‘আপনি যা’ই করুন মানুষের ক্ষতি করবেন না।’

বেশ কয়েক মাস আগে আমার এক হিন্দু ক্লাসমেট ধর্মীয় ব্যাপারে কথা বলতে এসে প্রথমে ভিন্নমত পোষণ করলেও কথাবার্তার এক পর্যায়ে সে আমার সাথে একমত হলো যে দুটি ধর্মেরই মুলভিত্তি এক স্রষ্টার উপাসনা করা। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ যে স্রষ্টাকে অস্বীকার করে কিংবা স্রষ্টার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করে, সে ওই মানুষটির চেয়ে অধম যে মানুষটি হাজার খারাপ কাজ করে । কারণ, স্রষ্টাকে অস্বীকার এই পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য কাজ। ইসলাম অনুযায়ী যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ করে সে একজন ফাসেক বা পাপাচারী মুসলিম। কিন্তু, সে একজন কাফিরের চেয়ে উত্তম। সেই কাফির হাজার দুনিয়াবী ভালো কাজের সাথে জড়িত থাকলেও। অবশ্যই আমরা সে কাফিরের ভালো কাজগুলোকে ভালো বলি, কিন্তু তাঁকে কোনভাবেই একজন মুসলিম থেকে উত্তম মনে করি ন। আর এটি আমাদের আক্বিদা, যা ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়।

আল্লাহ সুবহানুতা’লা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা সবচেয়ে বড় জুলুম।’ [সুরা লুকমানঃ১৩]

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ বলে দিচ্ছেন সবচেয়ে বড় জুলুম, সবচেয়ে বড় অন্যায় হচ্ছে আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা। যদিও আজ মুসলিম সমাজে কাফিরদের জোরালো প্রোপ্যাগান্ডার কারণে অনেক মুসলিম শিরকের অপরাধকে ছোট করে দেখেন। তারা অনেক মুসলিম থেকে কাফিরদের উত্তম মনে করেন। মনে করেন এই কাফির তো কারো ক্ষতি করে নি। কিন্তু অনেক মুসলিম তোঁ মানুষের ক্ষতি করে, খারাপ কাজ করে। হ্যাঁ, অনেক মুসলিম আছে যারা নানা পাপাচার, বিভিন্ন অসৎকাজে জড়িত। আমরা এদের এইসব কাজকে অবশ্যই ঘৃণা করি। কিন্তু এর চেয়ে হাজার গুণ বেশি ঘৃণা করি কাফিরদের কুফরকে। এদেরকে আমরা খারাপ মুসলিম বলেই গণ্য করি। কিন্তু কাফিরদের কুফর এর চেয়ে জঘন্য। কারণ, আল্লাহকে অস্বীকার করার চেয়ে জঘন্য কোন কাজ হতে পারে না। অবশ্যই এসব কথার মাধ্যমে গুণাহগার মুসলিমকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু, তার কাজের জঘন্যতা থেকে কাফিরদের কুফরের জঘন্যতা বেশি এটি বুঝানো হচ্ছে। যেমনঃ কেউ একটা মেয়ের দিকে তাকালো, এটা খারাপ কাজ। আর কেউ মেয়েটিকে ধর্ষণ করলো। দুটো কাজ সমান না। আর কুফর যে পরিমাণ অপরাধ, এর সমান কোন কিছু হতে পারে না।

মু‘আয ইবনু জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘উফাইর নামক গাধার পিছনে সওয়ারী ছিলাম।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মু‘আয তুমি কি জান  আল্লাহর তাঁর বান্দার উপর কী হক্ব এবং আল্লাহর উপর বান্দার কী হক্ব। আমি  বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর হক্ব হচ্ছে সে তাঁর ‘ইবাদাত করবে  এবং তাতে কাউকে অংশীদার করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক্ব হচ্ছে তাঁর  সাথে কাউকে অংশীদার না করলে তাকে শাস্তি না দেয়া।। (বুখারী,মুসলিম)

এটি হচ্ছে আল্লাহর হক্ব। আর কেউ যদি আল্লাহর হক্ব নষ্ট করে তার চেয়ে বড় অপরাধী আর কে হতে পারে। যে আল্লাহ আমাদের জীবন দিয়েছে, যিনি আমাদেরকে আমাদের পিতামাতা দিয়েছেন, যিনি এই পৃথিবীকে বসবাসের উপযুক্ত করে দিয়েছেন, যার কাছে আমরা প্রত্যেকটি নিশ্বাসের জন্য ঋণী; তাঁর হক্ব যে নষ্ট করে তাঁর চেয়ে বড় পাপী আর কে হতে পারে! একটা লোক যদি খুব ভালো হয় হয়। মানুষের সেবা করে, সৎ, পরোপকারী কিন্তু তাঁর নিজের পিতামাতার হক্ব আদায় না করে, তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে, তাদের দেখাশোনা না করে, তাদের কথা না শোনে, তবে কি তাকে কেউ ভালো মানুষ বলবে? কিন্তু, সে যদি পিতামাতার হক্ব আদায় করার পর বাকি খারাপ কাজ করে, সেও খারাপ। তবে, সে প্রথম লোকটি থেকে ভালো। আর আল্লাহর সাথে কুফরের তো কোন তুলনাই হয় না। আর আল্লাহ তো আমাদেরকে এই পিতামাতা সহ যাবতীয় সবকিছু দান করেছেন, তাঁকে যে অস্বীকার করে, তাঁর হক্ব যে আদায় করে না। সেই লোকের অবস্থান কোথায়! তখন কিছু মাসে যুদ্ধ করা নিষেধ ছিলো। কিন্তু কিছু সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম তখন কোন কুরাইশদের একটা কাফেলায় আক্রমণ করে একজন কাফিরকে হত্যা করে আরো্ দুইজনকে বন্দি ফেলে ছিলেন। হ্যাঁ, সেটা ভুল ছিলো। কিন্তু আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দেন, কাফিরদের কুফর আরো বড় অপরাধ।

“সম্মানিত মাস সম্পর্কে  তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে যে, তাতে যুদ্ধ করা কেমন? বলে দাও এতে যুদ্ধ করা  ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে প্রতিবন্দ্বকতা সৃষ্টি করা এবং কুফরী করা,  মসজিদে-হারা মের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা,  আল্লাহর নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা  নরহত্যা অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ  করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে যদি সম্ভব  হয়। তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের  অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে  যাবে। আর তারাই হলো দোযখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।” [সুরা বাকারা:  ২১৭]

কাফিররা আমাদের মন মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে, ‘আপনি যা’ই করুন মানুষের ক্ষতি করবেন না।’ আর মানুষের ক্ষতি করাই যেন একমাত্র অপরাধ। তাঁরা আমাদেরকে আল্লাহর হক্বের ব্যাপারে উদাসীন রাখতে চায়, উদাসীন রাখতে চায় আল্লাহর দেয়া বিধান সম্পর্কে।

“তারা চায় যে, তারা  যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান  হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না  তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে।”। [সুরা নিসা: ৮৯]

শেষ কথা, একজন পাপাচারী আর একজন আমলদার মুসলিমের মধ্যে আমরা পার্থক্য করি, আমরা বলি না দুইজন সমান। আমরা পথভ্রষ্ট মুরজিয়াদের মতো এ বিশ্বাস রাখি না যে মুখে কলিমা বললে, আর মনে মনে ঈমান থাকলে ঈমান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আমরা বিশ্বাস করি কিছু এমন কাজ রয়েছে যা করলে একজন মুসলিমও মুরতাদ তথা কাফির হয়ে যেতে পারে। তবে এই কাজগুলো সংখ্যায় অনেক কম। অর্থাৎ, মনে মনে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার আর কাজের মাধম্যে প্রকাশের নামই ঈমান।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88