শূকরের গোশত ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান

পবিত্র কুরআনে শূকরের গোশত হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

‘বল, আমার নিকট যে ওহি পাঠানো হয়, তাতে আমি আহারকারীর ওপর কোনো হারাম পাই না,যা সে আহার করে। তবে যদি মৃত কিংবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশত হয়- কারণ, নিশ্চয় তা অপবিত্র……..।’ (আনআম : ১৪৫)

শুধু অপবিত্র বলেই পবিত্র কুরআনে শূকরের গোশত হারাম করা হয় নি বরং একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এর মধ্যে এমন সব রোগ-জীবাণু লুকিয়ে থাকার কারণেও যা মানুষকে, কখনো-কখনো মৃত্যুর ঘাট পর্যন্ত র্পৌছে দেয়। আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্র প্রমাণ করেছে, প্রাণীকূলের মধ্যে শূকর রোগ-জীবাণুর অন্যতম আধার।

এই বরাহ-মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে যেসব রোগের বিস্তার ঘটে সেগুলো হলো-

১. অনাহুত রোগসমূহ : এর মধ্যে রয়েছে-
(ক) Ring worm : এটি মানব দেহের জন্য সবচে ক্ষতিকারক। শূকর-গোশত বলতেই এর উপস্থিতি অপরিহার্য। এই কৃমি শূকরের গোশত আহারকারীর মাংসপেশীতে প্রবিষ্ট হয়ে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি করে এমনকি এর স্পন্দন থামিয়ে দেয়। এটি রোগ প্রতিরোধ সেলেও বাসা বাঁধে। সেখানে এর আধিক্য অনেক সময় শ্বাস বন্ধ করে দেয়। ঠেলে দেয় মৃত্যুর মতো চূড়ান্ত পরিণতির দিকে।
(খ) Tape worm বা ফিতাকৃমি : এটি প্রায় দশ কদম পর্যন্ত লম্বা হয়। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া বা পরিপাক যন্ত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রক্তস্বল্পতা প্রকাশ পায়। তাছাড়া তা ভক্ষণকারীর মগজ, যকৃৎ, ফুসফুস ও অস্থিমজ্জাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নানা উপায়ে।
(গ) Ascariaf Lumbricoidef : এটি নিউমোনিয়া ও অন্ত্রে বাধার সৃষ্টি করে।

(ঘ) Ancyloftoma Duodenale : এটি রক্তস্বল্পতা ও রক্তশূন্যতা ইত্যাদি বিবিধ জীবনবিনাশী রোগ সৃষ্টি করে। বরাহ-মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে এ ধরনের প্রায় ত্রিশটি অনাহুত রোগ আছে যা মানব দেহে প্রবেশ করে শরীরের বিভিন্ন স্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
২. ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগসমূহ : যেমন যক্ষ্মা, কলেরা, টাইফয়েড, ব্যারা টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়া জ্বর ইত্যাদি।

৩. ভাইরাসবাহী রোগসমূহ : যেমন মস্তিষ্কে প্রদাহ, হৃদযন্ত্রে ব্যথা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মুখ ফাটার প্রদাহ ইত্যাদি।

৪. জার্মবাহী রোগসমূহ : যেমন Toxoplasma gonddi জার্ম। যার ফলে জ্বর হয়। দুর্বল ও শক্তিহীন হয় শরীর। প্লিহা (spleen) ও হার্নিয়া (hernia) অথবা যক্ষ্মা এবং বুকের ব্যথা বা ব্রঙ্কাইটিস (bronchitis) ও ঝিল্লির প্রদাহ (meningitis) সৃষ্টি হয়। উপরন্তু শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি হারানোর রোগও সৃষ্টি হয়।
৫. শূকরের গোশত ও চর্বির বায়োলজিক্যাল গঠনজনিত কারণে সৃষ্ট রোগসমূহ। যেমন : রক্তে ফলিক অ্যাসিডের হার বৃদ্ধি। শতকরা মাত্র ২ ভাগ শূকর থেকে এই অ্যাসিড বের হতে পারে। বাকি আটানব্বই ভাগ এর গোশতের অংশে পরিণত হয়। তাই দেখা যায় যারা শূকরের গোশত খায় তারা শরীরের জোড়ায় ব্যথার অভিযোগ করে।
তাছাড়া শূকরের গোশতে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অধিক মাত্রায় চর্বির উপস্থিতি রয়েছে। এ জন্য এর ভক্ষণকারী তার দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি লক্ষ্য করে এবং রক্তে কলেস্টোরলের মাত্রা বাড়তে দেখে। যার ফলে ধমনি (artery) শুকিয়ে যাওয়া, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হঠাৎ মৃত্যু ডেকে আনে এমন সব রোগ সৃষ্টি হয়।
আবার শূকর-গোশত আহারকারী কোষ্ঠ-কাঠিন্যে (constipation) আক্রান্ত হয়। কারণ এটি আন্ত্রে প্রায় চারঘণ্টা পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। অন্যান্য প্রাণীর গোশত কিন্তু এতক্ষণ থাকে না। এর দ্বারা স্থূলতার রোগ সৃষ্টি হয় এবং স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা দেখা দেয়।
অতএব আমাদের উচিত, আমরা বুঝি বা না বুঝি, মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশ পালনে সচেষ্ট হওয়া। এতেই রয়েছে মানব সমপ্রদায়ের জাগতিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর নির্দেশসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।
আলী হাসান তৈয়ব
সম্পাদক : আবু শুআইব মুহাম্মাদ সিদ্দীক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot gacor skybet88 slot online skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot shopeepay slot gacor skybet88 demo slot skybet88 skybet88 skybet88 skybet88