পৃথিবীতে সূর্যকে একবারই থামিয়ে রাখা হয়েছিলো
মহান আল্লাহ বলেছেন,
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
“আর সূর্য তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে ভ্রমণ করে, এটি পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী হতে স্থিরকৃত।” [১]
.
সূর্য মহান আল্লাহর এক মহা নিদর্শন। সূর্য চলছে তো চলছে এই সূর্যকে কেউ কখনো থামাতে পারেনি। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এই সূর্যকে একবার থামানো হয়েছিলো, এই একবারই কেবল সূর্যকে থামানো হয়। সেটি কখন? সেটি হাজার বছর আগের ঘটনা।
মহান আল্লাহ এই সূর্যকে একবার থামিয়ে রেখেছিলেন। এ বিষয়ক ঘটনা বিস্তারিত এসেছে সহীহ বুখারীর বর্ণনায়, নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
غَزَا نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَقَالَ لِقَوْمِهِ: لاَ يَتْبَعْنِي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأَةٍ، وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يَبْنِيَ بِهَا؟ وَلَمَّا يَبْنِ بِهَا، وَلاَ أَحَدٌ بَنَى بُيُوتًا وَلَمْ يَرْفَعْ سُقُوفَهَا، وَلاَ أَحَدٌ اشْتَرَى غَنَمًا أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ وِلاَدَهَا، فَغَزَا فَدَنَا مِنَ القَرْيَةِ صَلاَةَ العَصْرِ أَوْ قَرِيبًا مِنْ ذَلِكَ، فَقَالَ لِلشَّمْسِ: إِنَّكِ مَأْمُورَةٌ وَأَنَا مَأْمُورٌ اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا، فَحُبِسَتْ حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ
“কোনো একজন নবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোনো ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে না, যে কোনো মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হবার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও না যে ঘর তৈরি করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না, যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষায় আছে। এরপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আসরের সলাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটে আসলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, “তুমিও আদেশপ্রাপ্ত আর আমিও আদেশপ্রাপ্ত। হে আল্লাহ্, সূর্যকে থামিয়ে দিন।“ সূর্যকে তখন থামিয়ে দেয়া হলো, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করলেন।“ [২]
.
আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
كُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“প্রত্যেক নবীরই একটি (অবশ্য) কবুলযোগ্য দু’আ রয়েছে। প্রত্যেক নবীই তাঁর সেই দু’আটি আগেভাগে করে নিয়েছেন। আর আমি আমার সে দু’আটি কিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য আড়াল করে রেখে দিয়েছি।” [৩]
.
আল্লাহই ভালো জানেন এই নবীর জন্য সূর্যকে থামিয়ে দেয়ার এই দু’আটিই হয়তো হতে পারে সেই দু’আ যাঁর কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (সম্মানিত নবীর আলোচনা সামনে আসছে ইন শা আল্লাহ) কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে এই নবীর জীবনী সম্পর্কে যতোটুকু তথ্য আমাদের নিকট পৌঁছেছে তাতে আমরা শুধু এই একটি দু’আর কথাই জানতে পারি। তবে এর বাইরেও আরো দু’আ থাকতে পারে যা তাঁর জীবনে বারবার ঘুরেফিরে কবুল হয়েছে। কিন্তু হাদীসে উল্লিখিত দু’আটি এটি কিনা সে বিষয়ে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
.
মনের ভেতরে হয়তো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে – কোথায় ছিলো সেই জনপদ? সেই নবীই বা কে ছিলেন? আমাদের জবাব রয়েছে অন্য এক হাদীসে, প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ما حبست الشمس على بشر قط إلا على يوشع بن نون ليالي سار إلى بيت المقدس
“মানুষের ওপর সূর্যকে কখনোই ধরে রাখা হয়নি, তবে ইউশা ইবনু নূন ছাড়া। রাতের বেলায় তিনি বায়তুল মাকদিসের উদ্দেশ্যে সফর করেছিলেন।” [৪]
.
হ্যাঁ, সেই জনপদ ছিলো ফিলিস্তিন, যেই বরকতময় ভূমিতে প্রাণের বাইতুল মাকদিস অবস্থিত। আর সেই সম্মানিত নবী হচ্ছেন ইউশা ইবনু নূন আলাইহিস সালাম। বাইতুল মাকদিসের অপর নাম হচ্ছে মাসজিদুল আকসা। ‘বাইতুল মাকদিস’ এর ‘মাকদিস’ এর স্থলে ‘মুকাদ্দাস’-ও পড়া যায়। কুরআনে নাম ধরে শুধুমাত্র দু’টি মাসজিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, একটি মাসজিদুল হারাম আর অপরটি মাসজিদুল আকসা। [৫] আল-আকসা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
بَارَكْنَا حَوْلَهُ
“আমরা এর চারিপাশকে করেছি বরকতময়।” [৬]
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ
“আর আমরা তাকে (ইব্রাহীমকে) এবং লূতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম এমন এক ভূমিতে যেখানে আমরা সৃষ্টিকূলের জন্য বারাকাহ রেখে দিয়েছি।” [৭]
একদল তাফসীরকারকের মতে এখানে ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’ এর ভূমি অর্থাৎ, ফিলিস্তিন উদ্দেশ্য। [৮]
.
যেই বরকতের কথা বলা হচ্ছে তা জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকেই। জাগতিক বরকত এই যে, মহান আল্লাহ এই অঞ্চলকে নদ-নদী, ফল-মূল, বাহারি তরু-লতার মাধ্যমে সৌন্দর্যের লীলাভূমি করে সাজিয়েছেন আর আধ্যাত্মিক বরকত হচ্ছে, যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল তিনি এই ভূমিতে প্রেরণ করেছেন। [৯] নবী-রাসূলদের ঘটনা আলোচিত হয়েছে আয়াতে কারীমায়। সে অনেক লম্বা আলোচনা। আমরা ফিলিস্তিনের জাগতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে কিছু আয়াত পেশ করতে চাই। দয়াময় আল্লাহ বলেছেন,
وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ آيَةً وَآوَيْنَاهُمَا إِلَى رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَمَعِينٍ
“আর আমরা মারইয়াম পুত্র ও তার জননীকে এক নিদর্শন বানিয়েছিলাম এবং তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক অবস্থানযোগ্য ও প্রস্রবণবিশিষ্ট সমতল সুউচ্চ ভূমিতে।” [১০]
আয়াতের সঙ্গে তাফসীরকারকদের তাফসীর সামনে রাখলে মনে হবে এ যেন এক ছবির মতোনই কোনো পল্লী। কুরআন এখানে কোন অঞ্চলের প্রতি ইশারা করছে তা নিশ্চয়তা সহকারে বলা কঠিন। তবে একদল তাফসীরকারকের মতে এখানে ‘বাইতুল মাকদিস’ বা ফিলিস্তিনই হচ্ছে উদ্দেশ্য। [১১]
.
ফিলিস্তিনের ফলমূল বা উৎপাদিত তরি-তরকারি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় নিম্নোক্ত আয়াত থেকে, আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوا هَذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًا
“আর স্মরণ করো, যখন আমরা বললাম, তোমরা এই জনপদে ঢুকে পড়ো আর তোমরা খাও যেখান হতে তোমাদের ইচ্ছা।” [১২]
এই জনপদ কোন জনপদ তা নিয়ে ভিন্ন একটি ব্যাখ্যা থাকলেও ইমাম ইবনু কাছীর (৭০০-৭৭৪ হি) রহিমাহুল্লাহ ও ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (৫৪৪-৬০৬ হি) রহিমাহুল্লাহ এই জনপদ ‘বাইতুল মাকদিস’ তথা ফিলিস্তিন হওয়ার বিষয়টিকেই জোর দিয়েছেন এবং ভিন্ন ব্যাখ্যাকে দূরবর্তী ব্যাখ্যা বলার পাশাপাশি খন্ডন করেছেন। [১৩]
.
ফিলিস্তিন হচ্ছে সেই এলাকা যাতে তীন ও যাইতূন ফলে থাকে, মহান আল্লাহ বলেন,
وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ
“শপথ তীন ও যাইতূনের।” [১৪]
একদল তাফসীরকারকের মতে এখানে তীন ও যাইতূন যে এলাকায় জন্মে সেই এলাকা উদ্দেশ্য আর যথাক্রমে এই এলাকা দু’টি হচ্ছে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন। অন্য আরেকদল তাফসীরকারকের মতে এখানে স্বয়ং ফল দু’টিই উদ্দেশ্য। যদি ফল দু’টিও উদ্দেশ্য হয় তবুও ফিলিস্তিনের তাৎপর্য এভাবে প্রকাশ পায় যে, বাইতুল মাকদিসের আশপাশে মহান আল্লাহ যে বরকত বা প্রাচুর্যতা রেখে দিয়েছেন তার মাঝে আল্লাহর শপথকৃত যাইতূন ফলটিও অন্তর্ভূক্ত। [১৫]
.
বরকত নিয়ে কথা বলছিলাম। হাদীসে শামের বরকতের জন্য দু’আ করা হয়েছে আর ফিলিস্তিন সেই শাম অঞ্চলের মাঝে অন্তর্ভূক্ত। ইবনু উমার রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي شَامِنَا
“হে আল্লাহ, আমাদের শামে আমাদেরকে বরকত দিন।” [১৬]
এই একই অর্ধবোধক দু’আ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতেও সাব্যস্ত হয়েছে। [১৭]
.
বাইতুল মুকাদ্দাস সেই মাসজিদ যা মাসজিদুল হারামের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় মাসজিদ হিসবে তৈরি করা হয়েছিলো। আবূ যার রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ فِي الأَرْضِ أَوَّلَ؟ قَالَ: «المَسْجِدُ الحَرَامُ» قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ «المَسْجِدُ الأَقْصَى» قُلْتُ: كَمْ كَانَ بَيْنَهُمَا؟ قَالَ: «أَرْبَعُونَ سَنَةً، ثُمَّ أَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ بَعْدُ فَصَلِّهْ، فَإِنَّ الفَضْلَ فِيهِ»
“আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল, কোন মাসজিদকে সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছে?” তিনি বললেন,”মাসজিদুল হারাম।” আমি বললাম, “এরপর কোনটি?” তিনি বললেন, “এরপর মাসজিদ আল-আকসা।” আমি বললাম, “উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কতোটুকু?” তিনি বললেন, “চল্লিশ বছর।” [১৮]
.
ফিলিস্তিনে হচ্ছে বনী ইসরাঈলদের মাঝে প্রেরিত অসংখ্য নবীদের মিলনস্থল, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য নবী-রাসূলদের স্মৃতি, ইউশা আলাইহিস সালামের বিজয়ের পর এই ভূমিতে রাজত্ব করেন দাঊদ ও সুলাইমান আলাইহিমাস সালামের মতো দু’ দুজন প্রতাপশালী নবী। [১৯] এর আরো পরে শেষ নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা-রাত্রিতে এই ভূমি পরিণত হয় সকল আম্বিয়া কেরামের মিলনস্থলে। এই ঘটনা মহান আল্লাহ অলৌকিকভাবে ঘটিয়েছিলেন। সকল নবীরা এখানে কিভাবে জমায়েত হলেন এর বাস্তব রূপরেখা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটই রয়েছে। এ বিষয়ক দীর্ঘ হাদীসের এক পর্যায়ে উল্লেখ আছে,
فَلَمَّا دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَسْجِدَ الْأَقْصَى قَامَ يُصَلِّي، ثُمَّ الْتَفَتَ فَإِذَا النَّبِيُّونَ أَجْمَعُونَ يُصَلُّونَ مَعَهُ
“এরপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মাসজিদুল আকসায় প্রবেশ করলেন তখন তিনি সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি ফিরে তাকালে দেখলেন সমস্ত নবীরাও তাঁর সঙ্গে সলাত পড়েছেন।“ [২০]
.
আল-আকসায় যতো অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে তাঁর মধ্যে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা বা রাত্রিকালীন ভ্রমণ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যাঁর কথা আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি। মহান আল্লাহ বলেন,
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى
“পবিত্র মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের কিছু অংশের ভেতরে ভ্রমণ করালেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসায়।” [২১]
.
ইসরা ও মিরাজের পর প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নিজের জাতির কাছে ফিরে গেলেন। তখন কুরাইশের কাফিররা তাকে মিথ্যারোপ করতো লাগলো। তখন আল্লাহ তায়ালা স্বীয় মহিমায় মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে আরো একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটান। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন,
لَمَّا كَذَّبَتْنِي قُرَيْشٌ، قُمْتُ فِي الحِجْرِ، فَجَلاَ اللَّهُ لِي بَيْتَ المَقْدِسِ، فَطَفِقْتُ أُخْبِرُهُمْ عَنْ آيَاتِهِ وَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهِ
“কুরাইশরা আমাকে যখন অস্বীকার করলো, আমি তখন (কাবার) হিজরে দাঁড়ালাম। এরপর আল্লাহ আমার সামনে বাইতুল মাকদিসকে উদ্ভাসিত করলেন, ফলে আমি সেদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বাইতুল মাকদিসের নিদর্শনগুলো তাদের কাছে ব্যক্ত করে দিলাম।” [২২]
.
বাইতুল মাকদিসের ভেতরের অংশের বিশেষ কোনো স্থাপনার কোনো ফযীলত আছে কিনা? এমন একটি হাদীসের কথাই শুধু আমরা জানতে পারি। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الْعَجْوَةُ وَالصَّخْرَةُ مِنَ الْجَنَّةِ
“আজওয়া খেজুর ও সাখরাহ (প্রস্তরখন্ড) জান্নাত হতে।” [২৩]
মুহাদ্দিসীনদের ব্যাখ্যামতে, এই সাখরাহ বা প্রস্তরখন্ডটি বাইতুল মাকদিসে অবস্থিত। [২৪] আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
.
এছাড়াও কুরআনে ফিলিস্তিনের ভূমিকে বলা হয়েছে পবিত্র ভূমি। [২৫]
.
ফিলিস্তিন ও বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে কিছু তথ্য আমরা জেনে নিলাম। এবার আমরা জানতে চাই ইউশা আলাইহিস সালাম কে ছিলেন? তিনি যে নবী ছিলেন তা আমরা হাদীস হতেই অবগত হয়েছি আর ইমাম ইবনু কাছীর (৭০০-৭৭৪ হি) রহিমাহুল্লাহ তাঁর সম্পর্কে বলেন,
وَهُوَ مُتَّفَقٌ عَلَى نُبُوَّتِهِ عِنْدَ أَهْلِ الْكِتَابِ
“আর আহলে কিতাবদের নিকটও তাঁর নবী হওয়ার বিষয়ে ঐক্যমত রয়েছে।” [২৬]
ইউসুফ আলাইহিস সালাম ছিলেন তাঁর পরদাদা, আর এভাবে তাঁর বংশ লতিকা ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত মিলিত হয়েছে। [২৭] তিনি ছিলেন মূসা আলাইহিস সালামের একনিষ্ঠ খাদেম ও ছাত্র। [২৮] বলা হয় যে, তিনিই প্রথম ফিলিস্তিন বিজেতা। কুরআনে খিযির আলাইহিস সালাম অভিমুখে মূসা আলাইহিস সালামের ঐতিহাসিক যে শিক্ষাসফরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সেখানে তাঁর ঘটনা এসেছে কিন্তু নাম আসেনি। [২৯] এই সফরের যেই বিশদ বর্ণনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে সেখানে স্পষ্টভাবেই তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। [৩০] নির্ভরযোগ্য তাফসীর মতে ‘বাইতুল মাকদিস’ অভিমুখে যুদ্ধ করা হতে বনী ইসরাঈল যখন পিছিয়ে যাচ্ছিলো তখন তাদেরকে অভয় দিয়ে যেই দু’ই ব্যক্তি বক্তব্য পেশ করেন তাঁদের একজন হচ্ছেন নবী ইউশা আলাইহিস সালাম। [৩১] কুরআন বলছে,
قَالَ رَجُلَانِ مِنَ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمَا ادْخُلُوا عَلَيْهِمُ الْبَابَ فَإِذَا دَخَلْتُمُوهُ فَإِنَّكُمْ غَالِبُونَ وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
“যারা ভয় করতো তাদের মধ্যে দু’জন, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুকম্পা করেছিলেন, তারা বললো, “তোমরা তাদের মোকাবেলা করে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ো, যখনই তাতে ঢুকে গেলে তখনই তোমরা জয়ী। আর আল্লাহর উপরই ভরসা রাখো যদি তোমরা মু’মিন হও।” [৩২]
.
তাওরাতও স্পষ্টভাবে তাঁর নাম বর্ণনা করেছে। [৩৩]
.
এবার খিযির অভিমুখে শিক্ষাসফরে ইউশা আলাইহিস সালামের ভূমিকা কী ছিলো সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক। মহিয়ান আল্লাহ সেই শিক্ষাসফর-কাহিনী শুরু করছেন এভাবে,
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتَّى أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا
“আর স্মরণ করুন, যখন মূসা তার সঙ্গী যুবককে বলেছিলো, দু’ সাগরের মিলনস্থলে না পৌঁছে আমি থামবো না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবো।” [৩৪]
‘নবীদের কাহিনী’ গ্রন্থের লেখক ড. গালিব (জন্ম ১৯৪৮) হাফিযাহুল্লাহ বলেন, “পিতা ইবরাহীম (আঃ) সহ বড় বড় নবী-রাসূলগণের জীবনে পদে পদে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। মূসা (আঃ)-এর জীবনে এটাও ছিল অনুরূপ একটি পরীক্ষা।” [৩৫]
‘দু’ সাগরের মিলনস্থলে না পৌঁছে আমি থামবো না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকবো’ শেখার জন্য এই যে হিম্মত এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ সফরের যেই কষ্ট ও ত্যাগ এটিই ছিলো মূসা আলাইহিস সালামের ত্যাগ। আর অন্যদিকে একজন যুবককে অচেনা অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যুগ যুগ ধরে হেঁটে চলার দাওয়াত দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে নেয়া সেই যুবকের হিম্মত ও ত্যাগী মন-মানসিকতার পরিচয় দেয়। আমরা বলতে পারি এই সফর নবী ইউশা আলাইহিস সালামের জীবনেও বড় একটি পরীক্ষা ছিলো। নবীদেরকে আল্লাহ বিভিন্নভাবে তাঁর কাজের জন্য প্রস্তুত করে নেন। স্বভাবতই আমরা ধরে নিতে পারি যে, এসব কষ্ট-ক্লেশ ও ত্যাগের অভিজ্ঞতা ইউশা আলাইহিস সালামকে তাঁর নবুওয়তকালীন জীবনেও উপকৃত করেছে। একটি ভীতু ও অকর্মণ্য জাতির মধ্য হতে কিছু খাস বান্দার দিলকে কিভাবে আল্লাহর জন্য জান বিলানোর কাজে তিনি প্রস্তুত করেছেন এবং ফিলিস্তিনের বিজয়সূর্য তিনি কিভাবে ছিনিয়ে এনেছেন সামনে আমরা সে বিষয়ে আলোকপাত করবো ইন শা আল্লাহ। আর মনে রাখা প্রয়োজন, এটিই ছিলো সেই বিজয় যার জন্য মহান আল্লাহ সূর্যকে থামিয়ে রেখেছিলেন। এ কথাই আল্লাহ বলছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
“ওহে যারা ঈমান এনেছো, তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, তবে তিনিও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের কদমগুলোকে দৃঢ় করবেন।” [৩৬]
.
ফিলিস্তিন বিজয়ের পর ইউশা আলাইহিস সালামের শাসনকার্য চলতো আল্লাহর কিতাব তাওরাত মোতাবেক। মূসা আলাইহিস সালামের মৃত্যুর সাতাশ বছর পর একশো সাতাশ বছর বয়সে তাঁর ইন্তেকাল হয়। [৩৭] ফিলিস্তিনকে তিনি কিভাবে বিজয় করেছিলেন নিশ্চয়ই সে বিষয়ে সবার জানতে ইচ্ছে করছে!
.
কুরআনে এসেছে মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর সম্প্রদায়কে তাঁদের কাছে আল্লাহর তরফ হতে যেসব অনুগ্রহরাজি পৌঁছেছে তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর বলছেন, [৩৮]
يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِي كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِكُمْ فَتَنْقَلِبُوا خَاسِرِينَ
“হে আমার কওম, তোমরা সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করো যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন। আর পিছু হটো না, পেছালে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।” [৩৯]
বলা হচ্ছে ফিলিস্তিনের কথা। এটি ছিলো সেই ভূমি যেখানে বসবাস করতো বনী ইসরাঈলের অসংখ্য নবী। এক পর্যায়ে তাদের এই আদি নিবাস তারা হারিয়ে ফেলেছিলো। যাক, নবীর পক্ষ থেকে এমন এক প্রতিশ্রুতি পেয়েও তারা কোনো কর্ণপাত করলো না। তাদের প্রত্যুত্তর তাদের ভীতু মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছিলো। কুরআনের ভাষায়,
قَالُوا يَا مُوسَى إِنَّ فِيهَا قَوْمًا جَبَّارِينَ وَإِنَّا لَنْ نَدْخُلَهَا حَتَّى يَخْرُجُوا مِنْهَا فَإِنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا فَإِنَّا دَاخِلُونَ
“তারা বললো, হে মূসা, ওখানে কিন্তু প্রকাণ্ড প্রতাপশালী এক কওম রয়েছে, সেখান থেকে তারা রেরোনো না অবধি আমরা কিন্তু সেখানে কখনোই প্রবেশ করবো না।” [৪০]
আল্লাহভীরু দু’জন ব্যক্তি তাদের অভয় দেয়ার চেষ্টা করছিলো। নির্ভরযোগ্য তাফসীর মতে এদের একজন হচ্ছেন ইউশা ইবনু নূন আলাইহিস সালাম এবং অপরজন হচ্ছেন কালিব ইবনু ইউফনা। [৪১] কুরআন বলছে,
قَالَ رَجُلَانِ مِنَ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمَا ادْخُلُوا عَلَيْهِمُ الْبَابَ فَإِذَا دَخَلْتُمُوهُ فَإِنَّكُمْ غَالِبُونَ وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
“যারা ভয় করতো তাদের মধ্যে দু’জন, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুকম্পা করেছিলেন, তারা বললো, তোমরা তাদের মোকাবেলা করে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ো, যখনই তাতে ঢুকে গেলে তখনই তোমরা জয়ী। আর আল্লাহর উপরই ভরসা রাখো যদি তোমরা মু’মিন হও।” [৪২]
কাজ হলো না। তারা আবারও একই কথা বললো। কুরআনের ভাষায়,
قَالُوا يَا مُوسَى إِنَّا لَنْ نَدْخُلَهَا أَبَدًا مَا دَامُوا فِيهَا فَاذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلَا إِنَّا هَاهُنَا قَاعِدُونَ
“তারা বললো, হে মূসা, সেখানে তারা যতোকাল স্থায়ী, আমরণ আমরাও কখনোই সেখানে প্রবেশ করবো না। কাজেই যাও, তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ করো। আমরা তবে এখানেই বসবো।” [৪৩]
মূসা আলাইহিস সালাম হতাশ হলেন। কুরআনের ভাষায়,
قَالَ رَبِّ إِنِّي لَا أَمْلِكُ إِلَّا نَفْسِي وَأَخِي فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ
“তিনি বললেন, রব আমার, আমি তো আমার ও আমার ভাই ব্যতীত কারো উপর কর্তৃত্ব রাখি না। তাই আমাদের ও পাপী সম্প্রদায়ের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেন।” [৪৪]
কী হলো তারপর? তারপর কী হলো তা কুরআনেই এসেছে,
قَالَ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِمْ أَرْبَعِينَ سَنَةً يَتِيهُونَ فِي الْأَرْضِ فَلَا تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ
“আল্লাহ বললেন, তবে তা চল্লিশ বছর তাদের জন্য হারাম করা হলো, যমীনে তারা দিকশূন্য হয়ে ঘুরে বেড়াবে, কাজেই আপনি পাপী কওমের জন্য দুঃখ করবেন না।” [৪৫]
তারা কিভাবে উদ্ভ্রান্তদের মতো ঘুরে বেড়িয়েছিলো তা আমরা তাফসীর ও ঐতিহাসিক গ্রন্থাদি হতে জানতে পারি। যেই যমীনে তাদেরকে ফেলে রাখা হয়েছিলো তার নাম হচ্ছে ‘তীহ’ প্রান্তর। সেই প্রান্তর হতে বেরোনোর কোনো পথ পাওয়া যায় কিনা সে চিন্তায় প্রতিদিন প্রত্যুষে তারা বেরিয়ে পড়তো আর সন্ধ্যায় তারা দেখতে ছিলো যেখানে সেখানেই পড়ে আছে। এই প্রান্তরেই মৃত্যু হয় নবী হারুন আলাইহিস সালামের। এর তিন বছর পর নবী মূসা আলাইহিস সালামও বিদায় নেন। মূসা আলাইহিস সালামের আকাঙ্খা ছিলো তিনি এই বিজয় নিজের চোখে দেখে যাবেন, কিন্তু তিনি দেখে যেতে পারেননি। তাঁর সর্বশেষ আকাঙ্খা ছিলো তাঁকে যেন বাইতুল মাকদিসের পবিত্র ভূমির কাছাকাছি কোনো স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। [৪৬] প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহিস সালামের এই ইচ্ছা প্রসঙ্গে বলেন,
فَسَأَلَ اللَّهَ أَنْ يُدْنِيَهُ مِنَ الأَرْضِ المُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ “، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَلَوْ كُنْتُ ثَمَّ لَأَرَيْتُكُمْ قَبْرَهُ، إِلَى جَانِبِ الطَّرِيقِ، عِنْدَ الكَثِيبِ الأَحْمَرِ»
“এরপর তিনি একটি পাথর নিক্ষেপ করলে যতোদূর পৌঁছোয় পবিত্র ভূমির ততোটুকু নিকটবর্তী স্থানে তাঁকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করলেন। (বর্ণনাকারী) বলেন আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আরো) বলেছেন, অতএব আমি যদি সেখানে থাকতাম তবে পথের ধারে লাল বালুর টিলার নিকট তাঁর কবরখানা অবশ্যই তোমাদের দেখাতাম।” [৪৭]
.
মূসা আলাইহিস সালামের বিদায়ের পর মহান আল্লাহ তাঁদের মাঝে ইউশা ইবনু নূন আলাইহিস সালামকে দাঁড় করিয়ে দেন, মূসা ইবনু ইমরান আলাইহিস সালামের অবর্তমানে তিনিই হন বনী ইসরাঈলের নবী। চল্লিশ বছর পেরোতে পেরোতে আগের প্রজন্মের অনেকেই বিদায় নেন আর নতুন প্রজন্মের লোকদের মধ্য হতে বেরিয়ে আসে প্রকৃত যোদ্ধারা। এদের হৃদয়েই ইউশা ইবনু নূন আলাইহিস সালাম জাগিয়ে তুলেন বাইতুল মাকদিসের প্রতি ভালোবাসা। চল্লিশ বছরের মেয়াদ একদিন ফুরিয়ে এলো। এক রাতের বেলায় ইউশা আলাইহিস সঙ্গী-সাথী সমেত রওয়ানা হলেন বাইতুল মাকদিস পানে। ইউশা আলাইহিস সালাম চলছেন মূসা আলাইহিস সালামের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন বলে। চলতে চলতে তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছালেন। দিন গড়িয়ে সেদিন জুম’আর দিন। শনিবার দিনটি ছিলো বনী ইসরাঈলদের জন্য পবিত্র দিন। শনিবার এলে আর যুদ্ধ করা যাবে না। দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে যেসব স্বপ্নচারীরা এসেছেন বন্দী আল-আকসাকে মুক্ত করবেন বলে, তাদের স্বপ্ন কি তবে স্বপ্নই রয়ে যাবে!? ইউশা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে অনুনয়-বিনয় করে বললেন, “হে আল্লাহ্, সূর্যকে থামিয়ে দিন।” ডুবু ডুবু সূর্য ডুবলো না, সূর্যকে আসমানে থামিয়ে রাখা হলো। শুরু হলো লড়াই। ইউশা আলাইহিস সালাম তাঁর বাহিনী নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর সূর্যকে ছেড়ে দেয়া হলো। চল্লিশ বছর পূর্বে দেখানো স্বপ্ন চল্লিশ বছর পরে এসে বাস্তবায়ন হলো। [৪৮]
.
যুদ্ধে বিজয় হলো, এবার বিজয়ী বাহিনীর বাইতুল মুকাদ্দাসের পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করার পালা। সেই ভূমিতে তারা কিভাবে প্রবেশ করবে সে নির্দেশনা কুরআনেই এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوا هَذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًا وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُولُوا حِطَّةٌ نَغْفِرْ لَكُمْ خَطَايَاكُمْ وَسَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ
“আর স্মরণ করো, যখন আমরা বললাম, তোমরা এই জনপদে ঢুকে পড়ো তারপর তোমরা খাও যেখান হতে তোমাদের ইচ্ছা এবং দরজা দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করো। আর বলো, ‘ক্ষমা চাই’, আমরা তোমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করে দিবো এবং অচিরেই সৎকর্মশীলদের আমরা বাড়িয়ে দেবো।” [৪৯]
বিজয়ের পর তো এমনটাই করতে হয়, নিজেকে নত করতে হয় রবের সমীপে, নিজেকে ছোট মনে করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। মক্কা বিজয়ের পরের আমল প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ শেষ নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন,
فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
“সুতরাং প্রশংসা সহকারে তুমি তোমার রবের পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থণা করো। নিশ্চয়ই তিনি বারংবার তাওবাহ কবুলকারী।” [৫০]
.
অবাধ্যতা ও নির্বুদ্ধিতা যেই বনী ইসরাঈলের রক্তে-মাংসে মিশে ছিলো তারা কি শেষ অবধি আল্লাহর হুকুমকে মান্য করেছিলো? এ বিষয়ে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“বনী ইসরাঈলকে বলা হয়েছিলো, ‘’ দরজা দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করো আর বলো, ‘ক্ষমা চাই’, কিন্তু তারা তা পরিবর্তন করে নিয়েছিলো। তারা তাদের নিতম্বের উপর ভর করে প্রবেশ করেছিলো আর বলেছিলো – চুলের মধ্যে বীজ।” [৫১]
.
সীমালঙ্ঘন সীমা ছাড়িয়েছিলো, দয়াময় আল্লাহ তবুও তাদের বিজয় দিয়েছিলেন। বিজয়ের পর ফিলিস্তিনের আধিপত্য তাদের হাতে আসে।
.
সংক্ষেপে এই হচ্ছে তাদের যুদ্ধকাহিনী। ইউশা আলাইহিস সালাম এ যুদ্ধে কিছু কৌশল হাতে নিয়েছিলেন। সবশেষে আসে মহাসাফল্য। হাদীসে উল্লিখিত কৌশলের দু’টি দিক নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করবো ইন শা আল্লাহ।
.
প্রথমত, বাইতুল মাকদিসের উদ্দেশ্যে তিনি রাত্রিবেলায় সফর শুরু করেন। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَلَيْكُمْ بِالدُّلْجَةِ، فَإِنَّ الْأَرْضَ تُطْوَى بِاللَّيْلِ
“তোমরা রাতের প্রথম দিকে সফর করো। কেননা রাতে যমিনকে গুটিয়ে দেওয়া হয়।” [৫২]
আর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের অধিকাংশ সফরও রাতে হয়েছে। [৫৩] এমনকি মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসা অভিমুখে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অলৌকিক যে সফর, সেটিও রাতে ঘটেছিলো। [৫৪] ইউশা আলাইহিস সালাম যাঁর কাছ থেকে শিক্ষা-দীক্ষা পেয়ে বড় হয়েছেন তিনি হচ্ছেন নবী মূসা আলাইহিস সালাম। তিনিও যখন অত্যাচারী ফিরআউনের কবল হতে বাঁচতে বনী ইসরাঈলকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে সফর করেন সে সফরটিও রাতে হয়েছিলো। আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ أَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَسْرِ بِعِبَادِي
“আর অবশ্যই আমরা মূসার প্রতি এই মর্মে ওহী করলাম যে, আমাদের বান্দাদের নিয়ে রাতে বেরিয়ে পড়ুন।” [৫৫]
.
দ্বিতীয়ত, ইউশা আলাইহিস সালাম বিশেষ কয়েক শ্রেণীর ব্যক্তিদেরকে বাদ দিয়ে যোদ্ধাবাহিনী প্রস্তুত করেন। তিনি তিন শ্রেণীর ব্যক্তিদেরকে বাদ দেন:
(১) স্ত্রীর সঙ্গে মিলন হয়নি, কিন্তু মিলনের আকাঙ্খা রাখে এমন নব-বিবাহিত পুরুষ,
(২) নতুন ঘর তুলেছে, কিন্তু ছাদ তোলেনি এমন ব্যক্তি
(৩) এবং গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনে তার প্রসবের অপেক্ষায় আছে এমন ব্যক্তি।
.
এমন ব্যক্তিদের বাদ দেয়ার যৌক্তিকতা কী তা বুঝতে হলে আমরা কয়েকটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারি:
(১) বনী ইসরাঈল এমন এক ভীরু জাতি যাদের নবী মূসা আলাইহিস সালাম পবিত্র ভূমি বিজয়ের প্রতিশ্রুতি শুনানোর পরও তারা তা অগ্রাহ্য করে বক্তব্য দিয়েছে। আল্লাহভীরু দু’জন ব্যক্তি বুঝানোর পর তাদের বক্তব্য ছিলো আরো ভয়াবহ, তারা বলেছিলো – “যাও, তুমি আর তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ করো।”
.
(২) বাইতুল মাকদিসের আধিপত্য লাভের পর এই জাতি আবারও বিলাসিতায় গা ভাসায় এবং নানাবিধ পাপাচারে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তাদের উপর প্রকাণ্ড প্রতাপশালী আমালিকাদের আবারও চাপিয়ে দেন। তখন নবী শ্যামুয়েলের যুগ। তারা নবীর মারফতে আল্লাহর তরফ হতে একজন সেনাপতি কামনা করে। এই জাতি করবে যুদ্ধ! নবীর সংশয় তৈরি হয়। পরে তারা কজন কতোটুকু সাহসী তাও কিন্তু প্রকাশিত হয়। [৫৬] মহান আল্লাহ শেষ নবীকে এই ঘটনা জানিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাষায় –
أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَى إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِنْ دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ
“তুমি কি মূসার পরে বনী ইসরাঈলের একদল নেতাকে দেখোনি, যখন তারা তাদের নবীকে বলেছিলো, “আমাদের জন্য একজন শাসক প্রেরণ করুন, যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি?” তিনি (নবী) বলেছিলেন, “তোমাদের প্রতি কি এমন ধারণা করা যায় যে, যদি তোমাদের উপর লড়াইকে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাহলে তোমরা লড়াই করবে?” তারা বললো, আমাদের কী হয়েছে যে আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করবো না? আমরা তো তাড়িত হয়েছি নিজেদের বাড়ি-ঘর আর সন্তান-সন্ততি হতে! এরপর তাদের উপর যখন যুদ্ধকে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হলো তখন অল্প কয়েকজন ছাড়া বাকী সবাই ফিরে গেলো। আর আল্লাহ যালিমদের ব্যাপারে অধিক জ্ঞাত।” [৫৭]
.
(৩) নবী শ্যামুয়েল আলাইহিস সালাম বাদশাহ তালূতকে শাসক/সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। [৫৮] এরপর তালূত যখন সেই অল্প কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন, দেখুন তখন কী অবস্থা হলো! কুরআনের ভাষায় –
فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللَّهَ مُبْتَلِيكُمْ بِنَهَرٍ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَنْ لَمْ يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ فَشَرِبُوا مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُمْ مُلَاقُو اللَّهِ كَمْ مِنْ فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
“তারপর তালূত যখন সৈন্যদল নিয়ে বেরিয়ে এলো তখন সে বললো, “আল্লাহ কিন্তু তোমাদেরকে একটি নদীর মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। সুতরাং যে ব্যক্তি সেই নদী হতে পান করবে সে আমার দলভুক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি তার স্বাদ গ্রহণ করবে না সেই-ই আমার দলভুক্ত, তবে হাতের এক আঁজলা ব্যতীত।” এরপর তাদের অল্প কতক ব্যতীত সবাই নদী হতে পান করলো। পরে তালূত যখন নদী পেরোলো তখন তার সঙ্গে ছিলো ঐ সকল লোকেরা যারা ঈমান এনেছিলো, তারা বললো, “আজকের দিনে জালূত ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে (যুদ্ধ করার মতো) আমাদের কোনো শক্তিই নেই।” (পক্ষান্তরে) যারা মনে করতো যে, আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত তো হতেই হবে, তারা বললো, “ছোট ছোট দল বিজয় পেয়েছে বড় বড় দলের বিরুদ্ধে আল্লাহর অনুমতিতে। আর আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন।” [৫৯]
.
জিহাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করলো যে কয়েকজন তার অধিকাংশই চলে গেলো। যারা ছিলো তারা বেরোলো। এরপর নদীর পানি পানের বাসনা ধরে না রাখতে পেরে অল্প কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই বাদ পড়ে গেলো। যারা ছিলো তারা ছিলো খাঁটি ঈমানদার। এদের সাহসও টলটলায়মান। এরপর আল্লাহ ঈমানদারদের মধ্যেও খাঁটি ঈমানদারদের কথা উল্লেখ করলেন, তাদের পরিচয় তাঁরা পরকালে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে। এভাবে আমাদের সামনে পরিষ্কার হচ্ছে, বনী ইসরাঈল একটি ভীতু, বিলাসী ও জিহাদ বিমুখ জাতি; এদের ভেতর প্রকৃত পরহেযগার ব্যক্তিদের সংখ্যা অতি নগণ্য। সবশেষে সবরকারীদের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয় যে, জিহাদের জন্য সবর প্রয়োজন, বিশেষত জিহাদের দায়িত্ব যখন বনী ইসরাঈলের মতো জাতির কাঁধে অর্পিত হয়, একইসঙ্গে সবর আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায় যখন প্রতিপক্ষ হয় প্রকাণ্ড প্রতাপশালী আমালিকা সম্প্রদায়। উক্ত ঘটনায় অধিক পরিমাণে পানি পান করার দ্বারা তাদের অবাধ্যতার পরিচয়ও প্রকাশ পায়।
.
(৪) ইউশা আলাইহিস সালাম বিশেষ শ্রেণীর ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে যে বাহিনী প্রস্তুত করেছিলেন এবং শেষ অবধি আল্লাহর বিশেষ সহায়তা প্রাপ্ত হয়ে বাইতুল মাকদিস বিজয় করেছিলেন সেই বাহিনীটিও অবাধ্যতা আর পাপাচার হতে মুক্ত ছিলো না। নতশিরে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থণা করার মাধ্যমে বিজীত জনপদে প্রবেশের হুকুমকে কিভাবে তারা অগ্রাহ্য করেছে এবং উদ্ধতভাব নিয়ে তারা প্রবেশ করেছে তা আমরা আগেই আলোচনা করে এসেছি। এছাড়াও সূর্যকে থামিয়ে রাখার যে লম্বা হাদীসটি আমরা উল্লেখ করেছি সে হাদীসের বাকী অংশ হতে জানা যায় যে, এই বিজয়ী বাহিনীর মধ্যেও ২/৩ জন চোর ধরা পড়ে, যারা গনীমতের মাল চুরি করেছিলো।
.
এতোগুলো বিষয় সামনে রাখার পর ইউশা আলাইহিস সালামের পদক্ষেপের যথার্থতা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। তিনি চেয়েছিলেন এই ভীতু ও অকর্মণ্য জাতির মধ্য হতে যথাসম্ভব বাছাই করে জানবাজ যোদ্ধা বের করে আনতে। কারণ নারী, বাড়ি আর পালিত পশুর প্রতি প্রেম/ভালোবাসা দিয়েই মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। এসবের প্রতি টান ধরে রেখে আর যাই হোক, যুদ্ধে বিজয় লাভ করা সম্ভব না, উপরন্তু তা যদি হয় বনী ইসরাঈলের মতো এক জাতি। আল্লাহ বলেন,
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ
“নারী, সন্তান, অঢেল সোনারূপার স্তুপ, চিহ্নিত ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি প্রবৃত্তির চাওয়া-পাওয়া মাফিক যে ভালোবাসা একে মানুষের নিকট সুসজ্জিত করে দেয়া হয়েছে।” [৬০]
.
অন্যত্র আল্লাহ তাঁর শেষ নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম করে বলছেন,
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
“বলে দাও, ‘’যদি তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তান-সন্ততি, তোমাদের ভ্রাতৃবর্গ, তোমাদের পত্নীবর্গ, তোমাদের নিকটাত্মীয়, তোমাদের ধনদৌলত যা তোমরা অর্জন করেছো, তোমাদের কায়-কারবার যাতে তোমরা মন্দার ভয় করছো এবং তোমাদের বসতবাড়ি যার উপর তোমরা সন্তুষ্ট তা তোমাদের নিকট আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা হতে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহ তাঁর ফয়সালা আনয়ন করা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসিক কওমকে হিদায়াত দেন না।” [৬১]
উপরোক্ত দু’ই আয়াত মিলিয়ে আলোচ্য তিন বিষয়ের প্রতি হৃদয়ের টানের কথা উল্লিখিত হয়েছে।
.
প্রাসঙ্গিক হিসেবে না বললেই নয়, প্রাণের বাইতুল মাকদিস আজ বন্দী এমন জাতির হাতে যাদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে জানিয়ে দিচ্ছেন,
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ
“আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ঘোষণা করেন – অবশ্যই অবশ্যই তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন লোকদেরকে পাঠাবেন, যারা তাদেরকে কঠিন আযাব পৌঁছাবে। আপনার রব তো শাস্তি প্রদানে তৎপর এবং নিশয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [৬২]
.
এখন মুক্তি কোন পথে? মুক্তি তো চিরচেনা সেই পুরানো পথেই যে পথে যুগে যুগে আল্লাহর পূণ্যবান বান্দারা হেঁটেছেন। আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বলেন,
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ (139) إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ
“আর তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মু’মিন হও। আঘাত যদি তোমাদের স্পর্শ করে, অনুরূপ আঘাত তো ওদেরও স্পর্শ করেছিলো। মানুষের মধ্যে আমরা এই দিনগুলোকে পালাক্রমে বদলাতে থাকি।” [৬৩]
.
আল্লামা আব্দুল আযীয ইবনু বায (১৩৩০-১৪২০ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
القضية الفلسطينية قضية إسلامية أولاً وأخيرًا، ولكن أعداء الإسلام بذلوا جهوداً جبارة لإبعادها عن الخط الإسلامي، وإفهام المسلمين من غير العرب، أنها قضية عربية، لا شأن لغير العرب بها، ويبدوا أنهم نجحوا إلى حد ما في ذلك، ولذا فإنني أرى أنه لا يمكن الوصول إلى حل لتلك القضية، إلا باعتبار القضية إسلامية، وبالتكاتف بين المسلمين لإنقاذها، وجهاد اليهود جهاداً إسلامياً، حتى تعود الأرض إلى أهلها
“ফিলিস্তিনী ইস্যুটি শুরু থেকে শেষ অবধি সম্পূর্ণ ইসলামি ইস্যু, কিন্তু ইসলামের শত্রুরা তাদের যাবতীয় প্রপাগান্ডা ও প্রচেষ্টা শুধুমাত্র এটার উপরই চালিয়েছে যে, কিভাবে একে ইসলামের চতুঃসীমা থেকে বের করে দেয়া যায় আর অনারব মুসলিমদের এটা বুঝানো যায় যে, এটা নিছক আরবীয় ইস্যু, যার সঙ্গে অনারবদের কোনো দেন-দরবার নেই। আরা তারা শুরু থেকেই তাদের উদ্দেশ্য সাধনে সফল হয়েছে, যার মধ্যে এটাও একটা। সেজন্য আমার মতামত হচ্ছে, বিষয়টিকে একটি ইসলামি ইস্যু হিসেবে সামনে আনা, মুসলিমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এর সমাধান করা এবং সকলে মিলে এই যমীনকে তার অধিবাসীদের হাতে ফিরিয়ে না দেয়া অবধি ইয়াহূদিদের বিরুদ্ধে ইসলামের বিধান মাফিক জিহাদ পরিচালনা করা, এতদভিন্ন এই ইস্যুর কোনো সমাধানে পৌঁছোনো যাবে না।” [৬৪]
.
আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ [ص:275]، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
“যখন তোমরা অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হবে, গরুর লেজ ধারণ করবে, চাষবাষেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্চণা চাপিয়ে দিবেন, তোমরা তোমাদের দীনে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত যা তিনি অপসারণ করবেন না।” [৬৫]
.
অনেক অলৌকিক ঘটনার বিশেষ উদ্দেশ্য থাকে, আল্লাহ সেটি ঘটান সামনে আরো বড় কিছু ঘটানোর উদ্দেশ্যে। যেমন কাবা ঘরকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে আবরাহা যখন তার হাতিবাহিনী নিয়ে রওয়ানা হলো তখন আল্লাহ ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করে তাদের ধ্বংস করেন। পাখিরা তাদের উপর পোড়ামাটির কঙ্কর ছুড়ছিলো। [৬৬] এই আশ্চর্যজনক ঘটনাকে আমরা বুঝতে পারবো যখন বাইতুল্লাহর মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমরা অবগত হবো। তাছাড়া “তুমি কি দেখোনি তোমার রব হাতিওয়ালাদের সাথে কী করেছিলেন?” [৬৭]
মহান আল্লাহর এই বাণীর মাধ্যমে তিনি কেমন যেন এ কথাই বুঝাতে চাইলেন যে, দেখো হাতিওয়ালাদের সাথে আল্লাহ যে আচরণ করেছেন আল্লাহ চাইলে তোমাদেরকে যারা কষ্ট দিচ্ছে তাদের সঙ্গেও তেমনটা করতে পারেন, [৬৮] এমনকি শুধু তাই নয় তাদের জায়গায় আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। হয়েছিলোও তাই। মহান আল্লাহ কুরাইশদের হাত হতে ক্ষমতা কেড়ে মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে দিয়েছিলেন। [৬৯] তাছাড়া আবরাহা বাহিনীর অলৌকিক ধ্বংসের মাধ্যমে কাবা ঘরের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়তে থাকে, একইসঙ্গে ভক্তি বাড়তে থাকে কুরাইশদের প্রতি। মানুষ ভাবতো আল্লাহ অলৌকিকভাবে আবরাহা বাহিনীর বিরুদ্ধে কাবার খাদেমদের বিজয় দান করেছেন। [৭০] কিন্তু পরবর্তীতে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয় করেন তখন সেই শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর। লোকে ভাবে যেই কুরাইশদের আল্লাহ আবরাহা বাহিনীর হাত হতে বাঁচিয়েছিলেন, তাদেরকেও যে বা যারা হারিয়ে দিলো সেই নবী, তাঁর দীন আর তাঁর অনুসারীরাই তো হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। তখন মানুষ দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিলো। [৭১]
.
তেমনই ইউশা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে দু’আ করেছেন আর আল্লাহ সূর্যকে থামিয়ে রেখেছেন এই অলৌকিক ঘটনাকে আমরা এতটুকুকেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারি, কিন্তু পৃথিবীতে একবারই সূর্যকে থামিয়ে রাখার মতো যেই অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে, সেই বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটানোর পেছনে আরো কিছু হেকমত থাকা অসম্ভব কিছু নয়, যারঁ প্রকৃত জ্ঞান তো কেবল আল্লাহর নিকটেই। কুরআন-সুন্নাহ পবিত্র বাইতুল মাকদিস ও ফিলিস্তিনের ভূমি নিয়ে যা যা বর্ণনা করেছে, সেসব তথ্য এই ধারণাকে আরো জোরালো করে। আর এজন্যই আমরা ইতোপূর্বে বাইতুল মাকদিস ও তাঁর ভূমির তাৎপর্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছি, পাশাপাশি বিশ্লেষণ করেছি নবী ইউশা আলাইহিস সালামের জীবন। আমরা দেখেছি বাইতুল মাকদিসের নাম কুরআনে এসেছে, এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় মাসজিদ, এর আশপাশ বরকতময়, এটি পবিত্র ভূমি এবং এজন্যই মূসা আলাইহিস সালাম শেষ আকাঙ্ক্ষা হিসেবে যথাসম্ভব এর নিকটবর্তী হতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও ইউশা আলাইহিস সালামের ফিলিস্তিন বিজয়ের পরে ঘটেছে এমন কিছু বিষয়ও আমরা উল্লেখ করেছি, যেমন: দাঊদ ও সুলাইমান আলাইহিমাস সালামের মতো বিপুল শক্তির অধিকারী দু’জন নবী এখানে রাজত্ব পরিচালনা করেছেন, এছাড়াও আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা বা রাত্রিকালীন অলৌকিক ভ্রমণের মাধ্যমে এখানে এসে পৌঁছান এবং সেই রাতে সকল নবীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সলাত আদায় করেন।
.
ইন শা আল্লাহ এবার আমরা বাইতুল মাকদিস কেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু তথ্য পেশ করবো যেগুলোকে আমরা ইউশা আলাইহিস সালামের পরের ঘটনা বলতে পারি। আমরা আগেই উল্লেখ করেছিলাম নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম এ অঞ্চল শাসন করেছেন। পাশাপাশি তিনি বাইতুল মাকদিসের পুনঃনির্মাণ করেন। নির্মাণ কাজ শেষ হবার পর তিনি এমন কিছু দু’আ করেছেন যাতে বাইতুল মাকদিসের মাহাত্ম্য ফুটে ওঠে। প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বলেছেন,
لَمَّا فَرَغَ سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ مِنْ بِنَاءِ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، سَأَلَ اللَّهَ ثَلَاثًا: حُكْمًا يُصَادِفُ حُكْمَهُ، وَمُلْكًا لَا يَنْبَغِي لَأَحَدٍ مِنْ بَعْدِهِ، وَأَلَّا يَأْتِيَ هَذَا الْمَسْجِدَ أَحَدٌ لَا يُرِيدُ إِلَّا الصَّلَاةَ فِيهِ، إِلَّا خَرَجَ مِنْ ذُنُوبِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ” فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّا اثْنَتَانِ فَقَدْ أُعْطِيَهُمَا، وَأَرْجُو أَنْ يَكُونَ قَدْ أُعْطِيَ الثَّالِثَةَ
“সুলাইমান ইবনু দাঊদ যখন বাইতুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করলেন তখন আল্লাহর কাছে তিনটি জিনিস চাইলেনঃ
(১) আল্লাহর হুকুম মাফিক বিচার,
(২) এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না,
(৩) এবং যে ব্যক্তি এই মাসজিদে শুধু সলাত পড়ার জন্য আসবে, সে যেন গুনাহ থেকে সেদিনের মতো মুক্ত হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিলো।
এরপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রথম দু’টি তাঁকে দান করা হয়েছে আর আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাঁকে দান করা হবে।” [৭২]
.
বাইতুল মাকদিস ছিলো শেষ নবীর উম্মতের প্রথম কিবলা। পরবর্তীতে কাবাকে কিবলা করা হয়।
বারাআ রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ أَوَّلَ مَا قَدِمَ المَدِينَةَ نَزَلَ عَلَى أَجْدَادِهِ، أَوْ قَالَ أَخْوَالِهِ مِنَ الأَنْصَارِ، وَأَنَّهُ «صَلَّى قِبَلَ بَيْتِ المَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا، أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا، وَكَانَ يُعْجِبُهُ أَنْ تَكُونَ قِبْلَتُهُ قِبَلَ البَيْتِ، وَأَنَّهُ صَلَّى أَوَّلَ صَلاَةٍ صَلَّاهَا صَلاَةَ العَصْرِ، وَصَلَّى مَعَهُ قَوْمٌ
“নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম যখন মদীনায় এলেন তখন আনসারীদের ভেতর তার নানা কিংবা মামা বংশীয় কারো কাছে এসে উঠেন। তিনি ষোলো কিংবা সতের মাস বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে সলাত আদায় করেন। তবে তাঁর কাছে পছন্দনীয় ছিলো যে, তাঁর কিবলা বাইতুল্লাহর দিকে হোক।” [৭৩]
.
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
لَمَّا حُوِّلَتِ الْقِبْلَةُ، قَالَ أُنَاسٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَصْحَابُنَا الَّذِينَ مَاتُوا وَهُمْ يُصَلُّونَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ؟ فَأُنْزِلَتْ: {وَمَا كَانَ اللهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ} [البقرة: 143]
“কিবলা যখন পরিবর্তন করা হলো তখন একদল মানুষ বললো, “হে আল্লাহর রসূল, আমাদের সঙ্গীরা যারা বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে সলাত আদায় করতো আর এ অবস্থাতেই তারা মারা গেছে তাদের কী হবে?” এ প্রেক্ষাপটে নাযিল হলো (এই আয়াত) [৭৪] – আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমানকে ব্যর্থ করে দিবেন।” [৭৫]
.
শুধু প্রথম কিবলা ছিলো, সেদিকে ফিরে সলাত পড়া হতো এখানেই শেষ নয়, কিছু সংখ্যক আলিমের মতে কাবার পাশাপাশি বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়া হারাম। তবে এ মতটি নিতান্তই দুর্বল এবং জমহুর (অধিকাংশ) আলিমদের মতের পরিপন্থি। [৭৬] তাদের দলীল হচ্ছে –
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَتَيْنِ بِبَوْلٍ أَوْ غَائِطٍ
“আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব বা পায়খানা করার সময় দু’ই কিবলা সামনে দিতে নিষেধ করেছেন।” [৭৭]
তবে এ হাদীসটিকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়াও এ হাদীসের ভিন্ন ব্যাখ্যা করার অবকাশ রয়েছে। [৭৮] কারো পক্ষ থেকে এমন ব্যাখ্যার কথাও বলা হয় যে, এদিকে ফিরে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়ার নিষেধাজ্ঞা ততোক্ষণ ছিলো, যতোক্ষণ এটি কিবলা ছিলো। কিবলার বিধান রহিত হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটিও রহিত হয়ে গেছে।
.
বিশেষ সাওয়াব কামাইয়ের উদ্দেশ্যে শুধু যে তিনটি মাসজিদে সফর করা যায়, মাসজিদুল আকসা সেই তিন মাসজিদের একটি। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ: المَسْجِدِ الحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى
“তিনটি মাসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মাসজিদের উদ্দেশ্যে হাওদা বাঁধা যাবে নাঃ
(১) মাসজিদুল হারাম,
(২) মাসজিদুর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম,
(৩) এবং মাসজিদুল আকসা।” [৭৯]
.
বিশেষ সাওয়াবের উদ্দেশ্যে শুধু আল-আকসায় যাওয়া নয়, আল-আকসা হতে ইহরাম বেঁধে উমরা করতে এলে এতেও রয়েছে বিশেষ সাওয়াব। আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
مَنْ أَهَلَّ بِعُمْرَةٍ مِنْ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، غُفِرَ لَهُ
“যে ব্যক্তি বাইতুল মাকদিস হতে উমরার উদ্দেশ্য তালবিয়া পাঠ করলো তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো।”
[৮০]
.
বাইতুল মাকদিসের বিশেষ মাহাত্ম্য ও ফযীলত ফুটে উঠে নিম্নোক্ত হাদীসে। প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আবূ যার আল-গিফারী রদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন,
صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ فِيهِ، وَلَنِعْمَ الْمُصَلَّى، وَلَيُوشِكَنَّ أَنْ لَا يَكُونَ لِلرَّجُلِ مِثْلُ شَطَنِ فَرَسِهِ مِنَ الْأَرْضِ حَيْثُ يَرَى مِنْهُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا جَمِيعًا – أَوْ قَالَ: خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
“উভয়ের মধ্যে কোনটির ফযীলত বেশি? আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাসজিদের ফযীলত বেশি না বাইতুল মাকদিস মাসজিদের ফযীলত? উত্তরে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মাসজিদে সলাত পড়া এটি উত্তম সেখানে (বাইতুল মাকদিস) চার বার সলাত পড়ার চেয়ে। আর তাঁর মুছাল্লা বা সলাত পড়ার স্থানটুকু কতোই না চমৎকার। আর অবশ্যই অবশ্যই শীঘ্রই এমন অবস্থা আসবে যে, একজন ব্যক্তির কাছে স্বীয় ঘোড়ার দড়ি সমপরিমাণ (এক খন্ড) যমীনের মতো আর অন্য কোনো বস্তুই সমগ্র দুনিয়া হতে মূল্যবান হবে না, যেই যমীন থেকে বাইতুল মাকদিসকে সে (একটু) দেখবে। কিংবা (বর্ণনাকারী) বলেছেন, দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তা হতে মূল্যবান হবে না।” [৮১]
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,
وليأتيَنَّ على النَّاسِ زمانٌ ولقَيْدُ سَوطِ أو قال : قوسِ الرَّجلِ حَيثُ يرى مِنهُ بيتَ المقدسِ ؛ خيرٌ لهُ أو أحبَّ إليه مِنَ الدُّنيا جميعًا
“আর অবশ্যই অবশ্যই মানুষের উপর এমন যামানা আসবে যে, চাবুকের রশি অথবা (বর্ণনাকারী) বলেছেন, ব্যক্তির ধনুক পরিমাণ একটুখানি জায়গা তার কাছে সমগ্র দুনিয়া হতে মূল্যবান হবে কিংবা তার কাছে অধিক প্রিয় হবে, যে জায়গা থেকে বাইতুল মাকদিসকে সে (একটু) দেখবে।” [৮২]
.
আহ, আজই যেন সেই দিন!
.
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীগুলো সাহাবীদের হৃদয়কেও ছুঁয়েছিলো। তাঁদের মনও ব্যাকুল ছিলো আল-আকসার জন্য। আসুন, এমনই কয়েকটি ঘটনা দেখে নিই। আবূ সাঈদ আল-খুদরী রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
وَوَدَّعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا فَقَالَ لَهُ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ: أُرِيدُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ.
“আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বিদায় দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেন, “তোমার বাসনা কী?” সে বললো, “আমার বাসনা বাইতুল মাকদিস।” [৮৩]
.
জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রদিয়াল্লাহু বলেন,
أَنَّ رَجُلًا، قَامَ يَوْمَ الْفَتْحِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي نَذَرْتُ لِلَّهِ إِنْ فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْكَ مَكَّةَ، أَنْ أُصَلِّيَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ رَكْعَتَيْنِ، قَالَ: «صَلِّ هَاهُنَا»، ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: «صَلِّ هَاهُنَا»، ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: «شَأْنُكَ إِذَنْ»
“(মক্কা) বিজয়ের দিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, “হে আল্লাহর রসূল, আল্লাহর কাছে আমি মানত করেছিলাম যে, মক্কায় আল্লাহ আপনাকে বিজয় দিলে আমি বাইতুল মাকদিসে গিয়ে দু’ রাকয়াত সলাত আদায় করবো।” তিনি বললেন, “সেই সলাত এখানেই পড়ে নাও।” সে পুনরায় একই কথা বললে তিনি বললেন, “সেই সলাত এখানেই পড়ে নাও।” সে আবারও পুনরাবৃত্তি করলে তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে তোমার স্বাধীনতা রয়েছে।” [৮৪]
বিজয় হচ্ছে মক্কা, সাহাবী যেতে চাইছেন আল-আকসা। সবই ভালোবাসা। অসুস্থ হলে আল-আকসায় যাওয়ার জন্য মানত করা হয়েছে সাহাবীদের যামানায় এমন নজীরও রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
إِنَّ امْرَأَةً اشْتَكَتْ شَكْوَى، فَقَالَتْ: إِنْ شَفَانِي اللهُ لَأَخْرُجَنَّ فَلَأُصَلِّيَنَّ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ
“এক মহিলা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বললো, “আল্লাহ যদি আমাকে আরোগ্য দেন তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আমি বাইতুল মাকদিসে গিয়ে সলাত আদায় করবো।” [৮৫]
.
এবার দেখবো আরো চমৎকার একটি ঘটনা। আহনাফ ইবনু কাইস বলেন,
دَخَلْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ، فَوَجَدْتُ فِيهِ رَجُلًا يُكْثِرُ السُّجُودَ، فَوَجَدْتُ فِي نَفْسِي مِنْ ذَلِكَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ قُلْتُ: أَتَدْرِي عَلَى شَفْعٍ انْصَرَفْتَ أَمْ عَلَى وِتْرٍ؟ قَالَ: إِنْ أَكُ لَا أَدْرِي، فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَدْرِي، ثُمَّ قَالَ: أَخْبَرَنِي حِبِّي أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. ثُمَّ بَكَى، ثُمَّ قَالَ: أَخْبَرَنِي حِبِّي أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. ثُمَّ
بَكَى، ثُمَّ قَالَ: أَخْبَرَنِي حِبِّي أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: “مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً، إِلَّا رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرَجَةً، وَحَطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيئَةً، وَكَتَبَ لَهُ بِهَا حَسَنَةً “. قَالَ: قُلْتُ: أَخْبِرْنِي مَنْ أَنْتَ يَرْحَمُكَ اللهُ؟ قَالَ: أَنَا أَبُو ذَرٍّ، صَاحِبُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَتَقَاصَرَتْ إِلَيَّ نَفْسِي
“আমি বাইতুল মাকদিসে প্রবেশ করেই সেখানে একজন ব্যক্তিকে পেলাম যিনি বেশি বেশি সিজদা করে যাচ্ছেন। আমার অন্তরে আমি তার প্রতি টান অনুভব করলাম। তারপর তিনি যখন চলে যাচ্ছিলেন আমি (তাঁকে) বললাম, “(আপনার সলাত) জোড়ে এসে শেষ করলেন না বিজোড়ে আপনি কি জানেন?”
তিনি বললেন, “আমি যদি নাও জানি, মহাপরাক্রমশালী মহান আল্লাহ তো জানেন।” এরপর তিনি বললেন, “আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু আবূল কাসিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন।” এরপর তিনি কেঁদে দিলেন। এরপর (আবারো) বললেন, “আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু আবূল কাসিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন।” এরপর (আবারো) কাঁদলেন। এরপর বললেন, “আমাকে আমার প্রিয় বন্ধু আবূল কাসিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন, তিনি বলেন, “যখনই কোনো বান্দা আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করে, তার বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর মর্যাদা এক ধাপ উঁচু করে দেন, তার বিনিময়ে তার কাছ থেকে একটি পাপ হটিয়ে দেন এবং তার জন্য একটি সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন।” (আহনাফ) বলেন, আমি বললাম, “আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন, আমাকে কি (একটু) জানাবেন আপনি কে?” তিনি বললেন, “আমি আবূ যার, আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী।” এ কথা শুনে আমার আত্মা সংকুচিত হয়ে এলো।” [৮৬]
পাঠক! একটু স্মরণ করিয়ে দেই এই আবূ যার কোন আবূ যার! এই আবূ যার সেই আবূ যার, যিনি প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৃথিবীতে মাসজিদ নির্মাণের ইতিহাস জানতে চেয়েছিলেন, এই আবূ যার সেই আবূ যার যিনি ঐ হাদীসের বর্ণনাকারী যে হাদীসে একটু আগেই আমরা দেখলাম যে, এক খন্ড যমীন সমগ্র দুনিয়া হতেও প্রিয় হবে। সাহাবীরা এমনই। অন্যকে বলার পূর্বে নিজে আমল করে নিতেন। আর অচিরেই যেই ফিতনা আসার কথা নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তিনি সেই ফিতনা আসার আগেই মাসজিদুল আকসায় পৌঁছে গেছেন, না জানি কখন কী হয়!
.
এবার আমরা এমন কিছু বর্ণনা দেখবো যেগুলোর মধ্যে বাইতুল মাকদিস ও এর পবিত্র ভূমি সম্পর্কে বিভিন্ন ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে।
আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ: مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ
“কিয়ামতপূর্ব ছয়টি নিদর্শন গুনে রাখো: আমার মৃত্যু, তারপর বাইতুল মাকদিস বিজয়…।” [৮৭]
হাদীসে বর্ণিত এই বিজয় উমার রদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনকালে সংঘটিত হয়ে গেছে। [৮৮] প্রাসঙ্গিক হিসেবে একটি কথা, যুগে যুগে এমন একবার নয় বারবার হয়, শিক্ষক বা ওস্তাদ স্বপ্ন দেখিয়ে যান আর শিষ্যরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে। যেই স্বপ্নের জন্য শিক্ষক দিন-রাত খেটে যান, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন কখনো কখনো নিজ চোখে দেখার আর সুযোগ হয় না। মূসা আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ইউশা আলাইহিস সালাম সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছিলেন। মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল-আকসার প্রতি ভালোবাসার চারা লাগিয়েছিলেন সেই চারা ফল দিয়েছিলো উমার রদিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে এসে। আল্লাহু আকবার!
.
আব্দুল্লাহ ইবনু হাওয়ালা আল-আযাদী রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِي، أَوْ قَالَ: عَلَى هَامَتِي، ثُمَّ قَالَ: «يَا ابْنَ حَوَالَةَ، إِذَا رَأَيْتَ الْخِلَافَةَ قَدْ نَزَلَتْ أَرْضَ الْمُقَدَّسَةِ فَقَدْ دَنَتِ الزَّلَازِلُ وَالْبَلَابِلُ وَالْأُمُورُ الْعِظَامُ، وَالسَّاعَةُ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنَ النَّاسِ مِنْ يَدِي هَذِهِ مِنْ رَأْسِكَ»
“এরপর তিনি (আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার মাথা বা মাথার তালুতে হাত রাখলেন, এরপর বললেন, “হে ইবনু হাওয়ালা, যখন তুমি দেখবে যে, পবিত্র ভূমিতে (বাইতুল মাকদিসের ভূমিতে) খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মনে করবে বেশি বেশি ভূমিকম্প, অস্থিরতা ও বড় বড় ঘটনা এগিয়ে এসেছে। তখন মহাপ্রলয় মানুষের এতোই নিকটবর্তী হবে, যেমন আমার এ হাত তোমার মাথার যতো নিকটবর্তী।” [৮৯]
.
মুয়া’য ইবনু জাবাল রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عُمْرَانُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ خَرَابُ يَثْرِبَ، وَخَرَابُ يَثْرِبَ خُرُوجُ الْمَلْحَمَةِ، وَخُرُوجُ الْمَلْحَمَةِ فَتْحُ قُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَفَتْحُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ خُرُوجُ الدَّجَّالِ»، ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدِهِ عَلَى فَخِذِ الَّذِي حَدَّثَهُ، – أَوْ مَنْكِبِهِ – ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ هَذَا لَحَقٌّ كَمَا أَنَّكَ هَاهُنَا»، أَوْ «كَمَا أَنَّكَ قَاعِدٌ»، يَعْنِي مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ
“বাইতুল মাকদিসে বসতি স্থাপনে ইয়াছরিবে বিপর্যয় হবে। ইয়াছরিবের বিপর্যয়ে সংঘাত শুরু হবে। সংঘাত শুরু হলে ক্বুসত্বনতিনিয়্যাহ (কনস্টান্টিনোপল) বিজিত হবে এবং ক্বুসত্বনতিনিয়্যাহ বিজিত হলে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।” এরপর তিনি যার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন তার ঊরুতে বা কাঁধে নিজের হাত দ্বারা মৃদু আঘাত করে বললেন, এটা নিশ্চিত তেমনই সত্য যেমন তুমি এখানে উপস্থিত অথবা এখানে যেমন তুমি উপবিষ্ট। অর্থাৎ, মু’আয ইবনু জাবালকে বললেন।” [৯০]
অন্য বর্ণনায় এটি মু’আয ইবনু জাবাল রদিয়াল্লাহু আনহুর নিজের বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, সবশেষে সেখানে উল্লেখ হয়েছে,
ثُمَّ ضَرَبَ مُعَاذٌ عَلَى مَنْكِبِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، فَقَالَ: «وَاللَّهِ إِنَّ ذَلِكَ لَحَقٌّ كَمَا أَنَّكَ جَالِسٌ»
এরপর মুয়া’য উমার ইবনুল খাত্তাবের (রদিয়াল্লাহু আনহুম) কাঁধে মৃদু আঘাত করে বললেন, আল্লাহর শপথ, এটি তো তেমনই সত্য, যেমনটি সত্য যে আপনি এখন বসাবস্থায় আছেন। [৯১]
.
পৃথিবীর ইতিহাসের যেই ফিতনার চেয়ে বড় কোনো ফিতনা নেই তা হচ্ছে দাজ্জালের ফিতনা আর দাজ্জাল নিহত হবে ঈসা আলাইহিস সালামের হাতে। তার নিহত হওয়ার স্থানটি হচ্ছে বাবে লূদ, যা বর্তমানে দখলকৃত ফিলিস্তিনে অবস্থিত। [৯২] ঈসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক দাজ্জালকে হত্যা প্রসঙ্গে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدٍّ، فَيَقْتُلُهُ
“অবশেষে তিনি তাকে খুঁজতে খুঁজতে বাবে লূদের নিকটে পাবেন এবং হত্যা করবেন।” [৯৩]
.
ইতোপূর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, বাইতুল মাকদিসের ভূমি শাম অঞ্চলে অবস্থিত। এবার ব্যাপকভাবে শাম অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে এমন কিছু হাদীস আমরা দেখবো ইন শা আল্লাহ, আর মনে রাখতে হবে এর ভেতর ফিলিস্তিন অঞ্চলটিও অন্তর্ভূক্ত। যাইদ ইবনু ছাবিত রদিয়াল্লাহু বলেন, আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
طُوبَى لِلشَّامِ»، فَقُلْنَا: لِأَيٍّ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «لِأَنَّ مَلَائِكَةَ الرَّحْمَنِ بَاسِطَةٌ أَجْنِحَتَهَا عَلَيْهَا
“শামের জন্য সুসংবাদ! আমরা বললাম, তা কেন হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, কেননা দয়াময়ের ফিরিশতাগণ তার উপর নিজেদের ডান বিছিয়ে রেখেছেন।” [৯৪]
.
নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একবার একটি আলো দেখানো হয়। সেই আলোর বর্ণনা দিতে প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
هُوَ نُورٌ سَاطِعٌ عُمِدَ بِهِ إِلَى الشَّامِ، أَلَا وَإِنَّ الْإِيمَانَ إِذَا وَقَعَتِ الْفِتَنُ بِالشَّامِ
“সেটি ছিলো দীপ্তিমান এক আলো, যা দিয়ে (দূর) শাম পর্যন্ত উদ্ভাসিত করা হয়েছে। শামে যখন ফিতনা শুরু হবে তখন এই আলো হচ্ছে সেই সময়কালীন ঈমান।” [৯৫]
.
আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
سَتَخْرُجُ نَارٌ مِنْ حَضْرَمَوْتَ أَوْ مِنْ نَحْوِ بَحْرِ حَضْرَمَوْتَ قَبْلَ يَوْمِ القِيَامَةِ تَحْشُرُ النَّاسَ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: «عَلَيْكُمْ بِالشَّامِ»
“কিয়ামত দিবসের পূর্বে হাযারামাওত হতে অথবা হাযারামাওতের ওদিক হতে শীঘ্রই একটি আগুন বেরিয়ে আসবে এবং লোকদেরকে তা একত্রিত করবে। সাহাবীরা বললো, “হে আল্লাহর রসূল, আপনি আমাদেরকে কী আদেশ করেন?” তিনি বললেন, “তোমরা শামে অবস্থান করবে।” [৯৬]
.
হাদীসে শামকে হাশরের অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর শাম অঞ্চলের ভেতর বাইতুল মাকদিসের ভূমিও অন্তর্ভূক্ত। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
هَاهُنَا تُحْشَرُونَ. هَاهُنَا تُحْشَرُونَ. هَاهُنَا تُحْشَرُونَ.، ثَلَاثًا
“তোমাদের হাশর (সমাবেশ) এখানেই হবে, তোমাদের হাশর এখানেই হবে, তোমাদের হাশর এখানেই হবে।” এভাবে তিনবার বলেছেন। [৯৭]
.
শাম সংক্রান্ত হাদীস বর্ণনা করা আমরা এখানেই ইস্তফা দিবো। একইসঙ্গে হাশরের বর্ণনা পর্যন্ত আমরা চলে এসেছি। এবার হাশরে ঘটবে এমন একটি হাদীস উল্লেখ করেই বাইতুল মাকদিস নিয়ে আমাদের আলোচনার ইতি টানতে চাই। প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ لِي حَوْضًا مَا بَيْنَ الْكَعْبَةِ، وَبَيْتِ الْمَقْدِسِ أَبْيَضَ، مِثْلَ اللَّبَنِ، آنِيَتُهُ عَدَدُ النُّجُومِ، وَإِنِّي لَأَكْثَرُ الْأَنْبِيَاءِ تَبَعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“নিশ্চয়ই কাবা ও বাইতুল মাকদিসের মধ্যবর্তী স্থানে আমার জন্য একটি (পানির) হাউজ থাকবে। যা দুধের ন্যায় সাদা এবং এর পানপাত্র হবে তারকাপুঞ্জের সংখ্যা অনুপাতে। আর কিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার অনুসারী সবচেয়ে বেশি হবে।” [৯৮]
.
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে – বিভিন্ন সময়ে সূর্যকে থামিয়ে রাখার আরো বিভিন্ন ঘটনা আমরা শুনেছি। তাহলে শুধু ইউশা আলাইহিস সালামের জন্যই সূর্যকে থামিয়ে রাখা হয়েছিলো তা কিভাবে নিশ্চয়তার সাথে বলা হচ্ছে? এর কারণ হচ্ছে হাদীসের ভাষ্য – “মানুষের ওপর সূর্যকে কখনোই ধরে রাখা হয়নি, তবে ইউশা ইবনু নূন ছাড়া।” হাদীসের ভাষ্যই অন্য সব ঘটনাগুলোকে নাকচ করে দিচ্ছে। লম্বা আলোচনায় না যেয়ে আমরা আলিমদের দু’টি বক্তব্য উল্লেখ করবো ইন শা আল্লাহ। ইউশা আলাইহিস সালামের জীবনী আলোকপাতকালে উক্ত হাদীস উল্লেখের পর ইমাম ইবনু কাছীর (৭০০-৭৭৪ হি) রহিমাহুল্লাহ বলছেন,
فِيهِ أَنَّ هَذَا كَانَ مِنْ خَصَائِصِ يُوشَعَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
“এতে প্রমাণিত হয় যে, সূর্যকে কারো জন্য থামিয়ে রাখা এটি ইউশা আলাইহিস সালামের একক (খাস) বৈশিষ্টের অন্তর্ভূক্ত।” [৯৯]
.
শাইখ আলবানী (১৩৩২-১৪২০ হি) রহিমাহুল্লাহ বলেন,
فيه أن الشمس لم تحبس لأحد إلا ليوشع عليه السلام ، ففيه إشارة إلى ضعف ما يروى أنه وقع ذلك لغيره
“ইউশা আলাইহিস সালাম ব্যতীত আর কারো জন্য সূর্যকে থামানো হয়নি, এই হাদীসের মাঝে ঐ সকল বর্ণনা দুর্বল হওয়ার প্রতি ইশারা রয়েছে, এ জাতীয় আরো যে সমস্ত ঘটনা অন্যদের দিকে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করা হয়।” [১০০]
.
মহান আল্লাহর কাছে এই আমাদের আর্জি, আমাদের আল-আকসাকে তিনি আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন।
.
.
[১] সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮
[২] আস-সহীহ, বুখারী, ৩১২৪
[৩] আস-সহীহ, মুসলিম, ১৯৯
[৪] মুসনাদ, আহমাদ, ৮৩১৫; সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ, আলবানী, ২২২৬; শুয়াইব আরনাঊতের মতে সনদ সহীহ এবং আলবানীর মতে জায়্যিদ (সুন্দর), উভয়ের মতেই বুখারীর শর্তে
[৫] সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১
[৬] সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১
[৭] সূরাতুল আম্বিয়াঃ ৭১
[৮] তাফসীরে ইবনু কাছীর
[৯] সূরাতুল আম্বিয়াঃ ৭১; আল কুরআনুল কারীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর); আবূ বকর যাকারিয়া
[১০] সূরাতুল মু’মিনূনঃ ৫০
[১১] তাফসীরে ইবনু কাছীর
[১২] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ৫৮
[১৩] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ৫৮; তাফসীরে ইবনু কাছীর, ইবনু কাছীর; তাফসীরুল কাবীর, ফখরুদ্দীন রাযী
[১৪] সূরাতুত তীনঃ ১
[১৫] সূরাতুত তীনঃ ১; তাফসীরে তাবারী, তাবারী
[১৬] আস-সহীহ, বুখারী, ১০৩৭
[১৭] সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, আলবানী, ১২০৪; আলবানীর মতে সহীহ লিগইরিহী
[১৮] আস-সহীহ, বুখারী, ৩৩৬৬; আস-সহীহ, মুসলিম, ৫২০
[১৯] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ২৫১; সূরাতুন নামলঃ ১৬
[২০] মুসনাদ, আহমাদ, ২৩২৪; শুয়াইব আরনাঊতের মতে সনদ যঈফ, তবে তার মতে এ হাদীসের বক্তব্য সমর্থণে একাধিক (শাওয়াহিদ) হাদীস রয়েছে; যেমন এর সমর্থণে হাদীস রয়েছে – আস সহীহ, মুসলিম, ১৭২; এছাড়া উল্লিখিত হাদীসের সনদকে ইবনু কাছীর সরাসরি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন, তাফসীরে ইবনু কাছীর, সূরা বানী ইসরাইল ১ নং আয়াতের অধীনে
[২১] সূরা বানী ইসরাইলঃ ১
[২২] আস-সহীহ, বুখারী, ৩৮৮৬
[২৩] মুসনাদ, আহমাদ, ২০৬৫০; মিসবাহুয যুজাজাহ, বূসীরী, ৪/৫৫-৫৬; শুয়াইব আরনাঊত ও বূসীরীর মতে সহীহ
[২৪] শারহু সুনানি ইবনি মাজাহ, জালালুদ্দিন সুয়ূত্বী, ১/২৪৭; হাশিয়াতুস সিন্দী আ’লা সুনানি ইবনি মাজাহ, সিন্দী, ২/৩৪৪
[২৫] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২১; তাফসীরে ইবনু কাছীর
[২৬] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (দারুল ফিক্র), ইবনু কাছীর, ১/৩১৯
[২৭] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (দারুল ফিক্র), ইবনু কাছীর, ১/৩১৯
[২৮] সূরাতুল কাহফঃ ৬০; তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, শাওকানী
[২৯] সূরাতুল কাহফঃ ৬০-৮২
[৩০] আস-সহীহ, বুখারী, ১২২
[৩১] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৩; তাফসীরে ইবনু কাছীর, ইবনু কাছীর
[৩২] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৩
[৩৩] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (দারুল ফিক্র), ইবনু কাছীর, ১/৩১৯
[৩৪] সূরাতুল কাহফঃ ৬০
[৩৫] নবীদের কাহিনী-২, আসাদুল্লাহিল গালিব, পৃঃ ১০২
[৩৬] সূরা মুহাম্মাদঃ ৭
[৩৭] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (দারুল ফিক্র), ইবনু কাছীর, ১/৩২৫
[৩৮] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২০
[৩৯] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২১
[৪০] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২২
[৪১] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৩; তাফসীরে ইবনু কাছীর
[৪২] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৩
[৪৩] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৪
[৪৪] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৫
[৪৫] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৬
[৪৬] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৬; তাফসীরে ইবনু কাছীর
[৪৭] আস-সহীহ, বুখারী, ১৩৩৯
[৪৮] সূরাতুল মায়িদাহঃ ২৬; তাফসীরে ইবনু কাছীর
[৪৯] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ৫৮
[৫০] সূরাতুন নাসরঃ ৩
[৫১] আস-সহীহ, বুখারী, ৩৪০৩
[৫২] আস-সুনান, আবূ দাউদ, ২৫৭১; আল-মুসতাদরাক, হাকিম, ১৬৩০; আলবানী ও হাকিমের মতে সহীহ
[৫৩] ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার, ৭/২১৭
[৫৪] সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১
[৫৫] সূরা ত্বহাঃ ৭৭
[৫৬] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ২৪৬; তাফসীরে ইবনু কাছীর, ইবনু কাছীর; নবীদের কাহিনী-২, আসাদুল্লাহিল গালিব, পৃঃ ১২০
[৫৭] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ২৪৬
[৫৮] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ২৪৯
[৫৯] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ২৪৭-২৪৮
[৬০] সূরা আলি ইমরানঃ ১৪
[৬১] সূরাতুত তাওবাহঃ ২৪
[৬২] সূরাতুল আ’রাফঃ ১৬৭
[৬৩] সূরা আলি ইমরানঃ ১৪০
[৬৪] মাজমূ’য়ু ফাতাওয়া ইবনু বায, ইবনু বায, ১/২৭৭
[৬৫] আস-সুনান, আবূ দাঊদ, ৩৪৬২; মুসনাদ (আহমাদ শাকির তাহকীককৃত), আহমাদ, ৪৮২৫; আলবানী ও আহমাদ শাকিরের মতে সহীহ
[৬৬] সূরাতুল ফীল; তাফসীরে ইবনু কাছীর
[৬৭] সূরাতুল ফীলঃ ১
[৬৮] সূরাতুল ফীলঃ ১; তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, তাকী উসমানী
[৬৯] সূরাতুল ফীল; তাফসীরে ইবনু কাছীর, ইবনু কাছীর; তাফসীরে কুরতুবী, কুরতুবী
[৭০] সূরা কুরাইশ; তাফসীরুল কুরআন, আসাদুল্লাহিল গালিব
[৭১] সূরাতুন নাসর; তাফসীরে ইবনু কাছীর, ইবনু কাছীর
[৭২] আস-সুনান, ইবনু মাজাহ, ১৪০৮; আস-সহীহ, ইবনু হিব্বান, ১৬৩৩; আলবানী ও শুয়াইব আরনাঊতের মতে সহীহ
[৭৩] আস-সহীহ, বুখারী, ৪০
[৭৪] সূরাতুল বাক্বারাহঃ ১৪৩
[৭৫] মুসনাদ, আহমাদ, ২৬৯১; শুয়াইব আরনাঊতের মতে সহীহ লিগইরিহী; এ বর্ণনাকে সমর্থণ করে – আস-সহীহ, বুখারী, ৪৪৮৬
[৭৬] ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার। ১/২৪৬
[৭৭] আস-সুনান, আবূ দাঊদ, ১০; আলবানীর মতে মুনকার, এছাড়াও অধিকাংশ মুহাদ্দিসের নিকট দুর্বল
[৭৮] ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার, ১/২৪৬
[৭৯] আস-সহীহ, বুখারী, ১১৮৯
[৮০] আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী, ১৭৫২; আত-তাইসীর বিশারহিল জামি’য়িস সগীর, মুনাবী, ২/৪০৬; মুনযিরীর মতে সহীহ এবং মুনাবীর মতে হাসান
[৮১] আল-মুসতাদরাক, হাকিম, ৮৫৫৩; তালখীছুল মুসতাদরাক (দারুল মা’আরিফ আন-নিযামিয়্যাহ), যাহাবী, ৪/৫০৯; হাকিম ও যাহাবীর মতে সহীহ
[৮২] আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, মুনযিরী, ১৮৪০; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, আলবানী, ১১৭৯; মুনযিরীর মতে সনদে কোনো আপত্তি নেই এবং আলবানীর মতে সহীহ
[৮৩] মুসনাদ, আহমাদ, ১১৭৩৪; শুয়াইব আরনাঊতের মতে সহীহ
[৮৪] মুসনাদ, আহমাদ, ১৪৯১৯; আস-সুনান, আবূ দাঊদ, ৩৩০৫; শুয়াইব আরনাঊতের মতে সনদ শক্তিশালী এবং আলবানীর মতে সহীহ
[৮৫] আস-সহীহ, মুসলিম, ১৩৯৬
[৮৬] মুসনাদ, আহমাদ, ২১৪৫২; ইরওয়ায়ুল গলীল, আলবানী, ২/২০৯; শুয়াইব আরনাঊত ও আলবানীর মতে সহীহ
[৮৭] আস-সহীহ, বুখারী, ৩১৭৬
[৮৮] ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার, ৬/২৭৮
[৮৯] আস-সুনান, আবূ দাঊদ, ২৫৩৫; আল-মুসতাদরাক, হাকিম, ৮৩০৯; আলবানী ও হাকিমের মতে সহীহ
[৯০] আস-সুনান, আবূ দাঊদ, ৪২৯৪; আলবানীর মতে হাসান
[৯১] আল-মুসতাদরাক, হাকিম, ৮২৯৩; তালখীছুল মুসতাদরাক (দারুল মা’আরিফ আন-নিযামিয়্যাহ), যাহাবী, ৪/৪২১; হাকিমের মতে মাওকূফ সহীহ এবং যাহাবীও বিপরীত কোনো মন্তব্য করেননি
[৯২] শারহুন নাবাবী আ’লা মুসলিম, নববী, ১৮/৬৮
[৯৩] আস-সহীহ, মুসলিম, ২৯৩৭
[৯৪] আস-সুনান, তিরমিযী, ৩৯৫৪; তিরমিযীর মতে হাসান গরীব এবং আলবানীর মতে সহীহ
[৯৫] আল-মুসতাদরাক, হাকিম, ৮৫৫৪; তাখরীজু আহাদীসি ফাযায়িলিশ শাম, আলবানী, পৃঃ ১২; হাকিম ও আলবানীর মতে সহীহ
[৯৬] আস-সুনান, তিরমিযী, ২২১৭; তিরমিযীর মতে হাসান সহীহ গরীব এবং আলবানীর মতে সহীহ
[৯৭] মুসনাদ, আহমাদ, ২০০১১; শুয়াইব আরনাঊতের মতে হাসান
[৯৮] আস-সুনান, ইবনু মাজাহ, ৪৩০১; আলবানীর মতে সহীহ এবং শুয়াইব আরনাঊতের মতে সহীহ লিগইরিহী
[৯৯] আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া (দারুল ফিক্র), ইবনু কাছীর, ১/৩২৩
[১০০] সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ, আলবানী, ১/৩৯৯