‘কোরআন কি আল্লাহর বাণী ? 

‘কোরআন কি আল্লাহর বাণী ?

অবিশ্বাসী: আপনি কি বিশ্বাস করেন কোরআন আল্লাহর বাণী?

মুসলিম: হ্যা অবশ্যই ! কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন,”এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ৷”(সূরা আহক্বাফ – ৪৬:২, সূরা জাসিয়াহ-৪৫:২)

অবিশ্বাসী: হা হা হা ! এত বিশ্বাস ! কিভাবে করেন? যদি এটা মুহাম্মদের নিজের রচনা হয় ৷(অভিযোগ-১)

মুসলিম: ভাই কিছু মনে করবেন না ৷ আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনি নিতান্তই অজ্ঞ ৷ ইতিহাস দ্বারা এটা প্রসিদ্ধ যে তিনি ছিলেন নিরক্ষর ৷ সুতরাং তাঁর পক্ষে এটি রচনা করা মোটেও সম্ভব নয় ৷ এছাড়াও কোরআন বলছে ,”তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করনি এবং তোমার ডান হাত দ্বারা কিছু লেখও নি ৷ এমন হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ করত ৷”( সূরা আনকাবুত -২৯:৪৮)

অবিশ্বাসী:আচ্ছা ! সে না হয় বুঝলাম ৷ কিন্তু এমন তো হতে পারে সে নিজের সুবিধা মত অন্যের দ্বারা লিখিয়েছেন ৷(অভিযোগ-২)

মুসলিম: এবারও বলব আপনি অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন ৷ এমনটি হওয়াও সম্ভব নয় ৷ কেননা যে নিজের সুবিধামত কথা লিখাবে সে কখনও নিজেকে শাসাতে বলবে না ৷ যেমন একটি দৃষ্টান্ত হলো,”যদি আপনি আমার সাথে শিরকে লিপ্ত হন তবে অবশ্যই আমি আপনার আমলসমূহ ধ্বংস করে দেব এবং অবশ্যই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত করব ৷”(সূরা যুমার-৩৯:২৯)

এছাড়াও দেখতে পারেন, সূরা আবাসা ৮০:১-১৪, সূরা তাহরীম ৬৬:১, সূরা হাক্ক্বহ ৬৯:৪৪-৪৭,সূরা মায়িদা ৫:৬৭

এছাড়াও যে সুবিধা পাওয়ার জন্য নিজ হাতে কিছু লিখে অথবা অন্যকে দিয়ে লিখিয়ে আল্লাহর বাণী বলে প্রচার করবে সে কখনও কিতাবে এমন কথা লিখবে না যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে নিজ হাতে কিতাব লেখে আর তুচ্ছ মুল্য প্রাপ্তির জন্য বলে, এই কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে ৷ দুর্ভোগ যে হাত দ্বারা লেখে তার জন্য এবং দুর্ভোগ যা তারা উপার্জন করে তার জন্য ৷

( সূরা বাক্বারাহ ২: ৭৯)

এছাড়াও যে নিজের সুবিধা চায় সে কখনই তাঁর হাতে আসা কোন সুযোগই হাতছাড়া করবেনা ৷ কিন্তু এখানে ঘটনা তাঁর পুরোই উল্টো ৷

ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর বর্ণনায় তাফসীরে মাআরিফুল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার ওলীদ বিন মুগিরা, আস বিন ওয়ায়েল,আসওয়াদ বিন আব্দুল মোত্তালেব ও উমাইয়া বিন খলফ এসে রাসূল (صلي الله عليه وسلم) কে বললেন যে, আসুন আমরা পরস্পর এই চুক্তিতে সম্মত হই যে, এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যের ইবাদত করবেন এবং এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদত করব ৷”

তিবরানীর রেওয়াতের বরাত দিয়ে আরও বলা হয়েছে, কাফিররা পারস্পরিক স্বার্থ্যে এই প্রস্তাব দিয়েছিল যে, আমরা তোমাকে প্রচুর ধনৈশ্বর্য দেব ,তুমি যে মহিলাকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারবে ৷ শুধু তুমি আমাদের উপাস্যকে মন্দ বলবে না ৷

উক্ত কথার জবাবে সূরা কাফিরূন নাযিল হয় যা তিনি তিলাওয়াত করে বুঝিয়ে দিলেন আমি আমার দায়িত্ব থেকে কোনমতেই পিছপা হবনা ৷ (তাফসীরে মাআরিফুল কোরআন, ৮ম খন্ড, পৃ:৮৮০; আরও দেখুন, আর রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১৪৭-১৪৮)

আবার সীরাতে ইবনে হীশামের বর্ণনায় দেখা যায় ওতবা তাকে রাজত্য,চিকিৎসা ইত্যাদিরও প্রস্তাব দিয়েছিল যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ৷(বিস্তারিত: সীরাত ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৫৮)

যদি তিনি সুবিধাই চাইতেন তবে এসমস্ত প্রস্তাবে সহজেই রাজি থাকতে পারতেন ৷

এছাড়াও দেখবেন, নুমান বিন বশীর (رضي الله عنه ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) মানুষের দুনিয়া থেকে সম্পদ জমা করার কথা উল্লেখ করে বলেন,”নিশ্চয়ই আমি রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) কে দেখেছি, তিনি ক্ষুধার জালায় পেটের উপর ঝুকে পড়তেন ৷ তিনি এক টুকরো খেজুরও পেতেন না যা দিয়ে তিনি উদর পূর্ণ করবেন ৷”( সহীহ মুসলিম‌ ; রিয়াদুস সালেহীন, পরিচ্ছেদ ৫৫,হাদীস ৪৭৭)

আয়িশাহ (رضي الله عنها ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরি এবং এর ভিতরে ছিল খেজুরের ছাল ৷”(সহীহ বুখারী, সদয় হওয়া পর্ব, অধ্যায় ৮১,পরিচ্ছেদ ১৭, হাদীস ৬৪৫৬)

আয়িশাহ (رضي الله عنها )থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,” আমাদের উপর মাস কেটে যেত কিন্তু রান্নার আগুন জ্বালাতাম না ৷ আমরা খুরমা ও পানি দিয়ে দিন কাটাতাম ৷ তবে আমাদের নিকট যৎসামান্য গোশত এসে যেত৷ ”

(সহীহ বুখারী, সদয় হওয়া পর্ব, অধ্যায় ৮১,পরিচ্ছেদ ১৭, হাদীস ৬৪৫৮)

সুতরাং তিনি নিজ সুবিধার জন্য কোরআন লিখিয়েছিলেন একথার কোন ভিত্তি নেই ৷

আরও দেখবেন তিনি তার বড় বড় শত্রুর কাছেও সত্যবাদী ছিলেন ৷ যেমন: দেখা যায় যখন সাফা পর্বতের উপর যখন মুহাম্মদ (صلي الله عليه وسلم) কুরাইশদের আহবান জানালেন যাদের মধ্যে ছিল তাঁর বড় শত্রু আবু লাহাব ৷ তখন তিনি বললেন,

أرأيتم ان أخبرتكم أن خيلا تخرج من سفح هذا الجبل أكنتم مصدقي قالوا ما جربنا عليك كذبا

” আমি যদি তোমাদের বলি, একটি অশ্বারোহী বাহিণী এই পর্বতের পিছনে তোমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তাহলে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে ৷ তারা বলল,’আপনার মিথ্যা বলার ব্যাপারে আমাদের কোন আভিজ্ঞতা নেই ৷”( সহীহ বুখারী, কোরআনের তাফসীর পর্ব, অধ্যায় ৬৫, হাদীস ৪৯৭১)

আরও বলা যায় আবু সুফিয়ান (رضي الله عنه) এর কথা যিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তার বড় ধরনের শত্রু ছিলেন ৷

যখন তিনি হিরাক্লিয়াসের রাজদরবারে হাজির হলেন তখন তাকে রাজা হিরাক্লিয়াস রাসূল (صلي الله عليه ) সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করলেন তার একটি নিম্নরূপ

قال فهل كنتم تتهمونه باالكذب قبل ان يقول ما قال قلت لا

” হিরাক্লিয়াস বলল: তোমরা কি তার নবুয়তের দাবীর পূর্বে কখনও তাকে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছ ? আমি (আবু সুফিয়ান) বললাম: না ৷”

এই হাদীস বর্ণনার প্রথম দিকে তিনি বলেন

فو الله لو لا الحياء من ان ياثروا علي كذبا لكذبت عنه

“আল্লাহর শপথ ! যদি আমার এ লজ্জা না থাকত যে তারা ( হিরাক্লিয়াসের সভাসদবর্গ) আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে তাহলে আমি অবশ্যই তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম ৷”

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে হিরাক্লিয়াসের উক্তি নিম্নরূপ এসেছে ৷ তিনি বললেন:

وسألتك هل كنتم تتهمونه باالكذب قبل ان يقول ما قال فذكرت ان لا فقد أعرف أنه لم يكن ليذر الكذب علي الناس ويكذب علي الله

” আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘তোমরা কি তার নবুয়তের দাবীর পূর্বে কখনও তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছ ?’ তুমি বলেছ, না ৷ এতে আমি বুঝতে পারলাম যে, এমনটি হতে পারে না যে, কেউ মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা বলা পরিত্যাগ করবে অথচ আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলবে ৷”

(বিস্তারিত পড়ুন: সহীহ বুখারী, অধ্যায় ১, ওহীর সূচনা পর্ব, পরিচ্ছেদ ৬, হাদীস ৭)

সুতরাং,সেই ব্যাক্তির পক্ষে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলা কি করে সম্ভব যে তার অত্যন্ত বড় শত্রু কর্তৃকও সামান্য মিথ্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত নন ৷

অবিশ্বাসী: আপনারা তো বলেন কোরআন নাকি অবিকৃত ৷ তাহলে আপনাদের কোরআনে রজম সংক্রান্ত আয়াত নেই কেন যখন থেকে ছাগল খেয়ে ফেলল?(অভিযোগ -৩)

মুসলিম: আমি বুঝতে পেরেছি ৷ আপনি একটি হাদীসের কথা বলছেন ৷ হাদীসটি হলো

আয়েশাহ (رضي الله عنها) বলেন, “রজম সংক্রান্ত আয়াত ও ‘রযায়াতে কাবিরি আশরান’ সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিৱ এবং তা একটি সহীফায় লিখিত অবস্থায় আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল ৷ অত:পর যখন রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) মারা গেলেন এবং আমরা তাঁর চিন্তায় ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়লাম তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলল ৷”( সুনান ইবনে মাজাহ, বিবাহ পর্ব, অধ্যায় ৯, পরিচ্ছেদ ৩৬, , হাদীস ১৯৪৪,হাদীসের মান: হাসান, তাহক্বীক: আলবানী)

তবে এখানে আয়াতটি চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি ৷ কেননা আয়াতটি অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়েছে ৷ যা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে ৷ আয়াতটি হলো

الشيخ والشيخة اذا زنيا فارجموهما البتة

“বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা যখন যেনায় লিপ্ত হয় তখন তাদের উভয়কে রজম কর ৷”

(বিস্তারিত, সুনান ইবনে মাজাহ, দন্ডবিধি পর্ব অধ্যায় ১৪, পরিচ্ছেদ-৯: রজম করা,হাদীস ২৫৫৩, হাদীসের মান: সহীহ, তাহক্বীক: আলবানী)

আয়াতি কোরআনে উল্লেখিত হয়নি কারণ আয়াতটির তিলাওয়াত রহিত করা হয়েছে তবে এর বিধান রয়ে যাওয়ার কারণে হাদীসে তা উল্লেখ হয়েছে ৷

সুতরাং কোরআন কোনভাবেই বিকৃত নয় বরং কোরআন খুবই নিখুতভাবে সংরক্ষিত ৷

অবিশ্বাসী: যদি কোরআন আল্লাহর বাণী হয় তাহলে কিভাবে তা মহাবিশ্ব ভ্রমণকে অস্বীকার করে (অভিযোগ -৪)

যেমন বলা হয়েছে, “হে জ্বীন ও মানব সমাজ ! যদি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা তোমাদের সাধ্যে কুলায় তবে অতিক্রম করো কিন্তু আল্লাহর দেওয়া ছাড়পত্র ব্যাতিত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না ৷

মুসলিম: আমার মনে হচ্ছে আপনি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন ৷ তবুও বলছি ,আয়াতটি হলো

يا معشر الجن والانس إن استطعتم أن تنفذوا من اقطار السموت والارض فنفذو ٥

لا تنفذون الا بسلطن ٥

এখনে سلطن শব্দটির অর্থ হলো প্রভাব,শক্তি,ক্ষমতা,প্রমাণ, যুক্তি ইত্যাদি ৷

৷(আল মু’জিমুল ওয়াফি,ড ়ফজলুর রহমান, পৃষ্ঠা-৫৭১)

সুতরাং আয়াতের শেষাংশের অর্থ হলো,”আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা ছাড়া তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না ৷”

বা “আল্লাহর দেওয়া যুক্তি বা সুশ্পস্ট জ্ঞান ছাড়া তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না ৷”

আর আয়াতের প্রথমাংশে ‘যদি’ শব্দের সমার্থক হিসেবে যা এসেছে তা হলো إن ৷ আর এই ‘যদি’ এমন এক ‘যদি’ যা পরবর্তী সম্ভাবনাকে নাকচ করে না বরং ইঙ্গিত করে ৷

সুতরাং এই আয়াত সাড়ে ১৪০০ বছর আগে বলছে মানুষ একদিন এমন জ্ঞান প্রাপ্ত হবে যা তাকে মহাবিশ্ব ভ্রমণে নিয়ে যাবে ৷ الحمد لله ৷ কোরআন যদি আল্লাহর বাণী না হত কিভাবে কোরআন এত বিশ্বয়কর কথা বলতে পারত?

আসল কথা হলো, মহাবিশ্ব ভ্রমণ তো বটেই এমনকি কোরআন মানুষকে মহাবিশ্ব নিয়ে চিন্তা ভাবনাও করতে বলছে

أولم ير الذين كفروا أن السموت والارض كانتا رتقا ففتقنهما ٥ وجعلنا من الماء كل شيء حي ٥ افلا يؤمنون ٥

” অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না, আসমান ও যমীন মিশে ছিল ওতপ্রতোভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম ৷ আর প্রাণবন্ত সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে ৷ তবুও কি তারা ইমান আনবেনা? “(সূরা আম্বিয়া ২১:৩০)

সুতরাং কোরআন কখনই মহাবিশ্ব ভ্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলেনি বরং চিন্তা- ভাবনা ও গবেষণাকেও উৎসাহিত করে ৷

সংগৃহীত এই ভাইয়ের পোস্ট থেকে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan