শবে বরাত ও প্রাসংগিক কিছু কথা, পর্ব: ০৫ (প্রশ্ন উত্তর)
প্রশ্নঃ শা‘বানের মধ্যরাত্রির পরদিন কি রোযা রাখা যাবে?
উত্তরঃ রামাযানের আগের মাস হিসাবে শা‘বান মাসের প্রধান করণীয় হ’ল অধিকহারে ছিয়াম পালন করা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শা‘বান মাসে সবচেয়ে বেশী রোযা রাখতেন। শেষের দিকে তিনি মাত্র কয়েকটি দিন ছিয়াম ত্যাগ করতেন। যারা শা‘বানের প্রথম থেকে নিয়মিত ছিয়াম পালন করেন, তাদের জন্য শেষের পনের দিন ছিয়াম পালন করা উচিত নয়। অবশ্য যদি কেউ অভ্যস্ত হন বা মানত করে থাকেন, তারা শেষের দিকেও ছিয়াম পালন করবেন। মোটকথা শা‘বান মাসে অধিক হারে নফল ছিয়াম পালন করা সুন্নাত।
আয়েশা (রা.) বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ: لاَ يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يَصُومُ، وَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ قَطُّ إِلاَّ رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ فِى شَهْرٍ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِى شَعْبَانَ. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ وَمُسْلِمٌ.
“নবী করীম (স:) রোযা রাখতেন এবং আমরা ভাবতাম তিনি আর ইফতার করবেন না (রোযাই রাখতে থাকবে), উনি রোযা ছেড়ে দিতেন এবং আমরা ভাবতাম তিনি আর রোযা রাখবেন না। রমাযান মাস ছাড়া আর অন্য কোন পুরা মাস রোযা রাখতে দেখিনি। এবং উনাকে শা’বান ছাড়া অন্য কোন মাসে বেশী রোযা রাখতে দেখিনি। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
অন্য আরেক বর্ণনায় আছে-
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُما قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَمْ أَرَكَ تَصُومُ شَهْرًا مِنْ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ قَالَ ذَلِكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الْأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ. رَوَاهُ ابن ابي شيبة والنسائي والمقدسي وقال اسناده حسن
উসামা বিন যায়েদ (রা.) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে মাসদের মধ্যে কোন মাসে শা’বান ব্যতীত এত বেশী রোযা রাখতে দেখিনা (এটার কারণ কি?)। উত্তর দিলেন, রজব ও রামাযানের মাঝের মাস শা’বান মানুষের আবহেলার একটি মাস। এবং এটা এমন একটি মাস, যে মাসে (আল্লাহ বান্দাদের) আমল আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে পেশ করা হয়, সুতারাং আমি এটা পছন্দ করি যেন আমার আমলগুলি রোযার আবস্থায় পেশ করা হোক। (ইবনে আবি শায়বা ও নাসঈ)
উল্লেখ্য যে, অন্য অনেক হাদিসে বান্দার আমল সোমবার ও বৃহস্পতিবার পেশ করা হয় বলা হয়েছে। এবং উপরোক্ত হাদিসে বলা হল শা’বান মাসে পেশ করা হয়। এর অর্থ হল, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার সাপ্তাহিক আমল পেশ করা হয়, আর শা’বান মাসে বান্দার বাত্সরিক আমল পেশ করা হয়।
উপরোক্ত হাদিসদ্বয়ের প্রেক্ষিতে বলা যায়, কেউ যদি শা‘বান মাসে রোযা রাখেন তবে তা হবে সুন্নাত। শাবান মাসের শেষ দিন ছাড়া বাকী যে কোন দিন রোযা রাখা জায়েয বা সওয়াবের কাজ। তবে রোজা রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহেতু শা‘বান মাসে রোজা রেখেছিলেন তাকে অনুসরন করে রোযা রাখা হচ্ছে।
অথবা যদি কারও আইয়ামে বিদের নফল রোযা তথা মাসের ১৩, ১৪, ১৫ এ তিনদিন রোযা রাখার নিয়ম থাকে তিনিও রোযা রাখতে পারেন। কিন্তু শুধুমাত্র শা‘বানের পনের তারিখ রোযা রাখা বিদ‘আত হবে। কারণ শরীয়তে এ রোযার কোন ভিত্তি নেই।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ পদাঙ্ক অনুসরন করে চলার তৌফিক দিন। আমীন।
আগামী ও শেষ পর্বে আলোচনা করা হবে, “শা’বানের মধ্যরাত্রি উদযাপন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?”