সামাজিক অভিশাপ
আজ রাবেয়া আর হাসানের বিয়ে। যথারীতি বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হলো ।জুমুআর পর কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর সময় দেনমোহর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ছেলেপক্ষ থেকে ছেলের মামা বললো “দেনমোহর হবে পাঁচলক্ষ টাকা”।
কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর সকলে ছয়লক্ষ টাকায় দফারফা করে নিলো। বিয়ে পড়ানো শুরুর আগে হঠাৎ ছেলের চাচা বলে উঠলেন , কাজী সাহেব একটু দাঁড়ান। আগে জেনে নিই মেয়ে পক্ষ ছেলেকে কি দিবে ? তখন মেয়ে পক্ষের সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করলো।
গলা খাকারি দিয়ে একদলা পানের পিগ ফেলে ছেলের চাচা বলা শুরু করলেন” ছেলেকে একটা গাড়ী দিতে হবে। নগদ পঁচিশ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এছাড়াও জমিজমা লিখে দিতে হবে ১০ কাঠা। সাথে সাথে মেয়ে পক্ষের একজন দাঁড়িয়ে বললেন, “কেন ছেলের কি অভাব আছে যে মেয়েবাড়ী থেকে এতো কিছু নেয়া লাগবে তার? ” কিছুক্ষণ এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা চললো। ঘটনা গড়াতে গড়াতে একেবারে হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায়। শেষমেশ বিয়েটা ভেঙ্গে যায়।
যৌতুক।একটি সামাজিক অভিশাপ।ইসলাম ধর্ম একে কোনদিনও স্বীকৃতি দেইনি তবে হিন্দুদের মাঝে এই প্রথার ব্যাপক প্রচলন আছে বলেই তারা বিয়ের সময় মেয়ে আর ছেলেকে ইচ্ছেমতো যা দেবার দিয়ে দেয়। ছেলেদেরকে যা দেয়া হয় তা যৌতুক নামেই প্রচলিত। সমাজে বিভিন্ন ধরণের মানুষ ,বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে এসব যৌতুক নিয়ে থাকে।কেও মানষিক চাপ প্রয়োগ করে, কেউবা বল প্রয়োগ করে, কেউবা মারধর করে এসব যৌতুক নেয়।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ধনীর দুলাল – দুলালীদেরকেও এসব যৌতুকের যাতাকলে পিষ্ঠ করেন এক শ্রেণীর নামধারী অভিভাবকেরা।গ্রাম গঞ্জের সাথে তাল মিলিয়ে শহরেও এর প্রচার প্রসার নেহায়েত কম নয়। এই যৌতুকের পরিণতি কি তা কি কারো অজানা আছে?
পারিবারিক অশান্তি,দাম্পত্যকলহ, মারধর, নির্যাতন ( শারিরীক বা মানষিক), একসময় বিবাহ বিচ্ছেদও হয়ে যায় । অশিক্ষিত মানুষ থেকে এখন সুশিক্ষিত মানুষেরাও কম যায়না। ফলাফল “অনাকাঙ্খিত মৃত্যু” ।
এসব পারিবারিক কলহে মানুষের মাঝে নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের চাহিদা ব্যপক হারে বেড়ে যাচ্ছে । দেশীয় আইনও এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অথচ আইনকে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে আমাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্টে পরিণত হয়েছে বললে কি ভুল হবে?
—- —- —- —
ইসলাম ধর্ম বলে,
” তুমি যতটুকু মোহরানা দিতে পারবে ঠিক ততটুকুই মোহর নির্ধারণ করবে” ,আদৌও কি আমরা এমনটি ঠিকঠাক মতো করছি?
মোহরানা বা যৌক্তিক বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় বিয়ে ভেঙ্গে যাবার ঘটনা নেহায়েত কম নয়।আচ্ছা একজন পুরুষ হয়ে কিভাবে একজন নারীকে যৌতুকের জন্য বেদম প্রহার করা হয় তা চিন্তা করতে গেলে আমার রক্ত হিম হয়ে যায় ।
তাহলে এটাই কি তার পৌরুষত্বের প্রতীক?
না না, এটাই তার কাপুরুষত্বের প্রমাণ । আপনার উপর দায়িত্ব আপনার স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। সেখানে যৌতুক আসলো কোথেকে ?
মনমানসিকতা বদলান।
সমাজটাই বদলে যাবে।