
বড় হয়ে কি হবো ?
খোকন মায়ের কোলে বসে ছোট মুখে বড় বড় প্রশ্ন করছিল। বড় হলে আমি কী হব? কী করব? তবে যা হব, ভালো হব। তার পরিমন্ডলে নানা মানুষের নানা কর্ম দেখে তার শিশু-মনেও শুরূ হয়েছিল ভবিষ্যতের পরিকল্পনা।
খোকন : মা! আমি বড় হলে ডাক্তার হব, মানুষের সেবা করব এবং বিনা পয়সায় গরীবদের চিকিৎসা করব।
মা : আমার মনে হয়, তা তুমি পারবে না বাবা! কারণ, বড় হয়ে তোমার মনেও অর্থের লোভ আসবে। আর তখন মানুষের সেবার কথা ভুলে যাবে। গরীবদের অসহায়তার কথা বিস্মৃত হবে। অধিক অর্থোপার্জনের জন্য ওষুধে ভেজাল দেবে।
খোকন : তাহলে আমি মাস্টার হব এবং ভালো মানুষ তৈরী করার জন্য ছেলে পড়াব।
মা : তাও হয়তো তুমি পারবে না সোনা! কারণ, মাস্টার হওয়ার পর তুমি তোমার দায়িত্বের কথা ভুলে যাবে। মানুষ গড়ার কথা বিস্মৃত হয়ে নিজের বিলাসী জীবন গড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
খোকন : তাহলে আমি বড় ব্যবসায়ী হব। অনেক লাভ করে গরীবদেরকে অর্থদান করব।
মা : তাতেও তুমি অর্থলোলুপ অসাধু মানুষ হয়ে উঠবে। মানুষকে ঠকিয়ে, মিথ্যা বলে, পণ্যদ্রব্যে ভেজাল দিয়ে, অবৈধ জিনিসের ব্যবসা ক’রে কেবল অর্থ-চিন্তায় ব্যাকুল থাকবে। আর দুঃখী-দরিদ্রদের কথা ভুলেই যাবে।
খোকন : তাহলে আমি সরকারী অফিসার হব এবং দেশ ও দশের সেবা করব।
মা : খুব ভাল কথা। কিন্তু আমার ধারণা, তাও তুমি পারবে না বাবা! কারণ, তখন তুমি দেশ ও দশের সেবা ভুলে নিজের দশা দোরস্ত করতে অর্থের দাসত্ব করবে। লোকের কাছে ঘুষ খাবে। কর্তব্যে ফাঁকি দেবে। নানা অজুহাতে অফিস কামাই করবে। আর আত্মসেবা করবে।
খোকন : তাহলে আমি পুলিশ হব। অন্যায়-অবিচার, অপরাধ ও দুর্নীতি দমন করব।
মা : তুমি পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, পুলিশের ইউনিফর্ম গায়ে পরলে এবং কোমরে পিস্তল ঝুলালেই তোমার মাঝে অহংকার আসবে, অনেক সময় অন্ধভাবে নির্দোষের প্রতি অত্যাচার চালাবে, ঘুষ খেয়ে অপরাধীকে বেকসুর খালাস ক’রে দেবে।
খোকন : তাহলে আমি উকিল হয়ে ন্যায় বিচারে সহযোগিতা করব।
মা : তখন তুমি তা ভুলে যাবে। তোমার উকালতির পেশা কেবল টাকার নেশাতে পরিবর্তিত হবে। ন্যায়-অন্যায় না দেখে তুমি কেবল নিজের মক্কেলের মামলা জিততে চাইবে।
খোকন : তাহলে আমি বড় জননেতা হব। দেশ ও জাতির সেবা করব। দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করব।
মা : সে হওয়া তো আরো কঠিন বাবা! জননেতা হয়ে জনসেবা বাদ দিয়ে ধনসেবা করবে। নিজের পদ ও গদি টিঁকিয়ে রাখার জন্য কত শত জাল-জোচ্চুরি করবে, দুর্নীতি করবে, অত্যাচার করবে। অন্যায়ভাবে সাম-দান-ভেদ-দন্ডের রাজনীতি প্রয়োগ করবে। ক্ষমতার অহংকার তোমাকে অন্ধ ক’রে ফেললে প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি অন্যায়াচরণ করবে।
খোকন : মা! তাহলে আমি হবটা কী? আমি কি কিছুই হতে পারব না?
মা : অবশ্যই পারবে। তবে অন্য কিছু হওয়ার আগে তোমাকে ‘মুসলিম’ হতে হবে।
খোকন : কিন্তু আমরা তো মুসলিম!
মা : নামের ‘মুসলিম’ নয় বাবা, কাজের ‘মুসলিম’। ‘মুসলিম’ যাকে বলে, সেই মুসলিম। বড় হয়ে যদি প্রকৃত মুসলিম হও, তাহলে তোমার সকল আশা পূর্ণ হবে। কারণ, ‘মুসলিম’ হল প্রত্যেক ব্যক্তিত্বের আদর্শ।
খোকন : তাহলে আমি আগে তাই হব মা!
মা : হ্যাঁ বাবা! তাই হও। আল্লাহ তোমাকে তওফীক দিন।
– শাইখ আব্দুল হামীদ ফাইযী’র লিখিত ছোটদের ছোট গল্প থেকে সংগৃহীত।