আদর্শ জীবন গঠনে মৌলিক বিশ্বাসের ভূমিকা: রিসালাত

রচনায়: মুহাম্মদ মুফাজ্জল হুসাইন খান

আরবি ‘রিসালাত’ শব্দের অর্থ সংবাদ বা বার্তা বহন। আর রিসালাত হতে রাসূল শব্দের উৎপত্তি. যার অর্থ দূত কিংবা বার্তা বা সংবাদবাহক। শরীয়তের পরিভাষায় যিনি আল্লাহ তা’আলার আদেশ-নিষেধ ও উপদেশ সম্বলিত বাণী বহন করেন তাঁকে রাসূল বলা হয়। ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আ) নবী-রাসূলগণের কাছে আল্লাহ তা’আলার বাণী বহন করে আনতেন। এদিক থেকে আল-কুরআনে তাঁকেও রাসূল বা বার্তাবাহক বলা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যাঁরা নবী-রাসূল হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তাঁদের কাছে কোন কোন সময় জিবরাঈল (আ)-এর মাধ্যম ছাড়াও ওহী বা বার্তা আসতো।

মানব জাতির হিদায়েতের জন্যে যুগে যুগে আল্লাহ তা’আলা তাঁর বাণী ও বিধানসহ যে সকল মহামানবেকে নবী-রাসূল হিসেবে মনোনীত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তাঁদের দুনিয়াতে আসার এ প্রক্রিয়াকে ইসলামের পরিভাষায় রিসালাত বলা হয়। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ) থেকে এবং এর পরিসমাপ্তি ঘটেছে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা)-এর মাধ্যমে।

রিসালাতের প্রয়োজনীয়তা

তাওহীদের পর রিসালাত ইসলামী সমাজের দ্বিতীয় ভিত্তিমূল। মানুষ জন্মগত ও স্বভাবগতভাবেই কাম, ক্রোধ, লোভ ও মোহের বশীভূত। পার্থিব সম্পদ, খ্যাতি, যশ, ক্ষমতা ইত্যাদির আকাঙ্ক্ষা ও লিপ্সা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু পৃথিবীতে এসব সহজলভ্য নয়। যখনই সহজভাবে মানুষ কোন লোভ-লালসা চরিতার্থ করতে না পারে তখন হিংসা বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, নিষ্ঠুরতা, হত্যা, লুণ্ঠন ইত্যাদির আশ্রয় গ্রহণকরে। আবার এসব পাপাচারে লিপ্ত হয়ে মানুষ ক্ষমতার লিপ্সায় পড়ে নিজেকে কোন কোন সময় অতি ক্ষমতাধর মনে করে সমাজে নানা বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ফলে

পৃথিবীতে বা মানব সমাজে নেমে আসে নানা অঘটন ও ধ্বংসলীলা। অত্যাচারী, সীমালঙ্ঘনকারীদের সীমাহীন তাণ্ডবলীলায় সমাজে নিরাপত্তার অভাব ঘটে। মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ভুলে যায়। সমাজের এই চরম দুর্দিনে প্রয়োজন হয়ে পড়ে নবী-রাসূলের। তাই মহান আল্লাহ্ তা’আলা যুগে যুগে মানব জাতিকে সরল-সঠিক পথে আহ্বান জানিয়ে হিদায়েতের জন্যে নবী-রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। নবী- রাসূলগণের আগমনের এ ধারাবাহিকতা চলে এসেছে হযরত আদম (আ) থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত। সকল নবী-রাসূলই তাওহীদের আলোকে মানুষকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করে সমাজ সংস্কার ও কল্যাণ-সমাজ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁরা সকলেই ছিলেন উন্নত চরিত্র, অনুপম জ্ঞান ও আল্লাহ-প্রদত্ত শক্তির অধিকারী। তাঁরা সকলেই ছিলেন সমকালীন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও যুগস্রষ্টা মহামানব।

সকল নবী-রাসূলই ইসলামী সমাজের নবী। মহান শিক্ষক। তাঁরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়, গোত্র, জনপদ ও বিভিন্ন দেশে প্রেরিত হয়েছেন। কোন কোন যুগে একই সময় বহু সংখ্যক নবী-রাসূলও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে আগমন করেছেন এবং সকলেরই মিশন ছিল একই। অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহর আনুগত্য করার আহ্বান জানিয়ে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। আল্লাহ তা’আলার প্রেরিত সকল নবী-রাসূলের উপর ঈমান আনা ফরয। কুরআনুল করীমের শিক্ষা হল :

আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কারো সম্পর্কেই ভিন্নমত পোষণ করি না। (সূরা বাকারা: ২৮৫)

অধিকন্তু পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হল:

(হে রাসূল!) তিনি আপনার প্রতি ঠিক ঠিকভাবে কিতাব নাযিল করেছেন যা আপনার পূর্ববর্তীকালের কিতাবসমূহের সত্যায়নকারী এবং তিনিই তাওরাত এবং ইঞ্জিল নাযিল করেছেন পূর্ববর্তী যুগের মানুষদের হিদায়েতের উদ্দেশ্যে। আর তিনিই নাযিল করেছেন কুরআন। (সূরা আলে ইমরান: ৪)

আল-কুরআনে নবী-রাসূলগণের বর্ণনা

পৃথিবীতে কতজন নবী-রাসূলের আগমন ঘটেছে তার সঠিক সংখ্যা কুরআনে বলা হয়নি।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:

হে রাসূল! আপনার নিকট ইতিপূর্বে কিছুসংখ্যক রাসূলের উল্লেখ করেছি এবং কিছুসংখ্যক রাসূলের উল্লেখ করিনি। (সূরা নিসা : ১৬৪)

তবে হাদীসের মাধ্যমে পৃথিবীতে আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূলের সংখ্যা কমপক্ষে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার এবং উর্ধ্বে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার বলে জানা যায়।

কুরআনে যে সকল প্রসিদ্ধ আম্বিয়া কিরামের বর্ণনা এসেছে তাঁরা হলেন: হযরত আদম (আ) (বর্ণনা ৫ বার), হযরত ইদরীস (আ) (বর্ণনা ৪ চার), হযরত নুহ্ (আ) (বর্ণনা ৮ বার), হযরত হূদ (আ) (বর্ণনা ৫ বার), হযরত সালিহ্ (আ) (বর্ণনা ৩ বার), হযরত ইব্রাহীম (আ) (বর্ণনা ২৫ বার), হযরত ইসমাঈল (আ) (বর্ণনা ৬ বার), হযরত ইসহাক (আ) (বর্ণনা ৩ বার), হযরত লূত (আ) (বর্ণনা ৪ বার), হযরত ইয়াকুব (আ) (বর্ণনা ১০ বার), হযরত ইউসুফ (আ) (একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা), হযরত শুআইব (আ) (বর্ণনা ২ বার), হযরত আইউব (আ) (বর্ণনা ৬ বার), হযরত মূসা (আ) (বর্ণনা প্রায় ৪০ বার), হযরত হারুন (আ) (বর্ণনা ১৭ বার), হযরত দাউদ (আ) (বর্ণনা ১১ বার), হযরত সুলায়মান (আ) (বর্ণনা ১৯ বার), হযরত ইলিয়াস (আ) (বর্ণনা ৬ বার), হযরত উযাইর (আ) (বর্ণনা ২ বার), হযরত ইউনুস (আ) (বর্ণনা ৪ বার), হযরত যাকারিয়া (আ) (বর্ণনা ৬ বার), হযরত ইয়াহইয়া (আ) (বর্ণনা ৪ বার), হযরত ঈসা (আ) (বর্ণনা ১২ বার) (এছাড়া আল-মসীহ্ ও ইবনে মারইয়াম হিসেবে অনেকবার)।

এছাড়াও কুরআন মজীদে আরও কিছু নাম আছে, যাঁরা নবী বা রাসূল ছিলেন কি না সে সম্পর্কে উল্লেখ নেই। তবে তাঁদের নাম আলোচিত হয়েছে।

আল-কুরআনে হযরত মুহাম্মদ (সা)

সাইয়্যেদুল মুরসালীন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা), যাঁর আবির্ভাবের ফলে বিশ্ব জাহানের আবির্ভাব। তিনি সর্বশেষ নবী এবং রাসূল। আল্লাহ তা’আলা তাঁরই মাধ্যমে আমাদের মাঝে আল-কুরআন পাঠিয়েছেন। তাঁর পরিচয় বর্ণনা করে আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে।

“মুহাম্মদ (সা) তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।” (সূরা আহযাব : ৪০)

মহান আল্লাহ সাক্ষ্যদান করে বলেছেন:

‘বাস্তবিক পক্ষে আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব: ২১)

তিনি আরো বলেন:

“আমি আপনাকে কেবলমাত্র জগতসমূহের করুণাস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)

এখানে রাসূল (সা)-কে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা’আলা হলেন রাব্বুল আলামীন বা জগতসমূহের প্রতিপালক। এর তাৎপর্য এই যে, রাসূল (সা)-এর উসিলাতেই আল্লাহ তা’আলা জগতসমূহ প্রতিপালন করে থাকেন। পৃথিবীর মানুষকে উত্তম আদর্শ ও উত্তম চরিত্র উপহার দেয়ার জন্যেই তাঁর আবির্ভাব হয়েছে। তিনি বলেন:

“আমি উত্তম চরিত্রের সমাপ্তি টানার জন্যেই প্রেরিত হয়েছি।” (হাদীস)

তিনি নবী-রাসূলগণের সর্দার তা শুধু কুরআনেই বর্ণিত হয়নি; বরং পূর্বের আসমানী কিতাবসমূহেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে। পূববর্তী আম্বিয়া কিরাম তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে তাঁর প্রতি সম্মানও প্রদর্শন করেছেন।

মোটকথা, আল্লাহ্ তা’আলা রিসালাতের মাধ্যমে হযরত আদম (আ) হতে হযরত মুহাম্মদ (সা) পর্যন্ত যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়ে যে কাজের আঞ্জাম দিয়েছেন তা হলো:

“প্রত্যেক জাতির মধ্যে অবশ্য রাসূল পাঠিয়েছি যাতে তারা মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ ও তাণ্ডত বা আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে বর্জন করার নির্দেশ দিতে পারে।” (সূরা নাহল : ৩৬)

নবী-রাসূল প্রেরণ না করে আল্লাহ তা’আলা কোন সম্প্রদায়কে আযাব ও গযবে লিপ্ত করেন নি। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে:

“আমি রাসূল প্রেরণ না করে কোন সম্প্রদায়কে শাস্তি দেইনি।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ১৫)

এর ফলে নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে, আমাদের জন্যে আল্লাহর একত্ববাদ ও আখিরাতের ধারণা রিসালাত ও ওহীর মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

নবী ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য

নবী ও রাসূলের মধ্যে শাব্দিক অর্থে তেমন কোন পার্থক্য না থাকলেও ব্যবহারের দিক থেকে এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হল: আল্লাহ্ যে সকল পয়গম্বরের নিকট কিতাব (গ্রন্থ) বা সহীফা (ছোট কিতাব) নাযিল করেছেন এবং নতুন শরীয়ত দান করেছেন, তাঁদেরকে রাসূল বলা হয়; আর যে সকল পয়গম্বরের উপর গ্রন্থ বা সহীফা নাযিল হয়নি এবং যাঁদেরকে নতুন শরীয়তও দেননি, তাঁদেরকে নবী বলা হয়। যে সকল নবীর উপর গ্রন্থ নায়িল হয়নি তাঁরা পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের প্রচারিত জীবনবিধানের প্রচার করতেন। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক রাসূলই নবী ছিলেন, কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসূল নন।

খতমে নবুওয়াত

আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ বা নবীদের সীলমোহর অর্থাৎ শেষ নবী বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে মানব জাতিকে হিদায়াত করার ও সঠিক পথের সন্ধান দানের উদ্দেশ্যে যে সকল নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল হলেন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা)। তাঁর পরে আর কোন নতুন নবী-রাসূল দুনিয়ায় আসবেন না বা আসার প্রয়োজনও নেই। কেননা কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের যা কিছু দরকার তা আল- কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত নবী করীম (সা) আরাফাতের ময়দানে যখন এক বিশাল জনসমােেবশ ভাষণ পেশ করছিলেন তখন সূরা মায়িদার নিম্নের আয়াতখানা অবতীর্ণ হয়। যাতে তিনিই যে খাতামুন্নবী তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। আয়াতটি হল:

“আজকের এ দিনে আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। আমার নিয়ামতও তোমাদের উপর পূর্ণ করে দিলাম। আর একমাত্র জীবন ব্যবস্থারূপে ইসলামকেই তোমাদের জন্যে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়িদা: ৩)

যে উদ্দেশ্যে রাসূল (সা)-এর আগমন হয়েছিল সে উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হওয়ার কথা এ আয়াতে বলা হয়েছে। কারণ মানুষের জীবনবিধান যখন সম্পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে এবং ইসলামকে মানুষের দীনরূপে যখন চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, আর বিশ্বনবীর মাধ্যমে সারা বিশ্বের জন্যে তা মনোনীত করা হয়েছে তখন অন্য কোন নতুন ধর্মের আবির্ভাব বা অন্য কোন নতুন নবীর আগমন নিষ্প্রয়োজন। এ ছাড়া আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে বিশেষ কোন দেশ বা বিশেষ জাতি কিংবা যুগ- বিশেষের জন্যে প্রেরণ করেন নি। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে :

“আমি তোমাকে সমগ্র বিশ্বজাহানের রহমত বা করুণা হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)

যেহেতু তিনি সারা বিশ্বের জন্যে কল্যাণস্বরূপ, যেহেতু তিনি বিশ্বনবী এবং যেহেতু তাঁর প্রতি প্রেরিত বিধান আল-কুরআন ও দীন-ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান, সেহেতু আর কোন নবী-রাসূল বা নতুন কোন জীবনবিধানের প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেও স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন :

“আমিই শেষ নবী। আমার পর আর কোন নবী আসবেন না।”

পূর্বেকার নবীগণ প্রেরিত হয়েছিলেন বিশেষ গোত্র, অঞ্চল বা একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা দেশের জনবসতিকে হিদায়েতের জন্যে। তাঁরাই ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন বিশ্বনবীর আগমনের। পাক কালামেও ইরশাদ হয়েছে:

“আমি তোমাকে সমস্ত মানব জাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।” (সূরা সাবা: ২৮)

কুরআন মজীদে এ ছাড়াও বহু আয়াত রয়েছে যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত মুহাম্মদ (সা) শেষ নবী; তাঁর পর আর কোন নবী-রাসূল আসবেন না। কিয়ামত পর্যন্ত এ শরীয়ত, এ কিতাব অবিকৃত থাকবে এবং এর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর মানুষ পরিচালিত হবে। এ কিতাব ও শরীয়তে সামান্য বিকৃতি ঘটানোর, পরিবর্তন- পরিবর্ধনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। সে জন্যেই আজ পর্যন্ত আল-কুরআন অবিকৃত অবস্থায় আছে। পক্ষান্তরে পৃথিবীতে মানুষের রচিত শাসনতন্ত্র শতবারও সংশোধিত হয়; এমনকি অন্যান্য ধর্মগ্রন্থও অবিকৃত অবস্থায় নেই। অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের এত অধিক পাঠক এবং হাজার হাজার হাফিযও নেই। এ ধর্মগ্রন্থ ও ইসলামী শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী। পৃথিবীর মানুষ কর্তৃক রচিত অনেক সাহিত্য, নভেল, নাটক বা অন্য যে কোন পুস্তক এক কিংবা দুই শতাব্দী পর, এমনকি কয়েক বছর পর ব্যাপক পরিবর্তিত হয়ে যায়। ভাষা, অলংকরণ ও তথ্যের পরিবর্তন হয়। কিন্তু আল্লাহর কালাম, যার কোন পরিবর্তন নেই। একটি সাংকেতিক চিহ্ন পর্যন্ত পরিবর্তনের অবকাশ নেই। বিগত চৌদ্দ’শ বছর এমন কোন পণ্ডিত জন্মেনি যে এমন দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করতে পারে। কেননা আল্লাহ তা’আলা-এর পথ চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে বিশ্ববাসীকে সুস্পষ্টবাবে জানিয়ে দিয়েছেন, এটি আল্লাহর কালাম। এর কোন পরিবর্তন নেই। এটি শাশ্বত ও চিরন্তন। আর মুহাম্মদ (সা) সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী।

অতঃপর কেউ হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে সর্বশেষ নবী বলে স্বীকার না করলে অথবা নবী দাবি করলে বা আরো নবী আসবেন বলে বিশ্বাস করলে সে এবং তার অনুসারীরা সকলেই কাফির বলে গণ্য হয়। তাদের সাথে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন বলেই বিবেচিত হবে। কোন মুনাফিক ইসলামের ছদ্মাবরণে অনুরূপ আকীদা পোষণ করলে তাদেরকেও পরিষ্কারভাবে কাফির হিসাবে গণ্য করতে হবে। নবী করীম (সা) ইরশাদ করেছেন; “আমার পর ত্রিশজন ভণ্ড নবুওয়াতের মিথ্যা দাবি করবে, তারা দাজ্জাল ও মিথ্যাবদী।” (মিশকাত শরীফ)

সুতরাং ঈমানের মূল স্তম্ভসমূহের মধ্যে রিসালাত অন্যতম। তওহীদের পরই রিসালাতের স্থান। কেউ যদি রিসালাত অবিশ্বাস করে তবে সে পরোক্ষভাবে তওহীদকেই অবিশ্বাস করল, কেননা রিসালাতই তওহীদের বাহক, রিসালাত ছাড়া তওহীদের বাণী মানুষের নিকট পৌঁছানোই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমাদের প্রত্যেকের তওহীদ-এর মতো সমান মর্যাদা দিয়ে ‘রিসালাত’-এর উপর কথায় ও কাজে সমানভাবে ঈমান আনা এবং সেই ঈমানের দাবি অনুযায়ী কাজ করা অপরিহার্য কর্তব্য।

***উক্ত লিখাটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত ‘কল্যাণ সমাজ গঠনে মহানবী (সা)’ প্রবন্ধ সংকলন থেকে সংগৃহীত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88