নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী ৷ “(সূরা নাসর ১১০:১-৩)

তবে বিজীত জাতি তখনই তাঁদের বিজয়কে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবে যখন তারা রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) ও সাহাবীদের অনুসরণে নিজেদের শৃঙ্খলাকে ঢেলে সাজাবে ৷ অন্যথায় জাতি এক বিশাল ধ্বংসযজ্ঞে নিমজ্জিত হবে ৷

এবার কোরআন, সুন্নাহর আলোকে সেই বিজীত জাতির কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো যার আদলে জাতির উপর আল্লাহর রহমত নেমে আসে এবং যার অভাবে জাতির উপর আল্লাহর আযাব নেমে আসে এবং জাতির বিজয় বা সার্বভৌমত্ব নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায় ৷

১৷ তারা আল্লাহর সাথে শিরক করবে না:

ﺍﻥ ﺍﻟﺸﺮﻙ ﻟﻈﻠﻢ ﻋﻈﻴﻢ ٥

“নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে সবচাইতে বড়় জুলুম ৷”( সূরা লুক্বমান ৩১:১৩)

ﻗﻞ ﺳﻴﺮﻭﺍ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻓﺎﻧﻈﺮﻭﺍ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻥ ﻋٰﻘﺒﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ . ﻣﻦ ﻗﺒﻞ – ﻛﺎﻥ ﺍﻛﺜﺮﻫﻢ ﻣﺸﺮﻛﻴﻦ ٥

” বল, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর চিন্তা করে দেখ পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে ৷ তাদের অধিকাংশ ছিল মুশরেক ৷”( সূরা রূম ৩০:৪২)

সুতরাং মাজার পূজা, মূর্তি পূজা, ওরস পালন, পীর পূজা, মধ্যস্হতা স্হাপন, তাবিজ-কবজ, ভ্রান্ত ঝাঁড় ফুঁক, ভাগ্য গণনা, ভ্রান্ত নযর মানত, কুসংস্কার, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা ইত্যাদি সর্বপ্রকার শির্ক বর্জন করতে হবে ৷ পাশাপাশি যা এতে অনুপ্রবেশ ঘটায় তাও পরিত্যাগ করতে হবে যেমন -বিদআত ৷

২৷ মানত বা বরকত লাভ নয় বরং মাজার বা পাকা কবরকেই টিকিয়ে রাখবে না ৷ তাকে ঘিরে ওরস বা উৎসব পালন করবে না ৷ তাদের মাঝে কোন জীবের প্রতিকৃতি বা দাড়িয়ে নিরবতা পালন বা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মত কোন প্রতিকৃতি তাদের মাঝে বিরাজ করবে না ৷

আবুল হাইয়্যাজ আসাদী ( ﺭﺣﻴﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ) বলেন,

ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﻋﻠﻲ ﺑﻦ ﺍﺑﻲ ﻃﺎﻟﺐ ﺍﻻ ﺍﺑﻌﺜﻚ ﻋﻠﻲ ﻣﺎ ﺑﻌﺜﻨﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥ ﻻ ﺗﺪﻉ ﺗﻤﺜﺎﻻ ﺍﻻ ﻃﻤﺴﺘﻪ ﻭﻻ ﻗﺒﺮﺍ ﻣﺸﺮﻓﺎ ﺍﻻ ﺳﻮﻳﺘﻪ —

“আলী ইবনে আবু তালেব ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কাজে পাঠাব না যে কাজে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) আমাকে পাঠিয়েছেন ৷ তা হল “তুমি কোন প্রতিকৃতি দেখলে চূর্ণ-বিচূর্ণ না করে ছাড়বে না এবং কোন উঁচু কবরকে সমতল না করে ছাড়বেনা ৷” (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১২: জানাযাহ পর্ব, অনুচ্ছেদ ৩১, হাদীস ৯৬৯)

