তাওহীদ #৭ – কুরবানি ও নাবি ইবরাহীম (আঃ)
১.
কোরবানির ঈদ চলে এসেছে। শফিক সাহেব বরাবরের মতই এবারো ভাগে কোরবানি দিচ্ছেন। তার স্ত্রী ও তিনটি সন্তান অবশ্য গত কয়েকমাস ধরেই তাকে বলছে যে ছোট হলেও একটা আলাদা গরু কিনতে এইবার। কিন্তু এইসব গরু হাতাহাতি-কাটাকাটি শফিক সাহেবের কাছে বেশ যন্ত্রনা মনে হয়। গরু কিনে আন রে, সেটাকে খাওয়াও রে, ময়লা পরিষ্কার কর রে, কসাই আনো রে…ব্লা ব্লা ব্লা। এরচে ফ্ল্যাটের অন্যদের সাথে মিলে ভাগের টাকাটা দিয়ে দিলেই তো হয়। ফরযও আদায় হয়ে গেল, ঝামেলাও কমে গেল। তাছাড়া এই মাত্র কয়েকদিন আগেই বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন। এনগেজমেন্ট, পানচিনি, গায়ে হলুদ, অফিসার্স ক্লাবে রিসেপসন সব মিলিয়ে বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে দিয়েছেন । লাখ দশেকের মতন খরচ গেছে সেখানেই। এখন কি তার অবস্থা আছে ৪০-৫০ হাজার দিয়ে একটা গরু কিনার? এটা কি বোঝে না তার পরিবার ? ইসলাম তো কাউকে জোর করে কষ্ট দেয়না তাইনা? আল্লাহ নিশ্চয়ই বুঝবেন তার “এত বিশাল” সমস্যা।
তাই এবারো শফিক সাহেব উপরের ফ্ল্যাটে যেয়ে ভাগের লামসাম একটা টাকা দিয়ে কুরবানির ফরয আদায় করে ফেললেন।
২.
গনি সাহেব বেশ বিমর্ষ এবার ঈদে। ঈদের দুইদিন আগে তিনি ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটা বেশ বড় গরু কিনে এনেছেন। ঈদের ঠিক আগের দিন রাতে যশোর থেকে কয়েকশ গরু ভর্তি ট্রাক চলে আসায় গরুর দাম অস্বাভাবিক কমে গেছে। তার দোতালার প্রতিবেশী আলতাফ সাহেব ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ঈদের আগের দিন রাত ১১টায় একটা প্রকান্ড গরু কিনে এনেছেন। গরুটা গনি সাহেবের গরুর চেয়েও কয়েক ইঞ্চি উঁচু। আলতাফ সাহেব চোখেমুখে যুদ্ধজয়ের ভাব নিয়ে তার গরুটাকে বাঁধলেন ঠিক গনি সাহেবের গরু পাশেই। দুয়েকবার গলা খাকারি দিয়ে পাশের দাঁড়ানো গনি সাহেবকে বলেই ফেললেন- “বেশ কমেই পেয়েছি গরুটা, কি বলেন ভাই তাইনা হেহেহে ? ৫ মণ মাংস হবেনা ? ”
৩.
আরিফ সাহেব একজন সেক্যুলার মুসলিম। তিনি মনে করেন , তিনি মনেপ্রানে একজন বাঙ্গালী, তারপর তার ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রা-ইলিশ-পান্তা , লালনগীতি-রবীন্দ্রসঙ্গীত, গায়ে হলুদ-বৌভাত , বিভিন্ন মন্দির-মন্ডপ ঘুরে পূজা দেখা সহ বাঙ্গালী কালচারের এমন কোন অংশ নেই যেখানে তাকে পাওয়া যাবে না। “ধর্ম যার যার, উৎসব হচ্ছে সবার” – এই নীতিতে তিনি অটুট। যেহেতু বাঙ্গালী কালচারের অনেক কিছুই ইসলাম ধর্ম সমর্থন করেনা, তাই তিনিও ইসলাম ধর্মের অনেককিছু পছন্দ করেন না ! কুরবানী জিনিসটা তিনি খুব একটা পজিটিভ চোখে দেখেন না। একদিন ঘটা করে সারা দুনিয়ার সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে কতগুলো নিরীহ গরু ছাগল জবাই করার মাঝে কি আনন্দ তিনি সেটা ধরতে পারেন না। তাই তিনি প্রতি কুরবানী ঈদেই দেশের বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে পরিবার পরিজন সহ ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, নেপাল বা মালদ্বীপ চলে যান। সপ্তাখানেক সেখানে রিল্যাক্স করে দেশে গরু-গোবর-রক্ত-বর্জ্যের গন্ধ চলে গেলে তারপর তিনি ফেরত এসে আবার বাঙ্গালী মুসলিম হয়ে যান।
৪.
২০১৩ সাল। কুরবানী ঈদের দিন। ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস আমার চোখে পড়ল। যিনি দিয়েছেন তিনি মুসলিম। ৩ নাম্বার পয়েন্টটার মতন একজন মুসলিম। তিনি লিখেছেন-
” দাও, রাস্তাঘাট রক্তে ভাসিয়ে দাও। আজকে তো তোমাদেরই দিন। রাস্তাঘাট রক্তে ভাসিয়ে কোরবানী কর, আর ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হও। ”
৫.
এটাও ২০১৩। বাংলাদেশে কিছু সেলিব্রিটি লেভেলের নাস্তিক আছে আপনারা সবাই জানেন। এরা ইসলামকে নিয়ে এত তীব্র পর্যায়ের কুৎসিত কথা বলে যে একটা সময়ে সাধারন মানুষের ধারনাই হয়ে গিয়েছিল – “সকল ব্লগার নাস্তিক !” । এদের একজনের প্রোফাইল এ কুরবানী ঈদের সময়ে আমি ঢুকেছিলাম। সে একটা ছবি দিয়েছিল। কোন একটা দেশে ঈদ উল আযহা হচ্ছে। মুসলিমরা এক জায়গায় অনেক গরু কুরবানি দিচ্ছে। রক্তে লাল হয়ে আছে পুরো উদ্যান। ছবিটা তুলে দিলাম। ছবির বর্ননা সে দিয়েছিল অনেকটা এরকম- ইসলাম একটি জঘন্য বর্বর মধ্যযুগীয় ধর্ম ।ইসলাম মানেই সন্ত্রাস, রক্তপাত, হানাহানি।
৬.
ঢাকার মোহাম্মদপুর। কোন একটি এলাকা, কোন একটি রোড। এক বাড়ির সামনের রাস্তায় দুটি গরু বেধে রাখা হয়েছে। সামনে উৎসুক জনতার ভীড়। দুইটি গরুর দাম ৬ লাখ টাকা। প্রায় ৬ ফিট এর উপর উচু একেকটি গরু। এই বাড়ির দুই ভাই পুরো এলাকায় “ঐযে যারা বড় গরু আনে প্রতিবার” নামে পরিচিত। এরা দুইজনই রাজনীতির সাথে জড়িত, এলাকায় এরা বেশ প্রভাবশালী লোক। খুব বেশি মানুষ তাদের ঘাটায় না কখনোই। এরা খুব যে প্র্যাকটিসিং মুসলিম ফ্যামিলি তা মোটেও না। কিন্তু এরা গরু কিনবে প্রতিবারই এইরকম। রাস্তায় ভীড় জমে যায় তাদের গরু দেখার জন্য।
এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো আমাদের সমাজেরই ঘটনা। কোরবানির ঈদ আসন্ন। সারা বিশ্বের মুসলিমদের অন্যতম প্রধান একটি উৎসব। বাড়িতে যাওয়া, গরু কিনা, কুরবানি করা, মাংস ভাগ করা, এসব করেই উৎসবের উৎসাহে কেটে যাবে আরেকটি ঈদ। এই আর্টিকেল এ এই বিষয়গুলো দেখানো হয়েছে-
– গরু তো প্রতিদিনই জবাই হচ্ছে, খাওয়া হচ্ছে। ঘটা করে একদিন গরু কিনে জবাই করে উৎসব করার কি পেছনে কি অর্থ রয়েছে ?
– কোরবানীর ঈদ কি একটি মাংস খাওয়ার উৎসব মাত্র?
– কিভাবে কোরবানী শুরু হল? কে ছিলেন ইবরাহীম (আ) ? কি ঘটেছিল তাঁর জীবনে?
– জবাই দিলে কি আসলেই পশু খুব কষ্ট পায়?
[কখনো কখনো ইবরাহীম(আ) এর নামের পরে (আ) দেওয়া হয়নি। এটা ইচ্ছাপূর্বক ও শুধুই পড়ার সুবিধার্থে। অবশ্যই তাঁর প্রতিটি নামের জন্য সালাম, শান্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। ]
কুরবানি আরবি শব্দ “কুরবাতুন/কুরবান” থেকে এসেছে যার অর্থ “ত্যাগের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ” বা Sacrifice . হাজার বছর আগে নাবি ইবরাহিম(আ) এর জীবনে যে ঘটনা ঘটেছিল সেটাকে সম্মান জানানোর জন্য ও মহান আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য মুসলিমরা প্রতি বছর কুরবানির ঈদ পালন করে।
কুর’আনে ৭০ বার ইবরাহীম(আ) এর কথা বলা আছে। তাঁর নামে পুরো একটি সূরা আছে। প্রত্যেক নামাজে নাবি ইবরাহীম(আ) এর উপর আমরা দরূদ পাঠ করে তাকে সালাম ও শান্তি জানাই। কি করেছিলেন আল্লাহর এই নবী যার জন্য আমরা তাকে প্রতিদিন স্মরন করি?
ইবরাহীম বা আব্রাহাম জন্মেছিলেন ব্যাবিলনে, আনুমানিক ৭৫০০ বছর আগে। স্রষ্টা মানুষকে বানিয়েছেন শুধুই তাঁর উপাসনা করার জন্য, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সবসময়েই কিছু মানুষ সেটা ভুলে গিয়েছে। কেউ মূর্তি, কেউ রাজা-বাদশাহ, কেউ গ্রহ-নক্ষত্র কে পূজা করেছে। কেউ বা নিজেই নিজেকে স্রষ্টা দাবি করেছে [ফেরাউন/ ফারাও]। কেউ নিজের জীবন, সাধ-আহ্লাদ, জাগতিক আনন্দ কে পূজা করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। মানুষের মধ্যে থেকে কেউ কেউ এই ব্যাপারগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন। তাদেরই কাউকে কাউকে আল্লাহ বেছে নিতেন তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে, যাদেরকে মুসলিমরা নাবি-রাসূল বলে সম্বোধন করে।
বহু মানুষের ধারনা ধর্ম একটি অন্ধ বিশ্বাস ছাড়া আর কিছুই না। কেউ যদি ঠান্ডা মাথায় নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে কুর’আন পড়ে দেখেন, তিনি দেখতে পারবেন এখানে প্রত্যেকটি কথা অত্যন্ত লজিক্যাল। বালক ইবরাহীম এর বাবার নাম ছিল আযার। তিনি ছিলেন একজন মুশরিক। তিনি শুধু মূর্তি পুজাই করতেন না, তিনি মূর্তি বানিয়ে বানিয়ে পাইকারী সাপ্লাই দিতেন যাতে অন্যরাও সেগুলোর পুজা করতে পারে!তার সমাজের অন্যান্য লোকেরা মূর্তিপূজার পাশাপাশি গ্রহ নক্ষত্র এসবেরও পূজা করত।
শিক্ষাঃ যেসব প্র্যাকটিসিং মুসলিম ভাই বোনেরা মনে করেন যে- “আহারে, আমার প্যারেন্টস যদি আরেকটু ইসলামিক হোত!”- তারা যেন ইবরাহীম(আ) এর অবস্থাটা একবার কল্পনা করার চেষ্টা করি।
বালক ইবরাহীম অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন।তার আশেপাশের সবাই মূর্তিপুজা করত, স্বাভাবিকভাবে তারও সেটা করার কথা ছিল।কিন্তু তিনি নিজের লজিক ও যুক্তি দিয়ে বুঝতে পারতেন, এইসব প্রানহীন পাথরের মুর্তির কোন ক্ষমতা নেই, স্রষ্টা অবশ্যই অন্য কেউ আছেন।নিজেই একটা পাথরের মূর্তি বানিয়ে তারপর সেটাকে পূজা করাকে তাঁর কাছে খুব নির্বুদ্ধিতা মনে হত। তিনি তাঁর বাবাকে একদিন বললেন-
“আমার প্রিয় বাবা !কেন তুমি এমন জিনিসের পূজা কর যেটা শুনেও না, দেখেও না বা কোন উপকারও করে না? প্রিয় বাবা , আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে যা তোমার কাছে আসেনি। তাই, আমাকে অনুসরন কর, আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব। প্রিয় বাবা, শয়তানের উপাসনা কোরনা। নিশ্চয়ই শয়তান পরম দয়াময়ের সাথে বিদ্রোহ করেছে। প্রিয় বাবা, আমার ভয় হয় যে না জানি পরম দয়াময়ের কাছ থেকে তোমার উপর আযাব আসে আর তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাও।” [১৯ঃ ৪১-৪৫]
বালক ইবরাহীম বারবার বলেছেন “ইয়া আবাতি- প্রিয় বাবা”। তিনি তাকে আল্লাহর রাহমা~ন ( সীমাহীন দয়ালূ) নামটি বলে আল্লাহর দয়ার কথা কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। কত ঠান্ডা মাথার বুদ্ধিমান ও মমতাবান একজন মানুষ হলে নিজের মুশরিক বাবার সাথে এত চমৎকার আচরন করা যায় সেটা আল্লাহ এখানে আমাদেরকে দেখাচ্ছেন।
বাবা আযার উত্তর দিলেন-
“ইবরাহীম, তুমি কি আমার উপাস্যকে অস্বীকার করছ? তুমি এরকম করা না থামালে আমি তোমাকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করব। তাই আমি তোমাকে শাস্তি দেবার আগেই আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও!”
ইবরাহীম বললেন-
“তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আমার প্রভুর কাছে তোমার জন্য মাফ চাইব। নিশ্চয়ই তিনি আমার উপর সবসময়েই দয়ালু। কিন্তু আপাতত আমি তোমাকে ও তুমি যেসব মূর্তির পূজা কর, সেগুলোকে ছেড়ে চলে যাব। আর আমি আমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করব। আমি বিশ্বাস করি যে আমার প্রার্থনা ব্যর্থ হবেনা। ”
শিক্ষা ঃ ইসলাম পালন করার কারনে মুসলিমদের উপর নানারকম ঝামেলা আসে।কেউ টিটকারি মারে, কেউ গালি দেয়, কেউ হাসাহাসি করে। কেউ কি আমাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়? হত্যা করার থ্রেট দেয়? দেয়না। ইবরাহীম(আ) যদি সেই অবস্থাতেও এত বিনয়ী আচরন করতে পারেন, আমরা কেন পারবনা বলেন? আল্লাহ এখানে সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। সমাধান হচ্ছে ভাল ব্যবহার ও ধৈর্যধারন ও আল্লাহর কাছে তাদের জন্য মাফ চাওয়া। আমাদের আশেপাশেই অনেক মানুষ আছে যারা ইসলামকে দেখতে পারেনা। আসেন আমরা তাদের সাথে আরো বেশি করে ভাল আচরন করা শুরু করি। আল্লাহ আমাদের শিখাচ্ছেন, যে কোন অবস্থাতেই আমরা বাবা-মার সাথে ভাল ব্যবহার করতে বাধ্য। অথচ কত সামান্য কারনেও আমরা বাবা-মার সাথে কতই না খারাপ আচরন করি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
১৪ বছরের বালক ঘরছাড়া হলেন। যাকে বলে- Kicked out from Home. দোষ- এক আল্লাহকে বিশ্বাস। তাঁর হাতে কুর’আন-হাদিস ছিলনা। তিনি আমাদের মতন বর্ন মুসলিম ছিলেন না। তারপরো দেখুন কিভাবে তিনি প্রকৃত স্রষ্টাকে খুজে পেলেন।
“ আর যখন ইবরাহীম তাঁর বাবা আযারকে বলল- তুমি কি মূর্তিকে উপাস্য হিসেবে নিচ্ছ? নিঃসন্দেহে আমি দেখি যে তুমি আর তোমার গোত্র খুবই ভুলের মধ্যে আছ।
আর এভাবেই আমরা ইবরাহীম কে পৃথিবী ও আকাশের সাম্রাজ্য দেখালাম যাতে করে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের একজন হতে পারে। যখন রাতের অন্ধকার তাকে ঢেকে ফেলল, সে একটা তারা দেখে বলল- এটাই আমার প্রভু। কিন্তু যখন সেটা ডুবে গেল সে বলল- যা ডুবে যায় সেটা আমার পছন্দ না।
যখন সে চাঁদ উঠতে দেখল, সে বলল- এটাই আমার প্রভু। কিন্তু যখন এটাও ডুবে গেল, সে বলল- যদি আমার প্রভু আমাকে পথ না দেখান , তাহলে নিশ্চয়ই আমি পথগ্রস্থদের একজন হয়ে যাব। যখন সে সূর্য ঊঠতে দেখল, সে বলল- এটা আরো বড়, এটাই আমার প্রভু। কিন্তু যখন এটা অস্ত গেল, সে বলল- হে আমার কওম !আল্লাহর সাথে তোমরা যাকিছুকে শরীক কর, তার সবকিছু থেকে আমি মুক্ত। অবশ্যই, আমি তাঁর দিকেই আমার মুখ ফিরালাম যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের কেউ নই।“ [৬ঃ ৭৪-৭৯]
শিক্ষাঃ ১৪ বছরের বালক ইবরাহীম স্রষ্টা ও সৃষ্টির পার্থক্য খুব দ্রুতই ধরতে পেরেছিলেন।যা কিছু আমরা দেখি আশেপাশে, সবকিছুই কোন এক মহান অচিন্ত্য ক্ষমতাধর সত্তার সৃষ্টি করা জিনিস। একটাবার চোখ খুলে তারাভরা আকাশের দিকে তাকালেই তাঁর ক্ষমতা একটু হলেও বোঝা যায়। কাজেই কমন সেন্স ব্যবহার করলেই বোঝা যায়, তিনি সাদা দাড়িওয়ালা বুড়ো একজন লোক নন, বা একাধিক হাত-ওয়ালা কোন নারী নন। তার কোন মানব রূপ নেই; কারন তিনি কোন মানব নন। কিন্তু কোনভাবেই কোন মানুষের পক্ষে চাঁদ-তারা-সূর্য বানানো সম্ভব না। এটা বুঝতে বিশাল কোন জ্ঞানী হওয়া লাগেনা। এটা খুব সাধারন সহজ একটা যুক্তি।স্রষ্টাকে মানব রূপ দেওয়া মানে তাঁকে তাঁর সৃষ্টির পর্যায়ে নামিয়ে এনে তারপর তাঁর সৃষ্টিকে উপাসনা করা। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
ইবরাহীম(আ) একদিন তাঁর বাবা ও গোত্রকে জিজ্ঞেস করলেন- “তোমরা এত একাগ্র হয়ে যেসবের পুজা কর, এই মূর্তিগুলো আসলে কি?” তারা উত্তর দিল- “আমাদের পুর্বপুরুষরাও এসবের পূজা করত। ইবরাহীম বললেন- “তোমাদের পূর্বপুরুষ আর তোমরা নিঃসন্দেহে ভুলে পথে গিয়েছ।“
শিক্ষাঃ যুগ যুগ ধরে একটা জিনিস চলে আসলেই সেটা শুদ্ধ হয়ে যায়না। অথচ এই জিনিসগুলো আমাদের দেশে হয়ে আসছে। আমাদের উপমহাদেশে বেশ ভাল পরিমানে ইসলাম বিকৃতি হয়েছে। অগনিত পরিবারে আপনি তাবিজের ব্যবহার, পীরের মুরিদ, মাজার পূজা, মিলাদ-কুলখানি-চল্লিশা-ঈদে মিলাদুন্নাবী সহ অসংখ্য জিনিশ পাবেন যা আমাদেরকে নাবি মুহাম্মাদ(স) শিখিয়ে দিয়ে যাননি। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ চোখকান বন্ধ করে কোন চিন্তা ভাবনা না করেই বাপদাদার রেখে যাওয়া ইসলাম পালন করতে থাকে। কারন জিজ্ঞেস করলে সেই একই উত্তর দেয় এরা- “সবাই করে, তাই আমরাও করি। সবাই কি আর ভুল জিনিস করে আসছে এত বছর ধরে?
আমার চোদ্দ গুষ্ঠির মধ্যে আমি একমাত্র মানুষ যে ভিন্নভাবে নামাজ পড়ি। মানুষ আমাকে শিয়া-আহলে হাদিস-লা মাযহাবি নানা ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করে। আমার কাছে আমার ট্যাগ একটাই- মুসলিম। বাপ-দাদার রেখে যাওয়া নামাজ আমি চোখকান বুজে অনুকরন করিনি। রাসূল(স) যেভাবে নামাজ পড়তে শিখিয়েছেন, সেটা আমি শিখেছি ও সেটাই আমি গ্রহন করেছি। আল্লাহ আমাদেরকে বিচারবুদ্ধি করার ক্ষমতা দিয়েছেন। আমরা যেন স্রেফ গোয়ার্তুমি ও যুগের পর যুগ চলে আসা অন্ধ বিশ্বাসকে আকঁড়ে না ধরে সেগুলোকে ব্যবহার করি।
ইবরাহীম(আ) তাঁর গোত্রকে দিনের পর দিন বোঝান, কিন্তু কোন লাভ হয়না।তিনি ঠিক করলেন, এদেরকে একটু অন্য পথে বুঝাতে হবে। একদিন তিনি তাদের সব মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে দিলেন , শুধু সবচেয়ে বড়টা বাদে। কুড়ালটাকে রেখে দিলেন বড় মূর্তিটির মাথার উপর। তারা যখন ইবরাহীম(আ) কে জিজ্ঞেস করল- “আমাদের মূর্তির সাথে এই কাজ কি তুমি করেছ?” তিনি নির্বিকারভাবে উত্তর দিলেন- “সেটা ওকেই জিজ্ঞেস করছ না কেন?”
“তুমি খুব ভাল করেই জান এই মূর্তিগুলো কথা বলতে পারেনা”
ঠিক এই প্রশ্নটাই চাইছিলেন ইব্রাহীম(আ)। তিনি বললেন-
“তাহলে স্রষ্টার পরিবর্তে কিভাবে তোমরা সেটার পুজা কর যেটা তোমাদের উপকারও করেনা, ক্ষতিও করেনা? তোমাদের আর তোমাদের উপাস্যের উপর লজ্জা ! তোমাদের কি কোন বোধশক্তি নাই?” [২১ঃ ৫৭-৬৭]
তাদের কাছে কোন উত্তর নেই। রাগে ক্রোধে অপমানে এই মূহুর্তে একটাই কাজ করতে পারে তারা এখন। খুব সোজা কাজ সেটা। জোর যার মুল্লুক তার।মেরে ফেললেই তো আপদ বিদেয় হয়ে যায়। স্বেচ্ছাচারী রাজা নিমরুদ সেটাই সিদ্ধান্ত নিল।
“তারা বলল- ওকে পুড়িয়ে দাও আর তোমাদের উপাস্য(মূর্তি)দের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও। “ [২১ঃ৬৮ ]
শিক্ষাঃ সত্য ও ন্যায় কথা বললে কিছু মানুষ সবসময়েই আপনার বিরোধিতা করবে, আপনাকে ভয় দেখাবে, আপনার ক্ষতি করবে। তাতে কিছু আসে যায়না। আল্লাহ সত্যবাদীদের সাথে আছেন। আল্লাহ এমনভাবে আপনাকে রক্ষা করবেন যা কল্পনার বাইরে। সেটাই এখন ঘটবে।
গনগনে আগুন প্রস্তুত।গভীর গর্ত করে সেটার মধ্যে আকাশচুম্বী আগুন তৈরি করা হল। প্রচন্ড তাপে সেটার ধারেকাছেও যাওয়া যায়না। ইবরাহীম(আ) কে আগুনে ফেলার জন্য একটা ক্যাটাপুল্ট (যুদ্ধের গোলা ছোড়ার যন্ত্র) আনা হল। তাঁর হাত-পা বেধে তাঁকে সেটার মধ্যে রাখা হল। জনতা শিহরিত চোখে তাকিয়ে আছে যুবকের করুন মৃত্যুর দিকে।
ফেরেশতা জিব্রাইল(আ)এলেন। ইবরাহিম(আ) কে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কি কোন সাহায্য চাও? ইব্রাহিম উত্তর দিলেন- Nothing from you .
মনে করুন, ৫ তালার ছাদ থেকে পা পিছলে আপনি পড়ে গেছেন। মাত্র কয়েক সেকেন্ড, তারপরেই আপনার জীবন শেষ। অভিকর্ষজ ত্বরনের তীব্র টানে আপনি মাটির দিকে পড়ছেন। জিবরাঈল (আ) এলেন আপনার কাছে ঠিক সেই মূহুর্তে। আপনাকে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কি কোন সাহায্য চাও? আপনি কি বলতে পারবেন- নাথিং ফ্রম ইউ??? আমি কি পারতাম? নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে একজন সম্মানিত ফেরেশতাকে ফিরিয়ে দিতে হলে আল্লাহর উপর কি পরিমান বিশ্বাস দরকার সেটা কি আমরা কল্পনাও করতে পারি?
ইবরাহীম (আ) স্বয়ং আল্লাহর সাহায্য চাইছিলেন। স্বয়ং আল্লাহই এগিয়ে এলেন। প্রকৃতির চিরন্তন নিয়মকে পালটে দিলেন।
“ আমরা বললাম- আগুন তুমি ইবরাহীম এর জন্য ঠান্ডা ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা শুধুই তাঁর ক্ষতি করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা তাদেরকেই সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্থ করলাম” [২১ঃ ৬৯-৭০]
শিক্ষাঃ একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখুন, আল্লাহ কল্পনাতীত উপায়ে আপনাকে সাহায্য করবেন। ফিজিক্স এর সূত্র আল্লাহর জন্য কোন সমস্যা না, কারন ফিজিক্স তিনিই বানিয়েছেন।
এই মিরাকলের পরও মাত্র দুজন মানুষ ছাড়া আর কেউ আল্লাহর উপর ঈমান আনলেন না। একজনের নাম লুত(আ), আরেকজনের নাম সারাহ, যিনি তাঁর স্ত্রী । তারা দেশ ছেড়ে মিশরের দিকে চলে গেলেন। ইবরাহীম অত্যন্ত বয়স্ক হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর চূল ধূসর হয়ে গিয়েছিল। তিনি আল্লাহর কাছে একটী সুসন্তান চান।
“আমার প্রভু ! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন।
্তাই আমরা তাঁকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম।“
তাঁর ২য় স্ত্রী হাজেরার গর্ভে জন্ম নেন তাঁর পুত্র ঈসমাইল(আ)।
আল্লাহ একটার পর একটা পরীক্ষা নিয়েছিলেন ইবরাহীম(আ) এর। নাবি হলেও তিনি মানুষ ছিলেন, তাঁর অনূভুতি ছিল ঠিক আমাদের মতই। তিনি তাঁর মুশরিক পিতাকেই কত ভালবাসতেন আপনি দেখেছেন। কাজেই তাঁর বৃদ্ধবয়সের সন্তান যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় হয়ে উঠবে সেটাই খুব স্বাভাবিক। যাদের জীবনে টাকা পয়সা সম্মান সবকিছু আছে, কিন্তু একটি সন্তান নেই, একমাত্র তারাই জানেন সন্তান না থাকার কষ্ট।বালক ঈসমাইল জুরহুম গোত্রের মধ্যে বড় হতে লাগলেন। ইবরাহীম(আ) মাঝে মাঝে তাদেরকে এসে দেখে যান।
“ছেলেটি যখন তাঁর পিতার সাথে কাজ করার মতন পরিনত বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহীম বলল- আমার পুত্র ! আমি স্বপ্নে দেখেছি আমি তোমাকে কোরবানি দিচ্ছি। তুমি কি মনে কর? সে বলল- বাবা, যা তোমাকে হুকুম করা হয়েছে তাই কর। ইনশাআল্লাহ তুমি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবেই পাবে।“
আসুন চিন্তা করি। ইবরাহীম(আ)এর বিষয়টা এরকম ছিল না যে তিনি আসলে আগে থেকেই জানতেন আল্লাহ তাঁর এই ঘটনাটা থেকে কোরবানির ঈদ প্রচলন করবেন। তিনি জানতেন না এটা তাঁর জন্য একটা বড় পরীক্ষা। আল্লাহ তাঁকে আগে থেকে কোন গ্যারান্টী দেন নি। আল্লাহ তাঁর কাছে কোন গরু ছাগল বা ঊট ও চাননি। ইবরাহীম(আ) জানতেন আল্লাহ মহান ও দয়ালু, কিন্তু কমন সেন্স থেকে এটাও বোঝার কথা যে জবাই দিলে মানুষ মরে যায়। ধরুন আপনি বা আমি ঠিক হুবহু এরকম একটা স্বপ্ন দেখলাম। প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা যে আমরা কেউই আমাদের সন্তানকে কোরবানি করতাম না। হয় আমরা ভাবতাম এটা একটা আজেবাজে দুঃস্বপ্ন হ্যালুসিনেশন, বা বুঝলেও আসলে আমরা করতাম না, আল্লাহর কাছে বড়জোর মাফ চেয়ে একটা ছাগল কোরবানি করে দিতাম!
এই ছিলেন ইবরাহিম(আ)। তিনি আল্লাহর উপর অভিমান করে বলতেই পারতেন- “আল্লাহ! আমি ইসলামের সব ভালবাসি। কিন্তু তাই বলে কি এখন আমার একটামাত্র ছেলেটাকে নিজের হাতে জবাই দিতে হবে। এটা না করলেই কি না? আমি কি তোমার নাবি না?আমি কি স্ত্রী-সন্তানকে মরুভূমিতে ফেলে আসিনি তোমার কথায়? জবাইটা না হয় নাই করলাম? “
কিন্তু না। তিনি আল্লাহকে একটা প্রশ্নও করেননি। একটাবারো তিনি অসন্তোষ জানাননি। তাঁর শিশুপুত্র তাঁকে বলেনি- বাবা তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? তুমি কি বর্বর কশাই যে আমাকে জবাই করবে? বরং একজন শিশু হয়েও ঈসমাইল বলেছে যে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তাঁকে জবাই করে দিতে। আসেন ভাই, আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক চিন্তা করি। ইবরাহিম(আ)আল্লাহর একজন প্রকৃত দাস ছিলেন। আমরা প্রত্যেকেই সুরা ফাতিহায় বলি- ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন। না’বুদু মানে দাসত্ব করা, নিজেকে আল্লাহর ইচ্ছার সামনে ১০০ভাগ সমর্পন করা। কিন্তু বাস্তব জীবনে আসলে সেটা আমরা করিনা। ইসলামের যেটা যেটা আমাদের ভাল লাগেনা, সেগুলোকে আমরা আমাদের মনমত ছাটাই-বাছাই করে দেই।
- আরে এত কম বয়সে হিজাব না করলেও চলবে। এটা জরুরি, কিন্তু “অতটা” না। আরো বয়স হোক। এত কম বয়সেই হুজুর হয়ে গেলে কে আমাকে বিয়ে করবে বলেন?শুনে্ন পবিত্রতা মানুশের মনে, বোরখায় না। আপনারা বেশি বাড়াবাড়ি করেন এইসব নিয়ে।
- এটা কি দাড়ি রাখার বয়স? হ্যা, রাখব আল্লাহ যেদিন চাইবেন( উনি একফোঁটাও চান না) । দাড়ি রাখা সুন্নাত, রাখলে ভাল, না রাখলেও চলে আসলে (উনি নিজের মনমত ফতোয়া বানাচ্ছেন)। শুনেন এইসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ির কিছু নাই। আপনি জঙ্গী-টঙ্গী নাকি ঠিক করে বলেন তো?
- কি বললেন, প্রেম করা নিষেধ? শুনেন আমার গার্লফ্রেন্ড হিজাবি মাশাল্লাহ, নামাজ ও পড়ে। আমরা ইসলাম নিয়ে কথা বলি। আর আমরা অন্য দশজন কাপলের মত না ( প্রত্যেকেই একই কথা বলে) এটা নিশ্চয়ই আল্লাহ অ্যালাউ করবেন।
- ভাই আমার অনেক অনেক কাজ সারাদিনে। আমি কত ব্যস্ত আপনার কোন ধারনাও নাই। ডেইলি ৫ বার নামাজ পড়ার সময় আমার হয়না। আল্লাহ ঠিক ই বুঝবেন আমার সমস্যা।
হাজার লক্ষ কোটি অজুহাত আমাদের। সেলফ-কনভিনসিং এর চরম পর্যায়ে চলে গেছে আমাদের মানসিকতা। ইসলামের যা ভাল লাগেনা সেগুলো নিয়ে তর্ক করি, প্রশ্ন তুলি, ডিবেট করি। অথচ প্রশ্ন তোলার মতন যদি একজনও থাকতেন তিনি হতেন ইবরাহীম(আ)।তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন আল্লাহর প্রতি পূর্ন দাসত্ব কি জিনিস, কতপ্রকার, কি কি, উদাহরন ও প্র্যাকটিক্যাল সহ।
“তারপর যখন তারা দুইজনেই নিজেদেরকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পন করল, আর ঈসমাইল কে তাঁর কপাল মাটিতে কাত করে রাখল, তখন আমরা বললাম- হে ইবরাহীম !তুমি স্বপ্ন সত্যি করেছ। অবশ্যই এভাবেই আমরা তাদেরকে পুরস্কার দেই যারা ভাল কাজ করে। অবশ্যই এটা একটা পরিষ্কার পরীক্ষা ছিল। আমরা তাঁর সন্তানের পরিবর্তে দিলাম একটি মহান জন্তু। আর আমরা তাঁর পরবর্তি বংশধরের মধ্যে স্মারনিকা হিসেবে এটি রেখে দিয়েছি। সালামুন আ’লা ইবরাহীম- ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবেই আমরা মুহসিনুন দের(যারা ভাল কাজ করে) পুরস্কৃত করি। অবশ্যই কোন সন্দেহ নেই, সে আমাদের একজন বিশ্বাসী বান্দা ছিল। “
আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে আগামিকাল ঈদে আপনি আপনার ছেলের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন? আমি কি পারি ভাবতে যে আমার বাবা কালকে আমাকে কুরবানি দিচ্ছেন? আমি কি পারব সেটা হাসিমুখে মেনে নিতে? আপাতদৃষ্টিতে এ হয়ত অসম্ভব এক কাজ, কিন্তু ইবরাহীম(আ) সেটা করে দেখিয়ে গেছেন আমাদেরকে। এক আল্লাহর উপর পূর্ন ভরসা থাকলে এটা কোন কঠিন কাজ না।
When we are advised to follow God’s commands, we make excuses. At times in order to hide our own weakness, we question God’s wisdom behind His laws. How dare we question the wisdom of the One who CREATED wisdom, and who is the source for all wisdom? But we use our own intellect to compete with God’s wisdom. We cannot make time for the daily prayers, because we think we have some “better things” to do. What will make us see the reality of our existence in Earth, the TRUE purpose of our life? When will we wake up, my dear brother and sister???
এর কিছুদিন পরই পিতা-পুত্র মিলে তৈরী করেন আল্লাহর ঘর বায়তুল্লাহ, কা’বা । এই সেই কা’বা যা কোনদিন খালি হয়না। এই সেই কা’বা যেখানে ইবরাহীম(আ) এর পায়ের ছাপ রেখে দেয়া আছে গভীর ভালবাসায়। এই সেই ঘর সেখানে প্রতি বছর ছুটে যায় কোটি কোটি মুসলিম শুধু এক আল্লাহর কাছে। যেয়ে তারা বলে- আল্লাহ আমরা তোমার কাছে হাজির। লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক। পৃথিবী যতদিন আছে, ইবরাহীম(আ) ও আমাদের মাঝে আছেন। একটি মুসলিমও যতদিন জীবিত আছে, ইবরাহীম(আ) এর উপর শান্তি ও সালাম যাবেই যাবে।
কি আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয় আমাদেরকে এই ঘটনাগুলো?
- Allah tests us many times with hardships. Any hardship that brings us closer to Allah, even if it looks or feels bad to us, is actually good for us. Any ease that takes us away from Allah, is actually bad for us. When God takes away something from us, in return, He Blesses us something better, so much better. That is “Nearness to Him” . And what can be more in a Muslim’s life than to be near his God, his Creator. ?
- পৃথিবী ক্ষনস্থায়ী। আমরা ক্ষনস্থায়ী। আমাদের সন্তান, বাবা মা, টাকা, সম্পদ, খ্যাতি সবকিছু ক্ষনস্থায়ী। আমরা এখানে একা এসেছি, অল্প কিছুদিন থাকার পর আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর কাছে আবার নিয়ে যাবেন। হযরত ইব্রাহীম (আ) তার জীবনের সবচে দামি জিনিস আল্লাহ কে দিয়ে দিয়েছিলেন। দিয়ে এটাই প্রমান করলেন – আল্লাহ! আপনার চেয়ে প্রিয় আমার কাছে আর কিছুই নাই। আপনার সন্তুস্টি-ই আমার সন্তুষ্টি। একজন মুসলিমের কাছে আল্লাহ সবার আগে, সবার উপরে। একজন মুসলিম তাঁর সন্তানের চেয়েও বেশি ভালবাসে আল্লাহকে। সন্তানকে সে জন্ম দিয়েছে, আর আল্লাহ তাঁকে বানিয়েছেন। আপনি কখনো চিন্তা করেছেন কিভাবে একটি মানুষ বানানো সম্ভব? আমি অনেক করেছি। কোন লাভ হয়নি, আমার বিন্দুমাত্র কোন ধারনাও নেই।
- একজন মুসলিম যখন তাঁর পশুটিকে নিজ হাতে লালন পালন করে, তখন তার মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই মায়া তৈরী হয়, কারন আল্লাহ আমাদের এভাবেই তৈরী করেছেন। তারপর যখন নির্দিস্ট দিনে সে তার প্রিয় পশুটিকে কোরবানি করে, তখন তার কাছে খারাপ লাগে, কারন শত হলেও সে পেশাদার কসাই না, চোখের পলকে সে পশু হত্যা করতে পারে না। তার খারাপ লাগে কারন সে একটি জীবন কেড়ে নিল। এই খারাপ লাগাটাই হচ্ছে sacrifice and Hardship.This hardship will take Him closer to his God. And this is the greatest achievement, these are the greatest feelings. For a Muslim, this is the answer to God’s Call.
“God, here I am. I sacrificed this animal for You. Only for You. You have blessed me so that I don’t have to sacrifice my son, indeed You are the kindest. You have given me so many attachments in this life. My family, parents, children, friends, society, so many things. It is You who has created me and to You I shall return. I will have to leave everything in this world, today or tomorrow. But above every attachment, Nothing is more favorite to me than you. If you are not displeased with me, that is my greatest achievement.
আপনার প্রিয় পশুটিও জানে যে তাকে কোরবানি করা হবে। সেও কষ্ট পায়, তারও অনুভূতি আছে। একটা পশুকে কষ্ট দেওয়া, নিজে কষ্ট পাওয়া, সবকিছুই শুধু আল্লাহর জন্য করা, এই মিশ্র অনূভুতির নাম-ই কোরবানি ও ঈদ-উল-আযহা।
“আল্লাহর কাছে পৌছায় না কোরবানির রক্ত ও মাংস, পৌছায় শুধু তোমাদের তাকওয়া ( উত্তম চরিত্র) – আল কোরান, সুরা হজ । ”
[]কুরবানি কোন মাংস খাওয়ার উৎসব নয়। এই পশু, এই কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহ-কে সন্তুষ্ট করার জন্য, আর কোনই নিয়ত নেই কোরবানির। আমাদের নিয়ত যেন খাটি হয়। মাংস খাব এই নিয়ত ভুলেও চলে আসলে কোরবানি হবে না ভাই। নিয়ত খুব জরুরি জিনিস। কোনভাবেই যেন আমাদের মধ্যে লোক দেখানো/ show off এর প্রবৃত্তি চলে না আসে। আমরা দামি গরু, ঊট কিন্তেই পারি, এতে কোন বাধা নেই। কিন্তু এতে বিপদ আছে। এত সূক্ষ্ম ও গোপন বিপদ যে আপনি সেটা টের ও পাবেন না। এগুলোকে বলা হয় রিয়া বা ছোট শিরক। মানুষ যখন আপনার ৩ লাখ টাকা দামের গরুর পাশে ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকবে, তখন এক মিলিসেকেন্ডের জন্যও যদি আপনার মনে অহংকার বা গর্ব চলে আসে, সেটা একটা খুবই বড় পাপ হবে। কাজেই আমার নিজের কাছে আমার নিজের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে দেখতে খুব সাধারন একটা পশু কিনা, যেটার দিকে কেউ দুইবার তাকাবেনা।
[] নিজের সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করা উচিত একটি সুস্থ পশু কিনতে। বড়ো ছোট কোন বিষয় না। দাম কোন বিষয় না। ওজন কোন বিষয় না। কোনভাবেই কাউকে তার পশুর দাম নিয়ে হেয় করা যাবে না। রাস্তা দিয়ে নেওয়ার সময় কারোর গরুর দাম শুনে আমরা অনেকেই একটা মন্তব্য করি বা অন্য কোন গরুর সাথে তুলনা করি। এখানে ঠকা জিতার কোন বিষয় নাই। হতে পারে আপনার চেয়ে আরেকজন একি গরু অনেক কমে কিনেছেন। তাতে কিছু যায় আসে না। প্রত্যেকটি পয়সায় বিনিময় আল্লাহ-ই দিবেন।
[] প্রতিবছর দেখা যায় আমরা ‘ এবার গরু খুব সস্তা, সামনের বছর খবর আছে’ বা ‘ভাই আমার গরুর সাইজের গরু আজকে দাম ডাবল” জাতীয় এনালাইসিস করে টেবিল গরম করে ফেলি। এতে কি কিছু যায় আসে ভাই ? আমরা একটা গরু কিনব সারা বছরে, নিল সেটা ৫/১০/১৫ হাজার বেশি। নিল তো নিল। কেন আমরা ভাবি এখানে হারজিতের কোন ব্যাপার আছে ?? অর্থ নিশ্চয়ই এখানে বিচারের মান্দন্ড না ?? যদি তাই হয় তাহলেও আমি বলব, আল্লাহ-র রাস্তায় ১ টাকা খরচ করলে আল্লাহ ৭০০ গুন প্রতিদান দান করেন। এবার আপনার “লস” এর ১০ হাজার টাকা কে ৭০০ গুন করতে পারেন। আপনি কি জানেন সৌদি আরবে বিত্তবান মানুষেরা ঊট কোরবানী করে নির্দিস্ট যায়গায় ফেলে রাখে, যাতে গরীব মানুষ সেখান থেকে মাংস কেটে নিয়ে যেতে পারে? শত শত নয়, একটি মাত্র পশু কিনবো আমরা, আসুন দাম নিয়ে একদম মাথা না ঘামাই। প্রতিটি পয়সা আল্লাহর জন্য।
[] চেষ্টা করা উচিত নিজের পশু নিজের হাতে কোরবানি করার জন্য। কিছু টাকা দিয়ে একজন হুজুর/ঈমাম কে এনে কোরবানি করিয়ে আমরা কি স্যাক্রিফাইস আর তাকওয়া অর্জন করতে পারি আসলেই ? পশুর গলায় ছুরি চালাতে ভয় লাগলে নিজেকে আবার মনে করিয়ে দিবেন যে, এটি আপনার সন্তান হতে পারত যদি আল্লাহ চাইতেন। আল্লাহ পরম দয়ালু, সেটা আমাদের করতে হয়নি। পশুর সামনে ছুরি ধার দেওয়া বা এক পশুর সামনে আরেকটি জবাই করা একদম অনুচিত। খুব ধারাল ছুরি দিয়ে খুব দ্রুত কোরবানি করে ফেলতে হবে। যবাই এর পর পশুটিকে ফেলে রাখতে হবে, অহেতুক তাকে খোচানো যাবে না।
গত কয়েকবছর ধরে আমি নিয়মিত পশু কোরবানী করি আমাদের বাসায়। সত্যি বলতে কি, একটা কোরবানির পশুর প্রতি খুব দ্রুত মায়া মমতা তৈরী হয়ে যায় । আর একটা দুই তিনশ কেজির বিশাল প্রানীকে মেরে ফেলতে খারাপ লাগে আমার, কারন আমি পেশাদার কসাই না। কিন্তু যখন আমি পশুটির গলায় “আল্লাহর নামে, আল্লাহ মহান” বলে ছুরি চালাই এবং ফিনকি দিয়ে গরম রক্ত এসে আমার কাপড় রক্তাক্ত হয়ে যায় এবং আমার প্রতিবারই আমার খুব মন খারাপ লাগতে থাকে, তখন আমি আবারো নতুন করে বুঝতে পারি যে নাবি ইব্রাহীম (আ) এর আরো কতটা বেশি খারাপ লেগেছিল। কিন্তু পরমুহুর্তেই আমি এই উপলব্ধি করতে পারি যে , Because of letting go of this attachment, because of this sacrifice, I am nearer to God, and that is the greatest of all feelings.
কোরবানি হচ্ছে পশু জবাই দেওয়ার সবচেয়ে কম কষ্টদায়ক ও বিজ্ঞান্সম্মত উপায়। খুব ধারালো ছুরি দিয়ে পশুর গলার চামড়া, তারপরে শ্বাসনালী( Trachea), খাদ্যনালী(Esophagus) ও ব্রেইনে রক্তবাহী প্রধান দুটি ধমনী ক্যারোটিড আর্টারী ( Carotid Artery) ও প্রধান দুইটি শিরা জুগুলার ভেইন (Jugular Vein) কেটে ফেলা হয়। এই আর্টারি কাটার সাথে সাথেই পশু অজ্ঞান হয়ে যায় এবং সে আর কোন ব্যাথা অনুভব করেনা।
- তাহলে সেটা পা ছুড়ে কেন ?
- কারন অনেকগুলো ঘটনা পরপর ঘটে। প্রত্যেক মেরুদন্ডি প্রানীর পিঠে থাকে একটি মেরুদন্ড বা স্পাইনাল কর্ড। কুরবানীতে এটা কাটা হয়না। স্পাইনাল কর্ড ব্রেইনের সাথে আমাদের শরীরের সব পেশীগুলোর( Muscle) যোগাযোগ রক্ষা করে। একটি গরুর শরীরে ২০-৩০ লিটার রক্ত থাকে। যখনি ক্যারোটিড আর্টারি দিয়ে এই রক্ত বের হয়ে যেতে থাকে, ব্রেইন হৃৎপিন্ডকে মেরদন্ডের মাধ্যমে সঙ্কেত পাঠায় যে- আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে আরো রক্ত পাঠাও। হার্ট তখন আরো জোরেজোরে পাম্প করে। ফলে শরীর থেকে সব রক্ত খুব অল্প সময়ে বের হয়ে যায়। এতে মাংসের মধ্যে কোন রক্ত থাকেনা।রক্ত খাওয়া একদম নিষেধ ইসলাম এ কারন রক্তের মধ্যেই যাবতীয় জীবানু থাকে।
- হিন্দুরা এক কোপে পশু বলি দেয়। এতে সমস্যা কি? এতে স্পাইনাল কর্ড পুরো আলাদা হয়ে যায় এবং কোন রক্তই শরীর থেকে বের হয় না, কারন মস্তিষ্ক হার্টকে কোন সিগনালই পাঠাতে পারেনা । এই মাংস হারাম এবং স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পশ্চিমা বিশ্বে গুলি করে বা ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে পশু মারা হয়। সেখানেও একই সমস্যা। মাংসে যে শুধু রক্ত রয়েই যায় শুধু তাইনা, পশু তীব্র যন্ত্রনা পেয়ে মারা যায়। আল্লাহ মহাবিশ্বের সবচেয়ে জ্ঞানী সত্বা, তাঁর নিয়মে কোন খুঁত আমরা চাইলেও বের করতে পারব না।O Allah ! Accept all our Qurbani. You don’t need these animals. You don’t need anything from Us. Its only us who need You. Forgive all our mistakes both intentional and non-intentional, Indeed You are the Gafoor-ar-Raheem. Forgive all of us, and let all of us enter in Paradise and let us to Meet you. Give Prophet Ibrahim(A) and Ismail (A) the best rewards and let us meet them one day. Send Salaam and blessings from all of Us. Our Lord, make us devoted to you . Show us How to worship and accept our repentance, for you are the Most Merciful.
কুরবানীর দু’আ-
Bismillahi Wallahu Akbar, Allahumma Taqabbal Minnee
[ আল্লাহর নামে কুরবানি করছি, আল্লাহর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ আমার পক্ষ থেকে কবুল করে নাও তুমি]
আগের আর্টিকেল গুলো সব পাবেন এখানেঃ http://tinyurl.com/qylp8ya