যঈফ ও জাল হাদীস এর সংজ্ঞা

যঈফ ও জাল হাদীস বলতে কি বুঝায় উদাহরনসহ আলোচনা

(কয়েকটি বিখ্যাত আরবী বই থেকে অনুবাদকৃত)

অনুবাদকঃ সাজ্জাদ সালাদীন

যঈফ (ضعيف): ضعيف এর আভিধানিক অর্থ দুর্বল। ‘যে হাদীসের মধ্যে হাসান হাদীসের শর্তগুলি অবিদ্যমান দেখা যায়, মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় তাকে যঈফ হাদীস বলে।

‘যঈফ’ এর পারিভাষিক সংজ্ঞায় বলা যায় যে, “যেসব হাদীস হাসান হাদীসের স্তর থেকে নিচু তাই য‘ঈফ বা দুর্বল হাদীস, তার অনেক প্রকার রয়েছে”। অর্থাৎ –

১- রাবীর বিশ্বস্ততার ঘাটতি বা

২- তাঁর বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণনা বা স্মৃতির ঘাটতি, বা

৩- সনদের মধ্যে কোন একজন রাবী তাঁর ঊর্ধ্বতন রাবী থেকে সরাসরি ও স্বকর্ণে শোনেননি বলে প্রমানিত হওয়া বা দৃঢ় সন্দেহ হওয়া, বা

৪- অন্যান্য প্রমানিত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া, অথবা

৫- সূক্ষ্ম কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি থাকা ইত্যাদি যে কোন একটি বিষয় কোন হাদীসের মধ্যে থাকলে হাদিসটি যঈফ বলে গণ্য। কোন হাদীসকে ‘যঈফ’ বলে গণ্য করার অর্থ হল, হাদীসটি রাসুল (সাঃ) এর কথা নয় বলেই প্রতীয়মান হয়।

সুতরাং হাদীসের দ্বারা কোন রাবী হাসান হাদীস – এর রাবীর গুণসম্পন্ন নয় সে হাদীসকে হাদীসে যঈফ বলে। (রাবীর যু’ফ বা দুর্বলতার কারণেই হাদীসটিকে যঈফ বলা হয়)।

মাউযু (موضوع) হাদীস বা বানোয়াট বা জাল হাদীসঃ মূলতঃ ‘মাউজু’ (موضوع) শব্দটি আরবী। ‘ওয়ায’ শব্দ হতে গঠিত। ‘ওয়াযা’ শব্দটি অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। موضوع কর্মবাচক বিশেষ্য وَضْع ক্রিয়া বিশেষ্য থেকে উদ্‌গত, অর্থ বানোয়াট, তৈরিকৃত ও নির্মিত। ‘মাওদু’র আরেক অর্থ الشيء المحطوط অর্থাৎ জমিনে পতিত বস্তু।

যেমনঃ কোন বস্তুকে কোন স্থানে রাখা, স্থাপন করা, কারো মর্যাদাকে খাট করা, নির্ধারণ করা, নতুন করে কোন জিনিস বানানো, মিথ্যা উপাখ্যান করা ইত্যাদি। তবে হাদীস শাস্ত্রে ‘ওয়াযা’ বলা হয়, যা রাসূল (সাঃ) বলেননি, করেননি এবং সমর্থনও দেননি এমন কথা বা কাজকে রাসূল (সাঃ) এর দিকে মিথ্যা সম্বন্ধ করা।

অতএব, যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃত ভাবে রাসুল (সাঃ) এর নামে বানোয়াট কথা সমাজে প্রচার করেছে অথবা, ইচ্ছাকৃত ভাবে হাদীসের সুত্র (সনদ) বা মূল বাক্যের মধ্যে কমবেশি করেছে বলে প্রমানিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদিসকে বানোয়াট বা মাউযু হাদীস বলে। এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।

জাল হাদীস সংক্রান্ত কথাঃ- মওদু বা জাল হাদীস হচ্ছে সেই হাদীস যে হাদীসের মধ্যে সনদের বর্ণনাকারীদের সংখ্যা অন্তত কোন এক স্তরে একজন রাবী এমন আছে যাকে মিথ্যাবাদী বলে চিহ্নিত করা যায়।

রাসূল (সাঃ) যে কথা বলেননি সে কথাকে তাঁর নামে চালিয়ে দেওয়া মারাত্মক অপরাধমূলক কাজ। এর পরকালীন পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম।

রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেনঃ

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، قَالَ أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، قَالَ أَخْبَرَنِي مَنْصُورٌ، قَالَ سَمِعْتُ رِبْعِيَّ بْنَ حِرَاشٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَلِيًّا، يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” لاَ تَكْذِبُوا عَلَىَّ، فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ

অর্থঃ- আলী ইবনুল জা‘দ (রহঃ)… ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী বলেছেনঃ তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না। কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (তথ্যসূত্রঃ ইলম বা জ্ঞান অধ্যায় :: সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ৩ :: হাদীস ১০৮)।

রাসূল (সাঃ) আরও ইরশাদ করেছেনঃ

” مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ “

“যে আমার উপর মিথ্যা বলল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়”। [তথ্যসূত্রঃ মুসলিম। আন-নুযহাহ্ঃ (পৃ.১২১-১২২)]

নিচে কতিপয় মুহাদ্দিসীনের ‘মাউজু’ বা জাল হাদীসের সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো। যেমনঃ

১. ইমাম নববী (রহঃ) (মৃ:৬৭৬ হিঃ) বলেনঃ

الموضوع : هو المختلق المصنوع

‘মাওজু’ বলা হয় যা নতুন করে সৃষ্ট, বানানো। (তথ্যসূত্রঃ আত-তাকরীব মা‘আ তাদরীবির রাবীঃ ২৩৯)

২. শায়েখ নুরুদ্দিন আত্তার (রহঃ) এভাবেই সংজ্ঞা দিয়েছেন স্বীয় গ্রন্থে – মানহাজুন নাকদ ফি উলুমিল হাদীস ১/৩০১। এছাড়া – লিসানুল মুহাদ্দেসীন ৪/২১৬ এর মধ্যে এভাবেই সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

৩. শায়েখ জামালুদ্দিন কাসেমী (রহঃ) বলেনঃ

الموضوع : هو الكذب المختلق المصنوع

‘মাওজু’ বলা হয়, যা মিথ্যা, নতুন করে সৃষ্ট ও বানানো। (তথ্যসূত্রঃ কাওয়ায়েদুত তাহদীস ১/২৭)।

৪. হাফেজ সাখাভী (রহঃ) (মৃত: ৯০২হি:) বলেন,

الموضوع: هوالمكذوب على رسول الله صلى الله عليه وسلم

‘মাউজু’ বলা হয়, যা রাসূল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা-মিথ্যি চালিয়ে দেয়া হয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ গায়াহ ফি শারহিল হিদায়াঃ ১/১৮)

৫. শায়েখ তাহের জাযায়েরী (রহঃ) (মৃঃ) বলেনঃ

الموضوع: هو الحديث المكذوب على رسول الله صلى الله عليه وسلم – سواء كان عمدا أوخطأ

‘মাউজু’ বলা হয়, ঐ হাদীস কে যা রাসূল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা রচনা করা হয়েছে, তা ইচ্ছা কৃত হোক বা ভুল বসত। (তথ্যসূত্রঃ তাওজিহুন নজরঃ ২/৫৭৪)।

৬. শায়েখ হা্মযা মালিবারী (রহঃ) বলেনঃ

المضوع: هوما أضيف إلى النبي صلى الله عليه وسلم كذبا من قول أو فعل أوتقرير.
علوم الحديث في ضوء تطبيقات المحدثين النقاد : 1/70

‘মাউজু’ বলা হয়, ঐ কথা, কাজ বা সমর্থনকে যা রাসূল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা রচনা করে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। মূলতঃ এ কারনেই ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

«مَنْ حَدَّثَ عَنِّى، بِحَدِيثٍ يُرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَاذِبِينَ»

“যে আমার থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করল, অথচ দেখা যাচ্ছে তা মিথ্যা, তাহলে সেও মিথ্যাবাদীদের একজন”। অপর হাদীসে তিনি ইরশাদ করেনঃ

«وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»

“আর আমার উপর যে ইচ্ছাকৃত মিথ্যা বলল, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম বানিয়ে নেয়”।

(৬) ড. মাহমুদ তাহহান তাঁর বিখ্যাত বই তাইসিরু মুসতালাহিল হাদীস নামক গ্রন্থে বলেনঃ

المضوع: هو الكذب المختلق المصنوع المنسوب إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم

‘মাউজু’ বলা হয় ঐ মিথ্যা, নতুন সৃষ্ট বা বানানো কথাকে যা রাসূলের (সাঃ) নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ তাইসিরু মুসতালাহিল হাদীস, পৃষ্ঠা নং – ৬১)।

তাছাড়া এ ব্যাপারে অন্যদের বক্তব্যও তথৈবচ। সারকথা, রাসূল (সাঃ) যা করেননি, বলেননি, বা সমর্থনও দেননি এমন বিষয়কে রাসূল (সাঃ) এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে এগুলোই ‘মাউজু‘ বা জাল হাদীস। শায়েখ মোহাম্মদ বিন মোহাম্মদ আবু শুহবাহ (রহঃ) বলেনঃ

الموضوع من حيث مادته و نصه نوعان
1- أن يضع الواضع كلاما من عند نفسه , ثم ينسبه إلى النبي صلى الله عليه وسلم أو إلى الصحابي , أو التابعي
2-أن يأخذ الواضع كلاما لبعض الصحابة أو التابعين أو الحكماء , أو الصوفية , أو ما يروي في الإ سراإيليات , فينسبه ‘ إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم , ليروج وينال القبول,

সূতরাং যে কথা, কাজ বা মৌন সমথর্ন রাসূল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা মিথ্যি চালিয়ে দেয়া হয়েছে তাকেই ‘মাউজু’ বা জাল হাদীস বলা হয়।

হাদীস বিশারদগণের যাঁরাই ‘মাউজু’ বা জাল হাদীসের সংজ্ঞা দিয়েছেন, তাঁরা এমনই বলেছেন- যা রাসূল (সাঃ) বলেননি, করেননি এবং সমর্থনও দেননি এমন কথা বা কাজকে রাসূল সা. য়ের নামে চালিয়ে দেয়াকে ‘মাউজু’ বলা হয় ।

হাদীস জাল করার কারণ ও উদ্দেশ্যঃ-

১) মুনাফিকরা এবং কাফিররা মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য মুসলিম ছদ্মবেশে জাল হাদিস প্রচার করতো।

২) আলেমদের মধ্যে যারা নিজেরা যত বেশি হাদিস সংগ্রহ করেছে বলে দাবি করতে পারতো, সে তত বেশি সন্মান পেত। তাই সন্মানের লোভে অনেক আলেম, পীর, দরবেশ মিথ্যা হাদিস প্রচার করে গেছে।

“এই হাদিসটির ইস্‌নাদ আমার কাছে একদম মুহাম্মাদ (ﷺ) থেকে এসে পৌঁছেছে”—এই ধরনের দাবি করতে পারাটা একটা বিরাট গৌরবের ব্যাপার ছিল, এখনও আছে।

৩) রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আগেকার রাজা-বাদশা, শাসকরা আলেমদের ব্যবহার করে মিথ্যা হাদিস প্রচার করতো। জনতাকে কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হাদিসের চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র আর কিছু ছিল না।

৪) ধর্মের প্রতি মানুষকে আরও অনুপ্রাণিত করার জন্য নানা চমকপ্রদ, অলৌকিক ঘটনায় ভরপুর জাল হাদিস প্রচার করা হত, যেগুলো শুনে সাধারণ মানুষ ভক্তিতে গদগদ হয়ে যেত।

৬) ধর্মীয় উপাসনালয় এবং বিশেষ স্থানগুলোতে মানুষের আনাগোনা বাড়ানো এবং তা থেকে ব্যবসায়িক লাভের জন্য জাল হাদিস ব্যবহার করে সেসব স্থানের অলৌকিকতা, বিশেষ ফজিলত প্রচার করা হত।

সাধারণ মানুষ তখন ঝাঁকে ঝাঁকে সেই সব অলৌকিক, প্রসিদ্ধ স্থানে গিয়ে তাদের বিপুল পরিমাণের অর্থনৈতিক লাভ করে দিয়ে আসতো।

৭) জিন্দিকগণ পারসিক জিনদের ধর্মাবলম্বী একদল লোক বাহ্যত নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দিত, কিন্তু প্রচ্ছন্ন ভাবে ইসলামের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় থাকত। এ সমস্ত লোকেরা ইসলামের মূলনীতি ও বিশ্বাসের প্রতি মানুষকে শ্রদ্ধাহীন করার জন্য রাসুলের (সাঃ) নামে অযৌক্তিক হাজার হাজার হাদীস প্রচলন করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের অনিষ্ট সাধন।

৮) অতি পরহেজগারগণ নিজেদেরকে সূফি প্রমানের লক্ষে জাল হাদীস তৈরি করত।

৯) সদুদ্দেশ্যে

১০) তর্কবিতর্কের ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ)- এর শ্রেষ্টত্ব প্রমানের জন্য মনগড়া হাদীস বর্ণনা করে।

১১) যুদ্ধে উত্তেজিত করার জন্য।

১২) মুকাল্লিদগণঃ ভিবিন্ন ইমামদের অনুসারীরা নিজেদের ইমামের শ্রেষ্টত্ব প্রমানের জন্য জাল হাদীস রচনা করে।

১৩) মুসাহেবগণঃ রাজা-বাদশা ও আমীর উমরাহদের মুসাহেবগণ নিজেদের প্রভুকে খুশি করার জন্য জাল হাদীস বর্ণনা করত।

১৪) বক্তাগণ।

১৫) অসতর্কতা ও অন্ধভক্তি।

১৬) সুফিগণ।

ইতিহাসের কিছু বিখ্যাত হাদীস জালকারী—

খলিফা মাহদি আব্বাসির শাসনামলে আব্দুল কারিম বিন আল আরযাকে যখন শাস্তি স্বরূপ হত্যা করার জন্য আনা হয় তখন সে প্রায় চার হাজার হাদিস জাল করার কথা স্বীকার করেছিল।

আবু আসমা নুহ বিন আবি মারিয়াম কু’রআনের প্রতিটি সূরার নানা ধরণের ফজিলত নিয়ে শত শত জাল হাদিস প্রচার করেছে, যখন সে লক্ষ করেছিল মানুষ কু’রআনের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছিল না। যেমন, সূরা ইয়াসিন কু’রআনের দশ ভাগের একভাগ, অমুক সূরা পড়লে কু’রআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায় ইত্যাদি। [কিতাব আল মাউজুয়াত – ইবন জাওযি, পৃষ্ঠা ১৪]

ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ নানা ধরণের ভালো কাজের বিভিন্ন ধরণের ফজিলত নিয়ে অনেক হাদিস জাল করেছে। সে একজন ইহুদি ছিল মুসলমান হবার আগে। [আল মাউজুয়াত]

আবু দাউদ নাখি একজন অত্যন্ত নিবাদিত প্রাণ ধার্মিক ছিলেন। তিনি রাতের বেশিরভাগ সময় নামায পরতেন এবং প্রায়ই দিনে রোজা রাখতেন। তিনিও নানা ধরণের বানানো হাদীস প্রচার করেছেন মানুষকে ধর্মীয় কাজে মাত্রাতিরিক্ত মগ্ন রাখার জন্য। [আল মাউজুয়াত-৪১]

জাল হাদীসের লক্ষণঃ –

১. স্বীকারোক্তি

২. যে সকল হাদীসের প্রত্যক্ষ শর্তের বিপরীত কোন কিছু বর্ণিত হয় তা জাল হাদীস। যেমন বেগুন সকল রোগের ঔষধ।

৩. জীবনে একবারও হাদীস জাল করেছে বা জেনে শুনে জাল হাদীস প্রচার করেছে এমন ব্যাক্তির বর্ণিত হাদীস।

৪. যে হাদীসের বর্ণনা মূলের বিপরীত। যেমন- সূর্য তাপে তক্ত জ্বলে, স্নান করলে কুষ্ঠ রোগ হয়।

৫. খাজা-খিজির সম্মন্ধে বর্ণিত সকল হাদীস।

৬. যে হাদীসে কোন জঘন্য ভাবের সমাবেশ আছে।

৭. যে হাদীসের ভাষা অশোভনীয়।

৮. যে হাদীসে এমন ঘটনা উল্লেখ আছে যে,তা ঘটে থাকলে বহুলোক জানার কথা ছিল,অথচ মাত্র একজন রাবী তা বর্ণনা করেছে।

৯. যে হাদীসে অনর্থক মুল্যহীন কথা আছে।

১০. যা কুরআন,সহীহ হাদীস ও কাতয়ী ইজমার বিপরীত।

১১. যে সকল হাদীসে সামান্য কাজের জন্য বড় বড় সওয়াব এবং সামান্য অপরাধের জন্য কঠোর দন্ডের ওয়াদা করা হয়েছে।

যাদের হাদীস গ্রহণ করা যাবে নাঃ-

১. রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী।

২. সাধারণ কথা বার্তায় যারা মিথ্যা কথা বলে।

৩. বিদয়াতী প্রবৃত্তির অনুসারী।

৪. জিন্দিক, পারসিক, অমনোযোগী ও অসতর্ক ব্যাক্তিবর্গ এবং যাদের মধ্যে আদালত, যাত ও ফাহাম (ন্যায় পরায়ণতা, বুদ্ধিমত্তা) ইত্যাদি গুণাবলীর অনুপস্থিতি থাকবে।

হাদীস জালকারীদের কয়েকজন/মুহাদ্দিসগনের নিকট মিথ্যাবাদী হিসেবে আধিক পরিচিত যারাঃ

১. আবান্ যাফার আন-নুমাইরীঃ এই ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) – এর নামে তিন শতাধিক হাদীস ছড়িয়েছেন।

২. ইবরাহীম ইবনে যায়িদ আল-আসলামীঃ এ ব্যক্তি ইমাম মালিক (রহঃ) – এর নামে বহু হাদীস ছড়িয়েছেন।

৩. আহমদ ইবনে আবদিল্লাহ আ-জুওয়ায়বারীঃ সে সিয়াদের কাররামিয়া সম্প্রদায়ের নামে হজার হাজার হাদীস বর্ণনা করে।

৪. জাবির ইবনে ইয়াজিদ আল-যুফিঃ তার সম্পর্কে সুফিয়ান বলেন,আমি জাবিরকে বলতে শুনেছি সে প্রায় ত্রিশ হাজার জাল হাদীস বর্ণনা করেছে।

৫. মহাম্মদ ইবনে সুজা আছ-ছালজীঃ সে সৃষ্ট বস্তুর সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সাদৃশ্যমূলক বিষয়ে বহু হাদীস তৈরী করে মহাদ্দীসদের নামে ছড়িয়েছে।

৬. নুহ ইবনে আবি মারিয়ামঃ সে কুরআনের নানাবিধ ফজীলত ও বিভিন্ন সূরার সাহাত্ম্য ও মর্যাদা বিষয়ক বহু হাদীস তৈরী করে ছড়িয়েছে।

* ইমাম আন-নাসাঈ (রহঃ) বলেন- জাল হাদীস রচনার সাথে জড়িত মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভকারী ব্যক্তি চারজনঃ

১. মদীনায় ইবনে আবি ইয়াহইয়া

২. বাগদাদে আল-ওয়াকিদী

৩. খুরাসানে মুকাতিল

৪. শামে মুহাম্মদ ইবনে সাইদ আল-মাসলুব।

সূত্র

সহীহ হাদীস সম্পর্কে জানতে হলে আগের পর্ব পড়ুন।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

১টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button