ইসলামী শিক্ষা ও মুসলিমের চরিত্র

সরকারী কোষাগারের সংরক্ষনের দায়িত্ব সরকারেরঃ
একবার আমীরুল মুমিনীন উমার বিন খাত্তাব রাঃ তার ছোট সন্তানের হাতে ব্রোঞ্জের এক টুকরা দেখলেন যার কোন মূল্য ছিল না। (খুবই সামান্য বিষয় ছিল)
উমার রাঃ জিজ্ঞেস করলেনঃ কাসার এই টুকরো তোমাকে কে দিল?
সে উত্তর দিলঃ আব্বাজান ! আমাকে এই টুকরো কোষাগারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি দিয়েছে।
আমীরুল মুমিনীন নিজের ছেলেকে নিয়ে বাইতুল মালের দায়িত্বশীলের কাছে গেলেন এবং তাকে বললেনঃ এই ব্রোঞ্জের টুকরো উমারের সন্তানকে দেয়ার তোমাকে কে অনুমতি দিয়েছে?
সে উত্তর দিলঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমি কোষাগারের সম্পদের হিসাব করলাম যাতে সোনা ও রূপা ছিল। সেই সবের মধ্যে এক টুকরো ব্রোঞ্জ পেলাম। সুতরাং আমি তা আপনার সন্তানকে দিয়ে দিলাম।
এটা শোনামাত্র উমারের রাঃ চেহারা লাল হয়ে গেল এবং বললেনঃ তোমার মার বুক খালি হয়ে যাক! তুমি কি আর কোন লোক পেলে না, যে হারাম খায়। এর জন্যে কি উমারের সন্তানকেই পেলে? এটা যেখানে ছিল সেখানে রেখে দাও। (সূত্রঃ সোনালী ফায়সালা, পৃষ্ঠা ১১০ )
হে মুসলিম ভাই ও বোন! এই হল ইসলামের শিক্ষা। দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হলে শাসকের চরিত্র এমন হওয়া উচিত।

এবার বুঝুন মুসলিম দাবী করেও কেন শুধু গণতন্ত্রের কথা বলে একবারও আল্লাহর বিধান দিয়ে শাসনের কথা বলে না!!!!!! কত টাকা জানি বিদেশে পাচার করেছে????

অন্তিম ইচ্ছা! 
নাজুক নামের এক বাদশাহের কাছে এক ব্যক্তিকে হাজির করা হল। তাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আর কিছুক্ষণ পর তার গর্দান উড়িয়ে দেওয়া হবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তোমার কি কোন শেষ ইচ্ছা আছে?
সে বললঃ পেট ভরে খাবার খেতে ইচ্ছা হচ্ছে।
সুতরাং তার জন্য খাবার পরিবেশন করা হলে সে খাওয়ার সময় হাসছিল।
সিপাহীরা তাকে বললঃ খুবই আশ্চর্যের বিষয় তোমাকে কিছুক্ষণ পর হত্যা করা হবে, অথচ তুমি হাসছ?
সে বলতে লাগলঃ
তা তখন দেখা যাবে, হয়ত তখন আমি মুক্তিও পেতে পারি।
এখনই সে এমন কথা বলছিল এমন সময় হৈ চৈ শোনা গেল। লোকজন বলল, বাদশাহ মৃত্যুবরণ করেছেন। অতঃপর সেই ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হল।
সূত্রঃ সোনালী ফায়সালা, পৃষ্ঠা ২০৯।

এই ঘটনা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ । কোন সৃষ্টির ক্ষমতা নেই আল্লাহ তায়ালার বিধানের উপর হস্তক্ষেপ করার। আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন তাকে কেউ ধংস করতে পারে না। সবাই ভেবেছিল বাদশাহ বেঁচে থাকবে আর ওই ব্যক্তির গর্দান উড়ে যাবে! কিন্তু তা কি হয়েছিল? না। যার গর্দান উড়ে যাবে সেই বেঁচে ছিল আর বাদশাহ ই মরে ছিল।
কার কখন কোথায় মৃত্যু হবে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না। তাহলে, কেন এত ক্ষমতার মোহ! এত অহংকার???? আসুন, আমরা তাওবাহ করি । কুফর শিরক আর বিদআত ছেড়ে দিয়ে কুরআন ও সহিহ হাদিসের অনুসরণ করি।
কুফর শিরক আর বিদআত ধংস করে ইসলামের আলো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেই।

সুলতান মাহমুদের ন্যায়বিচার
সুলতান মাহমুদের এক ভাগ্নে ছিল। যে এক বিবাহিত মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে। তার স্বামী কত দরবারে ফরিয়াদ করল, কত বিচারক, মন্ত্রী ও আমীরের কাছে গেল; কিন্তু কেউ তার কথা শুনেনি। শেষ পর্যন্ত সে সাহস করে নিজেই বাদশাহর কাছে এসে সাহসিকতার সাথে দুঃখের কাহিনী বর্ণনা করল। বাদশাহ তাকে শান্তনা দিয়ে বললেনঃ
আমি তোমার জন্য ন্যায় বিচার করব; কিন্তু তুমি এই বিষয় গোপন রাখ। এরপর সে যখন তোমার বাড়ী যাবে সোজা তুমি আমার কাছে চলে আসবে।
বাদশাহ দারোয়ানকেও বলে দিলেন, যখন এই ব্যক্তি আসবে সেই মুহূর্তে আমাকে জানাবে। আমি যে কোন অবস্থায় থাকি না কেন।
এরপর যখন শাহজাদা রুটিন অনুযায়ী সেই ব্যক্তিকে তার বাড়ী থেকে বের করে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বসল, তখন সে বাদশাহকে জানিয়ে দিল। বাদশাহ নিজে আসলেন এবং সত্য তার দু’চোখে দেখল। এরপর তিনি তার তরবারি দিয়ে নিজের ভাগ্নের মাথা এক আঘাতে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন এবং কিছুক্ষণ পর পানি চাইলেন এবং দুই রাকআত নফল সলাত আদায় করলেন।

ইমাম ওয়ালিউল্লাহ দেহলবী হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ গ্রন্থে বলেছেনঃ অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় যে, মানুষ নির্দিষ্ট কোন ইমামের মাযহাবের খালেস তাকলীদ, তার ফেকাহশাস্র অধ্যায়ন কিংবা তার উক্তি বর্ণনা করার জন্য হিজরি চার শতাব্দি পর্যন্ত কোন বৈঠক করেনি। এই উত্তম শতাব্দীগুলোর পরে কতেক মানুষের আগমন ঘটে তারাই ডানে- বামে গেলো এবং পিঁপড়ার মতো ধীরে ধীরে তাকলীদ তাদের অন্তরে প্রবিষ্ট হলো,আর তারা বুঝতেই পারলো না। তিনি শাইখ ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম থেকে নকল করে বলেছেন যে, বড় আশ্চর্যজনক বিষয় এই যে, ফাকিহ মুকাল্লিদগণ তাদের ইমামের এমন দুর্বল দলীল সম্পর্কে অবহিত হচ্ছে যার জন্য কোন সমর্থনও পায় না তবুও তারা তার তাকলীদ করছে।উদ্দেশ্য তার তাকলীদের উপর অটল থাকা।আর ছেড়ে দেয়া হচ্ছে এমন ব্যক্তিকে যার কথার দলীল হচ্ছে কিতাব ওঁ সুন্নাহ এবং তাদেরই মাযহাবের সহিহ কিয়াসসমুহ; শুধু তাই নয় বরং তারা কৌশল অবলম্বন করছে কিতাব-সুন্নাহের প্রকাশ্য অর্থগুলো বাদ দিয়ে বাতিল তা’বীল করার উদ্দেশ্য তার ইমামের পক্ষ থেকে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা।
শাইখ ইযযুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম বলেছেন, মানুষ সর্বদা সে আলেমকে জিজ্ঞাসা করতো যার নিকট সুবিধা পেতো। এতে ছিলো না কোন মাযহাবের নির্দিষ্টকরণ , না ছিলো কোন প্রশ্নকারীর প্রতি ইনকার। এ করতে করতে মাযহাবগুলোর এবং তাতে পক্ষপাতিত্বকারী মুকাল্লিদগণের আবির্ভাব ঘটে। তাদের মধ্যে কেউ তাঁর ইমামকেই অনুকরণ করে যদিও তাঁর মাযহাবটি দলীলের ধারে-পাশে নেই। উদ্দেশ্য তাঁর ইমামের কথিত উক্তিতে তাকলীদ করা। মনে করে সে যেন প্রেরিত রাসুল। এটাও সত্য এবং হকের নাগালের অনেক বাইরে; জ্ঞানী মহোদয়গণের মধ্যে কেউ তা পছন্দ করে না।
[ সূত্রঃ মিন আত্বইয়াবিল মানহি ফী ইলমিল মুসত্বালাহ, পৃষ্ঠা ১৩৮]

হে মুসলিম ভাই ও বোন! উপরের কথায় বুঝা যাচ্ছে যে, জ্ঞানীগণ তাকলীদ পছন্দ করে না, তাঁর মানে মূর্খরা তাকলীদ করে। এখন, আপনিই সিদ্ধান্ত নিন , আপনি কাদেরকে অনুসরণ করবেন। জ্ঞানীগণের? নাকি মূর্খদের?????

ইমাম মালেক রহঃ বলেন, যেকোন ব্যক্তির উক্তিতে সুযোগ আছে তা গ্রহণ করা যায় আবার প্রত্যাখ্যানও করা যায়; কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উক্তির ক্ষেত্রে তা একেবারেই অচল।
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন ‘ সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘যদি দেখো যে আমার কথা হাদীসের খেলাফ হচ্ছে তাহলে আমার কথাকে দেয়ালে নিক্ষেপ করো।’
আরো বলেছেন যে,‘মুসলমানগণ এ কথার উপর ঐক্যমত পোষণ করেছে যে,যে ব্যক্তির নিকট রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে তাঁর জন্য হালাল নয় যে, কারো কথা শুনে তা ছেড়ে দিবে।’
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ তাঁর কোন ছাত্রকে বলেন, তোমরা আমার তাকলীদ করো না, ইমাম মালেকেরও না,ইমাম আওযায়ীরও না, ইমাম নাখয়ীরও না, না তাদের ছাড়া অন্য কারো। বরং যেখান থেকে তারা আহকাম গ্রহণ করেছেন তোমরাও সেখান থেকে তা গ্রহণ করো। আর তা হচ্ছে কিতাব ও সুন্নাহ।
[ সূত্রঃ মিন আত্বইয়াবিল মানহি ফী ইলমিল মুসত্বালাহ, পৃষ্ঠা ১৩৬]

অনুলিখন ও ব্যাখ্যা : মাকসুদ বিন আমাল

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button