
‘সুতরা’ রাখার গুরুত্ব ও পদ্ধতি
সালাত আদায়ের সময় সামনে ‘সুতরা’ রাখার গুরুত্ব ও পদ্ধতি: যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ অসচেতন
প্রশ্ন: সুতরার বিধান কি এবং এর সীমা কতটুকু?
উত্তর:
সালাতে দাঁড়ানোর সময় পুরুষ-নারী সবার জন্যই সামনে সুতরা (বেড়া দণ্ড) রাখা সুন্নতে মুআক্কাদা।
জামাতে সালাত আদায়ের সময় ইমামের সামনে সুতরা রাখলেই যথেষ্ট; মুক্তাদিদের সামনে সুতরা থাকার প্রয়োজন নাই। আর একাকী সালাত আদায়ের সময় প্রত্যেকেই সামনে সুতরা রেখে সালাত আদায় করবে।
সুতরাং মুসল্লীকে চেষ্টা করতে হবে দেয়াল, খুঁটি, খাট, টেবিল, আলমারি, বুকশেলফ ইত্যাদির কাছাকাছি গিয়ে অথবা সম্মুখে প্রায় পৌনে এক হাত বা তার চেয়ে কিছু কম বা বেশি উঁচ্চতা সম্পন্ন কোন জিনিস (যেমন কুরআনের রেহেল, বোতল, লাঠি জাতীয় কোন জিনিস) রেখে সালাত আদায় করার। যথাসম্ভব সুতরা ছাড়া সালাত আদায় করা উচিৎ নয়।
এর বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, শয়তান সালাতে মনোযোগ নষ্ট করতে পারে না। যার ফলে মনে ভয়-ভীতি ও নম্রতা সহকারে সালাত আদায় করা যায়। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَى سُتْرَةٍ فَلْيَدْنُ مِنْهَا لَا يَقْطَعُ الشَّيْطَانُ عَلَيْهِ صَلَاتَهُ
“তোমাদের কেউ সু্তরা স্থাপন করে সলাত আদায় করলে যেন সু্তরার কাছাকাছি দাঁড়ায়। যাতে করে শয়তান তার সলাত ভঙ্গ করতে না পারে।”
[সুনান আবু দাউদ (তাহকিক কৃত) অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (كتاب الصلاة) হাদিস নম্বর: [695] আল্লামা আলবানী একাডেমী-সনদ সহীহ]
এই সুতরার বাহির দিয়ে যে কেউ চলাচল করতে পারে। তবে কোন ব্যক্তি অজ্ঞতা বশত: সুতরার ভিতর দিয়ে নামাযরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে তার উচিৎ তৎক্ষণাৎ সামনে হাত বাড়িয়ে তাকে বাধা দেয়া-যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

সুতরার উচ্চতা হবে সাধারণভাবে কমপক্ষে পৌনে একহাত সমপরিমাণ। কারণে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
مِثْلُ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ تَكُونُ بَيْنَ يَدَىْ أَحَدِكُمْ ثُمَّ لاَ يَضُرُّهُ مَا مَرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ
“তোমাদের কারও সম্মুখে হাওদার পিছনের কাঠ পরিমাণ কোনও কিছু থাকলে সেটির বহিরে দিয়ে কোন কিছুর যাতায়াত তার কোন ক্ষতি করবে না।” ইবনে নুমায়র (রহঃ) বলেন, তার বাইরে দিয়ে ‘কোনও ব্যক্তির’ যাতায়াত ক্ষতি করবে না।
(সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: [995], অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুস সলাত ( كتاب الصلاة) ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

যদি অতটুকু উঁচু কোন কিছু না পাওয়া যায় তাহলে এর চেয়ে কম উচ্চতা সম্পন্ন কোন জিনিস রাখবে। যেমন, জামা-কাপড়, মাথার টুপি, ইট, পাথর ইত্যাদি। তাও না পেলে মরুভূমি বা মাঠে নামায পড়লে একটা দাগ দিয়ে নিবে। দাগ দেয়ার হাদিসটিকে ইবনে হাজার প্রমুখ হাসান বলেছেন। যদিও শাইখ আলবানী যঈফ বলেছেন। তবে সুতরা ছাড়া সালাত আদায় করলেও সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

মুসল্লির দাঁড়ানোর স্থান থেকে প্রায় তিন হাত দূরত্বে অথবা সেজদার স্থান থেকে এতটুকু দূরত্বে সুতরা রাখা উচিৎ যেন, সেজদার স্থান ও সুতরার মাঝখান দিয়ে একটা ছাগল অতিক্রম করতে পারে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:


كَانَ بَيْنَ مُصَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَبَيْنَ الْجِدَارِ مَمَرُّ الشَّاةِ
“রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সলাতের স্থান এবং (তাঁর সামনের) দেয়ালের মাঝখান একটি ছাগল চলাচল করার পরিমাণ প্রশস্ত ছিল।” (তিনি সুত্রাহ্ এর খুব কাছাকাছি দাঁড়াতেন)।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেজদার স্থান থেকে কা’বার দেয়ালের মাঝে একটা ছাগল অতিক্রম হওয়ার সমপরিমাণ দূরত্ব ছিলো। এতে প্রমাণিত হয়, সুতরার কাছাকাছি দাঁড়ানো সুন্নত। (যেমনটি বলেছেন ইমাম নওবী রহ.)


وكان صلى الله عليه وسلم يقف قريبا من السترة ، فكان بينه وبين الجدار ثلاثة أذرع , و بين موضع سجوده ، والجدار ممر شاة
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুতরার এতটা নিকটে দাঁড়াতেন যে, তার মাঝে ও দেয়ালের মাঝে তিন হাত পরিমাণ আর সেজদার স্থান থেকে দেয়ালের মাঝে একটা ছাগল অতিক্রম করার সমপরিমাণ স্থান থাকত।” (সিফাতুস সালাত ১/১১৪)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব