যেমন কর্ম তেমন ফল

ঘটনাটি একটু লম্বা হলেও পড়ুন ! শিক্ষণীয় বিষয় আছে

এটি ছিল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। তখন রেল বা মোটরযান ছিলনা। সহযাত্রীদের সাথে খালেদ চলছে সিরিয়ার পথে। ইরাকের পণ্য সিরিয়ায় বিক্রি করে সিরিয়ার পণ্য ইরাকে আনবে। পিতার ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করে খালেদ নিয়মিত ইরাক ও সিরিয়ায় যাতায়াত করতে লাগল।
একবার সিরিয়া থেকে ইরাকে ফেরার পথে এক সুন্দরী যুবতীর দিকে তার দৃষ্টি পড়ল। তখন সন্ধ্যা বেলা। নেই কোন জনমানব। একটু পরেই সূর্য পশ্চিমাকাশে উধাও হবে। যুবতীর রূপ-সৌন্দর্য্য দেখে খালেদ নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে শয়তানের পাকানো রশিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলল।
যুবতীকে জড়িয়ে ধরে একটি চুম্বন করল। এরপরই যুবতীটি তার আক্রমণ থেকে পালিয়ে গেল। সেও পিছনে চলে আসল এবং কতৃকর্মের জন্য লজ্জিত হল।
এই ঘটনা গোপন রইল। সহযাত্রীদের কেউ তা জানতে পারেনি। ঐ দিকে তাদের বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে গেল। তাদের বাড়িতে একটি যুবক যাতায়াত করত। মিঠা পানি সরবরাহ করাই ছিল যুবকটির প্রধান কাজ। প্রতিদিনের মতই একদিন যুবকটি পানির কলসী নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে ঘরের দরজায় করাঘাত করল। কলসী ভর্তি পানি বাড়িতে রেখে খালী কলসী নিয়ে ফেরত যাবে। খালেদের বোন দরজা খুলে খালি কলসী ঘরের বাইরে রাখল। যুবকটি পানি ভর্তি কলসীটি রেখে খালী কলসী নিয়ে ফেরত যাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ পিছনে ফেরত এসে খালেদের বোনকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করল। এতটুকু করেই যুবক চলে গেল। মেয়েটি লজ্জায় মস্তক অবনত করে গৃহে প্রবেশ করল।
খালেদের পিতা মাহমুদ ঘরের জানালা দিয়ে তাঁর একমাত্র কন্যার সাথে সাধারণ একটি কাজের লোকের এই কান্ড দেখে ফেললেন। সাথে সাথে তাঁর কণ্ঠনালীর গভীর থেকে শুধু উচ্চারিত হল لا حول ولا قوة إلا بالله (লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)/ যুবকটি-কে তিনি কিছুই বলেন নি। যেমন বলেন নি তাঁর মেয়েকে। এই দৃশ্য দেখে তিনি হতাশ হলেন। লজ্জায় অপমানে নিঃশব্দে ক্রন্দন করতে থাকলেন। তাঁর মাথায় হাজারো প্রশ্ন। কেন এমনটি হল? কাজের ছেলেটি বহুদিন যাবৎ তার বাড়িতে পানি দিয়ে যায়। সে প্রতিবেশীদের বাড়িতেও তাই করে। কেউ কোন দিন তার চরিত্রের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেনি। কোন দিন সন্দেহ জনক কিছু চোখে পড়েনি। কোন মহিলার দিকেও কখনও তাকিয়ে দেখেনি। তার মেয়েটিও স্বীয় চরিত্রের হেফাজত করায় ত্র“টি করেনা। বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে পা বাড়ায়না। কোন পুরুষের দিকে তাকিয়েও দেখেনা। আজ কেন এমনটি হল?
এমনি হাজারো প্রশ্ন মাহমুদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। খালেদের আগমণের পথ পানে চেয়ে তাঁর দিনাতিপাত হতে থাকল। মনের দুঃখ-বেদনা মনের গহীন কোঠায় লুকায়িত রইল। তিনি তো কোন দিন এমনটি করেন নি যে, তাকে অনুরূপ ফল পেতে হবে। স্মৃতি পটে অতীত জীবনের প্রতিটি পাতা উল্টাচ্ছেন। কোথাও এমন কিছু পাচ্ছেন না, যা তাকে এহেন জ্বালাময়ী বেদনায় নিপতিত করতে পারে। আল্লাহর ভয় এবং অনুপম চারিত্রিক গুণাবলী ধারণ করেই তিনি যৌবন পার করেছেন। যৌবনে এমন কিছু করেন নি, যা তাকে পরিণত বয়সে পীড়া দিতে পারে।
কয়েক দিন পর ব্যবসায় লাভবান হয়ে এবং সুস্বাস্থ নিয়ে খালেদ ইরাকে ফেরত আসল। পুত্রের নিরাপদে ফেরত এবং ব্যবসায় লাভবান হওয়ার প্রতি তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ব্যবসায়ের হাল অবস্থা, সফরের সুবিধা অসুবিধা কিংবা তার সহযাত্রীদের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন নেই।
সরাসরি সরল মনে যেই প্রশ্নটি করলেন, তা হল সিরিয়া থেকে ফেরার পথে তুমি কি করেছ? খালেদ তার ব্যবসায়িক সফরের ছোট-খাট অনেক ঘটনাই বলতে চাইল। যখনই কোন ঘটনা বলতে যায়, পিতা থামিয়ে দেন এবং জিজ্ঞেস করেনঃ কোন যুবতীর সাথে তোমার অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছে কি? কোন মহিলার শরীরে তোমার হাত পড়েছি কি? তুমি কি কোন মহিলাকে চুম্বন করেছ? করে থাকলে তা কোথায় ও কখন?
খালেদ দৃঢ়তার সাথে তা অস্বীকার করল। তার চেহারা লাল হয়ে গেল। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কলঙ্ক গোপন করতে চাইল। কিন্তু পর্বত সাদৃশ মনোবল এবং জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অসাধারণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পিতার সামনে প্রকৃত ঘটনা গোপন করতে গিয়ে খালেদের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হল। পরিশেষে মূল ঘটনা স্বীকার করতে বাধ্য হল।
পিতা ও পুত্রের মাঝে দীর্ঘক্ষণ এক অনাকাঙ্খিত নিরবতা বিরাজ করল। মাথা নীচু করে পিতার সামনে খালেদ পাথরের মত নিরব হয়ে বসে রইল। পিতার মুখেও নেই কোন রব। অনেক কথাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু তার ক্ষুরধার জবানীতে বার বার অজ্ঞাত কারণে কথা আটকে যাচ্ছে। এভাবে বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হল।
অবশেষে মনকে শক্ত করে স্বীয় পুত্র খালেদকে লক্ষ্য করে তিনি বলতে লাগলেনঃ দেখ খালেদ! তুমি যখন সিরিয়ার পথে বের হয়ে যাও, তখন তোমাকে মাত্র একটি উপদেশ দিয়েছিলাম। তোমাকে বলেছিলাম, সফরে তোমার একমাত্র বোনের ইজ্জত রক্ষা কর, যেমনটি করে থাক স্বদেশে। কিন্তু তুমি তা করোনি।
অতঃপর তিনি আসল ঘটনা খুলে বললেন। বললেনঃ কিভাবে তাদের ঘরের খাদেম তার সম্মান ও মর্যাদার বস্তুতে আঘাত করেছে এবং তার জীবনকে কলঙ্কিত করেছে!! আরও খুলে বললেন যে, তুমি সিরিয়া থেকে ফেরার পথে এক যুবতীকে যেই চুম্বন করেছিলে, এটিই হচ্ছে সেই ঋণ, যা তোমার বোনের দ্বারা পরিশোধিত হল।
যেমন কর্ম তেমন ফল। আরবী কবি ঠিকই বলেছেনঃ من يَزن يُزن به ولو بجداربيته “যে লোক যেনা করবে, তার সাথেও তা করা হবে। তাকে পাওয়া না গেলে কমপক্ষে তার ঘরের দেয়ালের সাথেই তা করা হবে”/ কেননা যেমন কর্ম তেমন ফল। এটি হচ্ছে সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর অলংঘনীয় নীতি, যার কোন পরিবর্তন হবেনা। যে যতটুকু অন্যায় করবে, তাকে সে পরিমাণ ফলাফল ভোগ করতেই হবে। অপর পক্ষে যে নিজেকে হেফাজত করবে এবং পবিত্র রাখবে তার সুফলও ভোগ করবে। এতেও কোন পরিবর্তন হবেনা।
এবার বৃদ্ধ পিতা বলতে লাগলেনঃ দেখ খালেদ আমি জানি যে, জীবনে আমি কোন দিন এমন কর্মের চিন্তা করিনি। তিনি তাঁর কন্যা ও পুত্রের প্রতি দয়ার স্বরে এবং নতুন করে উপদেশ দিতে শুরু করলেন। বললেনঃ আমি এ পর্যন্ত আমার সম্ভ্রম ও সম্মান রক্ষা করেছি। মানুষের ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার মাধ্যমেও নিজের সম্মান রক্ষা করার হাতিয়ারকে আরও মজবুত করেছি। যৌবনে কখনও খেয়ানত করিনি, অশ্লীলতার ধারেও যাইনি। এর মাধ্যমে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেছি। যেমনটি করেছি আমার নামায, যাকাত এবং রোযাসহ অন্যান্য কর্মে।
ঘরের খাদেম যখন তোমার একমাত্র বোনের শরীরে হাত দিল, তখন আমি নিশ্চিত বিশ্বাস করে নিয়েছি যে, তুমিও কারও না কারও বোনের সাথে অনুরূপ আচরণ করেছ। তোমার বোন তোমার সেই ঋণ হুবহু পরিশোধ করেছে। এতে কোন বাড়তি বা কমতি হয়নি। একটি চুম্বনের বিনিময়ে মাত্র একটি চুম্বন। তুমি যদি আরও কিছু করতে, আরও কিছু হত। এটিই স্বাভাবিক, এটিই নীতি। যেমন কর্ম তেমন ফল। আল্লাহর নীতিতে কোন পরিবর্তন নেই।
তথ্যসূত্রঃ (আরবী সাহিত্যের গল্প)

তাই, যেইসব ভাইয়েরা অন্যের বোনের সাথে দিব্যি ফোন-আলাপ করে যাচ্ছেন আর নেটে চুপিচুপি অন্যের মেয়ের সাথে প্রেমালাপ (chat) চালিয়ে যাচ্ছেন সেসব ভাইয়েরা সাবধান হউন।

 উত্স

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button