কুরআন; এক মহাবিস্ময়!
এক।
কুরআন, প্রায় ১৪০০ বছরের পুরোনো একটি গ্রন্থ। যেটি প্রেরণ করা হয়েছিলো আল্লাহর শেষ রাসূল বা Prophet, মুহাম্মদের প্রতি (সাঃ)। অদ্ভুত এই গ্রন্থটি প্রায় দেড় হাজার বছর পরও আমাদের সামনে পুরোপুরি অবিকৃত, অপরিবর্তিত অবস্থায় মজুদ রয়েছে! আমরা যদি আজ ইরাকের মিউজিয়াম, কায়রোর মিউজিয়াম, ইসতানবুলের মিউজিয়াম কিংবা বার্মিংহামের মিউজিয়াম থেকে প্রায় হাজার বছরেরও পুরোনো কুরআনের manuscript গুলো জড়ো করি, আর আমাদের পার্শ্ববর্তি কোনো বইয়ের দোকান থেকে সবচেয়ে recently পাবলিশ করা কুরআনের একটা কপি আনি, তাহলে আমরা দেখতে পাবো এই দুটো কুরআন লাইন বাই লাইন, অক্ষর বাই অক্ষর মিলে যাবে!
দুই।
আমাদের মধ্যে আজ অনেকেরই একটি ভুল ধারণা আছে যে কুরআন হচ্ছে শুধু মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু আমরা যদি কুরআন পড়ি তাহলে দেখতে পাবো যে কুরআনকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে। শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বা শুধু আরবজাতির জন্যও নয়।
কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলছেনঃ “(হে মুহাম্মদ) নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি প্রেরণ করেছি সত্যসহ এই গ্রন্থ সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে।” (৩৯:৪১)
একইভাবে আরো কিছু আয়াতে বলা হয়েছেঃ “নিশ্চয় আমি এই কুরআনে মানবজাতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপমা দ্বারা সব রকমের বিষয়বস্তু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।” (১৭:৮৯, ১৮:৫৪)
এছাড়া কুরআন পড়লে আমরা আরো দেখতে পাবো যে সম্পূর্ণ কুরআনে প্রায় ২৫ বারেরও বেশী সমগ্র মানবজাতিকে সম্বোধন করে কোথাও বলা হয়েছে “ইয়া আইয়ুহান্নাস” (২:২১, ২:১৬৮, ৪:১, ৪:১৩৩, ৪:১৭০, ৪:১৭৪, ৭:১৫৮, ১০:২৩, ১০:৫৭, ১০:১০৪, ১০:১০৮, ২২:১, ২২:৫, ২২:৪৯, ২২:৭৩, ৩১:৩৩, ৩৫:৩, ৩৫:৫, ৩৫:১৫, ৪৯:১৩)
অথবা কোথাও বলা হয়েছে “য়া বানী আদাম” (৭:২৬, ৭:২৭, ৭:৩১, ৭:৩৫, ৩৬:৬০)। “ইয়া আইয়ুহান্নাস” কথাটির অর্থ হলো “হে মানবজাতি”।
আর “ইয়া বানী আদাম” কথাটির অর্থ হলো “হে আদম-সন্তানগণ”। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কুরআন প্রেরিত হয়েছে সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে, কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম, জাতি কিংবা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে নয়।
তিন।
আচ্ছা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার purpose কী? আল্লাহ তায়ালা ঠিক কী কারনে এই গ্রন্থটি মানবজাতির কাছে পাঠালেন? তো এর উত্তরও আমরা পেয়ে যাবো কুরআনের মধ্যেইঃ
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলছেনঃ “(হে মুহাম্মদ) এই কুরআন এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি প্রেরণ করেছি। যেনো আপনি এর দ্বারা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন..” (১৪:১)
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেনঃ “(হে মুহাম্মদ) আমি আপনার প্রতি প্রেরণ করেছি এমন এক গ্রন্থ যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, সঠিক পথের দিশারী..” (১৬:৮৯)
এছাড়া আরো বলা হয়েছেঃ “নিশ্চয় এই কুরআন এমন পথের সন্ধান দেয় যা সর্বাধিক সরল।” (১৭:৯)
তো উপোরোক্ত তিনটি আয়াতের সারমর্ম যেটা দাড়ায় যে, কুরআনকে পাঠানো হয়েছে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনার জন্য। এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি Guidebook, একটি পথপ্রদর্শক। এবং কুরআন যে শুধু সঠিক পথ প্রদর্শন করে তা-ই নয়, বরং কুরআন মানুষের কাছে দাবী করছে যে এটি সেই পথের সন্ধান দেয় যে পথটি সর্বাধিক সরল।
চার।
যদিও কুরআন কোনো সাইন্সের গ্রন্থ নয়, তবু এর মধ্যে আমরা অসংখ্য scientific evidence খুঁজে পাই। এটা জানলে সত্যিই অবাক হতে হয় যে ১৪০০ বছর পূর্বেকার এই গ্রন্থে এমন সব কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে যা বিভিন্ন বিষয়ে আজকের যুগের scientific ব্যাখ্যা এবং আবিষ্কারের সাথে হুবুহু মিলে যায়!
উদাহরণ স্বরুপঃ
– কুরআন বলে জীবের প্রথম সৃষ্টি হয়েছে জল থেকে। (২১:৩০, ২৪:৪৫)
– কুরআন জানায় এই universe তার সৃষ্টির আদিলগ্নে ছিলো একটি জমাটবদ্ধ ধোঁওয়ার কুণ্ডলী, যার সাথে modern cosmology-ও একমত। (৪১:১১)
– কুরআন বলে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল। (৫১:৪৭)
– কুরআন Big Bang Theory-কে সমর্থন করে। (২১:৩০)
– কুরআন বলে, এই universe-কে যে অবস্থা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিলো একটা সময় আবার তাকে reverse way-তে ক্রমাগত সংকুচিত করে সেই অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। (Big Crunch Theory) (২১:১০৪)
– কুরআন বলে সূর্য স্থির নয়, বরং নিজ কক্ষপথে আবর্তনশীল। (২১:৩৩, ৩৬:৪০)
– কুরআন বলে, ভু-পৃষ্ঠ ক্রমাগত সংকোচনশীল। (১৩:৪১, ২১:৪৪)
– কুরআন জানায় ভূমিকম্প প্রতিরোধে পর্বতসমুহের ভূমিকার কথা। (২১:৩১, ৭৮:৬-৭)
– কুরআন উল্লেখ করে Hydrological Cycle এর কথা। (২৪:৪৩, ৩০:৪৮, ১৫:২২, ২৩:১৮)
– কুরআন পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে পৃথিবীর বাইরেও প্রাণীর অস্তিত্বের কথা। (১৬:৪৯, ৪২:২৯)
– কুরআনের মধ্যে রয়েছে Human Embryology-র step by step বিস্তারিত বর্ণনা। (২২:৫, ২৩:১২-১৪)
– কুরআন জানায় আমাদের চামড়ার তলায় pain receptor এর কথা। (৪:৫৬)
– কুরআন জানায় মধুর মধ্যে থাকা antiseptic property-র কথা, যা রিসেন্টলি মেডিকাল সাইন্স আবিষ্কার করেছে। (১৬:৬৯)
পাঁচ।
সকলের প্রতি একটি আহ্বানঃ “আর আমি তো কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব আছে কি কেউ, এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে?” (৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০)