দল, ইমারত ও বায়আত সম্পর্কে উলামাগণের বক্তব্য (পর্ব ১৪) (শেষ)

দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য (চৌদ্দতম পর্ব) (শেষ পর্ব)

শায়খ আহমাদ ইবনে ইয়াহ্‌ইয়া আন-নাজমী(1)

মুক্বীম অবস্থায় আমীর মনোনয়ন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাদীছে যে আমীর নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, তা সফরের সাথে নির্দিষ্ট। মুক্বীম অবস্থায় রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকই সবার জন্য যথেষ্ট। অন্য কোনো আমীর নিযুক্ত করা বৈধ নয়। কারণ, সেক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব ও ফাসাদ সৃষ্টি হবে। অতএব, যে ব্যক্তি বলবে, মুসলিম শাসক ছাড়া মুক্বীম অবস্থায় অন্য কোনো আমীর নিযুক্ত করা শরী‘আত সম্মত, তাকে তার পক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। আর একথা সত্য যে, সে কস্মিনকালেও তার পক্ষের দলীল পাবে না।(2)
অন্যত্র তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আমীর নিযুক্তের অনুমতির বিষয়টি সফরের সাথে নির্দিষ্ট। যে ব্যক্তি বলবে, সফরে আমীর নিযুক্ত করা বৈধ হলে মুক্বীম অবস্থায় আমীর নিযু্ক্ত করাও বৈধ, সে মূর্খ; সে শরী‘আতের কিছুই জানে না। তার উচিৎ, মূর্খতা বাইরে প্রকাশ না করে লুকানোর চেষ্টা করা।(3)
বায়‘আত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বায়‘আত হচ্ছে মুসলিম শাসকের অধিকার। সুতরাং শাসক ছাড়া অন্য কেউ কারো নিকট থেকে বায়‘আত গ্রহণ করল, সে দ্বীনের মধ্যে নিন্দিত বিদ‘আত সৃষ্টি করল। আমরা যদি হক্কানী আলেমগণের জীবনীর দিকে দৃষ্টিপাত করি, তাহলে সহজেই বুঝতে পারব, তাঁরা দা‘ওয়াতী কাজ করতে গিয়ে কারো কাছ থেকে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন নি। শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব হিজরী ১২ শতাব্দীতে নাজদে দা‘ওয়াতী কাজ করেছেন। কিন্তু কারো কাছ থেকে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন নি। তেমনিভাবে শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আল-ক্বার‘আবী সঊদী আরবের দক্ষিণাঞ্চলে দা‘ওয়াতী কাজ করেছেন। তিনিও কারো থেকে বায়‘আত নেন নি। আমরা যদি আরেকটু পূর্বে ফিরে যায়, তাহলে লক্ষ্য করব, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াও কারো কাছ থেকে বায়‘আত গ্রহণ করেন নি। অথচ মহান আল্লাহ তাঁদের সকলের দা‘ওয়াতে বরকত দান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁরাই সালাফী দা‘ওয়াতের ধারক ও বাহক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিদ‘আতীরা বিদ‘আত প্রচার করা থেকে বিরত হয় নি।(4)
প্রশ্নঃ যে সব দা‘ঈ দা‘ওয়াতের পদ্ধতিতে ভুল করেন, কিছু কিছু ছাত্র তাদের সমালোচনা করেন। তাদের এ সমালোচনা কি গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে?
উত্তরঃ মহান আল্লাহ তাঁর নবীগণকে দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে যে পথ নির্দেশ দিয়েছেন, সকল দা‘ঈর উচিৎ, সে পথে পরিচালিত হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ فَمِنۡهُم مَّنۡ هَدَى ٱللَّهُ وَمِنۡهُم مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَيۡهِ ٱلضَّلَٰلَةُۚ فَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٣٦ ﴾ [النحل: ٣٦]
‘অবশ্যই আমরা প্রত্যেক উম্মতের নিকটেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই নির্দেশনা দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূত থেকে বেঁচে থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্য পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে’ (আন-নাহ্‌ল ৩৬)।

মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীকেও দা‘ওয়াতের পথ ও পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿ قُلۡ هَٰذِهِۦ سَبِيلِيٓ أَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا۠ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِيۖ وَسُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ وَمَآ أَنَا۠ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ١٠٨ ﴾ [يوسف: ١٠٨]
‘হে নবী! আপনি বলে দিন, ইহাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ আল্লাহর দিকে ডাকি জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আর আল্লাহ পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)।
অতএব, কেউ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতি বাদ দিয়ে দা‘ওয়াতী ময়দানে অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে, তাহলে উলামায়ে কেরামের উচিৎ, তার ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে সঠিক পদ্ধতি বলে দেওয়া। আর যে ব্যক্তি সঠিক পদ্ধতি জানার পরও ভুল ধরিয়ে দিবে না, সে গুনাহগার হবে। তবে কেউ ভুল ধরিয়ে দেওয়ার এ দায়িত্ব পালন করলে অন্য সবাই দায়মুক্ত হয় যাবে, অন্যদের আর গোনাহ হবে না। কিন্তু ভুল ধরিয়ে দিতে গিয়ে যদি কেউ অন্যদের সহযোগিতার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে সকলের উচিত, তাকে সহযোগিতা করা। কেউ যদি মনে করে, যারা দা‘ওয়াতের পথ ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতির বিরোধী কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করছে, তাদের ব্যপারে কথা বলতে যাওয়া উচিৎ নয়, তবে সে চরম ভুল করবে। এর মাধ্যমে সে আসলে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ, হক প্রচার এবং নেকী ও আল্লাহ ভীতির কাজে পরস্পর সহযোগিতা করাকে অকেজো করতে চায়। সে যদি অন্তর থেকে এটি নাও চায়, তবুও যারা চায়, সে তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছে। অতএব, তার উচিৎ, হকের পথে ফিরে আসা।(5)

তথ্যসূত্র :

(1) বিখ্যাত মুহাদ্দিছ এবং ফক্বীহ আহমাদ আন-নাজমী ১৩৪৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খ্যাতিমান আলেমগণের নিকট থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে রয়েছেনঃ সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম, আব্দুল্লাহ আল-ক্বারআবী, হাফেয ইবনে আহমাদ আল-হাকামী প্রমুখ। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্রবৃন্দের মধ্যে রয়েছেনঃ শায়খ রবী আল-মাদখালী, আলী ইবনে নাছের আল-ফাক্বীহী প্রমুখ। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে ১. তা’সীসুল আহকাম শারহু উমদাতিল আহকাম ২. ফাতহুর-রব্বিল ওয়াদুদ ফিল ফাতাওয়া ওয়ার-রুদূদ ৩. তানযীহুশ-শারী‘আহ আন ইবাহাতিল আগানী আল-খালী‘আহ উল্লেখযোগ্য।

(2) আহমাদ আন-নাজমী, আল-মাওরেদুল আযবুয-যালাল ফীমা উনতুক্বিদা আলা বা‘যিল মানাহিজিদ-দা‘বিইয়াহ মিনাল আক্বাইদি ওয়াল আ‘মাল, পৃ: ২০৫।

(3) আহমাদ আন-নাজমী, আল-ফাতাওয়া আল-জালিইয়াহ আনিল মানাহিজ আদ-দা‘বিইয়াহ, (ফুরকান লাইব্রেরী, আজমান, দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৪২১ হি:), পৃষ্ঠাঃ ৪৪-৫১।

(4) আল-মাওরেদুল আযবুয-যালাল ফীমা উনতুক্বিদা আলা বা‘যিল মানাহিজিদ-দা‘বিইয়াহ মিনাল আক্বাইদি ওয়াল আ‘মাল, পৃ: ২০৫।

(5) আল-ফাতাওয়া আল-জালিইয়াহ আনিল মানাহিজ আদ-দা‘বিইয়াহ, পৃ: ১২।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88