আতা ইবনে ইয়াসার ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেন,

ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ . ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻻ ﺗﺠﻌﻞ ﻗﺒﺮﻱ ﻭﺛﻨﺎ ﻳﻌﺒﺪ ﺍﺷﺘﺪ ﻏﻀﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻲ ﻗﻮﻡ ﺍﺗﺨﺬﻭﺍ ﻗﺒﻮﺭ ﺍﻧﺒﻴﺎﺋﻬﻢ ﻣﺴﺎﺟﺪﺍ —

“অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ )বলছেন, ‘ হে আল্লাহ ! আমার কবরকে মূর্তি পূজার স্হানের মত কোন ইবাদতের স্হানে পরিণত হতে দিও না ৷ কারণ সে জাতির প্রতি আল্লাহ অত্যন্ত রাগান্নিত হন যারা তাদের নবী-পয়গম্বরদের কবরকে মসজিদ বানায় ৷”( মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় ৯, রেওয়ায়েত ৮৫, ইমাম শাফিঈ এর শর্তে সহীহ)

আবু হুরায়রা ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) এর বর্ণনায় আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,

ﻭﻻ ﺗﺠﻌﻠﻮﺍ ﻗﺒﺮﻱ ﻋﻴﺪﺍ —

“তোমার আমার কবরকে ঈদ, উৎসব বা ওরস পালনের স্হানে পরিণত করো না ৷”

( সুনান আবূ দাঊদ, অধ্যায় ৫: হাজ্জ্ব, অনুচ্ছেদ ১০০, হাদীস ২০৪২, হাদীসের মান: সহীহ, তাহক্বীক: আলবাণী)

৩৷ তাদেরকে কোরআন ও সুন্নাহকে শিক্ষা করার ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে হবে ৷ কারণ বনী ইসরাইল বীজিত হয়েও ধ্বংস হবার অন্যতম একটি কারণ ছিল তাদের প্রতি নাযিলকৃত কিতাবকে উপলব্ধি না করা ৷

ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺣﻤﻠﻮﺍ ﺍﻟﺘﻮﺭﺓ ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﺤﻤﻠﻮﻫﺎ ﻛﻤﺜﻞ ﺍﻟﺤﻤﺎﺭ ﻳﺤﻤﻞ ﺍﺳﻔﺎﺭﺍ – ﺑﺌﺲ ﻣﺜﻞ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﺍﻟﺬﻳﻦ . ﻛﺬﺑﻮﺍ ﺑﺄﻳﺖ ﺍﻟﻠﻪ – ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﻬﺪﻱ ﺍﻟﻔﻮﻡ ﺍﻟﻈﻠﻤﻴﻦ ٥

“যাদেরকে তাওরাত দেওয়া হয়েছিল অতঃপর তারা তা উপলব্ধি করে নি, তারা হলো সেই গাধার মত যে পুস্তক বহন করে ৷ তাদের দৃষ্টান্ত কতই না নিকৃষ্ট যারা আল্লাহর আয়াতে মিথ্যারোপ করে ৷ আর আল্লাহ জালেম জাতিকে হেদায়াত করেন না ৷”( সূরা জুমু’আ ৬২:৫)

এরাই হলো সূরা ফাতিহার ৭ নং আয়াতে বর্ণিত ﻣﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ তথা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা অভিশপ্ত জাতি৷

৪৷ তারা রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) এর সীরাতকে যথাযথভাবে ব্যাপক চর্চায় রাখবে ও তাঁর ব্যবস্হা করবে ৷

কারণ তাঁর আদর্শই জাতিকে মুক্তি দিতে পারে ৷

ﻭﻣﺂ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺍﻻ ﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﻌﻠﻤﻴﻦ ٥

“আমি তোমাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি ৷”(সূরা আম্বিয়া ২১:১০৭)

৫৷ তারা সালাত কায়েম করবে, ভালকাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজের নিষেধ করবে, তাদের মাঝে অশ্লীলতা এ ব্যাভিচার থাকবেনা, তারা ওজন ও পরিমাপে কম দেবে না, তারা যাকাত আদায় করবে, তাঁরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কৃত ওয়াদা তথা পূর্ণ আনুগত্য, বিচার ফয়সালা, বিবাদ মিমাংসা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহকে পূর্ণ অগ্রাধিকার দেবে ৷ তারা নিজ দেশ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করবে ৷

ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻥ ﻣﻜﻨﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﺍﻗﺎﻣﻮﺍ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﺍﺗﻮﺍ ﺍﻟﺰﻛﻮﺓ ﻭﺍﻣﺮﻭﺍ . ﺑﺎﻟﻤﻌﺮﻭﻑ ﻭﻧﻬﻮﺍ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻨﻜﺮ – ﻭﻟﻠﻪ ﻋٰﻘﺒﺔ ﺍﻻﻣﻮﺭ ٥

“::তারা হলো এমন লোক যখন তাদেরকে দুনিয়ার কোন কিছুতে ক্ষমতা দেওয়া হয় তখন তাঁরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে, ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ থেকে নিষেধ করবে ৷ আর প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত ৷”( সূরা হাজ্জ্ব ২২:৪১)

ﻭﻗﺮﻥ ﻓﻲ ﺑﻴﻮﺗﻜﻦ ﻭﻻ ﺗﺒﺮﺟﻦ ﺗﺒﺮﺝ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﺍﻻﻭﻟﻲ —

“(হে নারীরা !) তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্হান করবে এবং মুর্খতার যুগের নারীদের মত নিজেদের প্রদর্শন করবে না ৷”(সূরা আহযাব ৩৩:৩৩)

ﻭﻻ ﺗﻘﺮﺑﻮﺍ ﺍﻟﺰﻧﻲ – ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻓﺎﺣﺸﺔ ﻭﺳﺎﺀ ﺳﻠﻴﻼ ٥

“আর ব্যাভিচারের কাছেও যেও না ৷ নিশ্চয়ই এটি অত্যন্ত অশ্লীল কাজ এবং মন্দ কাজ ৷”( সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:৩২)

যে মেয়েকে বিয়ের জন্য পছন্দ করা হবে তাঁর একটি গুনের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

ﻭﻻ ﻣﺘﺨﺬﺕ ﺍﺧﺪﺍﻥ —

“সে যেন গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত না থাকে ৷”( সূরা নিসা ৪:২৫)

পুরুষকে বলা হয়েছে

ﻭﻻ ﻣﺘﺨﺬﻱ ﺍﺧﺪﻟﻦ —

“তুমি গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হয়ো না ৷”( সূরা মায়িদাহ ৫:৫)

(বি: দ্র: ইসলাম শুধু তথাকথিত প্রেম নয় বরং পরস্পর কোন নারী বা পুরুষ নিয়ে চিন্তা করাকেও ব্যাভিচার হিসেবে দেখে ৷)

ﻭﺍﻗﻴﻤﻮﺍ ﺍﻟﻮﺯﻥ ﺑﺎﻟﻘﺴﻂ ﻭﻻ ﺗﺨﺴﺮﻭﺍ ﺍﻟﻤﻴﺰﺍﻥ ٥

“আর তোমারা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না ৷”( সূরা রহমান ৫৫:৯)

– ﻭﺍﺗﻮﺍ ﺍﻟﺰﻛﻮﺓ –

“তোমরা যাকাত আদায় কর ৷”( সূরা বাক্বারাহ ২:৪৩)

ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺍﻭﻓﻮﺍ ﺑﺎﻟﻌﻘﻮﺩ ٥

“হে ইমানদারগণ ! তোমরা চুক্তি সমূহ পূরণ কর ৷”(সূরা মায়েদাহ ৫:১)

ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺤﻜﻢ ﺑﻤﺎ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﻭﻟﺌﻚ ﻫﻢ ﺍﻟﻜﻔﺮﻭﻥ –

“আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না তারাই কাফের ৷”( সূরা মায়িদাহ ৫:৪৪)

ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺤﻜﻢ ﺑﻤﺎ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﻭﻟﺌﻚ ﻫﻢ ﺍﻟﻈﻠﻤﻮﻥ

“আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না তারাই জালেম ৷”( সূরা মায়িদাহ ৫:৪৫)

ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺤﻜﻢ ﺑﻤﺎ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﻭﻟﺌﻚ ﻫﻢ ﺍﻟﻔﺴﻘﻮﻥ

“আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে বিচার ফয়সালা করে না তারাই ফাসেক্ব ৷”( সূরা মায়িদাহ ৫:৪৭)

রাষ্ট্রীয় বিচাস ফয়সালার মধ্যে রয়েছে হদ্দ্ব, কিসাস, রজম ইত্যাদি সহ অন্যান্য ৷

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ( ﺭﺻﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

ﺍﻗﺒﻞ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ ﺍﻟﻤﻬﺎﺟﺮﻳﻦ ﺧﻤﺲ ﺍﺫﺍ ﺍﺑﺘﻠﻴﺘﻢ ﺑﻬﻦ ﻭﺍﻋﻮﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻥ ﺗﺪﺭﻛﻮﻫﻦ ﻟﻢ ﺗﻈﻬﺮ ﺍﻟﻔﺎﺣﺸﺔ ﻓﻲ ﻗﻮﻡ ﻗﻂ ﺣﺘﻲ ﻳﻌﻠﻨﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﺍﻻ ﻓﺸﺎﻓﻴﻬﻢ ﺍﻟﺘﻲ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﻣﻀﺖ ﻓﻲ ﺍﺳﻼﻓﻴﻬﻢ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻣﻀﻮﺍ ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻘﻀﻮﺍ ﺍﻟﻤﻴﻜﺎﻝ ﻭﺍﻟﻤﻴﺰﺍﻥ ﺍﻻ ﺍﺧﺬﻭﺍ ﺑﺎﻟﺴﻨﻴﻦ ﻭﺷﺪﺓ ﺍﻟﻤﺌﻮﻧﺔ ﻭﺟﻮﺭ ﺍﻟﺴﻠﻄﻦ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﻟﻢ ﻳﻤﻨﻌﻮﺍ ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻣﻮﺍﻟﻬﻢ ﺍﻻ ﻣﻨﻌﻮﺍ ﺍﻟﻘﻄﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻭﻟﻮﻻ ﺍﻟﺒﻬﺎﺋﻢ ﻟﻢ ﻳﻤﻄﺮﻭﺍ ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻘﻀﻮﺍ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻟﻪ ﺍﻻ ﺳﻠﻂ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻋﺪﻭﺍ ﻣﻦ ﻏﻴﺮﻫﻢ ﻓﺎﺧﺬﻭﺍ ﺑﻌﺾ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻳﺪﻳﻬﻢ ﻭﻟﻢ ﺗﺤﻜﻢ ﺍﺋﻤﺘﻬﻢ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻳﺘﺨﻴﺮﻭﺍ ﻣﻤﺎ ﺍﻧﺰﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻻ ﺟﻌﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺄﺳﻬﻢ ﺑﻴﻨﻬﻢ —

” আল্লাহর রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, হে মুহাজিরগণ ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে ৷ তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও ৷ যখন কোন জাতির মাঝে প্রকাশ্য অশ্লীলতা ছড়িয়ে পরে সে জাতির মাঝে মহামারী আকারে প্লেগ রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটে ৷ এমনকি এমন সব রোগ ব্যাধির আবির্ভাব ঘটে যা তাদের পিতৃপুরুষদের মাঝে ছিল না ৷ যে জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে সে জাতিকে দুর্ভিক্ষ ও কঠিন বিপদ-মুসিবত দ্বারা পাঁকড়াও করা হয় এবং জালেম শাসককে তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ৷ যে জাতি তাদের মালের যাকাত আদায় করে না তাদের উপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বণ্ধ করে দেওয়া হয় ৷ যদি ভূপৃষ্ঠে চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী নাকত তাহলে আর বৃষ্টি বর্ষিত হত না ৷ যে জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করে তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং সে তাদের কাছ থাকে সহায় সম্পদ কেঁড়ে নেয় ৷ আর যখন তাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করেনা এবং তাঁর নাযিসকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না তখন আল্লাহ তাদের মাঝে পারস্পরিক শত্রুতা সৃষ্টি করে দেন ৷”( সুনান ইবনে মাজাহ, অধ্যায় ৩০: কলহ-বিপর্যয় পর্ব, অনুচ্ছেদ ২২, , হাদীস ৪০১৯, হাদীসের মান: হাসান, তাহক্বীক: আলবানী)

৬৷ সুদ খাওয়া নয় কেবল বরং প্রদান করা, লেখা, সাক্ষী হওয়া সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল বিষয়গুলোকেও কঠোরভাবে পরিত্যাগ করবে ৷

ﻳﻤﺤﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺑﻮﺍ ﻭﺑﺮﺑﻲ ﺍﻟﺼﺪﻗﺖ –

ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﺤﺐ ﻛﻞ ﻛﻔﺎﺭ ﺍﺛﻴﻢ ٥

“আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ণ করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন ৷ আর আল্লাহ কোন কাফের, পাপাচারিকে পছন্দ করেন না “(সূরা বাক্বারাহ ২:২৭৬)

ﻳﺎﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺍﻟﺘﻘﻮﺍ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺫﺭﻭﺍ ﻣﺎ ﺑﻘﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﺑﻮﺍ ﺍﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﻣﺆﻣﻨﻴﻦ ٥ ﻓﺎﻟﻢ ﺗﻔﻌﻠﻮﺍ ﻓﺎﺫﻧﻮﺍ ﺑﺤﺮﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ – ﻓﺎﻥ ﺗﺒﺘﻢ ﻓﻠﻜﻢ ﺭﺀﻭﺱ ﺍﻣﻮﻟﻜﻢ ﻻ ﺗﻈﻠﻤﻮﻥ ﻭﻻ ﺗﻈﻠﻤﻮﻥ ٥

“হে ইমানদারগণ ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যত বক্বেয়া আছে তা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ইমানদার হয়ে থাকো ৷ যদি তোমরা তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ্য থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও ৷ আর যদি তোমরা তওবা কর তবে তোমরা তোমাদের মূলধন পেয়ে যাবে ৷ তোমরা কারও প্রতি জুলুম করবে না এবং কেউ তোমাদের প্রতি জুলুম করবে না ৷”( সূরা বাক্বারাহ ২: ২৭৮-২৭৯)

৭৷ ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করবে এবং কোনভাবেই ফেরক্বাবন্দিতে লিপ্ত হওয়া তথা কোন দল গঠন করবে না বা তাতে যুক্ত হবে না ৷ যদি তাতে ইসলামের নামও দেয়া থাকে তবুও না

ﻭﺍﻋﺘﺼﻤﻮﺍ ﺑﺤﺒﻞ ﻟﻠﻪ . ﺟﻤﻴﻌﺎ ﻭﻻ ﺗﻔﺮﻗﻮﺍ —

“তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধর এবং ফেরক্বাবন্দিতে লিপ্ত হয়ো না ৷”( সূরা ইমরান ৩:১০৩)

৮৷ নারীকে শাসনভার অর্পণ করবে না

ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺍﻟﻬﻴﺜﻢ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﻮﻑ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﺑﻜﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻟﻘﺪ ﻧﻔﻌﻨﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻜﻠﻤﺔ ﺍﻳﺎﻡ ﺍﻟﺠﻤﻞ ﻟﻤﺎ ﺑﻠﻎ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻥ . ﻓﺎﺭﺳﺎ ﻣﻠﻜﻮﺍ ﺍﺑﻨﺔ . ﻛﺴﺮﻱ ﻗﺎﻝ ﻟﻦ ﻳﻔﻠﺢ ﻗﻮﻡ ﻭﻟﻮﺍ ﺍﻣﺮﻫﻢ ﺍﻣﺮﺍﺓ –

“আবূ বাকরাহ ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ . ﻋﻨﻪ ) বলেন, জামাল যুদ্ধের দিনে একটি কথা দিয়ে আল্লাহ আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন ৷ যখন নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﺎﻡ ) এর নিকট এ সংবাদ পৌছলো যে, ফরাসীরা কিসরার মেয়েকে শাসক নিযুক্ত করেছে তখন তিনি বললেন, সে জাতি কখনই সফলতা পাবে না যারা কোন স্ত্রীলোককে তাদের শাসনভার অর্পণ করে ৷”( সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৯২:ফিতনা পর্ব, অনুচ্ছেদ ১৮, হাদীস ৭০৯৯)

৯ ৷ কোনভাবেই যেন সণ্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সবাই সচেতন থাকবে

মহান আল্লাহ বলেন,

ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﻧﻔﺴﺎ ﺑﻐﻴﺮ ﻧﻔﺲ ﺍﻭ ﻓﺴﺎﺩ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻓﻜﺎﻧﻤﺎ ﻗﺘﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺟﻤﻴﻌﺎ – ﻭﻣﻦ ﺍﺣﻴﺎﻫﺎ ﻓﻜﺎﻧﻤﺎ ﺍﺣﻴﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺟﻤﻴﻌﺎ—

“যে হত্যার বিনিময়ে হত্যা কিংবা দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ ছাড়া কোন একজন মানুষকে হত্যা করল সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করল ৷ আর যে কোন একজন মানুষের জীবন বাঁচাল সে যেন গোটা মানবজাতিকেই বাঁচাল ৷”( সূরা মায়েদাহ ৫:৩২)

১০৷ জাতির লোকেরা বর্ণ, ভাষা, বংশগত মর্যাদা, শহুরে বা গ্রাম্য ইত্যাদি দিক দিয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাববে না বা জাতিয়তাবাদকে প্রাধান্য দেবে না বরং নিজেকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে তথা তাক্বওয়ার দিকে বা সর্বোত্তম আদর্শের দিকে ধাবিত করে মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার চেষ্টা করবে ৷ এমনকি ছেলে তাঁর জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অথবা অভিভাবক তাঁর মেয়েকে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কেবল এবং কেবল দ্বীনকেই বেশী প্রাধান্য দেবে ৷ অন্যথায় তারা বিজয়কে ধরে রাখতে পারবে না ৷ ফিতনা ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে ৷

ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻧﺎ ﺧﻠﻘﻨٰﻜﻢ ﻣﻦ ﺫﻛﺮ ﻭﺍﻧﺜﻲ ﻭﺟﻌﻠﻨٰﻜﻢ ﺷﻌﻮﺑﺎ ﻭﻗﺒﺎﺋﻞ ﻟﺘﻌﺎﺭﻓﻮﺍ – ﺍﻥ ﺍﻛﺮﻣﻜﻢ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺗﻘﺎﻛﻢ – ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻢ ﺧﺒﻴﺮ ٥

“হে মানুষ ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পার ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সবচাইতে মর্যাদার অধিকারি যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভয় করে ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাজ্ঞানী এবং সবকিছুর খবর রাখেন ৷”( সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)

ﻭﻣﻦ ﺍﻳﺘﻪ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﺴﻤﻮﺕ ﻭﺍﻻﺭﺽ ﻭﺍﺧﺘﻠﻒ ﺍﻟﺴﻨﺘﻜﻢ ﻭﺍﻟﻮﻧﻜﻢ – ﺍﻥ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻻﻳﺖ ﻟﻠﻌﻠﻤﻴﻦ ٥

“আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে আসমান ও যমীনের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র ৷ নিশ্চয়ই এর মাঝে নিদর্শন রয়েছে বিশ্ববাসীর জন্য ৷” (সূরা রূম ৩০:২২)

আবু হুরায়রা ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেন, নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,

ﺗﻨﻜﺢ ﺍﻟﻤﺮﺍﺓ ﻻﺭﺑﻊ ﻟﻤﺎﻟﻬﺎ ﻭﻟﺤﺴﺒﻬﺎ ﻭﺟﻤﺎﻟﻬﺎ ﻭﻟﺪﻳﻨﻬﺎ – ﻓﺎﻇﻔﺮ ﺑﺬﺍﺕ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺗﺮﺑﺖ ﻳﺪﺍﻙ –

“মেয়েদেরকে চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়: তাঁর সম্পদ, তাঁর বংশমর্যাদা, তাঁর সৌন্দর্য, তাঁর দ্বীন ৷ অবশ্যই তুমি দ্বীনকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্হ হবে ৷”(সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৬৭: বিবাহ পর্ব, অনুচ্ছেদ ১৬, হাদীস ৫০৯০)

আবু হুরায়রাহ ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,

ﺍﺫﺍ ﺧﻄﺐ ﺍﻟﻴﻜﻢ ﻣﻦ ﺗﺮﺿﻮﻥ ﺩﻳﻨﻪ ﻭﺧﻠﻘﻪ ﻓﺰﻭﺟﻮﻩ ﺍﻻ ﺗﻔﻌﻠﻮﺍ ﺗﻜﻦ ﻓﺘﻨﺔ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺹ ﻭﻓﺴﺎﺩ ﻋﺮﻳﺾ

“যখন তোমাদের কাছে এমন কোন ছেলে বিয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে আসে যার দ্বীন ও চরিত্রের ব্যাপারে তোমরা সন্তুষ্ট তার সাথে তোমাদের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও ৷ যদি তা না কর তবে পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি হবে এবং বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে ৷”(সুনান তিরমিযী, অধ্যায় ৯: বিবাহ পর্ব, অনুচ্ছেদ ৩, হাদীস ১০৮৪, হাদীসের মান: হাসান সহীহ, তাহক্বীক্ব: আলবানী)

জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেন,

ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﺒﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻗﺘﻞ ﺗﺤﺖ ﺭﺍﻳﺔ ﻋﻤﻴﺔ ﻳﺪﻋﻮﺍ ﻋﺼﺒﻴﺔ ﺍﻭ ﻳﻨﺼﺮ ﻋﺼﺒﻴﺔ ﻓﻘﺘﻠﺔ ﺟﺎﻫﻠﻴﺔ—

“রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,’ যে লক্ষ্যহীন নেতৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে ও জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান জানায় এবং জাতীয়তাবাদের জন্যই সাহায্য করে তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু ৷”(সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৩৪: নেতৃত্ব ও প্রশাসন পর্ব, অনুচ্ছেদ ১৩, হাদীস ১৮৫০, হাদীস ও পর্বসৃচির নম্বর বিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী)

১১৷ নিরীহ ও উদার অমুসলিম লোকদের প্রতি ইনসাফ করবে

ﻻ ﻳﻨﻬٰﻜﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻟﻢ ﻳﻘٰﺘﻠﻮﻛﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﻟﻢ ﻳﺨﺮﺟﻮﻛﻢ ﻣﻦ ﺩﻳٰﺮﻛﻢ ﺍﻥ ﺗﺒﺮﻭﻫﻢ ﻭﺗﻘﺴﻄﻮﺍ ﺍﻟﻴﻬﻢ – ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻤﻘﺴﻄﻴﻦ ٥

“যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করেনি তাদের সাথে সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালবাসেন ৷” (সূরা মুমতাহিনা ৬০:৮)

এভাবে কোরঅান ও হাদীস থেকে অসংখ্য বিষয় উল্লেখ বিষয় করা যেতে পারে যা জাতির বিজয়কে ধরে রাখতে অত্যাবশ্যক ৷ কলেবর বড় হবে ভেবে বিস্তারিত আলোচনা থেকে বিরত থাকলাম ৷

তবে হ্যাঁ ! যারা মনে করে যেহেতু আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম জায়গা তথা দেশ, উর্বর জমি, নদী নালা, বিশাল সমুদ্র, বড় ও বিশ্ববিখ্যাত ইন্ডাস্ট্রী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দান করেছেন তাই আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না তাহলে তাঁরা আসলে মাটিতে মুখে ভর করে পথ চলছেন ৷

তাঁরা ভূলে যাচ্ছেন বনী ইসরাইলের কথা যাদেরকে জান্নাতি মান্না ও সালওয়া খাইয়েছিলেন তবুও আল্লাহ তাঁদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত অভিশপ্ত করেছেন ৷ যাদের জন্য সূরা ফাতিহায় প্রতিনিয়ত বদদোয়া করা হয় ৷ তারা ভূলে যাচ্ছেন আসহাবে সাবার কথা, ভূলে যাচ্ছেন কওমে নূহের কথা, কওমে আ’দ, সামূদ , লূত ও মাদিয়ান বাসীদের কথা ৷ এমনকি ভূলে যাচ্ছেন আল্লাহর নিম্নোক্ত কথাটিও

ﺍﻭﻟﻢ ﻳﺴﻴﺮﻭﺍ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﻓﻴﻨﻈﺮﻭﺍ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻥ ﻋﻘﺒﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻣﻦ ﻗﺒﻠﻬﻢ – ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺍﺷﺪ ﻣﻨﻬﻢ ﻗﻮﺓ ﻭﺍﺛﺎﺭﻭﺍ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﻋﻤﺮﻭﻫﺎ ﺍﻛﺜﺮ ﻣﻤﺎ ﻋﻤﺮﻭﻫﺎ ﻭﺟﺎﺀﺗﻬﻢ ﺭﺳﻠﻬﻢ ﺑﺎﻟﺒﻴﻨﺖ – ﻓﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻴﻈﻠﻤﻬﻢ ﻭﻟﻜﻦ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺍﻧﻔﺴﻬﻢ ﻳﻈﻠﻤﻮﻥ ٥ ﺛﻢ ﻛﺎﻥ ﻋﻘﺒﺔ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺳٰﺌﻮﺍ ﺍﻟﺴﻮﺍﻱ ﺍﻥ ﻛﺬﺑﻮﺍ ﺑﺎﻳﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻛﺎﻧﻮﺍ ﺑﻬﺎ ﻳﺴﺘﻬﺰﺋﻮﻥ ٥

“তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না, অতঃপর দেখে না তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে ৷ তারা তাদের চাইতে বেশী শক্তিশালি ছিল, তারা যমীন চাষ করত, তারা তাদের চাইতে বেশী আবাদ করত এবং তাদের কাছে রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণসহ আসল ৷ মূলত আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেননি বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে ৷

অতঃপর যারা মন্দ কাজ করত তাদের পরিণাম মন্দ হয়েছে ৷ কারণ তারা আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করত এবং এগুলো নিয়ে তামাশা করত ৷”(সূরা রূম ৩০:৯-১০)

ﺭﺑﻨﺎ ﻇﻠﻤﻨﺎ ﺍﻧﻔﺴﻨﺎ ﻭﺍﻥ ﻟﻢ ﺗﻐﻔﺮ ﻟﻨﺎ ﻭﺗﺮﺣﻤﻨﺎ ﻟﻨﻜﻮﻧﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﺴﺮﻳﻦ—

“হে আমাদের রব ! আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি ৷ আর যদি তুমি ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্হদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব ৷”(সূরা আরাফ ৭:২৩)

আমাদের বিজয় / মেরাজুল ইসলাম প্রিয়

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan