শরীরে ক্ষত অবস্থায় অযু-গোসলের বিধান

ফাতওয়া ৬৯৭৯৬- একজন লোক যার ক্ষত রয়েছে, সে কিভাবে অযু-গোসল করবে?

প্রশ্নঃ- ধরুন শরীরের কিছু অংশে ক্ষত আছে, তাহলে কি হবে? ১] প্রথমে অযু করবে, এরপর ক্ষতের অঙ্গে তায়াম্মুম করবে? ২] শুধু তায়াম্মুম করবে?

জবাবঃ- আলহামদুলিল্লাহ।

যদি কিছু অংশে ক্ষত থাকে, আর তা উন্মুক্ত বা ড্রেসিং-ব্যান্ডেজে আবৃত থাকে-

যদি ক্ষত আবৃত থাকে, তাহলে সুস্থ অংশ ধৌত করবে, আর ক্ষতের অংগ ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করবে। সেক্ষত্রে তায়াম্মুমের প্রয়োজন নেই।

ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করার হাদিস আছে, কিন্তু তা যঈফ, তবে আব্দুল্লাহ ইবন উমার [রাঃ] থেকে হাদিসটি সহিহ।

বায়হাকি বলেনঃ

এই নিয়ে রাসূল [সাঃ] থেকে কিছু প্রমাণিত নেই… বরং এটা তাবেয়ীদের মাঝে যেসব ফুকাহা ছিল তাদের ও পরবর্তীদের মত, সেই সাথে ইবন উমার থেকে আমরা যা বলেছি। সে তাঁর সনদে উল্লেখ করেন যে ইবন উমার [রাঃ] অযু করলেন যখন তাঁর হাতে ব্যান্ডেজ ছিল, এবং সে তা ও ড্রেসিং মাসেহ করল, এবং বাকি অংগ ধৌত করল। সে বলেছেঃ এটা ইবন উমার থেকে সহিহ।

[আল-মাজমু;২/৩৬৮]

কিন্তু যদি ক্ষতস্থান উন্মুক্ত থাকে, তাহলে সম্ভব হলে অবশ্যই তা ধুতে হবে, কিন্তু যদি এতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, আর সে যদি মাসেহ করতে পারে তবে মাসেহ করুক। আর যদি সেটাও সম্ভব না হয়, তাহলে ক্ষত ধৌত করা বা মুছার দরকার নেই, আর যখন সে তাঁর অযু শেষ করবে তখন তায়াম্মুম করতে হবে।

শাইখ উসাইমিন তাঁর ‘আল-শরাহ আল-মুমতি’ [১/১৬৯]-এ বলেন

আলিমরা বলেনঃ ক্ষত যা আবৃত বা অনাবৃত।

ক্ষত অনাবৃত থাকলে তা অবশ্যই ধৌত করতে হবে। ধৌত করা না গেলে মুছতে হবে। যদি ক্ষত মুছা নিষেধ থাকে তবে তায়াম্মুম করতে হবে। এটা হল নির্বাচনের ক্রম।

যদি এটা বিশেষ কিছু দ্বারা ঢাকা থাকে। যদি তা ধৌত করা সম্ভব না হয় তবে মুছে ফেল। যদি ঢেকে রাখা সত্ত্বেও মাসাহ করা ক্ষতিকর হয়, তাহলে তাঁর তায়াম্মুম করা উচিত, এটা অনাবৃত থাকলে যেভাবে করত সেভাবে। এটাই ফুকাহাদের মত।

শাইখ ইবন বায [রাহঃ] বলেনঃ

যদি ড্রেসিং থাকে, তবে মুছে ফেল। যদি অনাবৃত থাকে, তবে তায়াম্মুম কর।

শাইখ সালিহ আল-ফাওযান [রাহঃ]কে প্রশ্ন করা হয়ঃ

ডাক্তার আমার হাত ধুয়ে দেবার পর কিছু রক্ত আমার হাত থেকে বের হয়, আমার ইঞ্জেকশনের স্থান থেকে, তাই সে এর উপর ব্যান্ডেজ করে দেয়। যদি আমি তা খুলে ফেলি তবে রক্ত বের হবে আর রাতের আগে তা বন্ধ হবে না। এই ব্যান্ডেজ এখনও আমার বাম হাতে আছে। যদিও ব্যান্ডেজ লাগানোর সময় আমি পবিত্র ছিলাম না বরং তখন রক্ত পরছিল, অযুর সময় তা মাসেহ করা কি অনুমোদনযোগ্য? এবং কিভাবে মাসেহ করব?

তাঁর উত্তরঃ

আপনি ব্যান্ডেজ খুলবেন না। বিশেষ করে যেহেতু এতে রক্তপাত হয়। এক্ষেত্রে ব্যান্ডেজ খোলা ঠিক না, কারন ক্ষতির আশংকা আছে। অযুর সময় হাতের যে অংশে ব্যান্ডেজ নেই তা ধৌত করুন। আর যে অংশে ব্যান্ডেজ আছে তা পানিতে হাত ভিজিয়ে ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে মুছে ফেলা যথেষ্ট। যতদিন ব্যান্ডেজ থাকবে ততদিন এইভাবেই চলবে। এমনকি সেটা আপনার অনেকদিনের সালাতের সময় হলেও। ব্যান্ডেজ করার সময় আপনার পবিত্র থাকা জরুরি না, বরং আপনি মাসেহ করুন, আর এটাই সঠিক, এমনকি যদিও ব্যান্ডেজ লাগানোর সময় আপনি পবিত্র না থাকেন এবং এমনকি ক্ষতের পাশে ব্যান্ডেজের নিচে রক্ত থাকে।

উপসংহারঃ ব্যান্ডেজ থাকাতে সমস্যা নেই। বরং ব্যান্ডেজ থাকুক, কারন তা রাখা দরকার। আপনি ব্যান্ডেজ মাসেহ করুন আর অনাবৃত হাত ধৌত করুন

আল মুনতাকা মিন ফাতওয়া আল-শাইখ আল-ফাওযান, ৫/১৫

আল্লাহ অধিক জানেন।

https://islamqa.info/en/69796

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan