সমকামিতা ও একটি জাতির ধ্বংস

প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার, যিনি আমাদের জন্য হালাল ও হারামকে স্পষ্ট করে দিতে যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। যারা প্রতিনিয়ত মানুষকে এক আল্লাহর দিকে ডাকতেন এবং যাবতীয় মন্দ কর্ম বর্জন করতে বলতেন। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শয়তানের দুষ্ট চক্রান্ত ছিলো সবসময়ই তৎপর। সে একের পর এক মন্দ কর্ম নিয়ে মানুষের সামনে হাজির হয়। আর এতে কিছু মানুষ আটকে যায়, লুফে নেয় শয়তানের প্রস্তাব, আর বিসর্জন দেয় নিজের ফিতরাত (মুসলমানিত্ব)।

শয়তানের প্রস্তাবিত বিভিন্ন মন্দকর্মের মধ্যে জঘন্যতম একটি মন্দকর্ম হলো ‘সমকামিতা’। সমকামিতা কোনো নতুন বিষয় নয়। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে এই পাপাচারের আদি ইতিহাস সম্পর্কে একদিকে যেমন মানুষকে অবগত করেছেন, অন্যদিকে এই পাপাচারে লিপ্ত জনগোষ্ঠীকে তিনি কিভাবে আযাব দিয়ে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করেছেন সে সম্পর্কেও সবিস্তারে বর্ণনা দান করেছেন যাতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। অর্থাৎ, এটা এতই নোংরা পাপ যে অপরাধীরা এর শাস্তি দুনিয়াতেই পেয়েছিলো।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আমি লূত (আঃ) কে প্রেরণ করেছিলাম। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।” [সূরা আ’রাফ(৭): ৮০-৮১]

হযরত লূত (আঃ) এর সম্প্রদায় বসবাস করত সাদ্দূম নগরীতে। তারা ডাকাতি করতো, প্রকাশ্য সভা বানিয়ে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা করতো। তারা সর্বপ্রথম এমন একটি গর্হিত পাপ করে যা এর পূর্বে কোনো আদম সন্তান করেনি। লূত (আঃ) এর পাপী সম্প্রদায়ই প্রথম সমকামিতা (অর্থাৎ পুরুষ-পুরুষ এবং মহিলা-মহিলা যৌন আচরণ করা) শুরু করে। লূত (আঃ) যখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন, তখন তারা লূত (আঃ) কে নির্বাসন দিতে চায় এবং উপহাস করে বলে -“এরা নিজেদের বেশি পবিত্র রাখতে চায়।” তাফসিরে পাওয়া যায়, হযরত জিব্রাইল (আঃ), ইস্রাফিল (আঃ) ও মিকাইল (আঃ) সুদর্শন পুরুষের রূপ ধরে হযরত লূত (আঃ) এর এলাকায় উপস্থিত হন, এবং মেহমান হন। লূত(আঃ) গোপনে তাদেরকে আশ্রয় দেন, কিন্তু লূত (আঃ) এর এক স্ত্রী এই খবর পাপাচারী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেয়। পাপাচারী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করার জন্য লূত (আঃ) এর বাসস্থান আক্রমণ করে। শেষ পর্যায়ে লূত (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাঁর মেহমানদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। তখন ফেরেশতাগণ বলে উঠেন-

“হে লূত (আঃ)! আমরা তোমার পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু নিশ্চয় তোমার স্ত্রীর উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়?” [সূরা হুদ(১১): ১১]

মুফাসসিরগণ বলেন- এরপর প্রথম জিব্রাইল (আঃ) তাদের সামনে আসেন এবং তাঁর ডানা দ্বারা হালকা আঘাত করেন। এতেই সকল পাপাচারী অন্ধ হয়ে যায়। এরপর জিব্রাইল (আঃ) লূত(আঃ) এর নিরাপদে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এরপর ডানা দিয়ে সমগ্র সাদ্দূম নগরীকেই গোড়া সহ তুলে ফেলেন, এত উঁচুতে নিয়ে যান যে প্রথম আসমানের রক্ষী ফেরেশতারাও সাদ্দূম নগরীর কুকুর আর মোরগের ডাক শুনতে পাচ্ছিলো। এবার পুরো জনপদকে উল্টো করে সজোরে জমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। এবার আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষণ করা হয়, এমনকি যেসব পাপী বাসিন্দা কোনো কাজে সেই নগরীর বাইরে ছিল তাদের উপরও প্রস্তর খণ্ড এসে পড়ে। এরপর আল্লাহ সে স্থানে দূষিত পানির জলাধারা প্রবাহিত করে দেন।

“অবশেষে আমার (আল্লাহর) আদেশ চলে আসলো, তখন আমি উক্ত জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের উপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।” [সূরা হুদ(১১): ৮২]

এ বিষয়ে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“আমার উম্মত সম্পর্কে যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হচ্ছে পুরুষে পুরুষে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া।” [ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হাদীস নম্বর: ৩৪২১]

ইকরামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইবনু আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা যাদেরকে লূতের সম্প্রদায়ের অনুরূপ আচরণ করতে দেখো, সেই পাপাচারী এবং যার উপর ঐ কুকর্ম করা হয়েছে উভয়কে হত্যা কর।” [ইবনু মাজাহ, সনদ হাসান, মিশকাত, হাদীস নম্বর: ৩৫৭৫]

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম শাফেই (রহিমাহুল্লাহ) এবং আলেমদের একটি জামাত বলেছেন ‘লাওয়াতাতকারীকে’ হত্যা করতে হবে, সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক। ইমাম আবু হানিফা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, তাকে উপর থেকে নিচে নিক্ষেপ করতে হবে এবং এক এক করে পাথর বর্ষণ করতে হবে যেভাবে লূত (আঃ) এর কওমের প্রতি আল্লাহ করেছিলেন।

সুতরাং এই নিকৃষ্ট কাজটি যে কোনো একটি সম্প্রদায়ের জন্য অভিশাপস্বরূপ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! বরং এই নোংরামোর শেষ পরিণতি যে ধ্বংস, তা প্রমাণে কওমে লূত (আঃ) এক বিরাট ও স্পষ্ট নিদর্শন। যেহেতু সমস্যার পেছনে শয়তানের ইন্ধন ও বাসনা রয়েছে, সেহেতু এর সমাধানও ইসলাম দিয়েছে এবং তা খুবই স্পষ্ট ও যথার্থ। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামী জ্ঞান দান করুন, আমাদের সামনে হালাল- হারাম স্পষ্ট করুন, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করুন এবং আমাদেরকে সঠিকপথগামী করুন।

আমিন।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan