
‘‘মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক’’ এর উপর পর্যালোচনা
রচনায় : আহমাদুল্লাহ
ভূমিকা : সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ আমাদের হস্তগত হয়েছে। যেখানে জনাব হাসান মাহমূদ নামে এক ভদ্রলোক ভাস্কর্য রাখাকে বৈধ বলেছেন। তাঁর বক্তব্যের মর্ম হল যে, সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে লিলি ফোয়ারায় স্থাপিত ভাস্কর্যটি রাখা ইসলাম সম্মত। সুতরাং এটা নিয়ে প্রতিবাদ করার কিছু নেই। বিনীতভাবে জানাতে চাই যে, হাসান সাহেবের অত্র দাবী সঠিকের নিকটবর্তীও নয়। তিনি যা কিছু বলেছেন তার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা অত্র প্রবন্ধে করা হয়েছে। প্রবন্ধটিকে দু’টি অধ্যায়ে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে হাসান সাহেবের বক্তব্যগুলির পর্যালোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে কুরআন এবং হাদীছের আলোকে ভাস্কর্য, প্রতিমা ইত্যাদির বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
হাসান সাহেবের বক্তবসমূহের পর্যালোচনা নিম্নরূপ-
১. তিনি বলেছেন, দেশে এখন মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে উত্তেজনা চলছে।
জবাব : উত্তেজনা (?) হবার কারণ দু’টি-
(১) এটা ইসলাম বিরোধী। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসলামপন্থী জনসাধারণ একে মেনে নিতে না পারায় কিছুটা উত্তেজনা (?) চলছে। যদিও তারা শান্তিপূর্ণভাবেই এর প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন।
(২) এটা সংবিধান বিরোধী। কারণ সংবিধানে আছে, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম…..।’’ (দেখুন : বাংলাদেশের সংবিধান পৃঃ ৯, মেট্রো পাবলিকেশন্স, ঢাকা)। যেহেতু ইসলামে এভাবে ভাস্কর্য তৈরী করা হারাম সেহেতু বাংলাদেশের ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’’ মোতাবেক এভাবে কোন মূর্তি, ভাস্কর্য রাখা অবৈধ।
২. হাসান মাহমুদ সাহেব লিখেছেন, ‘‘বিষয়টির সঙ্গে হেফাজতিরা ইসলামকে জড়িয়ে ফেলেছে।’’
জবাব : ইসলামকে জড়িয়ে ফেলেছে কারণ এটা ইসলামের বিধি-বিধানের সাথে সম্পৃক্ত। তাছাড়াও শুধু হেফাযতে ইসলাম নয় বরং দেশের সর্বসত্মরের আলেম, ধর্মপ্রাণ মুসলিম একে গ্রহণ করেননি।
৩. হাসান মাহমুদ সাহেব লিখেছেন, ‘‘তাই চলুন আমরা সূত্র ধরে দেখি এ ব্যাপারে কোরান, হাদিস, সিরাত (ইবনে হিশাম ইবনে ইবনে ইসহাক), তারিখ আল তারারি ও অন্যান্য দলিল কী বলে।
জবাব : বাস্তবে তিনি কোন আয়াত, হাদীছের আরবী পাঠ প্রদান করতে সক্ষম হননি। স্রেফ কিছু অনুবাদ পেশ করেছেন। হয়তো তিনি আরবী ভাষায় অজ্ঞ হবার কারণেই এমনটা হয়েছে। আর আরবী ভাষায় অজ্ঞ হলে ইসলামের কোন বিষয়ে মতামত প্রদান করা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। যা তার পরবর্তী লেখনীই প্রমাণ করছে। তিনি বলেছেন, ‘‘তারিখ আল তারারি ’’। বাস্তবে এ নামে কোন গ্রন্থ বিশ্বের বুকে নেই। সঠিক হল ‘‘তারীখ আত-ত্বাবারী।’’ যেটি ইমাম ইবনে জারীর আত-ত্বাবারী রহিমাহুল্লাহ (মৃঃ ৩১০ হিঃ) আরবী ভাষায় রচনা করেছেন। যিনি গ্রন্থের নাম লিখতেই ভুল করেন তিনি কেন এ বিষয়ে লিখতে মনস্থ করলেন তা বোধগম্য নয়।
৩. হাসান সাহেব লিখেছেন, ‘‘প্রথমেই তিনটে শব্দ বুঝে নেওয়া যাক: প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি। প্রতিমা হল মানুষ যার আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ভুলের ক্ষমা চায় ইত্যাদি। ভাস্কর্য হল মানুষসহ কোনো প্রাণী বা কোনো কিছুর মূর্তি যাকে মানুষ রাখে সম্মান দেখতে বা সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে, যার মানুষ আরাধনা বা উপাসনা করে না। ’’
জবাব : সংগার মারপ্যাঁচে পড়েছেন তিনি। সংগা হিসাবে যেটাই প্রদান করা হোক না কেন সবই ইসলামের দৃষ্টিতে হারামের মধ্যে পড়ে। এমনকি স্রেফ সম্মান প্রদর্শনের জন্য হলেও কোন মানুষের ভাস্কর্য বানানো হারাম। প্রদর্শন করা তো দুরের কথা। আমাদের অত্র প্রবন্ধের আসন্ন আলোচনায় এ বিষয়ে দলীলসহ আলোকপাত করা হবে। ইনশাআল্লাহ
৪. তিনি লিখেছেন, ‘‘এবারে অন্যান্য দলিলের দিকে তাকানো যাক, সেখানে আমরা দেখব হযরত মুহাম্মদের (সা.) বাড়িতে মূর্তি ছিল তাঁর সম্মতিক্রমেই।’’
জবাব : আসলে এখানে তিনি ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন। না বুঝেই তিনি একে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন।
তিনি কতিপয় দলীল পেশ করেছেন। যদিও সেগুলির সঠিক মর্ম বুঝতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। নিম্নে আমরা সেগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করলাম-
দলীল-১ : ‘‘(ক) সহি বুখারি ৮ম খণ্ড হাদিস ১৫১:
আয়েশা বলিয়াছেন, আমি রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুলগুলি লইয়া খেলিতাম এবং আমার বান্ধবীরাও আমার সহিত খেলিত। যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার খেলাঘরে প্রবেশ করিতেন, তাহারা লুকাইয়া যাইত, কিন্তু রাসুল (সা.) তাহাদিগকে ডাকিয়া আমার সহিত খেলিতে বলিতেন।’’
দলীল-২ : (খ) সহীহ আবু দাউদ বুক ৪১ হাদিস নং ৪৯১৪:
বিশ্বাসীদের মাতা আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাবুক অথবা খাইবার যুদ্ধ হইতে ফিরিলেন তখন বাতাসে তাঁহার কক্ষের সামনের পর্দা সরিয়ে গেলে তাঁহার কিছু পুতুল দেখা গেল। তিনি [(রাসুল (সা.)] বলিলেন, “এইগুলি কী?” তিনি বলিলেন, “আমার পুতুল।” ওইগুলির মধ্যে তিনি দেখিলেন একটি ঘোড়া যাহার ডানা কাপড় দিয়া বানানো হইয়াছে এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহা কি যাহা উহার উপর রহিয়াছে?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “দুইটি ডানা।” তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “ডানাওয়ালা ঘোড়া?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “আপনি কি শোনেননি যে সুলাইমানের ডানাওয়ালা ঘোড়া ছিল?” তিনি বলিয়েছেন, ইহাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) এমন অট্টহাসি হাসিলেন যে আমি উনার মাড়ির দাঁত দেখিতে পাইলাম।”
দলীল-৩ : (গ) সহি মুসলিম – বুক ০০৮, নং ৩৩১১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁহাকে সাত বৎসর বয়সে বিবাহ করিয়াছিলেন (যদিও অন্য রেওয়াতে আমরা পাই ছয় বছর: হাসান মাহমুদ) এবং তাঁহাকে নয় বৎসর বয়সে কনে হিসেবে তাঁহার বাসায় লইয়া যাওয়া হয়, এবং তাঁহার পুতুলগুলি তাঁহার সাথে ছিল এবং যখন তিনি দেহত্যাগ করিলেন তখন তাঁহার বয়স ছিল আঠারো।
দলীল-৪ : (ঘ) সহি মুসলিম – বুক ০৩১ নং ৫৯৮১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুল লইয়া খেলিতেন এবং যখন তাঁহার সঙ্গিনীরা তাঁহার কাছে আসিত তখন তাহারা চলিয়া যাইত। কারণ তাহারা আল্লাহর রাসুলের (সা.) জন্য লজ্জা পাইত। যদিও আল্লাহর রাসুল (সা.) তাহাদিগকে তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দিতেন।
পর্যালোচনা : প্রথম জবাব : এটা শিশুদের জন্য বৈধ। তাদের জন্য অনেক কিছুই ইসলামে জায়েয রাখা হয়েছে। যেমন নাবালক-নাবালিকাদের জন্য সাওম (রোযা) রাখা ফরয নয়। কিন্তু সাবালক-সাবালিকা হলে তাদের উপর সাওম রাখা ফরয হয়ে যায়। এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। এখন কেউ যদি শিশুদের উপর অনুমান করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও সাওম রাখাকে ফরয মনে না করে তবে সেটি হবে তার ভুল কাজ। কাজেই যেটি খাসভাবে শিশুদের জন্য বৈধ সেটিকে পুঁজি করে মূর্তি/ভাস্কর্য ইত্যাদি বানানোকে হালাল বলা ঠিক নয়।
দ্বিতীয় জবাব : সঊদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী শায়খ আবদুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (১৩৩০-১৪২০ হি./১৯১০-১৯৯৯ খৃ.) বলেন, খেলনা-পুতুল থেকে বিরত থাকাই সর্বাধিক নিরাপদ। কেননা এখানে দু’টি সন্দেহযুক্ত বিষয় রয়েছে। (১) আয়েশার অনুমতি দেওয়ার ঘটনাটি ছবিমূর্তি নিষিদ্ধ হওয়ার এবং এগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার সাধারণ নির্দেশের পূর্বের ঘটনা (২) অথবা এটি নিষেধাজ্ঞা বহির্ভূত একটি খাছ বিষয়। কেননা পুতুল খেলা এক ধরনের হীনকর কাজ। দু’টিকেই দু’দল বিদ্বান সমর্থন করেছেন। সেকারণ সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য এগুলি থেকে বিরত থাকাই উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি সন্দিগ্ধ বিষয় পরিত্যাগ করে নিঃসন্দেহ বিষয়ের দিকে ধাবিত হও’। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দিগ্ধ বিষয়ে পতিত হ’ল, সে ব্যক্তি হারামে পতিত হ’ল’।
আমরা মনে করি, শায়খের উক্ত বক্তব্য সর্বাধিক বিশুদ্ধ। অতএব যেসব পিতা-মাতা ও ভাই-বোন বাজার থেকে কুকুর-বিড়াল, কবুতর ও বিভিন্ন প্রাণীর খেলনা-পুতুল কিনে এনে বাচ্চাদের উপহার দেন ও শোকেস ভরে রাখেন এবং প্রাণীর মাথাওয়ালা জামা-গেঞ্জি কিনে এনে বাচ্চাদের পরান, তারা সাবধান হৌন! কেননা এর ফলে তিনি বাচ্চার নিষ্পাপ হৃদয়ে মূর্তির ছবি এঁকে দিলেন এবং তার প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করে দিলেন। যা তাকে পরবর্তী জীবনে শিরকের প্রতি ঘৃণার বদলে ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। অথবা ঘৃণাকে দুর্বল করে দিবে। তখন দায়ী কেবল বাচ্চা হবে না, তার পিতামাতাও হবেন। আর এসব ছবিওয়ালা পোষাক প্রস্তুতকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলি আরো বেশী দায়ী হবে। এর দ্বারা উপার্জিত তাদের আয়- রোজগার হারাম হবে। কেননা এর দ্বারা তারা অন্যায় কাজে সাহায্য করছেন। যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন (সূরা আল-মায়িদাহ ৫/২)।
{প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালিবের ‘‘ছবি ও মূর্তি’’ গ্রন্থ হতে গ্রহীত পৃঃ ৫৯, ৬০}
এর বিপরীতে আয়েশা রাযি’আল্লাহু আনহার কতিপয় হাদীছ নিম্নরূপ- হাদীছ-১ : ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় গৃহে (ক্রুশের বা প্রাণীর) ছবিযুক্ত কোন বস্তুই রাখতেন না। দেখলেই তা ভেঙ্গে চূর্ণ করে দিতেন’। (বুখারী হা/৫৯৫২; মিশকাত হা/৪৪৯১; ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ছবি ও মূর্তি পৃঃ ১৮)।
হাদীছ-২ : আয়েশা (রাঃ) বলেন, একবার তিনি একটি গদি বা আসন খরিদ করলেন, যাতে প্রাণীর ছবি ছিল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গৃহে প্রবেশ করতে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। ঘরে প্রবেশ করলেন না। আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করলাম। তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট তাওবাহ করছি। হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি গুনাহ করেছি? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, এই গদিটি কেন? আমি বললাম, আপনার বসার জন্য ও বালিশ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আমি ওটি খরিদ করেছি। তখন তিনি বললেন ‘এই সমস্ত ছবি যারা তৈরী করেছে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেওয়া হবে ও তাদেরকে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছ, তাতে জীবন দাও। অতঃপর তিনি বললেন, যে গৃহে (প্রাণীর) ছবিসমূহ থাকে, সে গৃহে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (বুখারী হা/৫৯৬১)।
হাদীছ-৩ : আয়েশা (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য বালিশে ঝালর লাগালাম, যাতে ছবি ছিল। অতঃপর রাসূল (সাঃ) এলেন ও দুই দরজার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলেন। এ সময় তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হ’তে থাকল। আমি বললাম, আমাদের কি দোষ হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, এই বালিশের কি অবস্থা? আমি বললাম, এটা বানিয়েছি যাতে আপনি এর উপরে ঠেস দিতে পারেন। তিনি বললেন, তুমি কি জানোনা যে, ঐ ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যে ঘরে ছবি থাকে? আর যে ব্যক্তি ছবি বানায় তাকে কিবয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং আল্লাহ বলবেন, তুমি যা সৃষ্টি করেছিলে তাতে জীবন দাও’ (বুখারী হা/৩২২৪)।
হাদীছ-৪ : আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে যে, একবার তিনি ঘরের জানালায় একটি পর্দা টাঙ্গিয়েছিলেন, যাতে প্রাণীর ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পর্দাটিকে ছিঁড়ে ফেললেন। তখন আয়েশা (রাঃ) সেই কাপড়ের টুকরা দিয়ে বালিশ তৈরী করেন, যা ঘরেই থাকত এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাতে হেলান দিয়ে বসতেন’ (বুখারী হা/২৪৭৯)।
হাদীছ-৫ : আয়েশা (রাঃ) থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদা এক সফর থেকে ঘরে ফেরেন। ঐ সময় আমি দরজায় একটি ঝালরওয়ালা পশমী কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। যাতে ডানাওয়ালা ঘোড়ার ছবি ছিল। অতঃপর তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন এবং আমি পর্দাটিকে হটিয়ে দিলাম’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উক্ত পর্দাটিকে টেনে ছিঁড়ে ফেলেন এবং বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের এই নির্দেশ দেননি যে, আমরা পাথর বা ইটকে কাপড় পরিধান করাই। আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা ওটা কেটে দু’টি বালিশ বানাই ও তাতে ঝালর লাগাই। এতে তিনি আমাকে দোষারোপ করেননি’। (মুসলিম হা/২১০৭)
হাদীছ-৬ : আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদিন জিবরীল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আসার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে দিলেন। কিন্তু তিনি এলেন না। ঐ সময় রাসূল (সাঃ)-এর হাতে একটি লাঠি ছিল। যা তিনি ফেলে দিয়ে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণ ওয়াদা খেলাফ করেন না’। অতঃপর তিনি তাকিয়ে দেখেন যে, তাঁর খাটের নীচে একটি কুকুরের বাচ্চা। তিনি বললেন, হে আয়েশা! এটি কখন এখানে প্রবেশ করল? আয়েশা বললেন, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা। তখন রাসূল (সাঃ) ওটাকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং সেটাকে বের করে দেওয়া হ’ল। অতঃপর জিবরীল এলেন। তখন রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, আপনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন। সেমতে আমি বসেছিলাম। কিন্তু আপনি এলেন না। উত্তরে জিবরীল বললেন, আপনার ঘরের কুকুর আমাকে বাধা দিয়েছিল। কারণ ‘আমরা ঐ ঘরে প্রবেশ করি না, যেখানে কুকুর কিংবা ছবি থাকে’ (মুসলিম হা/২১০৪)।
উপরোক্ত হাদীছগুলি দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, ছবি, ভাস্কর্য, মূর্তি সবই হারাম। আয়েশার একটি হাদীছ গ্রহণ করে তার বাকি হাদীছগুলি বর্জন করার কারণটি বোধগম্য নয়। এছাড়াও এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দয়ালুতার প্রমাণ মেলে। তিনি চাইলে ধমক মেরে খেলতে নিষেধ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে বরং সস্নেহে খেলার অনুমতি দিয়েছেন।
৫. হাসান সাহেব লিখেছেন, সহি বুখারির ব্যাখ্যা শুনুন। হাদিসটার ফুটনোটে ‘ফতহুল বারি’র লেখক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর উদ্ধৃতি: “পুতুল ও একই রকম ইমেজ অবৈধ কিন্তু ইহা বৈধ করা হইয়াছিল তখন আয়েশার (রা.) জন্য। কারণ তিনি ছিলেন ছোট বালিকা, তখনও তিনি বয়স্কা হননি।” (ফতহুল বারি, পৃষ্ঠা ১৪৩, ১৩ খণ্ড)
নবী (সা.) পুতুল বৈধ করেছিলেন এটাই আসল কথা। কী কারণে করেছিলেন সেটা ইমামের জানা সম্ভব নয়। কারণ তিনি রাসুলের (সা.) ৮০০ বছর পরের হাজার মাইল দূরে মিসরের লোক, রাসুলের (সা.) সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি। ওটা তাঁর ব্যক্তিগত মত মাত্র।
জবাব : হাসান সাহেবের এমন কথা শুনে যে কেউ বুঝবেন যে এটা তার জ্ঞানের অভাবের ফল। প্রথমত : ইবনে হাজারের কথাগুলি তার নিজস্ব মত নয়। বরং তিনি সকল হাদীছ পর্যালোচনা করেই এটা বলেছেন। আমরা উপরে আয়েশা রাযি’আল্লাহু তাআলা আনহার ৬টি হাদীছ দেখেছি যেগুলি প্রমাণ করে যে, আয়েশা রাযি’আল্লাহু আনহা জীবনের পরবর্তী সময়ে পুতুল তো দুরে থাক ছবিযুক্ত কাপড়ও রাখার অনুমতি পাননি। দ্বিতীয়ত : ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ ‘‘ফাতহুল বারী’’র গ্রন্থের শুরুতে এর সনদ বা সূত্র উল্লেখ করেছেন (ফাতহুল বারী ১/৫-৭)। এটা মোট ১৪টি বৃহদায়তন খন্ডে সমাপ্ত শ্রেষ্ঠতম একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ। যা গোটা বিশ্বে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ। আগ্রহী পাঠকদের সনদটি সেখান হতে দেখে নেবার জন্য অনুরোধ রইল (কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় আমরা এখানে তা উল্লেখ করলাম না।)।
৬. হাসান সাহেব লিখেছেন, তখন কাবার দেয়ালে ৩৬০টি মূর্তি (বুখারি ৩য় খণ্ড – ৬৫৮) ও অনেক ছবির সঙ্গে ছিল হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবিও। উদ্ধৃতি দিচ্ছি, “রাসুল (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবি বাদে বাকি সব ছবি মুছিয়া ফেলিতে নির্দেশ দিলেন।” (সিরাত (ইবনে হিশাম/ইবনে ইশাক-এর পৃষ্ঠা ৫৫২)
জবাব : (১) ইবনে ইবনে ইসহাক্বের লেখক মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব রহিমাহুল্লাহ ১৫১ হিজরীতে মারা গিয়েছেন। তিনি এ ঘটনাটি কিভাবে পেয়েছেন তার কোন বিশুদ্ধ সূত্র (সনদ) হাসান সাহেব দেন নি। অতএব এটা অপ্রমাণিত একটি ঘটনা। আমাদের হাতে থাকা অত্র গ্রন্থদ্বয়ে ঘটনাটির কোন অস্তিত্ত্ব নেই। হতে পারে হাসান সাহেব মিথ্যা বরাত প্রদান করেছেন না জেনেই।
এখানে হাসান সাহেব ‘‘ইবনে ইশাক’’ লিখেছেন। এটাও তার ভুল বানান। কেননা এ নামে কোন গ্রন্থ নেই। (২) ইবনে হিশামের নামও তিনি কোনরূপ যাচাই-বাছাই ব্যতিত উল্লেখ করেছেন। ইবনে হিশামের মধ্যেও অত্র ঘটনাটি নেই। তাছাড়া ইবনে হিশামের লেখক তিনি ২১৩ হিজরীতে মারা গিয়েছেন। তিনি কিভাবে এটা পেলেন? আশা করি হাসান সাহেব এর জবাব প্রদান করবেন। সারাংশ হল, এটা অপ্রমাণিত বাতিল ঘটনা।
৭. হাসান সাহেব লিখেছেন, ‘‘দুনিয়ার প্রায় এক চতুর্থাংশ জয় করেছিলেন মুসলিমরা। সবই অমুসলিমের দেশ এবং সেখানেও নিশ্চয়ই অনেক প্রতিমা-ভাস্কর্য ছিল, সেগুলোর তো সবই ভেঙে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও আমরা তেমন দলিল পাই না। ৭১০ সালে হিন্দু রাজা দাহিরের দেশ সিন্ধু জয় করার পর কয়টা মূর্তি ভেঙেছিলেন মুহম্মদ বিন কাশেম? ভাস্কর্য-মূর্তি তো দূরের কথা কোনো প্রতিমাও ভেঙেছেন বলে জানা যায় না।’’
জবাব : মুসলিমরা প্রতিমা ভাঙ্গেন নি কারণ তারা অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান রাখেন। যখন কোন অমুসলিম তার ঘরে বা স্বীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা, ভাস্কর্য রাখেন তখন সেটা ভাঙ্গা হারাম। ইসলাম এর কোন অনুমতি প্রদান করেনি। কিন্তু মুসলিমরা স্ব স্ব স্থানে কখনোই প্রতিমা, ভাস্কর্য বা মূর্তি রাখতে পারবে না। মুসলিমরা ইসলামের হুকুম মানতে বাধ্য। অমুসলিমরা নন। তবে অমুসলিমরা চাইলে ইসলামের বিধি-নিষেধ পালন করতে পারবেন। এটা তাদের ইচ্ছাধীন।
৮. হাসান সাহেব লিখেছেন, ‘‘রাসুলের (সা.) অজস্র ছবি স্বচক্ষে দেখতে চাইলে ইরানে চলে যান। দেখবেন দেয়ালে ঝুলানো সুদৃশ্য কার্পেটে আছে মা আমিনার কোলে শিশু নবী (সা.), সাহাবি পরিবেষ্টিত নবীজি (সা.), আসমানে বোরাখে উপবিষ্ট নবীজি (সা.) ইত্যাদি।’’
জবাব : প্রথমত : এগুলি নবী (সাঃ)-এর ছবি নয়। সবই পরবর্তীতে বানানো হয়েছে। কোন ছাহাবী, তাবেঈ এমন কোন ছবি অঙ্কন করেননি। দ্বিতীয়ত : ইরান কোন দলীল নয় মুসলিমদের জন্য। হাসান সাহেব দাবী করেছেন যে, রাসূলের ছবি এগুলো। আমরা তাকে অনুরোধ করলাম তিনি যেন এটা প্রমাণ করেন যে, এগুলি নবীর ছবি। যদি তিনি প্রমাণ করতে না পারেন তবে যেন প্রকাশ্যে নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং এমন ভুল প্রচার হতে বিরত থাকেন।
৯. হাসান সাহেব এরপর লিখেছেন, ‘‘গুগল করলেই পেয়ে যাবেন– সবই কাল্পনিক ছবি অবশ্য– হাজার বছর ধরে আছে ওগুলো ’’।
জবাব : যাক তিনি স্বীকার করেছেন যে, এগুলি হল কাল্পনিক ছবি। কাল্পনিক ছবি দিয়ে তিনি ইসলামের একটি হারামকে হালাল করতে চাইছেন। কি চমৎকার তার গবেষণা!! আর একটি কথা হল যে, গুগল কোন দলীল নয়। দলীল হল কুরআন, হাদীছ।
১০. তিনি লিখেছেন, ‘‘এবারে সাম্প্রতিক কাল। ছবি তো ছবি, নবীজির (সা.) আট ফুট উঁচু, ১০০০ পাউণ্ড ওজনের মার্বেল পাথরের ভাস্কর্যও ছিল দীর্ঘ ৫৩ বছর। ১৯০২ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ২৫ নং স্ট্রিট ম্যাডিসন এভিনিউতে অবস্থিত ম্যাডিসন পার্কের মুখোমুখি নিউইয়র্ক আপিল বিভাগের কোর্ট দালানের ছাদে। ইতিহাসের আরও নয়জন আইনদাতাদের সঙ্গে নবীজির (সা.) আট ফুট উঁচু মার্বেল পাথরের ভাস্কর্যও রাখা ছিল সসম্মানে।’’
জবাব : হাস্যকর যুক্তি দেখিয়ে তিনি নিজের অজ্ঞতাকে যাহির করছেন বারবার। যারা এই ভাস্কর্য বানিয়েছেন তারা কারা? ইসলামী স্কলারগণ তাদের এই অপকর্মকে সমর্থন করেননি। কেউ পরবর্তীতে নবীর ভাস্কর্য বানালেই সেটা হালাল হয়ে যাবে না। যেখানে নবী নিজের জীবদ্দশায় এমন কিছু বানাতে অনুমিত দেননি সেখানে তাঁর পরে কোন অবুঝ ব্যক্তি যদি এমনটি করে তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নিশ্চিৎরূপে হবে না।
১১. তিনি আলো বলেছেন, ‘‘গুগলে ‘এ স্ট্যাচু অব মুহাম্মদ’ সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। মুসলিম সমাজ ও দেশগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ওটা সরানো হয়েছে।’’
জবাব : গুগলে পাওয়ার দরকার নেই। বরং কুরআন এবং হাদীছ-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট। মজার বিষয় হল, লেখক সাহেব এখানে স্বীকার করেছেন যে, মুসলিম সমাজ এবং দেশগুলির অনুরোধের প্রেক্ষিতে সেটা সরানো হয়েছে। প্রশ্ন হল, যদি ইসলামে এটা বৈধ হয়েই থাকে তবে মুসলিম সমাজ এবং ইসলামী দেশগুলি এটা সরাতে বলবেন কেন?
১৩. হাসান সাহেব স্বীয় অজ্ঞতা জাহির করে বলেছেন, হাঙ্গামা করার আগে বাংলাদেশের ইমামদের ভেবে দেখা দরকার কেন মধ্যপ্রাচ্যের ইমামেরা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নন। সৌদি আরবেও বহু ভাস্কর্য আছে। গুগল করুন ‘স্ট্যাচু ইন মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ কিংবা ‘স্ট্যাচু ইন সৌদি আরব’– রাস্তার মোড়ে মোড়ে উটের, কবজি থেকে হাতের আঙুলের, মুসলিম বীরদের এবং আরও কত ভাস্কর্য। সেখানকার মওলানারা জানেন কোরান ও রাসুল (সা.) সুস্পষ্টভাবে প্রতিমাকে নিষিদ্ধ করে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে বৈধ করেছেন। তাই তাঁরা মুসলিম বিশ্বে অজস্র মূর্তি ও ভাস্কর্যকে অস্বীকৃতি জানাননি।’’
জবাব : সউদী আরবের আলেমগণ এগুলির চরমবিরোধী। তাঁরা এগুলির হারাম হওয়া সম্পর্কে ফতোয়াও প্রদান করেছেন একাধিকবার। সউদীতে থাকলেই সেটি হালাল হয়ে যায় না। সউদীতে দাঁড়ি মুন্ডনকারী লোকের অভাব নেই। তার মানে এই না যে, সেখানকার আলেমগণ দাঁড়ি মুন্ডন করাকে হালাল বলেছেন। বরং বাস্তবতা এই যে, তাঁরা দাঁড়ি মুন্ডন করাকে সরাসরি হারাম বলেছেন। এ ছাড়াও সেখানে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা টাখনুর নীচে স্বীয় প্যান্ট, পায়জামা ঝুলিয়ে রাখেন। তার মানে এই না যে, সেখানকার আলেমগণ এটাকে জায়েয বলেছেন। বরং সেখানকার আলেমগণ এর হারাম হওয়া সম্পর্কে বারবার জনগণকে সর্তক করে আসছেন। আমাদের দলীল হল কুরআন এবং সুন্নাহ। সউদী আরব বা কোন দেশ বা কোন গোষ্ঠী মুসলিমের জন্য দলীল নয়।
সউদী আরবে আরো অনেক কিছুই রয়েছে। লেখক কি সেগুলি মানবেন? যেমন- (১) সেখানে প্রকাশ্যে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করা নিষেধ। (২) মদ পান করা। (৩) বিবাহ বর্হিভূত অবৈধ সম্পর্ক করা। (৪) ছালাত পরিত্যাগ করা। (৫) সুদ খাওয়া। (৬) সেখানে নারীকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় বসানো হয় না। (৭) সেখানে গণতন্ত্র নেই। বরং রাজতন্ত্র আছে। (৮) বাদ্য-যন্ত্র, নাচ-গান ইত্যাদিকে তারা হারাম বলেন।
এক্ষণে সম্মানিত লেখক কি সেগুলি গ্রহণ করবেন?
১৪. হাসান সাহেব লিখেছেন, ‘‘এবারে কোরান। কোরানে সুস্পষ্ট বলা আছে: (ক.) মূর্তিপূজা শয়তানের কাজ (মায়েদা ৯০) এবং (খ.) “এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ?” (আম্বিয়া ৫২)’’।
জবাব : কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝতে হলে নবীর শরনাপন্ন হতে হয়। কেননা নবী (সাঃ) প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যা করে গিয়েছেন সুদীর্ঘ তেইশ বছর যাবত। তিনি হাতে কলমে প্রতিটি আয়াতে তার ছাহাবীদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
এখানে তিনি দু’টি আয়াত উপস্থাপন করেছেন। প্রথমটি হল সূরায়ে আল-মায়েদার নব্বই নাম্বর আয়াত। এখানে الْأَنْصَابُ শব্দটি আছে। অর্থ : প্রতিমা, মূর্তি ইত্যাদি (আল-মুজামুল ওয়াফী পৃঃ ১০৬৯)। তাহলে হাসান সাহেবের দেয়া আয়াতটিতে এর প্রমাণ আছে যে, প্রতিমা, মূর্তি নিষিদ্ধ। আর হাসান সাহেব এখানে ভাস্কর্য এবং মূর্তিকে সমার্থক ধরেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, আরাধনা করলে সেটা হয় প্রতিমা আর না করলে হয় ভাস্কর্য (মূর্তি)। ইসলাম প্রতিমার বিরুদ্ধে, ভাস্কর্য ও মূর্তির বিরুদ্ধে নয়। ইসলাম ভাস্কর্য এবং মূর্তির বিরুদ্ধে নয়- এই কথাটিকে তিনি নিজেই খন্ডন করেছেন। কেননা তার দেয়া সূরা মায়েদার নব্বই নাম্বার আয়াতটিতে প্রতিমা, মূর্তি সবই শয়তানের কাজ বলে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
হাসান সাহেবের দেয়া পরের আয়াতটি কিন্তু এটা প্রমাণ করছে না যে, অনর্থক মুর্তি বানানো যাবে। কাজেই এটি কোন দলীল নয় ভাস্কর্য বানানোর পক্ষ। বরং এখানে ইবরাহীম (আঃ) এর একটি ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে এটা বলা হয়েছে।
১৫. হাসান সাহেব লিখেছেন, এখানে আমরা অবাক হয়ে দেখব কোরান সুস্পষ্ট ভাষায় ভাস্কর্যের অনুমতি দেয়। উদ্ধৃতি: “তারা সোলায়মানের (আ.) ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।” (সুরা সাবা, আয়াত ১৩) ’’।
জবাব : প্রথমত : আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীআত পালন করতে বাধ্য। তার পূর্বের কোন নবীর আদেশ নিষেধ আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তারা একটি নির্দিষ্ট কালের জন্য এসেছিলেন। তবে তাদেরকে নবী-রাসূল হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা, যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা আমাদের জন্য ফরয। দ্বিতীয়ত : এখানে যে শব্দটির অর্থে ‘‘ভাস্কর্য’’ করা হয়েছে সেটির আরবী হল وَتَمَاثِيلَ সউদী আরব হতে প্রকাশিত এবং পরিবেশিত তাফসীরে বলা হয়েছে যে, এর ‘‘অর্থ হল ছবি, নক্সা, আকৃতি। প্রাণী ব্যতিত অন্য বস্তুসমূহের ছবি বানানো হত। কতিপয় বলেছেন যে, নবীগণ, সৎ ব্যক্তিদের ছবিসমূহ বানিয়ে মসজিদে রাখা হত। যেন তাদেরকে দেখে লোকেরাও ইবাদাত করেন। এই মর্মটি তখনই বিশুদ্ধ হবে যখন এটা স্বীকার করা হবে যে, হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের শরীআতের মধ্যে প্রাণীর ছবি বানানোর অনুমিত ছিল। যা বিশুদ্ধ (ভাবে প্রমাণিত) নয়। তদুপরি ইসলামে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে এর নিষোধাজ্ঞা তো রয়েছেই’ (পৃঃ ১২০২)।’’
কাজেই এটা দলীল নয় ভাস্কর্য রাখার পক্ষে ব্যাখ্যা না বুঝেই স্রেফ অনুবাদ দেখেই কুরআনের মর্ম বুঝার চেষ্টা করাও এক প্রকারের গোমরাহী। আমাদেরকে কুরআনুল কারীমের প্রতিটি আয়াতের অনুবাদ করার সময়ে ব্যাখ্যার দ্বারস্থ হতে হবে যেন বিষয়টি বিশুদ্ধভাবে উপস্থাপিত হতে পারে।
১৬. হাসান সাহেব লিখেছেন, তাই হয়তো অতীত বর্তমানের কিছু ইমাম সরাসরি মূর্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিমা ও ভাস্কর্যের পার্থক্য উপেক্ষা করছেন।
জবাব : তিনি এখানে ইমাম বলতে কাদেরকে বুঝিয়েছেন? নাম এবং তাদের অবদানসহ উল্লেখ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হতো। মূলতঃ আমরা রাসূলুল্লাহ এবং তার ছাহাবাদের হতে বর্ণিত হাদীছ মানতে মুসলিমরা বাধ্য। কোন ইমামের ব্যক্তিগত মতামত ভুলও হতে পারে। তাই সেটি মানতে বাধ্যও নই। যদি তা কুরআন এবং হাদীছের সাথে মিলে যায় তবে মানতে হবে নতুবা বাতিল হবে।
১৭. তিনি শেষের দিকে লিখেছেন, ইমামেরা প্রতিমার বিরুদ্ধে বলুন অসুবিধা নেই, কিন্তু ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা কোরান-রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে দাঁড়ানো হয় কি না, তাঁরা ভেবে দেখতে পারেন।
জবাব : আল-হামদুলিল্লাহ। আমরা ভেবে দেখেছি এবং প্রমাণসহ-ই বিষয়টির হারাম হওয়া উল্লেখ করেছি। তাছাড়াও লেখক নিজেই সূরায়ে মায়েদার ৯০ আয়াতটি দ্বারা মূর্তি, প্রতিমাকে শয়তানের কাজ বলে নিজের দাবীকে খন্ডন করেছেন। এরপরও কেন মানতে অসুবিধা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। সম্মানিত লেখককে আমরা আবারো ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
দ্বিতীয় অধ্যায়
ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিমা ইত্যাদি সম্পর্কে ইসলাম যা বলেছে :
(১) ‘নবীগণের পিতা’ ইবরাহীম (আঃ) তাঁর সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে বলেছেন, ‘হে আমার পালনকর্তা, এ শহর (মক্কা)- কে তুমি শান্তিময় কর এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের তুমি মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখ’। ‘হে আমার প্রতিপালক! এই মূর্তিগুলি বহু মানুষকে বিপথগামী করেছে। অতএব যে আমার অনুসারী হবে, সে আমার দলভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হবে, নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ইবরাহীম ১৪/৩৫-৩৬)।
ভক্তি ও ভালোবাসা হৃদয়ের বিষয়। বাহ্যিকতায় তা বিনষ্ট হয়। ফলে লৌকিকতায় ডুবে গিয়ে এক সময় মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভুলে যায় এবং তাঁর বিধানকে অগ্রাহ্য করে। নিজেদের হাতে গড়া ছবি-মূর্তির পিছনে সে তার সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় করতে থাকে। অথচ সে ভাল করেই জানে যে, ছবি-মূর্তির ভাল বা মন্দ কিছুই করার ক্ষমতা নেই। তবুও তারা ভাবে যে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য সুফারিশকারী’ (ইউনুস ১০/১৮)। এভাবে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সে কোন যুক্তিই মানতে চায় না। কারণ ভক্তি যেখানে অন্ধ, যুক্তি সেখানে অচল।
(২) إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত লোক হবে ছবি প্রস্তুতকারীগণ (বুখারী হা/৫৯৫০)।
ব্যাখ্যা : হাদীছে তিনটি বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যেগুলির একবচনের অর্থ হ’ল : যথাক্রমে ছবি, মূর্তি ও ক্রুশযুক্ত ছবি। তবে ‘ছবি’ বলতে সবগুলিকেই বুঝায়। ‘মূর্তি’ বলতে মাটি, পাথর বা অন্য কিছু দিয়ে তৈরী মূর্তি, প্রতিকৃতি, তৈলচিত্র ও কাপড়ে বুনা চিত্র কিংবা নকশাকে বুঝায়। বুখারী শরীফের শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হি.) বলেন, সাধারণ ছবির চাইতে ক্রুশযুক্ত ছবি অধিকতর নিষিদ্ধ। কেননা ক্রুশ ঐসকল বস্তুর অন্তর্ভুক্ত, যাকে পূজা করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়ে। পক্ষান্তরে সকল ছবি পূজা করা হয় না (বুখারী, ফাতহুল বারী হা/৫৯৫২-এর ভাষ্য, ১০/৩৯৮-৯৯ ও ৪০১ পৃ. (কায়রো : দারুর রাইয়ান লিত তুরাছ, ২য় সংস্করণ ১৪০৭ হি./১৯৮৭ খৃ.)। তিনি বলেন, যেসব বস্তু পূজিত হয়, সে সবের ছবি প্রস্তুতকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন সর্বাধিক শাস্তি প্রাপ্ত হবে। এগুলি ব্যতীত অন্যগুলির প্রস্তুতকারীও গোনাহগার হবে। তবে তাদের শাস্তি তুলনামূলকভাবে লঘু হবে। ইমাম কুরতুবী (৬১০-৬৭১ হি.) বলেন, জাহেলী আরবের লোকেরা সবকিছুর মূর্তি তৈরী করত। এমনকি তাদের কেউ কেউ মূল্যবান ‘আজওয়া’ খেজুর দিয়ে মূর্তি বানাতো। তারপর ক্ষুধার্ত হ’লে তা খেয়ে নিত’। এ যুগে যারা বিভিন্ন প্রাণী ও ফল-ফুলের আকারে কেক বা মিষ্টান্ন তৈরী করে ভক্ষণ করেন, তারা উক্ত জাহেলী রীতির বিষয়টি অনুধাবন করুন। অমনিভাবে যারা খ্রিষ্টানদের পূজ্য ক্রুশ-এর অনুকরণে গলায় টাই ঝুলাতে ভালবাসেন, কিংবা তাদের অনুকরণে কেক কেটে নিজেদের জন্মদিন ও বিভিন্ন শুভ কাজের উদ্বোধন করেন, আশূরার দিন হোসায়েন (রাঃ)-এর নামে কেকপাউরুটি বানিয়ে তাকে বরকত মনে করে ভক্ষণ করেন, তারাও বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
ছবি ও মূর্তির বিরুদ্ধে বর্ণিত হাদীছ ও আছারসমূহ :
১. আবু ত্বালহা আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, ‘ঐ ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর বা (প্রাণীর) ছবি
থাকে’ (বুখারী হা/৫৯৪৯; মুসলিম হা/২১০৬; মিশকাত হা/৪৪৮৯; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯০)। অবশ্য এর মধ্যে ঐসব ফেরেশতা অন্তর্ভুক্ত নন, যারা মানুষের দৈনন্দিন আমলের হিসাব লিপিবদ্ধ করেন কিংবা মানুষের হেফাযতে নিয়োজিত থাকেন অথবা বান্দার রূহ কবয করার জন্য আসেন। অনুরূপভাবে কুকুর বলতে স্রেফ খেলা ও বিলাসিতার জন্য যেগুলি রাখা হয়। নইলে শিকারী কুকুর, ফসল ও বাড়ী পাহারা দেওয়ার কুকুর, যুদ্ধ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত কুকুর উক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত নয়। উক্ত মর্মে পৃথকভাবে হাদীছ সমূহ বর্ণিত হয়েছে (বুখারী হা/৫৪৮১, ৩৩২৩; মুসলিম হা/১৫৭৪, ১৫৭১; মিশকাত হা/৪০৯৮-৪১০১, ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৩৯২০-২৩।)।
ছাহেবে মিরক্বাত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (মৃ. ১০১৪ হি.) বলেন যে, হাদীছে ছবি অংকন বলতে প্রাণীর ছবির কথা বলা হয়েছে যা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং যা দেওয়ালে বা পর্দার কাপড়ে টাঙানো থাকে (মোল্লা আলী ক্বারী, মিরক্বাত শরহ মিশকাত (ঢাকা : রশীদিয়া লাইব্রেরী, তাবি) ৮/৩২৫)।
তিনি উপরে বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, আমাদের (হানাফী) মাযহাবের বিদ্বানগণ ছাড়াও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন যে, প্রাণীর ছবি অংকন করা কঠিনতম হারাম ও কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। চাই সেটা কাপড়ে হৌক, বিছানায় হৌক, মুদ্রায় বা অন্য কিছুতে হৌক। তবে যদি তা বালিশে, বিছানায় বা অনুরূপ হীনকর কোন বস্তুতে হয়, তবে তা হারাম নয় এবং ঐ অবস্থায় ঐ ঘরে ফেরেশতা আসতে বাধা নেই। অনুরূপভাবে শিকারী কুকুর, ফসল ও বাড়ী পাহারাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর থাকলে সে বাড়ীতে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। যারা ঐ বাড়ীর উপরে আল্লাহর রহমত বর্ষণ করে এবং বাড়ীওয়ালার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। অবশ্য এরা ঐসকল ফেরেশতা নয়, যারা সর্বাবস্থায় বান্দার সাথে থাকে তার হেফাযতকারী হিসাবে’।
ইমাম খাত্ত্বাবী (৩১৯-৩৮৮ হি.) বলেন, প্রাণীর হৌক বা বস্তুর হৌক, ছবি অংকন বিষয়টিই মকরূহ বা শরী‘আতে অপসন্দনীয় বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এগুলি মানুষকে অনর্থক কাজে ব্যস্ত রাখে। উপরন্তু ছবি-মূর্তির শাস্তি কঠিন হওয়ার প্রধানতম কারণ হ’ল এই যে, এতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের উপাসনা করা হয়’। মোল্লা আলী ক্বারী বলেন,… আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে পূজা করার বিষয়টি যদি প্রাণী ছাড়াও সূর্য-চন্দ্র বা অন্য কোন জড় বস্তু হয়, তাহ’লে সেই সব ছবি-মূর্তিও হারাম হবে’।
২. أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي، فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوا حَبَّةً أَوْ شَعِيرَةً হযরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার সৃষ্টির মত করে যে ব্যক্তি (কোন প্রাণী) সৃষ্টি করতে যায়, তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে? পারলে তারা একটি পিঁপড়া বা শস্যদানা বা একটি যব সৃষ্টি করুক তো দেখি? (বুখারী হা/৭৫৫৯)।
৩. আবু যুর‘আ বলেন, আমি একদা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে মদীনার (উমাইয়া গবর্ণর মারওয়ান ইবনুল হিকাম-এর) বাড়ীতে গেলাম। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন যে, বাড়ীর উপরিভাগে জনৈক শিল্পী ছবি অংকন করছে। তখন তিনি বললেন, سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي، فَلْيَخْلُقُوا حَبَّةً، وَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করতে চেষ্টা করে। তাহ’লে তারা সৃষ্টি করুক একটি শস্যদানা বা একটি পিপীলিকা’… (বুখারী হা/৫৯৫৩)।
৪. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَيُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ এইসব ছবি প্রস্তুতকারীগণ ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে। তাদেরকে বলা হবে ‘তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে, তাতে জীবন দাও’ (বুখারী হা/৭৫৫৭)।
৫. হযরত আবু জুহায়ফা (রাঃ) বলেন,
نَهَى عَنْ ثَمَنِ الدَّمِ، وَثَمَنِ الكَلْبِ، وَكَسْبِ الأَمَةِ، وَلَعَنَ الوَاشِمَةَ وَالمُسْتَوْشِمَةَ، وَآكِلَ الرِّبَا، وَمُوكِلَهُ، وَلَعَنَ المُصَوِّرَ ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিষেধ করেছেন রক্ত বিক্রয় করে তার মূল্য নিতে, কুকুর বিক্রয়ের মূল্য নিতে, যৌন উপার্জন নিতে এবং তিনি লা‘নত করেছেন সূদ গ্রহীতা, সূদ দাতা, (হাতে ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে) উল্কিকারিনী ও উল্কি প্রার্থিনী মহিলা এবং ছবি অংকন বা প্রস্তুতকারী ব্যক্তির উপরে’ (বুখারী হা/২২৩৮; মিশকাত হা/২৭৬৫ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/২৬৪৫, ৬/৬)।
৬. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, …যে ব্যক্তি দুনিয়াতে একটি ছবি তৈরী করবে, তাকে (ক্বিয়ামতের দিন) শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাকে চাপ দেওয়া হবে তাতে রূহ প্রদানের জন্য। অথচ সে তা পারবে না’ (বুখারী হা/৭০৪২; মিশকাত হা/৪৪৯৯; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪৩০০, ৮/২৫৬)।
৭. সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, আমার পেশা হ’ল ছবি তৈরী করা। এখন এ বিষয়ে আপনি আমাকে ফাতওয়া দিন। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে কাছে টেনে নিয়ে তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি তোমাকে ঐটুকু অবহিত করতে পারি, যা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট থেকে শ্রবণ করেছি। অতঃপর তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, প্রত্যেক ছবি প্রস্তুতকারী জাহান্নামী। তার প্রস্তুতকৃত প্রতিটি ছবিতে (ক্বিয়ামতের দিন) রূহ প্রদান করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে’। অতঃপর ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে বলেন, যদি তুমি একান্তই ছবি তৈরী করতে চাও, তাহ’লে বৃক্ষ-লতা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরী কর, যাতে প্রাণ নেই’ (মুসলিম হা/২১১০; বুখারী হা/২২২৫; মিশকাত হা/৪৪৯৮, ৪৫০৭; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪২৯৯, ৪৩০৮)।
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন নেতা বা ভক্তিভাজন জীবিত বা মৃত ব্যক্তির মাথা সহ আবক্ষ মূর্তি স্থাপন কিংবা উক্তরূপ ছবি গৃহে বা অফিস কক্ষে টাঙিয়ে রাখা এবং ধারণা করা যে, এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি প্রাণহীন হয়ে গেছেন। অতএব উক্ত ধরনের মূর্তি, প্রতিকৃতি বা ছবি তৈরী ও তা টাঙানো জায়েয আছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইতিপূর্বে ১ম ভাগে বর্ণিত ১৮ নং হাদীছে (তিরমিযী হা/২৮০৬) যার নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। কেননা এর দ্বারা ব্যক্তিকে চেনা যায় ও তার প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করা যায়। অনেকে পিতা-মাতার বা স্বামী- স্ত্রী ও সন্তানদের ছবি ঘরে টাঙিয়ে রাখেন- এগুলি থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে (পৃঃ ৫৫)।
প্রাণীর মাথাবিশিষ্ট ছবি :
প্রাণীর মাথা বিশিষ্ট ছবি সর্বাবস্থায় হারাম। চাই তা পূর্ণদেহী হৌক বা অর্ধদেহী হৌক। তিরমিযী শরীফে (হা/২৮০৬) স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রাণীর ছবির মাথা কেটে ফেলে তাকে বৃক্ষের ন্যায় বা অনুরূপ কিছুতে রূপান্তরিত করতে হবে। এক্ষণে মানবদেহের নীচের অংশ কেটে ফেলে উপরাংশের ছবি তৈরী করা ও তা সসম্মানে দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখা বা দর্শনীয় স্থানে স্থাপন করা নিঃসন্দেহে হারাম এবং তা ফেরেশতা আগমনের প্রতিবন্ধক। অতএব এইরূপ কোন ছবি প্রস্তুত ও ব্যবহার শরী‘আতে নিষিদ্ধ। এই ছবি ছায়াযুক্ত হৌক বা না হৌক তাতে কিছুই যায় আসে না। কেননা অংকিত বা নির্মিত কিংবা ক্যামেরায় তোলা ছবি সবকিছুর প্রতিক্রিয়া একই। এই ছবি বা মূর্তি যদি কোন ভক্তিভাজন ব্যক্তির হয়, তাহ’লে সেটা আরও কঠিন পাপের বিষয় হবে। ঐ ভক্তির চোরাগলি দিয়েই শিরক প্রবেশ করবে। যেমন পৃথিবীর আদি যুগে শিরক এভাবেই প্রবেশ করেছিল শ্রদ্ধাভাজন ধর্মনেতাদের মূর্তি পূজার মাধ্যমে হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে এবং তার পর থেকে সকল নবীর যামানায়। জাহেলী যুগে পরলোকগত সৎলোকদের মূর্তিতে ভরে গিয়েছিল পবিত্র কা‘বাগৃহ। শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এগুলিকে বের করে কা‘বাগৃহকে শিরক মুক্ত করেই সেখানে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা দান করেছিলেন। বর্তমানে আমরা ফেলে আসা সেই জাহেলিয়াতকেই আবার আমাদের ঘরে, অফিসে ও বৈঠকখানায় স্থাপন করছি এবং সম্মানিত সকল স্থানে ও শোকেসে ভর্তি করছি। নির্দিষ্ট স্থানে কিংবা ছবি ও প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে অথবা অন্য স্থানে তার বিদেহী আত্মার সম্মানে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি। বিগত দিনের ফেলে আসা শিরক বিভিন্নরূপে আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে এমনকি দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ভবনে ও আইন সভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সসম্মানে স্থান করে নিয়েছে। এরপরেও আমাদের দাবী আমরা ‘তাওহীদবাদী’ মুসলমান।
যেসব ছবি অনুমোদন যোগ্য :
১. বৃক্ষ-লতা, প্রাকৃতিক দৃশ্য, কা‘বাগৃহ, মসজিদে নববী, বায়তুল আক্বছা বা অনুরূপ পবিত্র স্থান সমূহের ছবি, যদি তাতে কোন প্রাণীর ছবি না থাকে। যেমন ইবনু আব্বাস (রাঃ) জনৈক শিল্পীকে বলেন, যদি তুমি নিতান্তই ছবি প্রস্তুত করতে চাও, তবে বৃক্ষ-লতার ছবি অংকন কর অথবা ঐসব বস্তুর ছবি, যাতে প্রাণ নেই’। আজকাল বিভিন্ন মসজিদে ক্বিবলার দিকে সম্মানের উদ্দেশ্যে কা‘বাগৃহের ও মাসজিদুল হারামের খাম্বা সমূহের বিশাল ছবি ও টাইল্স লাগানো হচ্ছে, যা
অবশ্যই নাজায়েয। এগুলি মুছল্লীর নযর কাড়ে এবং তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে। বহু মসজিদে ক্বিবলার দিকে ‘আল্লাহ’ ‘মুহাম্মাদ’ লেখা টাইলস লাগাতে দেখা যায়। ভাবখানা এই, যেন মুসলমান মসজিদে এসে দুই উপাস্যের ইবাদত করে (নাঊযুবিল্লাহ)।
কোন কোন মসজিদে ‘আল্লাহ’ ‘মুহাম্মাদ’ লেখা টাইলস চার দেওয়ালে সর্বত্র লাগানো হয় বরকত মনে করে। অথচ এতে বরকত হয় না। বরং গোনাহ হয়। এইসব লেখকরা এবং টাইলসের উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের মতোই দায়ী হবেন। কোন মসজিদে এগুলি থাকলে এখুনি ভেঙ্গে নাম ও ছবিহীন সাধারণ টাইলস লাগাতে হবে। এতদ্ব্যতীত মসজিদের ভিতরে বা বাইরে কোথাও কালেমা বা কুরআনের আয়াতসমূহ লেখা যাবে না। রাসূল (সাঃ)-এর মসজিদে এসবের কোন অস্তিত্ব ছিল না। অনেকের বাড়ীতে বরকত মনে করে সূরা ইয়াসীন, আয়াতুল কুরসী, চার কুল বা অন্যান্য আয়াত সমূহ লিখিত বিশালাকৃতির ওয়ালম্যাট দেওয়াল জুড়ে টাঙিয়ে রাখা হয় অথবা পিতলের থালা বা কড়ে মাটির পাত্রে লিখে শোকেসে সাজিয়ে রাখা হয়। কেউবা টেবিলে রাখেন। কোন কোন সৈনিক যুদ্ধের সময় ছোট কুরআন গলায় ঝুলিয়ে রাখেন। কেউবা গাড়ীর মাথায় বড় করে আরবীতে ‘আল্লাহ’ কেউবা গাড়ীর সামনে ‘আল্লাহ’ ‘মুহাম্মাদ’ ‘কালেমা শাহাদত’ ‘আয়াতুল কুরসী’ বা ‘দো‘আ ইউনুস’ লিখিত প্লেট ও তাসবীহমালা ঝুলিয়ে রাখেন। ধারণা এই যে, আল্লাহর কালাম তাঁকে বিপদ থেকে বাঁচাবে। অথচ এগুলি হ’ল পড়ার জিনিস, ঝুলানোর জিনিস নয়। কেউ কেউ কালেমা লিখিত শো-বক্স দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখেন। যা জ্বলে ও নিভে। কেউবা কাষ্ঠ খচিত কালেমা, কেউবা মুহাম্মাদের নৌকায় আল্লাহর মাস্তুল ও হাল ধরার ছবি ঘরে রাখেন। এসবই ছবি-মূর্তির নানান রূপ। এগুলি হ’তে বিরত থাকতে হবে।
মনে রাখা আবশ্যক যে, কালেমা বা কুরআনের আয়াত সমূহ পাঠ করার ও সেমতে আমল করার বিষয়, দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখার, গলায় ঝুলিয়ে রাখার বা শোকেসে সাজিয়ে রাখার বিষয় নয়। এতে আল্লাহর কালামকে অপমান করা হয় এবং এই অন্যায় ব্যবহারের কারণে মালিককে অবশ্যই গোনাহগার হ’তে হবে।
২. মাথাকাটা ছবি, যা বৃক্ষের ন্যায় হয়ে যাবে। জিবরীল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজকাল বিভিন্ন দোকানে মাথাওয়ালা ও মাথাকাটা পূর্ণদেহী মানব মূর্তি শোভা পাচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে হারাম।
৩. পাসপোর্ট, ভিসা, আইডেন্টিটি কার্ড, লাইসেন্স, প্রবেশপত্র, পলাতক আসামী ধরার জন্য, গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রাখার জন্য ইত্যাদি বাধ্যগত ও যরূরী কারণে ছবি তোলা যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬; বাক্বারাহ ২/২৩৩, ২৮৬)।
ছবি ও মূর্তি থেকে বেঁচে থাকার উপকারিতা :
(১) ছবি ও মূর্তি শিরকের বাহন। তাই এগুলি থেকে বিরত থাকতে পারলে জাতির একক ভক্তি ও উপাসনা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত হবে ও মানুষ শিরকের মহাপাতক হ’তে রক্ষা পাবে। তার জান্নাতের রাস্তা খোলাছা হবে।
(২) এগুলি তৈরীতে বছরে কোটি কোটি টাকার অপচয় হ’তে জাতি বেঁচে যাবে।
(৩) নীল ও পর্ণো ছবির আবশ্যিক কুফল হ’তে মুক্ত হয়ে যুব চরিত্রের নৈতিক মান উন্নত হবে। ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ও যৌনরোগ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যবান জাতি গঠিত হবে।
(৪) মন্দ চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে জাতি উন্নত চিন্তায় অভ্যস্ত হবে।
(৫) সম্মানিত ব্যক্তিগণ অসম্মানের হাত থেকে রেহাই পাবেন ও ভক্তদের অন্তরে তাঁদের স্মৃতি চির জাগরুক হয়ে থাকবে।
(৬) পারস্পরিক হানাহানি ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে ও ছবির কারণে জীবনহানি থেকে সমাজ মুক্তি পাবে।
ছবি ও মূর্তি কি পৃথক বস্তু?
অনেকে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মূর্তি ভেঙ্গে ছিলেন। অতএব মূর্তি হারাম হ’লেও ছবি হারাম নয়। তাদের এই যুক্তি ধোপে টিকবে না। কারণ ছহীহাহ (হা/৯৯৬) গ্রন্থে বর্ণিত রাসূল (সাঃ)-এর মক্কা বিজয়ের দিন কা‘বাগৃহের মধ্যকার ছবি সমূহ ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করার ঘটনা তার বাস্তব প্রমাণ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যেমন মূর্তি ভেঙ্গেছিলেন, তেমনি ছবিযুক্ত পর্দা ছিঁড়েছিলেন ও পদদলিত করেছিলেন। এমনকি আলী (রাঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন মদীনা শহরের সকল ছবি-মূর্তি নিশ্চিহ্ন করে দিতে। আজও যদি দেশের সরকার রাস্তায় টাঙানো বড় বড় ছবির বিলবোর্ড, সিনেমার ল্যাংটা ও মারদাঙ্গা ছবিগুলো ও পর্ণো ছবিওয়ালা বই-পত্রিকাগুলো বন্ধ বা ধ্বংস করতে পারতেন, তাহ’লে অন্ততঃ রাসূল (সাঃ)-এর একটি হুকুম পালন করে তারা যেমন অশেষ ছওয়াবের অধিকারী হ’তেন, তেমনি জাতি ও সমাজ সাক্ষাৎ ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যেত। একা আলী (রাঃ) যে কাজ করতে পেরেছিলেন, দেশের গোটা সরকার কি সে কাজটুকু করার ক্ষমতা রাখেন না?
উপসংহার : উপরের আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, ছবি, প্রতিমা, মূর্তি, ভাস্কর্য ইত্যাদি সবই একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। এখানে ভুল বুঝার কিছু নেই। পাঠকদেরকে অনুরোধ করবো নিরপেÿ মেজায নিয়ে বিষয়টি অধ্যয়ন করতে এবং অনুধাবন করতে। আর বিসত্মারিত জানার জন্য প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত ছবি ও মূর্তি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণটি অবশ্যই পাঠ করবেন।
{কৃতজ্ঞতা স্বীকার : প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত ‘ছবি ও মূর্তি’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ হতে সিংহভাগ সহযোগিতা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সাথে পাঠ করুন মাসিক আত-তাহরীকের সম্পাদকীয়, ‘মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী ! মূর্তিটা সরিয়ে দিন’, মার্চ ২০১৭}