কুরআনের ভালবাসা
কিছু বছর আগের কথা, সবে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢিমেতালে প্রিপারেশন চলছিল। দ্বীনের প্রতি জন্ম নেওয়া ভালবাসাটাও তখন খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। তখনকারই এক অসাধারণ স্মৃতিচারণ।
ফজরের ওয়াক্ত শুরুরও প্রায় আধঘণ্টা আগেই মসজিদে রওনা দিয়ে দিতাম। মসজিদের পাশের মাদ্রাসাটিতে ঐ গভীর রাতে এক ঘণ্টা কুরআন পড়বার নিয়ম ছিল। মাদ্রাসার ছেলেগুলোর ঐসময়ে উঠা সহজ হবার জন্য আর ঝিমুনি না আসবার জন্য এশার সলাতের পরপরই শুইয়ে দেওয়া হতো।
তো যাই হোক, অত রাতে পুরো শহরটাই যখন ঘুমে থাকতো, সেই সময় একটা জিনিসই আমাকে মাদ্রাস্রার উঠোনে টেনে নিয়ে যেত। নিরিবিলি নিস্তব্ধতায় গুনগুন শব্দে একসাথে প্রায় ৩০-৪০ জনের কুরআন তিলাওয়াত। সুবহানাল্লাহ! শত বাক্যেও যেসব অনুভূতি অপ্রকাশ্য রয়ে যায়, গহীন রাতের কুরআনের সেই গুনগুন তিলাওয়াত যেন অনায়াসে তাতে স্থান করে নেয়।
পরে যখন জেনেছিলাম যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবাদের ঘরের কোণে গিয়ে তাদের কুরআন তিলাওয়াত শুনতেন, তখন তা আমার ঐ স্মৃতিকে করেছিল অক্ষয়, আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণে। আর বাড়িয়ে দিয়েছিল কুরআনের প্রতি ভালবাসা।
জীবননৌকা অনেক আগেই রাজধানী শহরে এসে ভিড়েছে। আর পাই না সেই অনুভূতি। আজ সেলফে থাকা কুরআনে ধূলা জমে; এ যেন রবের বাণীর প্রতি ভালবাসায় ধূলা জমে যাওয়া। যারা এই অসুস্থ সমাজের ঘূর্ণিপাকে পড়ে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে দিয়ে কুরআনকে দশটা মিনিট সময় দিতে পারেন না, তারা একটু ভেবে দেখতে পারেন। আর কত ধুলো জমবে! আর কতদিন কাপড়ে জড়িয়ে পড়ে থাকবে রবের পক্ষ থেকে এই অনুগ্রহ! সর্বশেষ আসমানি কিতাব! রাতে ঘুমানোর আগে দশটা মিনিট সময় বের করাও কি কঠিন? আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।
কী জানি! আপনার কুরআন তিলাওয়াতের গুনগুন শব্দে হয়তো আশেপাশের কারো হয়ে যাবে আমার দাঁড়িয়ে কুরআন শোনার মত সেই অসাধারণ অনুভূতি! জন্মাবে কুরআনের ভালবাসা!