কোরআনে কারিমের ভাষা সৌন্দর্য কিভাবে উপলব্ধি করব?
কোরআন আল্লাহ তাআলার কালাম। সকল কালামের শ্রেষ্ঠ কালাম। এতে রয়েছে সমগ্র মানবজাতির জন্য কেয়ামত পর্যন্ত হেদায়াত। এতে নিহিত আছে দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কল্যাণ ও সাআদাত। সকল জ্ঞানের উৎস এই কোরআন। আল্লাহ তায়ালা নবী রাসুলদের উপর যত কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এই কোরআন। দুনিয়ার শুরু লগ্ন থেকে এই পর্যন্ত ও ভবিষ্যতে আগত মানবপ্রসূত সকল জ্ঞান বিজ্ঞান এর সামনে নত। সকল ইজম সকল মতবাদ তার সামনে আহত। এই কোরআন তুলনাহীন। কারো পক্ষেই এর একটি সূরার সমকক্ষ তৈরি করা সম্ভব নয়। কেয়ামত পর্যন্ত সম্ভব নয়। কারণ এই কোরআন আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন এবং তাকে মু’জিয (অক্ষমকারী) বানিয়েছেন।
কোরআন মু’জিয হওয়ার বিভিন্ন দিক রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো তার ভাষা। কোরআনের ভাষাই বলে দেয় এই কিতাব মানব রচিত নয়। সবকিছুর স্রষ্টা সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাসীন আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয় এ কিতাব রচনা করা। কোরআনের এই ভাষা সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সচেতন সকল মুমিনের দায়িত্ব। যেন কোরআনের প্রতি নিজের বিশ্বাস, আস্থা ও মুহাব্বত দৃঢ় থেকে দৃঢ় হয় এবং কোরআন আল্লাহর কিতাব এ বিষয়টি আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদের বুঝানো সম্ভব হয়। তাছাড়া কোরআনের ভাষা সৌন্দর্য যে যত উপলব্ধি করবে কোরআন সে ততো বুঝতে পারবে। কোরআনের উলুম ও মাআরিফ, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তার সামনে ততো প্রকাশ হতে থাকবে।
কোরআনের ভাষা সৌন্দর্য কিভাবে বুঝব?

১. ইলমুল লুগাহ। আরবী ভাষার শব্দ ভান্ডার সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। একাধিক অর্থ বিশিষ্ট শব্দগুলোর প্রয়োগ ক্ষেত্র জানা থাকতে হবে। কোন কোন শব্দ সিলার ভিন্নতার কারণে, মাসদারের ভিন্নতার কারণে, ফায়েল ও মাফউলের ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ দেয় তা মনে রাখতে হবে। একাধিক অর্থবিশিষ্ট শব্দের কোনটা মূল অর্থ ও কোনটা দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ তা জানা থাকতে হবে। মূল অর্থের সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ সমূহের যোগসূত্র অনুধাবন করতে হবে। এর জন্য আরবী ভাষার মৌলিক অভিধানগুলোর সাথে সাথে আরো যে কিতাবগুলোর সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি করতে হবে তা হল:









২. ইলমুন নাহু ওয়াস সরফ। আরবি ব্যাকরণ ও তারকীব সম্পর্কে সঠিক, গভীর ও প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বিশেষ করে একই বাক্যের একাধিক তারকীবের সম্ভাবনা ও তারকীব সমূহের মাঝে অর্থগত সূক্ষ্ম পার্থক্য সম্পর্কে সঠিক অনুধাবন রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে দরসে নেযামীর নাহু সরফের কিতাবগুলো উস্তাদের কাছে ভালোভাবে অধ্যায়ন করার পাশাপাশি নিম্নের কিতাবগুলোও পর্যায়ক্রমে গভীর ভাবে বুঝে বুঝে ভালো করে পড়তে হবে:











এরপর



নিয়মিত মোতালায় রাখতে হবে।
৩. ইলমুল বালাগাহ। ইলমুল মাআনী, ইলমুল বয়ান ও ইলমুল বাদীয়ের মাসআলাগুলো যথাযথ আত্মস্থ করতে হবে। প্রত্যেক মাসআলার যৌক্তিকতা বুঝতে হবে এবং এর পিছনে লুকিয়ে থাকা ভাষাগত সৌন্দর্য অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে দরসে নেযামীর কিতাবগুলো তার নির্বাচিত শুরুহ ও হাওয়াশী সহ যথাযথা অধ্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি নিম্নের কিতাবগুলো আদ্যপন্ত পড়তে হবে:





এরপর শায়খ মুহাম্মদ মুহাম্মদ আবু মুসা হাফিজাহুল্লাহ এর المدخل إلى كتابي الجرجاني পড়ে আব্দুল কাহির জুরজানীর دلائل الإعجاز ও أسرار البلاغة গভীর ভাবে অধ্যায়ন করতে হবে।
এরপর النقد الأدبي ও আরবী সাহিত্য সমালোচনা বিষয়ে মৌলিক কিতাবগুলো অধ্যায়ন করতে হবে। যেমন:




এই কিতাবগুলো পড়ে বোঝার চেষ্টা করব আরবি ভাষায় কোন কথাটা সুন্দর হয় ও কোন কথাটা অসুন্দর হয় এবং কেন সুন্দর হয় ও কেন অসুন্দর হয়।







কোরআনের ভাষা সৌন্দর্য উপলব্ধি করার জন্য যেভাবে তাদাব্বুর করতে হবে তা হল:
১. শব্দ প্রয়োগে কুরআনে কারীমের যথার্থতা অনুভব করা। কুরআনে কারীমে যে শব্দটি নির্বাচন করা হয়েছে তার মাঝে ও তার সমঅর্থ শব্দগুলোর মাঝে অর্থগত সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো বের করা। পুরো বাক্য, পুরো আয়াত, পুরো আলোচনা ও পুরো সূরার জন্য এই শব্দটি যে অর্থ ও উচ্চারণগত দিক থেকে সবচেয়ে উপযোগী তা বোঝার চেষ্টা করা।
২. বাক্যের কাঠামো নির্বাচনে কুরআনে কারীমের যথার্থতা অনুধাবন করা। বাক্যটি যে অর্থ দেয় সে অর্থ দেওয়ার জন্য আরও যত বাক্য কাঠোমা হতে পারে তা বের করা। এরপর নির্বাচিত কাঠোমা ও তার সমার্থক কাঠোমারগুলোর মাঝে পার্থক্যগুলো বোঝার চেষ্টা করা। পূর্বাপরের দিকে লক্ষ্য করে এই নির্বাচিত কাঠোমাটিই যে অর্থময়তা ও শ্রুতিমধুরতার দিক থেকে সবচেয়ে উত্তম সবচেয়ে সুন্দর তা অনুধাবন করার আপ্রাণ চেষ্টা করা।
৩. এক বাক্যের পর আরেক বাক্য, এক আয়াতের পর আরেক আয়াত, এক আলোচনার পর আরেক আলোচনা, এক সুরার পর আরেক সূরার যে অন্তর্নিহিত সম্পর্ক আছে তা বুঝার চেষ্টা করা। সূরার শুরু অংশ ও শেষের অংশের মাঝে যে সম্পর্ক আছে এবং শুরু ও শেষের সাথে পুরো সুরার যে সম্পর্ক আছে তা বের করা। এরপর এ সকল সম্পর্কের সৌন্দর্য অনুধাবন করা। এক বাক্যের পর আরেকটি বাক্য কেন وصل দিয়ে শুরু হল আর কেন فصل দিয়ে শুরু হল তার রহস্য উদঘাটনে সচেষ্ট হওয়া।
এই তাদাব্বুর প্রথমে নিজে নিজে করা। তারপর নিচের কিতাব ও তাফসীরগুলোর সাহায্য নেওয়া:














এই বিষয়ের জন্য আধুনিক লেখদের থেকে শুধু দুজনের নাম বলব। শায়খ মুহাম্মদ মুহাম্মদ আবু মুসা ও শায়খ সলেহ সামিররায়ী হা.। তাদের কোরআন সংক্রান্ত সকল কিতাব অধ্যায়ন করা।
ইনশাআল্লাহ এই কাজগুলো যদি আমরা করতে পারি তাহলে কোরআনের ভাষা সৌন্দর্য সম্পর্কে ধীরে ধীরে আমরা অবগতি লাভ করতে থাকবো। আল্লাহ তাআলা তাওফিক করুন।