ঈদুল ফিতরঃ তাৎপর্য ও করণীয়
– মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ভূমিকাঃ
আনন্দ উচ্ছলতায় ভরা, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার অম্লান আলোকমালায় সুশোভিত ‘ঈদুল ফিতর’ মুসলমানদের অন্যতম আনন্দ উৎসব। প্রতিবছর মাহে রামাযানের পরে অনাবিল খুশির বার্তা নিয়ে আগমন করে ‘ঈদুল ফিতর’। ঘরে ঘরে বয়ে যায় খুশির বান। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে মুসলিম জাহান। স্বল্প সময়ের এই পার্থিব জীবনে ‘ঈদ’ একটি উপঢৌকনের মতই আসে। প্রতিদিনের ধরাবাঁধা জীবন-যাত্রার মধ্যে ঈদের দিনটি নতুন ব্যঞ্জনায় মুখরিত হয়। সেদিনের প্রত্যুষকে অন্যদিনের প্রত্যুষের চেয়ে ভিন্নতর মনে হয়।
পৃথিবীর সকল জাতির জন্য আনন্দ-উৎসব রয়েছে। মুসলিম জাতির আনন্দ উৎসব দু’টি। ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আযহা’। অন্যান্য জাতির আনন্দ-উৎসব থেকে ‘ঈদ’ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এতে উৎসবের নামে অনাচার, কদাচার ও নৈতিকতা বিবর্জিত বল্গাহীন অনুষ্ঠান ও আড়ম্বরের কোন স্থান নেই। ঈদ হচ্ছে একটি সুশৃংখল অথচ প্রাণোচ্ছল উৎসব। এতে মুসলিম জাতি ঐক্যবদ্ধ হ’তে শিখে, পরষ্পরকে ভালবাসতে শিখে, বিশ্বাস করতে শিখে, শিখে একে অন্যের প্রতি সহমর্মী হ’তে, শিখে পরষ্পরের সহযোগী হ’তে।
ঈদ ধর্মীয় তাৎপর্যমণ্ডিত, সৌহার্দ ও সম্প্রীতিপূর্ণ সামাজিক এবং সুশৃংখল এক অনুপম আনন্দানুষ্ঠান। ঈদের এ আনন্দ সংযমের ও আনুগত্যের। এ আনন্দ রামাযানের মত মহা সুযোগের মাসকে জীবনে পুনর্বার ফিরে পাবার। এ আনন্দ রামাযানের মাসব্যাপী ছিয়াম পালন করে সোনালী ফসল ‘নেকী’ অর্জন করতে পারার। এ আনন্দ হাযার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম ‘লাইলাতুল ক্বদর’-এ এক রাত্রি ইবাদত করতে পারার। এ আনন্দ জীবনের সকল পাপ-পঙ্কিলতাকে ঝেড়ে-মুছে ফেলে পূত-পবিত্র হ’তে পারার। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যরূপ ষড়রিপু ও শয়তানকে পরাভূত করে অন্ততঃ ত্রিশটি দিনের জন্যে হ’লেও সম্পূর্ণ বিজয়ী হ’তে পারার এ আনন্দ। দেহযন্ত্রকে একটি বছরের জন্য রামাযানের আগুনে পুড়িয়ে পুনরায় শাণিত করতে এ আনন্দ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে তুষ্ট করে তাঁর অবারিত রহমত লাভ করতে পারায় এ আনন্দ। এ আনন্দ জীবনের পূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারার এবং স্বজনদের নিয়ে একত্রে উপাদেয় আহার গ্রহণ, আমোদ, আহলাদ ও পুনর্মিলন করতে পারায়।
তাই এ দিনে মানুষ সকল প্রকার ব্যস্ততা পরিহার করে, সকল দুঃখ-যাতনার ঊর্ধ্বে উঠে একই আনন্দের মধ্যে শরীক হওয়ার এক স্থানে মিলিত হবার চেষ্টা করে। কর্মক্ষেত্রে মানুষের পারষ্পরিক যে মিলন ঘটে সেটা প্রথাসিদ্ধ। সেখানে অসহিষ্ণুতা আছে, ক্ষোভ আছে, হতাশা আছে। আছে শক্তি ও পৌরুষের দম্ভ। কিন্তু এই ধর্মীয় মিলনে একটি অভাবনীয় অভিব্যক্তি আছে। এই মিলনে অহমিকা নেই, ঔদ্ধত্য নেই; বরং স্বর্গীয় অনুভূতি আছে, আছে একটি নিবেদনের উপলক্ষে সকলের মাঝে সাম্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা। এই মহীয়ান ‘ঈদুল ফিতর’ সম্পর্কে এই নিবন্ধে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
ঈদুল ফিতর অর্থ ও নামকরণঃ
‘ঈদুল ফিতর’ ‘ঈদ’ ও ‘ফিতর’ শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। ‘ঈদ’ অর্থ খুশি, আনন্দ (عود ) শব্দমূল হ’তে উদ্ভূত ঈদ (عيد)-এর অন্য অর্থ হচ্ছে প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা। প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে বলে একে ঈদ বলা হয়। আর ‘ফিতর’ অর্থ হচ্ছে ছিয়াম সমাপন, উপবাস ভঙ্গ করা ইত্যাদি। [অগ্রপথিক, জানুয়ারী ২০০০ (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ), পৃঃ ২৩; অধ্যাপক সাঈদুর রহমান, মাহে রামাযানের শিক্ষা ও তাৎপর্য (ঢাকাঃ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ১৪০৫/১৯৮৫ খৃঃ), পৃঃ ৫৪
সুতরাং ‘ঈদুল ফিতর’ অর্থ হচ্ছে রামাযান পরবর্তী উৎসব। বিভিন্ন অভিধানে বলা হয়েছে,
‘ঈদুল ফিতর’ ঐ আনন্দ উৎসবকে বলে, যা রামাযানের পরে আসে’। [ড. ইবরাহীম আনীস ও সহযোগীবৃন্দ, আল-মু’জামুল ওয়াসীত্ব (ইস্তাম্বুলঃ আল-মাকতাবুল ইসলামিয়াহ, তা.বি.), ২য় খণ্ড, পৃঃ ৬৯৪; সাঈদী আবু হাবীব, আল-ক্বামূসুল ফিক্বহী (করাচীঃ আল-উলূমুল ইসলামিয়াহ, তা.বি.), পৃঃ ২৬৬]
রামাযানের পর শাওয়ালের প্রথম তারিখে রামাযানের ছিয়াম সমাপন উপলক্ষে যে আনন্দ-উৎসব পালিত হয় তাকে ‘ঈদুল ফিতর’ বলা হয়। কারো মতে, মুসলমানদের জীবনে নিয়মিত ভাবে প্রতি বছরই দিনটি ঘুরে ঘুরে আসে বরে একে ঈদের দিন বলা হয়। কারো মতে, এ দিনের ছালাতে তাকবীর সমূহ একের পর এক পুনঃপুনঃ উচ্চারণ করা হয় বলে একে ঈদের দিন বলা হয়। [অগ্রপথিক, জানুয়ারী ২০০০, পৃঃ ২৩]
‘ঈদুল ফিতর’ -এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটঃ
সৃষ্টির আদি থেকে প্রত্যেক জাতি এক বা একাধিক দিনে স্বীয় জাতীয় আনন্দ-উৎসব পালন করে আসছে। হযরত আদম (আঃ) ও তাঁর বংশধরগণ তওবাহ কবূলের দিনকে এবং নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইবরাহীম (আঃ)-এর মুক্তিলাভের দিনকে তাঁর অনুসারীরা ঈদের দিন হিসাবে পালন করত। ফির’আঊনের কবল থেকে মূসা (আঃ)-এর পরিত্রাণ লাভের দিনকে বনী ইসরাঈলরা ঈদের দিন হিসাবে উৎযাপন করত। হযরত দাঊদ (আঃ)-এর অনুসারীরা জালূতের বিরুদ্ধে বিজয় লাভের দিনকে, হযরত ইউনুস (আঃ)-এর অনুসারীরা তাঁর মাছের পেট থেকে মুক্তি প্রাপ্তির দিনকে, খৃষ্টানরা ‘মায়েদা’ (খাদ্যভর্তি খাঞ্চা) নাযিলের দিন ও ঈসা (আঃ)-এর জন্মের দিনকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করে থাকে। ইরানীরা জরথুস্ত্রের শিক্ষা বিলীন হওয়ার পর শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ’ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় ‘মিহরিজান’ উৎসব পালন করত। ভারতে বসন্ত ও শরতের আগমনে বিভিন্ন নদীতে স্নানোৎসব ও হোলির উৎসব (বন্তোৎসব)ও পালিত হয়। [তদেব, পৃঃ ২৩-২৪] বর্তমানে দুর্গাপূজা বাঙালী হিন্দু সমাজে একটি বিশিষ্ট উৎসব। ঐতিহাসিক হেরোডাটাসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, রোমানদের মধ্যে ইদিস (Ides) বা উৎসবের প্রচলন ছিল। যুদ্ধ জয়ের পরে তারা এসব ইদিস-এ লিপ্ত হ’ত। [মোহাম্মদ আজরফ, ইসলাম ও মানবতাবাদ (ঢাকাঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় প্রকাশঃ ১৯৯৫ইং/১৪১৫হিঃ), পৃঃ ৭৭-৭৮] জাহেলী যুগে আরবরাও বিভিন্ন উৎসব পালন করত। পারসিক প্রভাবে মদীনাবাসীগণ ‘নওরোজ’ ও ‘মিহরিজান’ উৎসব পালন করত। [অগ্রপথিক, জানুয়ারী ২০০০, পৃঃ ২৪]
মহানবী (ছাঃ) মদীনায় আগমন করে মদীনাবাসীদেরকে উক্ত দু’দিন উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন এবং ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আযহা’ মুসলমানদের জন্য আনন্দের দিন নির্ধারণ করেন। [আল-ক্বাছীম ছাত্র সংস্থা, আল-মুখতার লিল হাদীছ ফী শাহরি রামাযান, সম্পাদনাঃ আবদুল্লাহ বিন ছালেহ আল-ক্বার’আবী, (ক্বাছীমঃ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ বিশ্ববিদ্যালয়, ৪র্থ প্রকাশঃ ১৪১৫ হিঃ), পৃঃ ৪৪২] এ মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
‘হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন মদীনাবাসী দু’দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব করত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিন কি জন্য? তারা বলল, জাহেলী যুগে এ দু’দিনে আমরা খেলাধুলা (আনন্দ-উৎসব পালন) করতাম। মহানবী (ছাঃ) বললেন, ‘এ দু’দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদের জন্য উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা’। [আবুদাঊদ, গৃহীতঃ মুখতার লিল হাদীছ, পৃঃ ৪৪২; মিশকাত হা/১৪৩৯]
শরী’আতের দৃষ্টিতে অন্যান্য উৎসবঃ
‘ঈদুল আযহা’ ও ‘ঈদুল ফিতর’ ব্যতীত ইসলামে অন্য কোন নবাবিষ্কৃত ঈদের স্থান নেই। তেমনি দেশীয় সংস্কৃতির নামে অন্য কোন উৎসব যেমন জাতীয় দিবস, জন্মবার্ষিকী, বিপ্লব দিবস, স্বাধীনতা উৎসব সবই বিদ’আত। ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, ‘শারঈ ঈদের অনুসরণ (পালন) ওয়াজিব। কিন্তু নতুন উদ্ভাবিত ঈদের অনুসরণ করা যাবে না’। [আল-মুখতার লিল হাদীছ, পৃঃ ৪৪২]
শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছাইমীন বলেন, ‘হে মুসলিম সমাজ! মুশরিক ও বিদ’আতীদের ঈদ আমাদের ঈদ নয়; বরং আমাদের ঈদ তিনটি; সাপ্তাহিক ঈদ অর্থাৎ জুম’আহ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। এই তিনটি ছাড়া ইসলামে অন্য কোন ঈদ নেই। জন্মবার্ষিকী, যুদ্ধ জয়, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণোত্তর অভিষেক অনুষ্ঠান প্রভৃতি উৎসবের কোন স্থান ইসলামে নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীগণের নিকটে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন অথচ তাঁরা মহানবী (ছাঃ)-এর জন্মবার্ষিকী পালন করেননি। বদর, ইয়ারমুক, ক্বাদেসিয়াসহ অন্যান্য বহু যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয়েছিল, কিন্তু সেদিনকে তাঁরা উৎসবের দিন হিসাবে গ্রহণ করেনি। হযরত আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী (রাঃ) ছিলেন মুসলমানদের নিকটে সর্বাধিক সম্মানিত খলীফা। অথচ তাঁদের খেলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার দিনকে কেউ ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেনি। যদি এই ধরনের বিষয়কে উৎসব হিসাবে গ্রহণ করা উত্তম হ’ত, তাহ’লে তাঁরাই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন, যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবী ও আইম্মায়ে মুসলিমীনের মধ্যে ইলম ও আমলে আমাদেরকে অতিক্রম করে গেছেন। [তদেব, পৃঃ ৪৪২-৪৩]
নাছারাদের (খৃষ্টান) কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করাও মুসলমানদের জন্য হারাম এবং জঘন্যতম পাপাচার। সুতরাং খৃষ্টান বা কোন কাফেরদের উৎসবে বাণী প্রদান, উপঢৌকন দান ও কর্ম বিরতি দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে অংশগ্রহণও হারাম। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ্র শত্রুদের উৎসব তোমরা পরিহার কর’। [তদেব]
নিজেকে পরিশুদ্ধ ও পূত-পবিত্র করতে পেরেছে, তাদের জন্যই এই ঈদের আনন্দ। এ আনন্দের হক্বদার তারাই, যারা আল্লাহ্র আযাবের ভয়ে রামাযানের ছিয়াম পালনের পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগীতে মশগূল ছিল। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ্র আদেশ অনুযায়ী ছিয়াম পালন করতঃ নিজেকে কলুষমুক্ত করতে পারল না, পারষ্পরিক ভেদ-বৈষম্য ভুলে একে অপরের আপন হ’তে পারল না, তাদের ঈদের আনন্দে যোগ দেওয়ার কোন অধিকার নেই। [অগ্রপথিক, জানুঃ ২০০০, পৃঃ ২৭; ঐ, জানুঃ ৯৯, পৃঃ ২৩]
ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
‘ঈদুল ফিতর’ মুসলিম উম্মাহ্র অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সংক্ষেপে নিম্নরূপে ব্যক্ত করা যায়-
(১) ঈদুল ফিতরের দিন মুসলমানদের জাতীয় জীবনে সাম্য-মৈত্রীর যে বাস্তব নিদর্শন প্রকাশিত হয়, তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঐক্যের মধ্যেই সুনিশ্চিত শান্তি সুধা বিদ্যমান।
(২) ইসলাম ত্যাগ ও তিতিক্ষার এবং ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দের যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্তরে সেই শিক্ষার চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
(৩) দীন-দরিদ্র, ইয়াতীম, নিঃস্ব ও ছিন্নমূল মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার যে বাস্তব প্রশিক্ষণ মুমিন রামাযান মাসে অর্জন করেছে, তার সোনালী ফসল দর্শনের দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর-এর দিন।
(৪) ঈদের এই দিনে পারষ্পরিক সম্পর্ক মযবূত ও দৃঢ় করার এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শক্তিশালী করার আকুল আবেদন আসে চতুর্দিক থেকে।
(৫) পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের দীর্ঘজীবী উম্মতের সাথে নেকীর প্রতিযোগিতায় আমরা যাতে পরাজিত না হই, সেজন্য আল্লাহ তা’আলা রামাযানে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ দান করে যে মহা সুযোগ প্রদান করেছেন, তার জন্য দু’রাক’আত বিশেষ ছালাত আদায় করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন ‘ঈদুল ফিতর’।
(৬) ঈদুল ফিতর সামাজিক আদব-ক্বায়দা ও শৃংখলাবোধ শিক্ষা দেয়।
(৭) মানব স্রষ্টা আল্লাহ্র আইন পার্থিব জীবনে মেনে চললে ইহকালের ন্যায় পরকালেও এরূপ আনন্দময় জীবন ও প্রশান্তি লাভ করা যাবে, তার বাস্তব জ্ঞান দান করে ঈদুল ফিতর।
(৮) রামাযানের স্পর্শ পেয়েও মানুষের যে অংশ পুরোপুরি কলুষমুক্ত হয়নি, ঈদুল ফিতর সেই অংশের কলুষতা মুক্ত করে সমাজকে সজীব করে তোলে।
(৯) ঈদুল ফিতর মানুষকে বিনয়ী, নম্র ও হৃদয়বান করে তোলে। যেন ঈদের প্রভাব থেকেই মানুষ অপরের সুখে সুখী হবার তাকীদ অন্তরে অনুভব করে। ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা এবং বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির প্রাণপ্রবাহে তাদের হৃদয়-মন ভরে যায়। স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসার সাথে সাথে তারা যেন সৃষ্টির সাথেও সদ্ব্যবহার করতে পারে, যেন সৃষ্টিকে ভালবেসে সন্তুষ্ট করতে পারে।
বস্তুতঃ নিছক এক দিনের হৈচৈ ও মাতামাতির মধ্যেই ঈদের সার্থকতা নিহিত নয়; বরং প্রত্যেক ব্যপারে পরিচ্ছন্ন মন ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়াতেই ঈদ উৎসবের সার্থকতা ও সফলতা। [মাহে রামাযানের শিক্ষা ও তাৎপর্য, পৃঃ ৫৪-৫৫]
ঈদুল ফিতরের প্রকৃত তাৎপর্য হ’ল- ব্যক্তি জীবনের নানাবিধ কুপ্রবৃত্তি বা নফসানিয়াতের দমনের সাথে সাথে নানা প্রকার দান ও দাক্ষিণ্যের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো। রামাযানে মাসব্যাপী ছিয়াম সাধনার দ্বারা মানুষ যে শিক্ষা লাভ করেছে, দান-খয়রাত হচ্ছে তার প্রায়োগিক প্রমাণ। কাজেই ঈদুল ফিতরে ‘ছাদাক্বাতুল ফিতর’ আদায় করার পাশাপাশি অন্যান্য দান, ছাদাক্বাহ এবং আপনার ব্যক্তিগত জীবনের সমূহ কুপ্রবৃত্তির উৎসারণ করার সাধনার মধ্যেই ছিয়াম পালনের সফলতা। আর এরই সার্থকতার প্রমাণ হচ্ছে ঈদুল ফিতর। [ইসলাম ও মানবতাবাদ, পৃঃ ৮২]
ঈদুল ফিতরের দিনে আমাদের করণীয়ঃ
ঈদের দিনে আনন্দের পাশাপাশি মুসলমানদের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হ’লঃ
(১) তাকবীর পাঠ করাঃ রামাযান মাসের শেষ দিন সূর্যাস্তের পর অর্থাৎ ঈদের রাত্রি থেকে শুরু করে ঈদের ছালাত আদায় পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। আল্লাহ বলেন,
وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
‘যাতে তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার জন্য তোমরা আল্লাহ্র মহত্ত্ব বর্ণনা কর। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও’ (বাক্বারাহ ১৮৫)
তাকবীরের শব্দসমূহ হচ্ছে
( الله أكبر الله أكبر لا إله إلا الله، الله أكبر الله أكبر ولله الحمد ).
পুরুষের জন্য ঊচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলা সুন্নাত। তবে মহিলারা নিঃশব্দে তাকবীর বলবে (বুখারী ও আহমাদ)। [আদদুরূসুর রামাযানিয়াহ (রিয়াদঃ মুয়াসসাসাতুল হারামাইন আল-খাইরিয়াহ, ১৪১৯হিঃ), পৃঃ ১৮৪; মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছাইমীন, মাজালিসু শাহরি রামাযান (রিয়াদঃ মারকাযুদ দিরাসাত ওয়াল ই’লাম দারু ইশবীলিয়া, ১৯৯৬ই/১৪১৬ হিঃ), পৃঃ ১৭২; আল-মুখতার লিল হাদীছ, পৃঃ ৪৩৯-৪০]
(২) খেজুর খাওয়াঃ ছালাতের জন্য ঈদগাহের দিকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে ৩টি, ৫টি বা তদূর্ধ্ব বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া সুন্নাত। হযরত আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। [তদেব, পৃঃ ৪৪০-৪১; মাজালিসু শাহরি রামাযান, পৃঃ ১৭২-৭৩; আল-ফিক্বহুল মানহাজী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২২৮; আদ-দুরূসুর রামাযানিয়াহ, পৃঃ ১৮৫]
(৩) সজ্জিত হওয়াঃ পুরুষের জন্য সুন্নাত হ’ল গোসল করে, সুন্দর পোশাক পরিধান করে, সুগন্ধি মেখে, সুসজ্জিত হয়ে ঈদগাহ অভিমুখে রওয়ানা হওয়া। মহিলারা সুসজ্জিত হয়ে এবং সুগন্ধি মেখে সৌন্দর্য প্রদর্শণী করে বের হবে না। বরং তারা পর্দা সহকারে বের হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন ‘তার অন্য বোন যেন তাকে স্বীয় চাদর পরিধান করায়’। [তদেব, আল-মুখতার লিল হাদীছ, পৃঃ ৪৪১; মাজালিসু শাহরি রামাযান, পৃঃ ১৭৩]
(৪) ঈদগাহে গমনঃ ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং ভিন্ন পথে ফিরে আসা সুন্নাত। হযরত জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেন, মহানবী (ছাঃ) ঈদের দিন পথ পরিবর্তন করতেন (বুখারী)। [আল-ফিক্বহুল মানহাজী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২২৮]
(৫) ছালাত আদায় করাঃ মহানবী (ছাঃ) নারী-পুরুষ সবাইকে ঈদের দিন ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহিলাদের ঈদের ছালাতে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ মর্মে হাদীছে আছে,
‘হযরত উম্মে আত্বিইয়া (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে ঈদের মাঠে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন’ (বুখারী)। [আল-মুখতার লিল হাদীছ, পৃঃ ৪৪০; মাজালিসু শাহরি রামাযান, পৃঃ ১৭২; আদ-দুরূসুর রামাযানিয়া, পৃঃ ১৮৫]
ঈদগাহে জামা’আতবদ্ধ হয়ে প্রথম রাক’আতে ৭ ও পরের রাক’আতে ৫টি তাকবীর দিয়ে [আল-ফিক্বহুল মানহাজী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২২৪-২৫] দু’রাক’আত ছালাত আদায় করতে হবে। [তদেব, পৃঃ ২২৫] অতঃপর ইমাম ছাহেব শরী’আতের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ সম্বলিত খুৎবা প্রদান করবেন। হাদীছে আছে,
‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদগাহে গিয়ে সর্বপ্রথম ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি মানুষের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। এমতাবস্থায় লোকজন তাদের সারিতে বসে থাকত। মহানবী (ছাঃ) তাদের উপদেশ দিতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের নির্দেশ দিতেন। যদি তিনি কোথাও কোন সৈন্যদল পাঠাতে ইচ্ছা করতেন, তাহ’লে পাঠাতেন। অথবা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দেশ দিতে চাইলে নির্দেশ প্রদানের পর (স্বীয় গৃহে) প্রত্যাবর্তন করতেন’ (বুখারী ও মুসলিম)। [তদেব, পৃঃ ২২২]
(৬) ছাদাক্বাতুল ফিতর প্রদানঃ ঈদুল ফিতরের দিনে অন্যতম প্রধান করণীয় হচ্ছে, ফিতরা প্রদান করা। নর-নারী, ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম সকলের উপর ফিতরা আদায় করা ফরয। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ,
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযানের ফিতরা একছা’ খেজুর অথবা যব প্রদান করা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ-মহিলা, ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম সকলের উপর ফরয করেছেন’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ)। [আল-মুখতার লিল হাদীছ, পৃঃ ৪০৪; মাজালিসু শাহরি রামাযান, পৃঃ ১৫৯; আদ-দুরূসুর রামাযানিয়াহ, পৃঃ ১৮০]
প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির পক্ষ থেকে একছা’ (প্রায় আড়ায় কেজি) পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য ফিতরা হিসাবে প্রদান করতে হবে। [আল-ফিক্বহুল মানহাজী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৩১] হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন,
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে এক ছা’ খাদ্য দ্রব্য ফিতরা হিসাবে প্রদান করতাম। আর আমাদের খাদ্য দ্রব্য ছিল যব, কিসমিস, পনীর এবং খেজুর (বুখারী)। [তদেব; আল-ফিক্বহুল মানহাজী, ১ম খণ্ড, পৃঃ ২৩০-৩১]
সুতরাং মূল্য বা অন্যকোন দ্রব্য দানে ফিতরা আদায় হবে না। [তদেব, পৃঃ ২৩১; আদ-দুরূসুর রামাযানিয়াহ, পৃঃ ১৮৩; মাজালিসু শাহরি রামাযান, পৃঃ ১৬১]
ঈদের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করতে হবে। হযরত ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘মহানবী (ছাঃ) ঈদের মাঠে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী)। তবে ঈদের ১/২ দিন পূর্বে প্রদান করাও বৈধ। হযরত নাফে’ (রাঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) ঈদুল ফিতরের ১/২ দিন পূর্বে ফিতরা আদায় করতেন (বুখারী)। কিন্তু ঈদের ছালাতের পরে ফিতরা দিলে, তা ফিতরা হিসাবে কবুল হবে না; বরং তা হবে সাধারণ দান। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে ‘যে ব্যক্তি ছালাতের পূর্বে ফিতরা আদায় করবে তার ফিতরা কবুল হবে। আর যে ছালাতের পরে দিবে সেটা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে (আবুদাঊদ ও ইবনু মাজাহ)। [তদেব, পৃঃ ১৬৩; আদ-দুরূসুর রামাযানিয়াহ, পৃঃ ১৮৩; আল-মুখতার লিল হাদীছ, পৃঃ ৪০৭]
ছাদাক্বাতুল ফিতর প্রবর্তনের কারণঃ
(১) দরিদ্রদের প্রতি করুণা এবং তাদেরকে ঈদের দিনে হাত পাতা থেকে বিরত রেখে ধনীদের সাথে তাদেরকেও আনন্দ-উৎসবে শরীক করা। যাতে করে ঈদ হয় সমাজের সকলের জন্য।
(২) ‘ছাদাক্বাতুল ফিতর’-এর মাধ্যমে উদারতা ও সহমর্মিতার মত উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়।
(৩) ছিয়াম পালন অবস্থায় ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতি, অনর্থক কথাবার্তা ও কর্ম এবং পাপ কাজ থেকে ছায়েম (রোযাদার)-কে মুক্ত ও পবিত্র করার জন্যই ছাদাক্বাতুল ফিতর-এর বিধান প্রবর্তিত হয়েছে। হাদীছে এসেছে,
অর্থঃ হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিয়াম পালনকারীকে ছিয়াম অবস্থায় সংঘটিত অশ্লীলতা, অনর্থক কর্ম থেকে পবিত্র করার জন্য এবং দরিদ্রদের খাদ্য দানের জন্য ফিতরা ফরয করেছেন’ (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, দারাকুৎনী, হাকেম)।
(৪) ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায়ের মাধ্যমে রামাযান মাসের ছিয়াম পূর্ণরূপে পালন, রাত্রির ইবাদত সমাপন এবং অন্যান্য সৎ আমল সহজ করে দিয়ে আল্লাহ যে সুযোগ দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায় করা হয়। [তদেব, পৃঃ ৪০৫; ড. ইউসুফ আল-কারযাভী, ফিক্বহুয যাকাত (বৈরুতঃ মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৯৯৬ ইং/১৪১৬ হিঃ), ২য় খণ্ড, পৃঃ ৯২১-২৩; আদ-দুরূসুর রামাযানিয়াহ, পৃঃ ১৮১; মজালিসু শাহরি রামাযান, পৃঃ ১৬০-৬১]
ঈদুল ফিতরের শিক্ষাঃ
অখণ্ড মুসলিম মিল্লাত নানা দল ও মতে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে পারষ্পরিক মায়া-মমতা ও ভালবাসা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ক্রমশঃ হ্রাস পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে পারষ্পরিক ঘৃণা, হিংসা-বিদ্বেষ ও কলহ-বিবাদ। ঈদুল ফিতর যাবতীয় হিংষা-দ্বেষ ও কলহ-বিবাদ ভুলে গিয়ে ঐক্য ও সংহতির বন্ধন সুদৃঢ় করতে শিক্ষা দেয়। দল ও মত নির্বিশেষে ঈদগাহে সমবেত হয়। একই কাতারে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছালাত আদায় করে। ঈদের ছালাতের এই মহামিলন থেকে মুসলমানগণ ‘একই উম্মাহ’ হিসাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা লাভ করে থাকে। ঈদগাহে মহামিলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়াই ঈদুল ফিতরের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। [অগ্রপথিক, জানুঃ ২০০০, পৃঃ ৩৩]
উপসংহারঃ
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, মুসলিম জাতির আনন্দ-উৎসব ‘ঈদ’ শুধু অনুষ্ঠান সর্বস্ব নয়; বরং ঈদ পালিত হয় আনন্দ ও কর্মের সমন্বয়ে। এটা অনন্য ভাবধারা ও পৃথক জৌলুস নিয়ে পালিত হয়। তাৎপর্য, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং আচরণে মুসলিম উম্মাহ্র এ ঈদ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। পূত-পবিত্র, ক্লেদ ও খাদ বিমুক্ত অনাবিল পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় মুসলিম মিল্লাতের ঈদ। এ উৎসব ধর্মের নির্মল সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে; থাকে পুণ্যকর্মের সংযোগ। এতে থাকে না কোন হৈ হুল্লোড়, পাপাচার ও ব্যভিচার।
প্রত্যেক মুসলিমকে তাই ঈদুল ফিতরের এই দিনটির মত বছরের প্রতিটি দিন সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে অতিবাহিত করার চেষ্টা করা উচিত। এ দিনের মতই সারা বছর নির্ঝঞ্ঝাট জীবন-যাপনের অঙ্গিকারাবদ্ধ হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব, তাৎপর্য, শিক্ষা অনুধাবন করতঃ সে মোতাবেক চলার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন-
‘দীন কাঙ্গালের ঘরে ঘরে আজ দেবে যে সব তাগিদ
কোথা সে মহান শক্তি-সাধক আনিবে যে পুনঃ ঈদ?
ছিনিয়া আনিবে আসমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি
ফুরাবে না কভু যে হাসি জীবনে, কখনো হবে না বাসি।
সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?
রোজা এফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে’।
**** বি,এ (অনার্স), এম, এ; বর্ষাপাড়া, হিরণ, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ ।